রবিবার ০৫ মে ২০২৪
Online Edition

মাছের খামারে ফল-সবজি চাষ করে ঘুরে দাঁড়িয়েছে ফুলতলার মোবারকের পরিবার

খুলনা অফিস : ২২ বছর বিদেশে অযথা খেটেছি। ২০০৭ সালে মাছের খামার শুরু করি। এতে বিনিয়োগকৃত অর্থের কিছু আসে ব্যাংক ঋণের মাধ্যমে, কিছু ধার-কর্জ আর বাকিটা নিজের। সবমিলিয়ে তখন প্রায় ১৫ লাখ টাকা বিনিয়োগ করতে হয়। মাস ছয়েকের মধ্যে প্রথম দফায় ১৬ লক্ষাধিক টাকার মাছ বিক্রি করি। আর এ থেকেই আমার ভাগ্য ফিরতে শুরু করে। দুর্দশা লাঘব হতে থাকে। প্রাপ্ত অর্থের কিঞ্চিত ব্যয় করি উৎকৃষ্টমানের খৈল, ভূষি ও কেঁচো ক্রয়ে। খামারে আম গাছের চারা প্রাধান্য পেলেও লিচু, লাউ, নারিকেল চারা বাদ যায়নি। হাসি মুখে মোবারক সরদার ব্যক্ত করেন, এখন বছরে অন্তত ১২ বার মাছ তুলি। প্রতিবারেই ১৫ থেকে ২০ লক্ষাধিক টাকা আসে এখান থেকে। বছরে আমের উৎপাদন এনে দেয় লক্ষাধিক টাকা। কয়েক বিঘা জমিও কিনেছি। আর পরিবারের ভরণপোষণতো আছেই। এসবের পরেও আমি এখন স্বচ্ছল। ২০১৬ সালে উপজেলা পর্যায়ে সেরা মৎস্য খামারীর সনদ পাই। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ এমপি আমার হাতে এ সনদ তুলে দেন। এর আগেও একবার সেরা মৎস্য খামারীর পুরস্কার পেয়েছি। আর এভাবেই মোবারক নিজের জীবনের ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প শোনান। তার মতে জীবনের সর্বস্ব বিনিয়োগ করে ঝুঁকি নিয়েছিলেন, তাই সফলতা মিলেছে।
পঞ্চাশোর্ধ্ব মোবারক সরদার।  ভাগ্য বদলাতে জীবনের অর্ধেকেরও বেশি সময় বিদেশে কাটিয়েছেন। তবুও তার ভাগ্য ফেরেনি। একদা পরিবার প্রধানের শুন্যতায় দৈন্যদশা শুরু হয়। অর্থাভাবে দিক-বিদিক হয়ে পড়েন। অবশেষে নিজ জমিতেই মাছের খামার গড়েন। চারপাশে রোপণ করেন আম গাছের চারা। এভাবে বছর খানেক যেতে না যেতেই দুর্দশা কাটতে শুরু করে। দিনে দিনে স্বচ্ছলতা ফিরে আসে পরিবারে। এখন খামারের আকার বেড়েছে। মাছ ও আমের চাষে অর্থ উপার্জনের হারও বেড়েছে। পর পর দু’বার সফল মৎস্য খামারির খেতাব এখন মোবারকের ঝুঁলিতে। খুলনার ফুলতলা উপজেলার বুড়িয়াডাঙ্গা গ্রামে তার বসবাস। এলাকায় খ্যতি ’গরম ভাই’ নামে।
ফাগুনের এক পড়ন্ত বিকেলে এমনভাবেই নিজের জীবনের স্মৃতিচারণ করেন সফল এই মৎস্য খামারি। তার সাথে কথা বলে জানা যায়, জীবিকার টানে ১৯৮৮ সালের ৭১ জানুয়ারি বিদেশে পাড়ি জমান। দেশটির নাম আবুধাবি। তখন বিদেশে দেয়া শ্রমের অর্থ দিয়ে ভালোভাবে চললেও পরিবারের সদস্যদের নানা আহ্লাদ-সখ চাপা দিতে হতো। এক পর্যায়ে পরিবারের প্রধান কর্তা মোবারক সরদারের মেঝ ভাইয়ের অকালে মৃত্যু হয়।
আর এতেই চরম অন্ধকার নেমে আসে তার পরিবারে। বাধ্য হয়ে বাড়িতে থাকতে হয়। জীবিকার টানে দিক-বিদিক ছুটে বেড়ায় মোবারক। অবশেষে পরিবারের ছোট্ট মাছের খামারকেই নিজের আয়ের উৎস হিসেবে বেছে নেন। তার এই উদ্যোগে আত্মীয়-স্বজন ও নিকটজনেরা সহায়তা দেন। বর্গা নেয়া চার বিঘা জমির সাথে নিজের ও আত্মীয় স্বজনদের মিলিয়ে গড়ে তোলেন আঠাশ বিঘার ’ভাই ভাই মৎস্য খামার’। খামারে সীমানা প্রাচীর তৈরি করেন সাড়ে ৫শ’টি আম গাছের চারা দিয়ে। খামারে চিংড়ি, রুই, কাতলা, মিনার কাপ, সাইফ্লেন, তেলাপিয়া, কই, মাগুর ও শিং মাছের তিন লাখ পোনা ছাড়েন। পোনাগুলি চৌগাছা উপজেলায় আফিল সাহেবের হ্যাচারী থেকে সংগ্রহণ করেন। খামারটি নিজে সারাক্ষণ ও পরিবারের অন্যরা দেখভাল করেন। আর ৪/৫ জন চাষি দ্বারা নিয়মিত পরিচর্যা করা হয়।
প্রসঙ্গত, মোবারক সরদার শিক্ষায় মাধ্যমিকের গন্ডি পার করতে পারেননি। তার পিতা বেঁচে নেই। আছেন মা, চার ভাই ও তিন বোন। রয়েছে তিন সন্তানও। বড় মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন। ছেলে ঢাকা কমার্স কলেজে ও মেয়ে খুলনার বিএল কলেজে অধ্যয়নরত। উপজেলায় সরদার বাড়ির বেশ নামডাকও আছে।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ