রবিবার ১৯ মে ২০২৪
Online Edition

নবেম্বর মাসে রাজনৈতিক সন্ত্রাস

মুহাম্মদ ওয়াছিয়ার রহমান : [তিন]
১৪ নবেম্বর নেত্রকোনার দূর্গাপুরে সোমেস্বরী নদীর বালুঘাট ডাইভার্সন সড়কের আধিপত্য নিয়ে নাজিরপুর মোড়ে যুবলীগের দু’গ্রুপের সংঘর্ষে পাঁচজন আহত হয়। পৌর যুবলীগ সভাপতি নজরুল ইসলাম মোড়ল ও পৌর মেয়রের ভাতিজা যুবলীগ নেতা মাজহারুল ইসলামের দ্বন্দ্বের জেরে সংঘর্ষ ও গোলাগুলীতে হযরত এবং মাজহারুল ইসলামসহ পাঁচজন আহত হয়েছে। বগুড়ার শেরপুরে ভবানীপুর উচ্চবিদ্যালয়ে বিনা টাকায় এসএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণে রাজী না হওয়ায় প্রধান শিক্ষক মোখলেসুর রহমান ও সহকারী শিক্ষক আমিরুল ইসলামকে মারপিট এবং অফিস আসবাবপত্র ভাংচুর করে যুবলীগ ইউনিয়ন সভাপতি রামকৃষ্ণ। ঝালকাঠির রাজাপুরে সাতুরিয়া গ্রামের বকুলতলা এলাকায় পিরোজপুরের ভান্ডারিয়ার মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল সালাম খানকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। নিহতের ছেলে শামসুল ইসলাম মুরাদ সাতুরিয়া ইউনিয়ন যুবলীগ নেতা শাহ আলম ও ইউপি সদস্য মুস্তাফিজুর রহমান বাচ্চুকে অভিযুক্ত করে মামলা করেছে। পুলিশ ঘটনার সাথে জড়িত ফারুক মুন্সী ও মোতালেব মোল্লাকে গ্রেফতার করেছে।
২১ নবেম্বর চট্টগ্রামের লালদীঘি ময়দানে যুবলীগের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর অনুষ্ঠানে দু’গ্রুপের মধ্যে চেয়ার ছুড়াছুড়ি হয়েছে। ২৪ নবেম্বর বরিশালের গৌরনদীর ইল্লা বাসস্ট্যান্ডে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে খাঞ্জাপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আরোজ আলী সরদারের উপর যুবলীগ ইউনিয়ন সাবেক সহ-সম্পাদক গিয়াস উদ্দিনের নতেৃত্বে একদল লোক বোমা হামলা চালিয়ে ছয় জনকে আহত করে। গত ২৩ নবেম্বর আরোজ আলী প্রতিপক্ষ গ্রুপের লোকদের মারধর করে, ফলে এই হামলা হয়। হামলায় আরোজ আলী সরদার, তার স্ত্রী তাসলিমা বেগম ও ছেলে বাবু সরদারসহ আহত ছয়জন। ২৮ নবেম্বর ফেনী শহরতলীর জোয়ারকাচাড় গ্রামে দলীয় কোন্দলে যুবলীগ কর্মী মাসুম গুলীবিদ্ধ হয়েছে। ধর্মপুর ইউপি চেয়ারম্যান ও যুবলীগ নেতা শাখাওয়াত হোসেন সাকা এবং আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী চেয়ারম্যান প্রার্থী আজহারুল হক আরজুর মধ্যে দ্বন্দ্বে আরজুর সমর্থক তুহীন, বাপ্পি আনোয়ার, আজিজ ও আব্দুল করীম গং এ ঘটনা ঘটায়।
শ্রমিক লীগ : ২৬ নবেম্বর নারায়নগঞ্জে সিদ্ধিরগঞ্জ নয়া আটি মুক্তিনগরসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে সিদ্ধিরগঞ্জ ৩নং ওয়ার্ড শ্রমিক লীগ যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক সিকিম আলী, ইছাহাক মিয়া, আবুল কালাম, মনির হোসেন, আব্দুর রহীম খান, আমেনা বেগম, শাহনূর ও শারমিনকে ২৮৮ ক্যান বিয়ার, ২ বোতল বিদেশী মদ ও ৬৩৫ বোতল ফেনসিডিলসহ গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
স্বেচ্ছাসেবক লীগ : ১ নবেম্বর দিনাজপুর সদরে তৈয়বা মজুমদার ব্লাড ব্যাংকে স্বেচ্ছাসেবক লীগের নির্যাতনে মঞ্জুরুল ইসলাম নামে এক যুবক চিকিৎসারত অবস্থায় নিহত হয়েছে। নিহতের পরিবার দাবি করেছে স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা সিরাজুস সালেকিন রানার নেতৃত্বে তরিকুল ইসলামসহ পাঁচ-ছয়জন তাকে তুলে নিয়ে ২৫ অক্টোবর নির্যাতন করে। এ সময় তারা প্লাস দিয়ে তার নখ তুলে ফেলে, ব্লেড দিয়ে শরীরে বিভিন্ন স্থানে কেটে লবণ ও কাঁচা মরিচ লাগায় এবং বৈদ্যুতিক শক দিয়ে নির্মম নির্যাতন করে।
মটরচালক লীগ : ৭ নবেম্বর রংপুরের মটরচালক লীগ ও শ্রমিক ইউনিয়নের মধ্যে সংঘর্ষে পনের জন আহত এবং আট জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। সংঘর্ষে আহতরা হলো আজিজুল হাকিম হিমু, শাহীন, আয়শা সিদ্দিকা, রাজা মিয়া, এম.এ মজিদ, খাদেমুল ইসলাম ও নূর হোসেনসহ পনের জন। পুলিশ ঘটনার সাথে জড়িত আশরাফুল আলম, মিঠুন, আলমগীর, কামরুজ্জামান, এরশাদ আলী, রানা, আসাদুজ্জামান ও আমিনুল ইসলামকে গ্রেফতার করেছে।
বিএনপি : ৩ নবেম্বর যশোরের অভয়নগর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ আকরাম আলী মোল্লা হত্যা মামলায় বিএনপি নেতা ও সাবেক এমপি এস.এম আমিন উদ্দিনসহ ৮ জনের যাবজ্জীবন কারাদন্ড ও দশ হাজার টাকা জরিমানা করেছে আদালত। অন্য দন্ডপ্রাপ্তরা হলো- অভয়নগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কাজী গোলাম হায়দার ডাব্লু, অভয়নগর প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম মল্লিক, নওয়াপাড়া পৌর সভার সাবেক কাউন্সিলর ও ছাত্রদল সাবেক উপজেলা সাধারণ সম্পাদক শেখ আসাদুল্লাহ, উপজেলা ছাত্রদল সভাপতি মোল্লা হাবিবুর রহমান, নওয়াপাড়া পৌর যুবদল নেতা সৈয়দ আলী মিস্ত্রী, পৌর যুবদল সাধারণ সম্পাদক জিএম বাচ্চু এবং যুবদল কর্মী ইউশা মোল্লা, তবে ইউশা মোল্লা পালাতক রয়েছে। উল্লেখ্য ২০০৬ সালের ১৩ আগস্ট ডাঃ আকরাম আলী মোল্লা নিহত হয়। নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে থানা বিএনপির যুগ্ম-আহ্বায়ক আলী হোসেন প্রধানকে আটক করেছে পুলিশ। ৫ নবেম্বর ঢাকা মহনগরীতে পুলিশ বিএনপি ৯ নেতা-কর্মীকে আটক করেছে। আটককৃতরা হলো- কদমতলী থানা বিএনপি নেতা জুম্মন চেয়ারম্যান, মাহ্বুব, হাসানাত, মাসুম, মিরাদনগর ইউনিট নেতা আওলাদ হোসেন, নরসিংদী জেলা ছাত্রদল নেতা নজরুল ইসলাম ভূঁইয়া, স্বেচ্ছাসেবক দলের সুমন চৌধুরী, খিলগাঁওয়ে জামাল ও যাত্রাবাড়ীতে শামীম। ঢাকার পল্টন থানা পুলিশ বিএনপির সহ-দপ্তর সম্পাদক তাইজুল ইসলাম টিপু, তোফাজ্জল, মিজানুর রহমান, সরওয়ার ও শাহীনকে গ্রেফতার করেছে। সিলেট জেলা বিএনপি নেতা কামরুল হাসান শাহীন আদালতে হাজির হয়ে জামিনের আবেদন করলে আদালত তা নামঞ্জুর করে তাকে জেল হাজতে পাঠায়।
১২ নবেম্বর চট্টগ্রামে বারইয়ারহাট পৌর বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-আহ্বায়ক এবং উত্তর জেলা তাঁতি দলের সাধারণ সম্পাদক কাউন্সিলর নিজাম উদ্দিনকে তার ব্যবসায়ী অফিস থেকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ১৩ নবেম্বর রংপুরের পায়রাবন্দ ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আব্দুস সালামকে পুলিশ গ্রেফতার করে দারুণ নির্যাতন করেছে। ১৫ নবেম্বর খুলনা মহানগর বিএনপি সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জুর বিরুদ্ধে ভ্রষ্টাচার, স্বৈরাচার ও দুর্নীতির অভিযোগে মহানগর সহ-সভাপতি শাহরুজ্জামান মর্তুজার সমর্থকরা তা প্রতিহতের আহ্বান জানিয়েছে। খুলনা প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এ আহ্বান জানান মঞ্জুর প্রতিপক্ষ নেতারা। ১৬ নবেম্বর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাছিরনগরে মন্দির ও সংখ্যা লঘুদের বাড়ী-ঘরে হামলা ও ভাংচুরের ঘটনায় বিএনপি নেতা ও ইউনিয়ন বিএনপি সভাপতি মোশাররফ হোসেন চকদারের ছেলে আমিরুল হোসেন চকদারকে তার বাড়ী থেকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ১৮ নবেম্বর চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে করেরহাট থেকে জোরারগঞ্জ থানা পুলিশ বিএনপি নেতা আবুল হোসেন মিয়া সওদাগারকে গ্রেফতার করেছে। ২৮ নবেম্বর সাতক্ষীরার কলারোয়ায় পৌর মেয়র ও বিএনপি নেতা আকতারুল ইসলামকে তার অফিসের সামনে থেকে আটক করেছে পুলিশ।
শ্রমিক দল : ২২ নবেম্বর বগুড়া শহরের চেলোপাড়া নারুলীর নিজ বাসা থেকে পুলিশ জেলা শ্রমিক দলের সভাপতি আব্দুল ওয়াদুদকে গ্রেফতার করেছে।
জামায়াত : ৪ নবেম্বর নরসিংদীর শিবপুরে জামায়াত নেতা ও উপজেলা পরিষদ ভাইস-চেয়ারম্যান অধ্যাপক আব্দুর রহমান ভূঁইয়াকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ৭ নবেম্বর সোনারগঁওয়ে বারাদী এলাকা থেকে বারাদী ইউনিয়ন জামায়াতের সেক্রেটারি মাওলানা ইব্রাহিমসহ চার জনকে গ্রেফতার করেছে। নেত্রকোনার মদনে পুলিশ উপজেলা জামায়াত আমীর ইদ্রিস আলী মাস্টারকে গ্রেফতার করেছে। ১৩ নবেম্বর রংপুরের মিঠাপুকুরে উপজেলা পরিষদ ভাইস-চেয়ারম্যান ও জামায়াত নেতা আব্দুল বাছেদ মারজানকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। ১৮ নবেম্বর গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে দুই জামায়াত কর্মী শান্তিরাম গ্রামের আব্দুল হাফিজ মিয়া ও চাচীয়া মীরগঞ্জ গ্রামের কামরুল ইসলামকে নিজ নিজ বাড়ী থেকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ২১ নবেম্বর হবিগঞ্জের মাধবপুরে মন্দির ভাংচুরের ঘটনায় নারায়নপুর গ্রাম থেকে উপজেলা জামায়াতের সাবেক সেক্রেটারি মোখলেসুর রহমান জুয়েলসহ দু’জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ২২ নবেম্বর রংপুর গঙ্গাচড়ায় পুলিশ আলমবিদিতর ইউনিয়ন জামায়াতের আমীর আব্দুল জলিলকে গ্রেফতার করেছে।
ছাত্রশিবির : ১৪ নবেম্বর গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে শিবিরের উপজেলা সেক্রেটারি আঙ্গুর মিয়া সালমান ও বায়তুলমাল সম্পাদক মোমিনুল ইসলামকে তাদের নিজ নিজ বাড়ী থেকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ২৪ নবেম্বর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন্দ্রীয় লাইব্রারীর সামনে থেকে শিবির কর্মী মাসুদ হেলালকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
জাসদ : ১৯ নবেম্বর বগুড়ায় জেলা জাসদের সাধারণ সভায় হাতাহাতিতে কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি ও জেলা সভাপতি রেজাউল করীম তানসেন এমপি লাঞ্ছিত হয়েছে। সভার শুরুতে নেতা-কর্মীরা সভাপতির কাছে জানতে চান তিনি জাসদের কোন গ্রুপের লোক, তিনি উত্তর না দিয়ে সভা স্থগিত করার এ ঘটনা ঘটে।
জেএমবি : ৬ নবেম্বর রংপুর মহানগরীতে চন্দনপাট শাহ্বাজপুর চাপড়ার দোলা এলাকায় পুলিশের সাথে বন্দুক যুদ্ধের পর চার জেএমবি সদস্য বেলাল হোসেন, এরশাদ আলম, আশরাফুল আলম ও আল-আমীনকে গ্রেফতার করেছে। পুলিশ দাবি করেছে সংঘর্ষের সময় এসআই মাসুদ রানা, মামুনুর রশীদ, কনস্টেবল আসাদ ও আব্দুল খালেক আহত হয়েছে। এ সময় ১টি দেশী পিস্তল, স্টিলের চাপাতি, ১টি চাইনিজ কুড়াল, ১টি রাম দা, ১টি কুড়াল, লোহার পাইপ ও ৪টি ককটেল উদ্ধার করে পুলিশ। ২২ নবেম্বর ঢাকার যাত্রাবাড়ীতে জেএমবির তিন সদস্য রাশেদুর রহমান সুমন, শহীদুল ইসলাম শিপন ও বাবু হাওলাদার হোসেনকে ১০ কেজি বিস্ফোরক দ্রব্যসহ গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
নব্য জেএমবি : ৩ নবেম্বর বাগেরহাট সদরের দড়াটানা এলাকার ব্রিজ থেকে চার নব্য জেএমবি সদস্য গ্রেফতার। তারা হলো- সাতক্ষীরার মাকসুদুর রহমান তোতা মিয়া, মোর্শেদ আলম, সাইফুল ইসলাম ও পিরোজপুরের জহিরুল ইসলাম। এ সময় তাদের নিকট থেকে ১টি রিভলবার, কয়েকটি হাত বোমা ও বোমা তৈরীর সারঞ্জাম পাওয়া যায়।
ইউপিডিএফ : ১৩ নবেম্বর খাগড়াছড়িতে পেরাছড়া হেডম্যান পাড়া এলাকায় থেকে ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) জেলা সমন্বয়ক ও সামরিক শাখা প্রধান উজ্জ্বল স্মৃতি চাকমা, রূপক চাকমা, রিন ত্রিপুরা, সমাপন দেওয়ান, বাবুল মারমা ও সন্দিপন চাকমাকে ১টি পিস্তল, ১টি এলজি, ১চি সিঙ্গেল বোর রাইফেল ও ১চি বাইশ বোর রাইফেল, নগদ ষোল হাজার টাকা, ১টি  মোটর সাইকেল এবং বেশ কিছু ধারালো অস্ত্রসহ আটক করেছে যৌথ বাহিনী।
সর্বহারা : ১৩ নবেম্বর রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে সর্বহারা পার্টির দলীয় কোন্দলে রবার্ট অন্তার মোড় এলাকায় সর্বহারা নেতা আব্দুল হালিম মোল্লা মারাত্মক আহত হয়েছে। [সমাপ্ত]

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ