বৃহস্পতিবার ০২ মে ২০২৪
Online Edition

স্বাধীন বৈদেশিক নীতির রূপকার রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান

এম আসলাম চৌধুরী এফ.সি.এ : বৈদেশিক নীতি বা পররাষ্ট্রনীতি পৃথিবীর প্রত্যেক রাষ্ট্রের জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। বৈদেশিক নীতির মাধ্যমেই আন্তর্জাতিক সম্পর্ক গড়ে উঠে। বর্তমানে সমগ্র পৃথিবী একটা ‘গ্লোবাল ভিলেজ’-এর অন্তর্ভুক্ত। ফলে বহুমুখী উপযোগিতার কারণে পৃথিবীর কোন স্বাধীন রাষ্ট্রই সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে পরস্পর লেনদেন ব্যতীত চলতে পারে না। প্রত্যেক রাষ্ট্রই এই প্রাসঙ্গিকতা সামনে রেখে বৈদেশিক নীতি প্রণয়ন করে থাকে। তবে এ কথা অনস্বীকার্য যে, জাতীয় স্বার্থ সংরক্ষণ ও সাধন করাই হচ্ছে বৈদেশিক নীতির মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। অভ্যন্তরীণ পরিবেশ, জনমত, আন্তর্জাতিক রাজনীতি ও রাষ্ট্রের ভৌগোলিক অবস্থান, ঐতিহাসিক অবস্থা প্রভৃতি বৈদেশিক নীতি প্রণয়নে গুরুত্বপূর্ণ নির্ধারক হিসেবে ভূমিকা পালন করে।

১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর নয় মাস রক্ষক্ষয়ী যুদ্ধের পরে পৃথিবীর বুকে আত্মপ্রকাশ করে জাতি রাষ্ট্র বাংলাদেশ। বাংলাদেশের আবির্ভাব তাৎক্ষণিক কোন ঘটনা ছিল না। ১৯৪৭ সালের পরে দীর্ঘ ২৪ বছরের শোষণ ও বঞ্চনা যে ক্ষোভের সৃষ্টি করেছিল তাই ক্রমান্বয়ে একটি স্বতন্ত্র জাতিসত্তায় রূপান্তরিত হয়। ১৯৭০ সালে পাকিস্তানের ঐক্যবদ্ধ রাষ্ট্রীয় কাঠামোয় যে সাধারণ নির্বাচন হয়েছিল তার ফলাফল ছিল ঐতিহাসিক, অভাবনীয় ও তাৎপর্যপূর্ণ। কিন্তু নির্বাচনে ফলাফলের ভিত্তিতে সরকার গঠনের সুযোগ প্রদান না করে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের ওপর চাপিয়ে দেয়া হয় অমানবিক সামরিক আগ্রাসন। পশ্চিমা শাসকদের এই আগ্রাসনে দৃঢ়তা প্রদর্শনের পরিবর্তে রাজনৈতিক নেতৃত্ব আত্মসমর্পণ ও পলায়নপর মনোবৃত্তির পরিচয় দেয়। ফলে শংকিত, অন্ধকারাচ্ছন্ন ও দিক-নির্দেশনাহীন জাতিকে সঠিক পথে পরিচালিত করার মহান ব্রত পালন করেন এক সৈনিক, এক অকুতোভয় মেজর। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সর্বপ্রথম বিদ্রোহী সামরিক অফিসার হিসেবে চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন মেজর জিয়াউর রহমান। সম্বিত ফিরে পায় রাজনৈতিক নেতৃত্ব ও গোটা জাতি। ১৯৬৫ সালের যুদ্ধে পশ্চিম পাকিস্তানের খেমকারান রণাঙ্গনে যে সমর নিপুণতা ও চারিত্রিক দৃঢ়তা প্রদর্শন করেন জিয়াউর রহমান তারই পুনরাবৃত্তি ঘটনা ১৯৭১ সালের রণাঙ্গনে। পেশাদার সৈনিক জিয়া জাতির প্রয়োজনে সঠিক সময়ে সঠিক কাজটি করতে সব সময় সচেষ্ট ছিলেন।

নয় মাস মুক্তিযুদ্ধের ফলশ্রুতিতে বিজয়ের মালা ছিনিয়ে আনে এই জাতি। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে যে মহান রাষ্ট্রের জন্ম তার বৈদেশিক নীতি প্রণয়নের কাজটিও ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন পুরোপুরি অনুপস্থিত। ফলে মুক্তিযুদ্ধের সময় প্রবাসী মুজিবনগর সরকারের সাথে সোভিয়েত-ভারত অক্ষশক্তির যে বিশেষ সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল তা উপেক্ষা করা শেখ মুজিবের পক্ষে কোনোক্রমেই সম্ভব ছিল না। ১৯৭২ সালের সংবিধানে বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় চার মূলনীতি ঘোষণার বিষয়টিও ব্যাপক বিতর্কের জন্ম দিয়েছিল। ১৯৭০ সালের নির্বাচনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগের গ্রহণযোগ্যতার যে পটভূমি গড়ে উঠেছিল সে নির্বাচনের ইশতিহারে ধর্ম নিরপেক্ষতা, সমাজতন্ত্র এবং বাঙালি জাতীয়তাবাদের কোনো বিষয় অন্তর্ভুক্ত ছিল না। শেখ মুজিবের শাসনামলে বাংলাদেশের বৈদেশিক নীতির স্বরূপ পর্যালোচনা করলে কিছু স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য পরিলক্ষিত হয়। প্রথমত : সোভিয়েত ইউনিয়নের সাথে বিশেষ সম্পর্ক স্থাপনকে বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করা হয়েছিল। দ্বিতীয়ত : বাংলাদেশের বৈদেশিক নীতি প্রণয়নের ক্ষেত্রে ভারতের নির্ধারকের ভূমিকা পালন স্বীকৃত হয়েছিল। তৃতীয়ত : মুসলিম দেশগুলোর সাথে সম্পর্কের ক্ষেত্রে বিশেষ ঘাটতি পরিলক্ষিত হয়েছিল চতুর্থত : বাংলাদেশের অন্যতম বৃহত্তম প্রতিবেশী চীনের সাথে শীতল সম্পর্ক বিরাজমান ছিল।

শেখ মুজিবের শাসনামলে বাংলাদেশের সাথে সোভিয়েত ইউনিয়নের বিশেষ সম্পর্ক গড়ে উঠায় আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সোভিয়েত বলয়ভুক্ত একটি দেশ হিসেবেই পরিচিত হচ্ছিল। মুক্তিযুদ্ধে ভারতের ভূমিকার কারণে স্বাধীনতাত্তোর বাংলাদেশে ভারতের প্রভাব ছিল অপরিসীম। শেখ মুজিবুর রহমান ‘ভারতীয় মডেলের’ আদলে বাংলাদেশে একটি রাষ্ট্র ব্যবস্থা গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন। তাঁর শাসনামলে ভারতের সাথে প্রণীত ২৫ শালা মৈত্রী চুক্তি ব্যাপক বিতর্কের জন্ম দিয়েছিল। অনেকেই এই চুক্তিটিকে গোলামী চুক্তি হিসেবে আখ্যায়িত করতে চান। এই চুক্তির মাধ্যমে বাংলাদেশের দেশরক্ষা ও বৈদেশিক নীতি ভারতের প্রভাব বলয়ে আনা হয়েছিল। শেখ মুজিবের শাসনামলেই ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশের মরণফাঁদ ফারাক্কা বাঁধ পরীক্ষামূলকভাবে চালু করা হয়। মুসলিম বিশ্বের সাথে ঐ সময় বাংলাদেশের সম্পর্ক অত্যন্ত শীতল পর্যায়ে উপনীত হয়েছিল। ১৯৭৪ সালে পাকিস্তানের লাহোরে অনুষ্ঠিত ওআইসি শীর্ষ সম্মেলনে শেখ মুজিব যোগদান করলেও এবং তার শাসনামলের শেষ দিকে মুসলিম বিশ্বের সাথে সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা সত্ত্বেও তিনি সফল হননি। শেখ মুজিবের বৈদেশিক নীতির সবচেয়ে বড় সফলতা ছিল বাংলাদেশের মাটি থেকে ভারতীয় সৈন্য প্রত্যাহারে ভারতকে রাজী করানো। ভারতীয় সৈন্যরা বাংলাদেশ ভূখ- ত্যাগ না করলে ৭৫ পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের ইতিহাস অন্যরকম হতে পারতো। সার্বিক বিচার বিশ্লেষণে এ কথাই প্রতীয়মান হয় যে, মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীনতা লাভ করলেও বাংলাদেশ বিশ্বের বুকে একটি মর্যাদাসম্পন্ন স্বাধীন ও সার্বভৌম জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করতে পারেনি নতজানু বৈদেশিক নীতির কারণে।

১৯৭৫ সালের আগস্টে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের ধারাবাহিকতায় জাতির রাজনৈতিক ইতিহাসে আবির্ভূত হয় ৭৫-এর ৭ই নবেম্বর। ৪ঠা নবেম্বর ৭৫ বাংলাদেশে একটি সামরিক অভ্যুত্থান সংঘটিত হয়। অভ্যুত্থানের নেতাদের কার্যক্রমে জনমনে আশঙ্কা বদ্ধমূল হয় যে, জাতি পুনরায় আগস্ট পূর্ববর্তী রাষ্ট্র ব্যবস্থায় প্রত্যাবর্তন করছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষক সেনাবাহিনীর উপপ্রধান মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানকে করা হয় পদচ্যুত ও গৃহবন্দী। ৪ঠা নবেম্বরের সামরিক অভ্যুত্থানের নায়কদের আক্রোশই প্রমাণ করে বাংলাদেশের স্বাধীনতার অতন্দ্র প্রহরী জিয়াউর রহমান। এই অভ্যুত্থান স্থায়ী হয়েছিল মাত্র চারদিন। ৭ই নবেম্বর সিপাহী-জনতা ঐক্যবদ্ধভাবে সংঘটন করে এক যুগান্তকারী বিপ্লব। এই বিপ্লবের ফলশ্রুতিতে জিয়াউর রহমান রাজনৈতিক ক্ষমতার শীর্ষবিন্দুতে আরোহণ করেন। ৭ই নবেম্বরের বিপ্লবই ছিল পৃথিবীর সমসাময়িক কালের এক ব্যতিক্রমধর্মী ঘটনা যেখানে বিপ্লবের নায়ক প্রত্যক্ষ কোন ভূমিকা পালন করেননি। তাকে সিপাহী এবং জনতাই বন্দীদশা থেকে মুক্ত করে ক্ষমতার মূল মঞ্চে নিয়ে আসে। জিয়াউর রহমান ৭৫-এর নবেম্বরের পরে বাংলাদেশের রাষ্ট্র ক্ষমতায় অপ্রতিদ্বন্দ্বী ব্যক্তি হিসেবে আবির্ভূত হলেও প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিযুক্ত হন ১৯৭৭ সালের ২১ শে এপ্রিল।

শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকেই একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ গঠন করার কাজে আত্মনিয়োগ করেন। আন্তর্জাতিক বিশ্বে মর্যাদাহীন, ‘তলাবিহীন ঝুঁড়ি’ হিসেবে নিন্দিত বাংলাদেশকে বিশ্বের দরবারে সুপ্রতিষ্ঠিত করার জন্য সংগ্রামে লিপ্ত হন। জিয়াউর রহমানের দেশপন্থী পদক্ষেপের ফলে বাংলাদেশ তার স্বাতন্ত্র্য, স্বকীয়তা, জাতি রাষ্ট্র হিসেবে নিজস্ব অবস্থানের ঘোষণা প্রদানে সক্ষম হয়। বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় স্বার্থকে সর্বোচ্চ প্রাধান্য দিয়ে এক যুগান্তকারী, গণমুখী বৈদেশিক নীতি প্রণয়নে হাত দেন জিয়াউর রহমান, তার দক্ষ পরিচালনায় বাংলাদেশ বিশ্বের দরবারে বিশেষ স্থান করে নিতে সমর্থ হয়।

জিয়ার বৈদেশিক নীতির দুটি গুরুত্বপূর্ণ দিক ছিল। চীনের সাথে বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় স্বার্থকে প্রাধান্য দেয়ার কারণে ভারতের সাথে সম্পর্কের অবনতি ঘটে। এ সময় ভারত গঙ্গার পানি একতরফাভাবে প্রত্যাহার করে নেয় এবং মুজিবপন্থী গেরিলাদের আশ্রয় দিয়ে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে নাশকতামূলক তৎপরতা চালাতে সহযোগিতা করে। ভারত একতরফাভাবে ফারাক্কার বাঁধ দিয়ে পানি প্রত্যাহার করে নিলে বাংলাদেশ ভয়াবহ পানি সংকটের সম্মুখীন হয়। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল পরিণত হয় মরুভূমিতে। ফারাক্কার পানি বণ্টন প্রশ্নে ভারতের সাথে দ্বিপক্ষীয় সমঝোতা সম্ভব না হওয়ায় জিয়াউর রহমান বিষয়টি আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ফোরামে উত্থাপনের পদক্ষেপ গ্রহণ করে। ১৯৭৬ সালের মে মাসে তুরস্কের ইস্তাম্বুলে ৪২ জাতি শীর্ষক ইসলামিক পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সম্মেলনে রাষ্ট্রপতি জিয়া ব্যক্তিগতভাবে ফারাক্কা সমস্যাটি উত্থাপন করেন। একই বছর আগস্ট মাসে কলম্বোতে জোট নিরপেক্ষ সম্মেলনে বাংলাদেশ ফারাক্কা প্রশ্ন উত্থাপন করে ন্যাম সদস্যদের সহানুভূতি অর্জনে সমর্থ হয়েছিলেন। পরে বাংলাদেশ জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৩১তম অধিবেশনে প্রশ্নটি উত্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছিল। রাষ্ট্রপতি জিয়ার এই ভূমিকা নিঃসন্দেহে তার জাতীয়তাবাদী চেতনা, দেশপ্রেম, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতি অবিচল আস্থার কথাই মনে করিয়ে দেয়। বাংলাদেশের এই স্বাধীন, অবিচল ও আপোষহীন বৈদেশিক নীতির কারণে ভারত গঙ্গার পানি বণ্টন প্রশ্নে ১৯৭৭ সালে পাঁচ বছরমেয়াদী চুক্তি করতে বাধ্য হয়।

জিয়াউর রহমানের আমলে প্রণীত বাংলাদেশের বৈদেশিক নীতির সুষ্ঠু, সুষম এবং গতিশীল বিকাশ, উন্নয়নশীল এবং উন্নত সকল দেশের সুপ্রশংসিত দৃষ্টি আকর্ষণ করে। মুসলিম বিশ্বেও বাংলাদেশের অবস্থান সুদৃঢ় হয়। জিয়ার শাসনামলে বাংলাদেশ ইসলামি সলিডারিটি ফান্ডের স্থায়ী কাউন্সিলের সদস্য পদ লাভ করে। জেরুজালেম ও প্যালেস্টাইন সমস্যা সমাধানে গঠিত ‘আল কুদস’ কমিটিতেও বাংলাদেশকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ১৯৮১ সালে অনুষ্ঠিত ইরান-ইরাক ভ্রাতৃঘাতী যুদ্ধের মধ্যস্থতাকারী কমিটিরও সদস্য করা হয় বাংলাদেশকে। এ সময় বাংলাদেশ বিশটি আন্তর্জাতিক সংস্থার সদস্য হিসেবে বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। বিশ্বের মুক্তিকামী সকল আন্দোলনের প্রতি জিয়াউর রহমানের বাংলাদেশ বিশেষ সহানুভূতিশীল ছিল। মোটকথা ভৌগোলিক অবস্থান, জাতীয় স্বার্থ বিবেচনা, বহির্বিশ্বের সাথে ভারসাম্যপূর্ণ সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা এবং বাংলাদেশের স্বাতন্ত্র্য ও স্বকীয়তার প্রতি লক্ষ্য রেখে জিয়াউর রহমান তার বৈদেশিক নীতি ঢেলে সাজিয়েছিলেন।

রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ছিলেন সার্কের (ঝঅঅজঈ) স্বপ্নদ্রষ্টা। তিনি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করতেন দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ সহযোগিতার মাধ্যমে এই অঞ্চলের জনগণের ভাগ্যোন্নয়ন সম্ভব। এ লক্ষ্যে জিয়াউর রহমান দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর সমন্বয়ে একটি আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা গঠন করার কথা সক্রিয়ভাবে বিবেচনা করতে শুরু করেন। রাষ্ট্রপতি জিয়ার নির্দেশে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ শামস-উল-হক ১৯৮০ সালের ২৫ শে নবেম্বর দক্ষিণ এশিয়ার ৬টি রাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের নিকট আঞ্চলিক সহযোগিতা সম্পর্কিত একটি ওয়ার্কিং পেপার (ডড়ৎশরহম ঢ়ধঢ়বৎ) প্রেরণ করেন। দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতার মূলমন্ত্র ঐ পত্রে ধ্বনিত হয়েছিল। ১৯৭৮-৮০ সময়কালে জিয়াউর রহমান পাকিস্তান, ভারত, নেপাল, ভুটান ও শ্রীলঙ্কা সফর করেন এবং বিভিন্ন সময়ে প্রত্যেকটি রাষ্ট্রে দূত পাঠিয়ে দক্ষিণ এশিয়ায় আঞ্চলিক সহযোগিতা প্রতিষ্ঠার যৌক্তিকতা ব্যাখ্যা করেন। ১৯৮৫ সালে সার্ক যখন বাস্তব রূপ লাভ করে। তখন দূরদর্শী জিয়ার দৃষ্টিভঙ্গি নতুনভাবে মূল্যায়নের সুযোগ সৃষ্টি হয়। আজ বর্তমান বিশ্ব রাজনীতির প্রেক্ষাপটে সম্প্রসারণশীল সার্ক এক গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রজোট। ২০০৫ সালে ঢাকায় অনুষ্ঠিত ত্রয়োদশ সার্ক শীর্ষ সম্মেলনে এই সংস্থাটির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে রাষ্ট্রপতি জিয়াকে বিশেষ সম্মান প্রদর্শন করা হয়।

জিয়াউর রহমান উৎপাদনমুখী অর্থনীতি, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন ও স্বনির্ভর বাংলাদেশ অর্জনে সমগ্র জাতির মধ্যে কর্মস্পৃহা জাগিয়ে তুলতে সমর্থ হন। তিনি আত্মমর্যাদা সম্পন্ন একটি জাতি গঠনে স্বাধীন, সার্বভৌম, বৈদেশিক নীতির সার্থক রূপকার ছিলেন। বিশ্বের দরবারে বাংলাদেশের অবস্থানকে সমুন্নত করতে সমর্থ হয়েছিলেন জিয়াউর রহমান। ৭৫ পূর্ববর্তী অচলায়ন ভেঙ্গে জিয়াউর রহমানের বৈদেশিক নীতি বাংলাদেশের অগ্রযাত্রাকে নিশ্চিত করেছিল। তার দূরদর্শিতা ও দেশপ্রেম আজও বাংলাদেশকে সম্মুখ পানে এগিয়ে যেতে প্রেরণা যোগায়।

লেখক : বিশিষ্ট কলামিস্ট ও প্রাবন্ধিক, সভাপতি, জিয়া পরিষদ, চট্টগ্রাম উত্তর জেলা

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ