সাদিয়ার সফলতা
ইরফান তানভীর
সেতু, পিংকি ও সাদিয়া। তিন বান্ধবী। এ বছর পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ছে ওরা। পরস্পরে খুবই মিল। গলায় গলায় ভাব। একজনকে ছাড়া যেন চলে না অন্য জনের। স্কুলে আসার পর সবসময় এক সাথে থাকে। একই বেঞ্চে বসে। দুপুরে টিফিনের ছুটি হলে এক সাথে বসেই টিফিন সম্পন্ন করে। একজন আরেকজনকে ছাড়া কিছুই খায় না। একদিন সেতু কোনো কারণে টিফিন নিয়ে আসতে পারেনি। তাই স্বভাবতই সে একটু দূরে দূরে থাকছিল। বিষয়টি বুঝতে পেরে এগিয়ে যায় পিংকি ও সাদিয়া। দুজনে মিলে টেনে নিয়ে আসে সেতুকে। এবং তাকে নিয়ে টিফিনের খাবার ভাগ করে খেয়ে নেয়। এভাবেই সবসময় মিলেমিশে থাকে ওরা।
সেতু ও পিংকি দু'জনই অনেক মেধাবী ছাত্রী। পড়াশোনায় খুব ভালো। সেতু সবসময় পরীক্ষায় প্রথম স্থান অর্জন করে। পিংকি থাকে দ্বিতীয় স্থানে। এক অথবা দুই নম্বর বেশি পেয়ে ভাগ্যক্রমে এগিয়ে যায় সেতু। পিংকি দ্বিতীয় হলেও সেতুর চেয়ে মেধায় কোনো অংশে কম নয়। স্কুল জুড়ে তাদের খুবই সুনাম। স্যার-মেডামেরা তাদের প্রসংশা করে। আদর করে।
স্কুলের হেডস্যার পিকুল সাহেব। একদিন তিনি ক্লাসে এসে পিংকি ও সেতুকে ক্লাস-ক্যাপ্টেন বানিয়ে দিলেন। ফলে সবাই তাদের খুবই সমীহ করে চলত। ক্লাস -ক্যাপটেন হয়ে দুজনই খুব স্বেচ্ছাচারী ও অহংকারী হয়ে ওঠলো। সহপাঠীদের সাথে সুন্দর আচরণের বিপরীতে শুরু করলো অসদাচরণ। এই দুই ক্লাস -ক্যাপ্টেনের জ্বালায় অতিষ্ঠ হয়ে গেলো সবাই। তবুও ভয়ে কেউ কিছু বলতে পারতো না। তাদের অহমিকা ও আত্মম্ভরিতা এতটাই বেড়ে গেলো যে তাদের বান্ধবী সাদিয়াকেও কাছে ঘেঁষতে দেয় না। পান থেকে চুন খসলেই মুখের উপর যা তা বলে দেয়। সাদিয়াও কিছু বলে না। শুধু ধৈর্য ধরে এবং সময়ের অপেক্ষা করতে থাকে।
সাদিয়ার মেধায় তুলনামূলক কিছুটা দুর্বল। পড়া বেশি মনে থাকে না ওর। তবে সাদিয়া এবার মনে মনে এক বজ্র কঠিন শপথ নিল। এখন থেকে সে পড়া-শোনায় কোনো অলসতা করবে না। অনেক মনোযোগী হবে। কঠোর পরিশ্রম করবে। পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট করে পিংকি ও সেতুকে উচিত জবাব দিবে এবং তাক লাগিয়ে দিবে সবাইকে।
সামনে বার্ষিক পরীক্ষা। আর মাত্র দু সপ্তাহ বাকি। তবুও সেতু ও পিংকির পড়াশোনার প্রতি কোনো গুরুত্ব নেই। মেধা একটু বেশি হওয়ার ওরা ভেবেই নিয়েছে যে ঠিকঠাক পড়াশোনা না করেও বরাবরের মতো ভালো ফলাফল করে ফেলবে। এদিকে সাদিয়া পড়ালেখায় আগের চেয়ে দ্বিগুণ মনোযোগ দিলো। দিবারাত্রি নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। রাতদিন একাকার করে পড়ালেখা করছে। দেখতে-দেখতে পরীক্ষাও চলে আসলো।
আগামীকাল পরীক্ষা। সাদিয়া জানে পরীক্ষার আগে বেশি রাত জাগতে নেই। তাই সে রাত ১০টার আগেই ঘুমিয়ে যায়।
পরদিন সকাল বেলা। চারদিকে হিম শীতল বাতাস বইছে। কুয়াশার চাদরে ঢেকে আছে প্রকৃতি। ছিমছাম পরিবেশ। সাদিয়া মা-বাবার কাছ থেকে দোয়া নিয়ে পরীক্ষার হলে গিয়ে উপস্থিত হয়। কিছুক্ষণের মধ্যে প্রশ্নপত্রও হাতে চলে আসে।
চেয়ে দেখে সব প্রশ্নই কমন। আনন্দের এক অনন্য শিহরণ বয়ে গেলো সাদিয়ার মনে। পাশের কাউকেই বিষয়টি বুঝতে না দিয়ে ধীরেসুস্থে লেখা শুরু করলো সাদিয়া। সব প্রশ্নের খুব সুন্দর ও গোছালো উত্তর প্রদান করলো। এভাবেই সুচারুরূপে সম্পন্ন হলো সাদিয়ার প্রতিটি পরীক্ষা।
কিছুদিন পর রেজাল্ট প্রকাশ হল। রেজাল্ট প্রকাশ হতেই স্কুল জুড়ে সাদিয়াকে নিয়ে রীতিমতো হৈচৈ পড়ে গলো। সবার মুখে মুখে এখন শুধু সাদিয়ার নাম। সেতু, পিংকিসহ সবাইকে পেছনে ফেলে মেধা তালিকায় প্রথম স্থান অর্জন করে সাদিয়া। স্যার-মেডামেরা খুবই খুশি হয় সাদিয়ার প্রতি। ফুলেল শুভেচ্ছা জানিয়ে সবাই সাদিয়াকে বরণ করে নেয়।