শুক্রবার ১৭ মে ২০২৪
Online Edition

আমেরিকায় আগে কখনোই এমন নির্বাচন দেখেনি ভোটাররা

৭ নবেম্বর, রয়টার্স/বর্তমান : আজ মঙ্গলবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে শিকে ছিঁড়তে চলেছে ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভাগ্যেই? রয়টার্স ও ইপসোসের সর্বশেষ সমীক্ষার ফলাফলে দেখা গিয়েছে, প্রতিদ্বন্দ্বী রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের চেয়ে পাঁচ শতাংশ পয়েন্টে এগিয়ে আছেন হিলারি। অথচ, চীনের এক জ্যোতিষী বানরের ভবিষ্যদ্বাণী জানিয়ে দিয়েছে, ডোনাল্ড ট্রাম্পই নির্বাচনে জয়ী হতে চলেছেন। ‘জ্যোতিষরাজ’ খ্যাত বানরটির নাম ‘গেতা’। চীনা এই শব্দের অর্থ ‘গিঁট’ বা ‘গেরো’।
হিলারি ও ট্রাম্পের বিশাল দুটি ছবির পাশে দুটি কলা রেখে বেছে নিতে বলা হয় বানরটিকে। হলুদ শার্ট পরা গেতা ট্রাম্পের ছবির পাশের কলাটাই শুধু বেছে নেয়নি, তার ছবিতে চুমুও খেয়েছে। এই বানরের ‘কথা’ কিন্তু মোটেই ফেলনা নয়। চলতি বছরের শুরুর দিকে ইউরোপীয় ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপে কে বিজয়ী হতে চলেছে, তা ঠিকঠাক বলে দিয়েছিল গেতা।
২০১০ সালে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপ ফুটবলে বেশ কয়েকবার ঠিকঠাক ভবিষ্যদ্বাণী করে রাতারাতি তারকা বনে যায় অক্টোপাস পল। তারপর ভবিষ্যদ্বাণী করায় বিশ্বজুড়ে নাম ছড়িয়েছে গেতার।
 ভোট বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হিলারি কিংবা ট্রাম্প যেই জিতুক না কেন, একটা আতঙ্ক কিছুতেই পিছু ছাড়ছে না মার্কিন ভোটারদের। নির্বাচনে টাকা ছড়ানো, বিরোধী পক্ষের ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে আসার পথ বন্ধ করা, প্রচার থেকে বিস্তর গালমন্দ করা, কোনো বিশেষ গোষ্ঠীর প্রতি আক্রমণাত্মক আচরণ করাএ সবই চলছে মার্কিন নির্বাচন ঘিরে। আর ভোটের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে, বিভেদের কুশ্রী চেহারা ততই কুশ্রীতর হচ্ছে।
বিভেদের রাজনীতি ও ভাষার জন্য রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমালোচনা করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাও। বলেছেন, ‘আমি আপনাদের ভোট চাই। ভয়কে বেছে নেবেন না। ভোটকেন্দ্রে যান। ভোট দিন। আপনারা যদি সঠিক সিদ্ধান্ত নেন, তাহলে আমরা পুরো বিশ্বকে এ কথা মনে করিয়ে দিতে পারব যে আমেরিকা কেন পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ জাতি।’
ওহাইও স্টেট ইউনিভার্সিটির রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ইমেরিটাস অধ্যাপক পল এ বেকের কথায়, ‘কতটা বিভেদমূলক আচরণ ভেবে দেখুন। বারাক ওবামা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক নন রিপাবলিকানদের এই প্রচার খণ্ডাতে শেষ পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট তার জন্মসনদ দেখিয়েছেন। তবু রিপাবলিকানদের অনেকের এখনো বিশ্বাস বারাক ওবামা মার্কিন নাগরিক নন।’
২০১২ সালের নির্বাচনেও ডেমোক্র্যাট সমর্থকের ৯৩ শতাংশ ডেমোক্র্যাটদের, আর রিপাবলিকানদের ৯৪ শতাংশ সমর্থক রিপাবলিকান প্রার্থীকে ভোট দিয়েছেন। এবারো এর খুব একটা পরিবর্তন হবে না বলেই সব মূল্যায়ন বলছে।
শুধু দলীয় দৃষ্টিকোণ থেকে মানুষ সবকিছু যাচাই করছে, এটাই একমাত্র সমস্যা নয়। নির্বাচন থেকে ভোটারদের সরিয়ে রাখার চেষ্টা নিয়েও রিপাবলিকানদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠছে। ফ্লোরিডায় দলটি সফল হয়েছে। নতুন আইনের কারণে সেখানে কয়েক লক্ষ অপরাধী ভোট দিতে পারবেন না, যাঁদের বড অংশই আফ্রিকান-আমেরিকান। এই অংশটিকে ডেমোক্র্যাট প্রার্থীরা তাদের ভোট ব্যাংক বলে মনে করেন।
ওহাইও স্টেট ইউনিভার্সিটির আইন বিভাগের অধ্যাপক ডেনিয়েল পি তোকাজি বলেন, আদালত স্বাধীন বলেই রিপাবলিকানরা আইন করে নর্থ ক্যারোলাইনা, উইসকনসিন ও টেক্সাসে মানুষকে ভোটাধিকার প্রয়োগে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছেন। তবে ওহাইওতে সে চেষ্টা চলছে এখনো। টাকা ছড়ানো নিয়েও উদ্বেগ বাড়ছে। ওহাইও পাবলিক রেডিওর করস্পনডেন্ট জো ইঙ্গেলস বলেন, নির্বাচনে যেকোনো প্রার্থীর প্রচারে যে কেউ নাম গোপন রেখে টাকা দিতে পারেন। এই সুবিধাটা ব্যবসায়ী ও সুযোগ সন্ধানী লোকজন ভালোভাবেই কাজে লাগাচ্ছেন। তাদের আশা নির্বাচনের পর তারা বাড়তি সুবিধা পাবেন।
 জো বলেন, প্রার্থীরা টাকা দিয়ে টিভিতে চাঙ্ক কিনছেন। যে কেউ যেকোনো চ্যানেল খুললেই এমন হাজারটা বিজ্ঞাপন দেখতে পাবেন। বিভিন্ন সময় ট্রাম্প মহিলাদের নিয়ে যা বলেছেন, তার ক্লিপ পরিবারের সকলের সঙ্গে বসে শিশুরাও দেখছে। আর হিলারি ক্লিনটন এতে খুবই বিপন্ন বোধ করছেন এমন একটা বিজ্ঞাপন প্রচার করছে চ্যানেলগুলি। ট্রাম্পও তার বক্তব্য প্রচারে এমন বিজ্ঞাপনের সুযোগ নিচ্ছেন। গোটা দেশ দুই শিবিরে বিভক্ত হওয়ায় বিজ্ঞাপনে প্রার্থীরা যে যা বলছেন, তার সমর্থকরা তা-ই বিশ্বাস করছেন।
 ডেইলি নিউজের এক সাংবাদিক ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রচার কভার করতে গিয়েছিলেন ডেটন শহরে। তার কথায়, তিনি একসময় দেখলেন, সব সমর্থকই সাংবাদিকদের দেখে ভেংচি কাটছেন। মিডিয়ার প্রতি তাদের নেতা ট্রাম্প রুষ্ট তাই তারাও রুষ্ট। ওই অনুষ্ঠানে একটি এক মহিলার টিশার্টের পিছনে ছাপানো ‘কারাগারে হিলারি’ এমন একটি ছবি। অবস্থা এমন যে ফাঁস হয়ে যাওয়া ইমেলে কী আছে, তা নিয়ে রিপাবলিকানদের কোনো চিন্তা নেই, তারা এখন প্রতিটি প্রচারে স্লোগান তুলেছেন ‘‘লক হার আপ’, ‘লক হার আপ’ (তাকে জেলে পুরে দাও)।
এদিকে আমেরিকার সান দিয়েগোর ক্যাথলিক চার্চ তাদের অনুসারীদের সতর্ক করে জানিয়েছে, যারা ডেমোক্র্যাটদের ভোট দেবে তারা নরকে যাবে। দ্য সান ডিয়েগো ইউনিয়ন-ট্রিবিউন জানিয়েছে, ১৬ অক্টোবর প্রকাশিত এমাকুলেট কনসেপশন অব ক্যাথলিক চার্চের বুলেটিনে একটি প্রচারপত্র ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছিল। তাতে ডেমোক্র্যাটদের ভোট দেয়া ‘আত্মবিধ্বংসী পাপ’ বলে উল্লেখ করা হয়। ওই প্রচারপত্রে ডেমোক্র্যাটদের গ্রহণ করা পাঁচটি নীতির কথা উল্লেখ করা হয়েছে, যেগুলি সমর্থন করলে চিরকালের জন্য অভিশপ্ত হতে হবে। ওই পাঁচটি নীতির মধ্যে গর্ভপাত ও সমলিঙ্গের বিয়েও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। বুলেটিনের ৩০ অক্টোবর প্রকাশিত সংখ্যায় অপ্রাসঙ্গিকভাবে হিলারি ক্লিনটনকে উদ্ধৃত করে তাকে শয়তান দ্বারা প্রভাবিত বলে দাবি করা হয়েছে। এমন ব্যক্তিগত আক্রমণ, কাদা ছোঁড়াছুঁড়ির নির্বাচন আমেরিকা আগে কখনো দেখেনি।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ