সোনাডাঙ্গার জঙ্গলে
আহমদ মতিউর রহমান
শিপন ভোর বেলাতেই তার মামীকে মোবাইলে জানায় সব ঘটনা। শুনে মামী কান্নামিশ্রিত গলায় বলেন, তোরা ভালো আছিস তো ? কি হয়েছে তোদের? ফোন ধরিসনি কেন?
: হ্যা মামী সব বলব।
: তাতো বলবি। তোর মামার পাগল পাগল দশা হয়ে গেছে যে!
: না মামী, তুমি বলো মামাকে, আমরা ভালো আছি, কিসসু হয়নি আমাদের।
: আচ্ছা। কোথায় এখন তোরা?
: আমরা কাছাকাছি চলে এসেছি। আসছি মামী।
এরপর কল কেটে গেল। কল ড্রপ নিয়মিত ব্যাপার। আবার শিপনের মোবাইল ফোনের টাকা ফুরিয়েও যেতে পারে। নতুন করে ইজি লোড করা হয়নি। আর সারারাত বন্ধ থাকার পর সকাল বেলায় শিপনসহ সবার মোবাইল ফোনই সচল হয়েছে। তবে কারো কারো মোবাইলে চার্জ খুব কম।
নিজের ফোনটা চার্জার বের করে চার্জ করতে প্লাগে ঢুকিয়ে দিলো শিপন। না মামী কল ব্যাক করেননি। ইনফেক্ট কথা তো সব বলা হয়ে গিয়েছিল।
ফোনের চার্জার ব্যাগ থেকে বের করতে গিয়ে ছোট মামার একটা চিঠি বের হয়ে এল। চিঠিটা এসেছে সিয়েরা লিওন থেকে, ওরা সিলেটে রওয়ানা হবার মুহূর্তে। তাই না পড়ে ব্যাগে ভরেই রওনা দিয়েছে। এই যুগে চিঠি? অবাক হয়েছিল শিপন। তারিক চৌধুরি ওর ছোট মামা। একটু আলাদা ধরনের। আর্মি অফিসার। এখন পোস্টিং সিয়েরা লিওনে। কাইদুয়াঙ্গা শহরে। শহরের নাম শুনে তো সবাই হেসে গড়াগড়ি।
: এই রকম নাম শহরের? কেমন জানি? বলেছিল শিপনের বড় বোন আসমা তাপসী।
: ঠিকরে আপু।
: মামা যাবার আর যায়গা পেল না?
: কি করবে বল? শান্তি স্থাপনের জন্য আর্মির মিশনে যাত্রা। যেখানে অশান্তি সেখানেই তো তাদের পাঠায় জাতিসংঘ।
: রাখ রাখ, পাকামো করতে হবে না। আমি কি তা জানি না?
: আলবত জানিস। এমনি বললাম।
: যা ভাগ এখান থেকে। এই বলে দূর দূর করে তাড়িয়ে দেয় বোন আসমা তাপসী। তাপসী রাবেয়া কত ভালো মানুষ, কত হেল্পফুল তাই তার নাম রাবেয়া তাপসী। কিন্তু তার পিঠাপিঠি বড় বোনটা মোটেই হেল্পফুল না। শুধু বকাঝকা করে শিপনকে।
শিপন শুধু তারিক মামার কাছে একটু পাত্তা টাত্তা পায়। ফলে তাকে ভালোবাসে খুব। সেই মামার চিঠি বলে কথা। সে পড়তে বসে।
কাইদুয়াঙ্গা
১৪ নভেম্বর ২০২৪
প্রিয় শিপন।
আমার লক্ষকোটি ভালবাসা নিস। আশা করি ভালো আছিস। তোদের ছেড়ে এই ভিন্নদেশে এই যুদ্ধ বিগ্রহের মাঝে কিছুই ভালো লাগছে না রে। কারণ আমার প্রিয় বোনটাকে দেখতে পাইচি না। তোরা আমার প্রিয় ভাগনে ভাগ্নি তোদের দেখতে পাই না। দেশটাতে যুদ্ধ থাকলেও আমরা খুব খারাপ নেইরে। রাজধানী থেকে তিনশো কিমি দূরে আমরা একটা সাবআরবান এলাকায় থাকি। এখানকার লোকগুলো খুব পাজি। মোটেই কথা শোনে না। আর কেবল এক গ্রুপ আরেক গ্রুপের সাথে ঝগড়া মারামারি করে। আর আমাদের ক্যাম্পটার কাছে একটা বাংলো বাড়ি আছে। ঘন জঙ্গলে ঘেরা। মনে হয় ভূতুড়ে বাড়ি। তুই গল্পে যে সব ভূত প্রেতের কথা পড়িস এই বাড়িটা হুবহু সে রকমের রে। আহ তুই দেখলে যে কি ফিল করতি ভেবেই পাচ্ছি না।
আরেকটা দিনের কথা কথা বলি শোন। দিন না রাত রে মামু। এক রাতে আমরা গেলাম। গেরিলারা আসতেছে শুনে। গোপন খবর পেয়ে। গেলাম তাদের ধরতে। আর্মস এমুনিশন তাক করা। সেই ভূতুড়ে বাড়িতে গিয়ে গেল আমাদের গাড়ির চাকা পাংচার হয়ে। আমরা সারা রাত বসে ছিলাম গাড়িতে। কি সব আজব আজব ঘটনা ঘটলো তুই দেখলে মজা পেতিস।
আর শোন না। আমাদের চারিপাশে শুধু মুরগির ছোট ছোট বাচ্চা ঘুরতে দেখেছি। কোথা থেকে এত মুরগির বাচ্চা আইল আল্লাহ মালুম। সেই মুরগির বাচ্চার উপর ঝুপ ঝুপ করে মাটির দলা পড়তেছিল। মনে হচ্ছিল কেউ ইচ্ছে করে ফেলছে। যাই হোক ভোরে সেই স্থান ত্যাগ করি আমরা।
বি. দ্র . এটা কি কোন ভৌতিক কিছু ছিল কি না গবেষণা করে জানাতে ভুলিস না।
বি .দ্র. ২ : বড় আপিকে (তোর মামণি) সালাম দিবি।
বি. দ্র ৩ : জেনে মোটেই অবাক হোস না, এদেশের মানুষ ইন্দুর ভাজি করে খায়। (তবে আমরা খাই না)
ইতি
তোর অপ্রিয় মামা
(চলবে)