সোমবার ২০ মে ২০২৪
Online Edition

মুক্তিযুদ্ধকালে আমি পাক আর্মিদের ক্যাম্পে মুরগী সাপ্লাই করতাম, এটা সত্য নয় -শাহরিয়ার কবির

শাহেদ মতিউর রহমান : জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক মন্ত্রী আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের বিরুদ্ধে কথিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার প্রথম সাক্ষী শাহরিয়ার কবিরকে জেরা করেছেন ডিফেন্স পক্ষের আইনজীবী এডভোকেট মিজানুল ইসলাম। জেরার এক পর্যায়ে বেগম মোস্তারী শফি লিখিত একটি বইয়ের উদ্ধৃতি দিয়ে আইনজীবী প্রশ্ন করেন ‘আপনি মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেননি এবং ঐ সময়ে আপনি দখলদার পাক আর্মিদের জন্য তাদের ক্যাম্পে মুরগী সরবরাহ করতেন'। জবাবে শাহরিয়ার কবির  বলেন ‘এটা সম্পূর্ণ অসত্য এবং নির্জ্জলা মিথ্যা'। উল্লেখ্য, শাহরিয়ার কবির এই মামলায় প্রথম সাক্ষী হলেও সাক্ষ্য দেয়ার মাঝপথে তিনি বিদেশে চলে যাওয়ার কারণে তার জেরা অসমাপ্ত ছিল। গতকাল তার জেরা শেষ হয়েছে। আগামী ১৯ ফেব্রুয়ারি এই মামলার পরবর্তী তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার ট্রাইব্যুনাল-২ এর চেয়ারম্যান ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে অপর দুই সদস্য মুজিবুর রহমান মিয়া ও শাহিনুর ইসলাম সাক্ষীর জেরা রেকর্ড করেন।

ডিফেন্স পক্ষের জেরার অপর এক প্রশ্নের জবাবে শাহরিয়ার কবির বলেন, মুক্তিযোদ্ধের পরে অনেক মুক্তিযোদ্ধাও জামায়াতে ইসলামীতে যোগদান করেছেন। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, গণতদন্ত কমিশনের প্রথম রিপোর্টে রাজাকারদের তালিকায় মুজাহিদ সাহেবের নাম ছিল না। তবে তিনি এই জবাবের ব্যাখ্যা দিয়ে  বলেন, প্রথম রিপোর্টে আমাদের রসদ কম ছিল। তখন তদন্ত করতে পারিনি তবে পরের রিপোর্টে তার নাম ছিল।

ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সাবেক আহবায়ক বেগম মোস্তারী শফি লিখিত ‘জাহানারা ইমামের স্মৃতির উদ্দেশে লেখা চিঠি'  নামের বইটিতে লেখক এক জায়গায় লিখেছেন, ঘাদানিকের লোকজনের মধ্যে কথোপকথনের এক পর্যায়ে একজন সদস্য বলেছেন, শাহরিয়ার কবির সাহেব নিজে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেননি। এমনকি তিনি মুক্তিযুদ্ধকালে দখলদার পাক আর্মিদের ক্যাস্পে মুরগী সরবরাহ করতেন। লেখকের এই লেখাটির প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে ডিফেন্স আইনজীবী প্রশ্ন করেন আপনি কি এই বইটি পড়েছেন? জবাবে শাহরিয়ার কবির বলেন, আমি বইটি পড়িনি। আর আমার বিরুদ্ধে যে বক্তব্য এই বইটিতে বলা হয়েছে তা সত্য নয় এটা নির্জ্জলা মিথ্যা।

জেরাতে আইনজীবী প্রশ্ন করেন, ‘৭১-এর ঘাতক ও দালালেরা কে কোথায়' বইটি কি কোন প্রকার তদন্ত ছাড়াই প্রকাশিত হয়েছিল? জবাবে শাহরিয়ার কবির বলেন, এটি একটি কোষগ্রন্থ। এ ধরনের বইয়ে যেকোনো সময়েই নতুন কোন তথ্য সংযোজন বা সংশোধনও হতে পারে।

জেরার উল্লেখযোগ্য অংশ

প্রশ্ন : ১৯৭১ সালের ১১ ডিসেম্বর এর দৈনিক আজাদ পত্রিকাটি আপনার নিকট থেকে তদন্ত কর্মকর্তা জব্দ করেছিল কি?

উত্তর : এই মুহূর্তে আমার মনে নেই।

প্রশ্ন : গণতদন্ত কমিশনের প্রথম তদন্তের রিপোর্টে মুজাহিদ সাহেবের নাম ছিল না।

উত্তর : প্রথম রিপোর্টে নাম ছিল না। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম যেহেতু আমাদের রসদের সীমাবদ্ধতা ছিল তাই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম প্রতিবছর আমরা ৮ জনের বিষয়ে তদন্ত করবো। তবে দ্বিতীয় রিপোর্টে মুজাহিদের নাম ছিল।

প্রশ্ন : গণতদন্ত কমিশন কোন সালে গঠিত হয়।

উত্তর : ১৯৯৩ সালে ২৬ মার্চ।

প্রশ্ন : দেশের প্রতিটি জেলায় শাখা ছিল কি?

উত্তর : না। তবে কেন্দ্রীয় গবেষকরা প্রতি জেলায় গিয়ে কাজ করতো।

প্রশ্ন : গবেষকদের সংখ্যা কত ছিল কার নেতৃত্বে গঠিত হয়েছিল।

উত্তর : আমার নেতৃত্বে তদন্ত কমিশন গঠিত হয়েছিল। সংখ্যা তদন্ত কমিশনের রিপোর্টে উল্লেখ আছে।

প্রশ্ন : যাদের জবানবন্দির ভিত্তিতে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছিল তাদের নাম আপনি তদন্ত কর্মকর্তার কাছে সরবরাহ করেছিলেন কি?

উত্তর : তদন্ত কমিশনের গোটা রিপোর্ট আমরা দিয়েছিলাম। সেখানেই সব নাম উল্লেখ আছে।

প্রশ্ন : '৭১-এর ঘাতক ও দালালেরা কে কোথায়' বইটি কোন তদন্ত ছাড়াই প্রকাশ করেছিলেন কি?

উত্তর : এটি এক ধরনের কোষগ্রন্থ। এ গ্রন্থ প্রতি সংস্করণেই সংশোধন ও সংযোজনের সুযোগ থাকে। যা বইটির ভূমিকাতেই বলা আছে।

প্রশ্ন : ১৯৮৯ সালে প্রকাশিত এই বইটিতে আলবদর নেতাদের নাম ছিল।

উত্তর : হ্যাঁ, সঠিক।

প্রশ্ন : বইটির ঐ সংস্করণে মুজাহিদ সাহেবকে আলবদর হিসেবে উল্লেখ করেননি।

উত্তর : হ্যাঁ করেছি।

প্রশ্ন : জহির রায়হানের স্ত্রীর নাম ছিল সুচন্দা।

উত্তর : হ্যাঁ। তার দুজন স্ত্রী ছিল।

প্রশ্ন : ৩০ জানুয়ারি ১৯৭২ সালে জহির রায়হান সাহেবকে কিছু লোক ডেকে নিয়ে মিরপুরে গিয়েছিল কি?

উত্তর : কিভাবে মিরপুরে গিয়েছিলেন তা বইয়ে লেখা আছে।

প্রশ্ন : মিরপুরে যাওয়ার আগে জহির রায়হানের সাথে আপনি ছিলেন কি?

উত্তর : হ্যাঁ, ছিলাম।

প্রশ্ন : মিরপুরে যাওয়ার পথে আপনার সাথে কোন সামরিক বাহিনীর সদস্য ছিল কি?

উত্তর : না। পরিবারের সদস্য এবং কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন।

প্রশ্ন : ১৫/১২/২০০১ তারিখে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় গ্রেফতার হয়ে আপনি ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছিলেন কি?

উত্তর : হ্যাঁ, দিয়েছিলাম। তবে ঐ মামলাটি সুপ্রিম কোর্টে বাতিল হয়েছিল।

প্রশ্ন : বেগম মোস্তাফিজ শফিকে আপনি চিনেন?

উত্তর : চিনি।

প্রশ্ন : বেগম মোস্তাফিজ শফি কি স্বাধীনতা বিরোধী ছিলেন?

উত্তর : জানা নেই। অনেক মুক্তিযোদ্ধা স্বাধীনতার পরে জামায়াতে ইসলামীতে যোগদান করেছেন।

প্রশ্ন : একটি বইতে আপনাকে পাক আর্মিদের মুরববী সাপ্লাই করেছেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

উত্তর : এটি একটি নির্জলা মিথ্যা কথা।

প্রশ্ন : ব্যক্তিগতভাবে আপনি জামায়াত বিরোধী ব্যক্তি। তাই দীর্ঘদিন যাবত আপনি জামায়াতের বিরুদ্ধে বই লিখছেন মিথ্যাচার করছেন ও বিবৃতি দিচ্ছেন।

উত্তর : আমি মনে করি জামায়াতে ইসলামী দল হিসেবে গণহত্যাকারী মানবতাবিরোধী সংগঠন। জামায়াতের রাজনীতি ধর্মের নামে হত্যা, ধর্ষণ বৈধতা দিয়েছে। তাই আমি জামায়াতের বিরুদ্ধে লেখালেখি করি।

প্রশ্ন : আপনি ধর্মভিত্তিক রাজনীতির বিরোধী।

উত্তর : আমি ধর্মের রাজনীতির বিরোধী। ধর্ম পবিত্র বিষয়। ধর্মকে রাজনীতিতে টেনে আনা ঠিক নয়।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ