মঙ্গলবার ১৪ মে ২০২৪
Online Edition

দাকোপে জনভোগান্তির অপর নাম উপজেলা সাব রেজিস্ট্রি অফিস

খুলনা অফিস : খুলনার দাকোপে জনভোগান্তির অপর নাম উপজেলা সাব রেজিস্ট্রি অফিস। মাসের পর মাস রেজিস্ট্রার অফিসে না এসে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করছেন। এখানে টাকা দিলে অবৈধ কাগজ যেমন মেলে, তেমনি অর্থের বিনিময়ে দুর্বল কাগজে দলিল মেলে। মাঝির চেয়ে মাল্লার জোর গ্রাম বাংলার এই প্রবাদবাক্যটির উৎকৃষ্ট উদাহরণ ওই অফিসের মোহরার মাসুম বিল্লাহ।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভুক্তভোগীগণ এবং সংশ্লিষ্ট দপ্তরের নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, দাকোপে বর্তমান উপজেলা সাব রেজিস্ট্রার আবু মুছা যোগদানের পর থেকে অফিস করেন ইচ্ছে খুশীমত। গত কয়েক মাস বলতে গেলে তিনি অফিসেই আসেন না। মাসে হয়ত একদিন হাজির হয়ে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করে নিয়মিত অফিস হাজিরা ঠিক রেখেছেন। কোন কোন ক্ষেত্রে বিশেষ দলিল দিনের আলোতে নয়, রাতের আঁধারে হচ্ছে। যেমনটি হয়েছে চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে। 

ওই অফিস সংশ্লিষ্ট নির্ভরযোগ্য সূত্রগুলো জানায়, উনি একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তি, সুতরাং এই চাকরির ব্যাপারে রেজিস্ট্রার আবু মুছার তেমন কোন আগ্রহ নেই। সরকারের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তার এমন কর্মকাণ্ডে সরকার একদিকে যেমন রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তেমনি দাকোপে জমিজমার সাথে সংশ্লিষ্টরা তার দীর্ঘ অনুপস্থিতির কারণে মারাত্মক দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। রেজিস্ট্রারের দীর্ঘদিন অনুপস্থিতিতে জনসাধারণ সব থেকে বড় যে দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে তারমধ্যে যেমন, দূরবর্তী অঞ্চলের দাতা-গ্রহিতা প্রতিনিয়ত হয়রানির শিকার, অসুস্থ এবং বৃদ্ধ দাতাগণ অনেক ক্ষেত্রে দলিল না করতে পারায় অনেক দাবিদার জমির মালিকানা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন, বায়নাপত্র অথেন্টিক ইত্যাদি দলিলের মেয়াদ শেষ হলে পক্ষদ্বয়ের মধ্যে সৃষ্টি হচ্ছে নতুন জটিলতা। বাড়ি ভাড়ার সরকারি সুবিধা গ্রহণ করেও কয়েকজন কর্মকর্তা হাড়ি-পাতিলসহ ওই অফিসে নিজেদের স্থায়ী ঠিকানা গড়ে তোলার পাশাপাশি প্রথম মোহরার মাসুম বিল্লাহ এবং পেশকার রবীন্দ্রনাথের নেতৃত্বে একটি চক্র অফিসটিকে দুর্নীতির আঁখড়ায় পরিণত করেছেন। গত কিছুদিন পূর্বে ৮১ হাজার টাকার একটি ট্রেজারি চালান অবৈধভাবে ভাঙানোর ঘটনার সংবাদ পত্রিকায় প্রকাশিত হলে মোহরার মাসুম দুই মাসের জন্য সাসপেন্ড হয়। 

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, টাকা হলে দুর্বল বা নকল পরচা, খাজনা, দাখিলা বা ওয়ারিশকাম দিয়ে দাকোপে জমি রেজিস্ট্রি করা কোন ব্যাপার না। আর এই সকল কাজের সাথে জড়িত অফিসের অসীম ক্ষমতাধর যিনি রেজিস্ট্রারের সেকেন্ড ম্যান হিসেবে পরিচিত মোহরার মাসুম বিল্লাহ, পেশকার রবীন্দ্রনাথ, টিসি মোহরার অরুন ব্যানার্জী ও নকল নবিশ ফিরোজ গাজী। 

উপজেলার পানখালী গ্রামের জনৈক বসু প্রসাদ তরফদারের বাড়িতে ওই চক্রের যোগসাজসে উল্লেখিত নকল কাগজপত্র তৈরি হয় দাবি করে সূত্র জানায়, সেখানে তল্লাশি বা তাকে আইনের আওতায় এনে জিজ্ঞাসাবাদ করলে দুর্নীতির বিস্তর তথ্য প্রকাশ পাবে। 

সরেজমিন দেখা যায়, রেজিস্ট্রারের অনুপস্থিতিতে তার কাছে প্রয়োজনে আসা মানুষের সাথে পেশকার রবীন্দ্রনাথ খারাপ আচরণ করে অফিসে নিজের কর্তৃত্ব জাহির করে থাকে। গত বুধবার নলিয়ান এলাকা থেকে আসা জনৈক আছু গাজী রেজিস্ট্রার বরাবর একটি অভিযোগ দিতে এসে এমনই এক পরিস্থিতির শিকার হন। 

এ ব্যাপারে রেজিস্ট্রার আবু মুছার (০১৭১৩১৭৪৫৫২) নং মোবাইলে কথা হলে তিনি বলেন, আমি দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ। অফিস করতে পারি না। আমার জন্য এলাকার মানুষের ভোগান্তি হবে এটা চাই না। আজ-কালের মধ্যে আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে ছুটি যাবো। আর তা না হলে চাকরি ছেড়ে দেবো।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ