অভিমানি হাঁস
শ্যামল বণিক অঞ্জন
স্বপ্ননীলের প্রাণচঞ্চল হাঁসটা আজ কেমন যেন হয়ে গেছে! সারাদিন ঝিমঝাম রয়েছে, নেই কোন হাঁকডাক, সাড়াশব্দ। যে হাঁসটি ঘড়ির কাঁটায় রাত আটটা বাজলে খাবারের জন্য চেঁচামেচি শুরু করতো প্যাকপ্যাক করে, সেই হাঁসটি যেন আজ আমুল বদলে গেছে। স্বপ্ননীলের বাবা এ বিষয়টা হঠাৎ খেয়াল করলো এবং ওর থাকার ঘরে উঁকি দিয়ে দেখলো ওর সঙ্গী হাঁসটা থেকে আজ অনেকটা দূরে ঘরের এককোণায় গিয়ে চুপচাপ বসে রয়েছে। ঘটনাটা তাঁকে খুব আশ্চর্য করেছে। তাই সে ছেলে স্বপ্ননীলকে ডেকে বললো- স্বপ্ন! এ্যাই স্বপ্ন!! এদিকে আয় তো দেখি!
বাবার ডাক শুনে স্বপ্ননীল দৌড়ে বাবার কাছে গিয়ে বললো- কি হলো বাবা ডাকছো কেন? বাবা বললেন দ্যাখ তো হাঁসটার আজ কি হয়েছে! কোনো সাড়াশব্দ নেই! চুপচাপ, বিষয়টা কি? বাবার কথা শুনে স্বপ্ননীলও বললো -- হ্যাঁ তাই তো আজকে তো ওর তেমন একটা চঞ্চলতা আমার চোখে পড়লো না। সারাদিন চুপচাপ, খাবারও খায়নি! বাবা-ছেলের কথা শুনে স্বপ্ননীলের মাও এগিয়ে এলো। বললো, হ্যাঁ আমিও বিষয়টা খেয়াল করেছি। আজকে সারাদিন ও ঘর থেকেই বের হয়নি। কারণটা আমি বুঝতে পারলাম না। হাঁসটার এমন আচরণে বাবাও খুব চিন্তিত হয়ে পড়লেন। কারণ এই হাঁসটি ওনাদের সকলের খুব প্রিয়। সেই একদিন বয়সী একটা বাচ্চা ভরা শীতে কিনে এনে অনেক আদর যত্নে প্রতিপালন করে তিলে তিলে বড় করে তুলেছে, এখন ডিম দিচ্ছে। তাছাড়া স্বপ্ননীলদের পরিবারের প্রতিটি মানুষের সাথে ওর একটা নিবিড় সম্পর্কও গড়ে উঠেছে। আর তাই হাঁসটিও কিছুটা আহ্লাদী স্বভাবের। রাত আটটা বাজলেই রাতের খাবারের জন্য সে উচ্চ শব্দে প্যাকপ্যাক করে সারা বাড়ি যেন মাথায় তোলে!
হাঁসটির এমন বদলে যাওয়াতে সবাই চিন্তামগ্ন হয়ে গেলো। বাবা বললেন আচ্ছা তুই একটা কাজ কর স্বপ্ন, ওর জন্য খাবারটা রেডি করে নিয়ে দ্যাখ খায় নাকি। বাবার কথামতো স্বপ্ন ছুটে গেলো হাঁসের জন্য খাবার আনতে। ক্ষণিক সময়ের মধ্যেই খাবার নিয়ে হাজির হলো কিন্তু কিছুতেই কিছু হলো না। ওর সঙ্গী হাঁসটা খাবার খেলেও অই হাঁসটা কিছুতেই খাবার মুখে তুললো না, এমনি ফিরেও তাকালো না। এবার বাবা ছেলের দুশ্চিন্তা যেন আরো বাড়তে লাগলো। ভাবলো আবার কোন অসুখ বিসুখ করলো কিনা। এমন সময় মা এসে বললেন-- একটা বিষয় আমি গভীরভাবে খেয়াল করলাম। গতকাল রাতে যখন হাঁসটা খাবারের জন্য চিৎকার করছিলো তখন স্বপ্ন ওকে খুব জোরে একটা ধমক দিয়েছিলো আর তখন থেকেই ও কেমন যেন চুপচাপ হয়ে গেছে। মায়ের কথা শেষ না হতেই স্বপ্ন বললো, হ্যাঁ কালকে যখন স্যার আমাকে পড়াতে এসেছিলো তখন হাঁসটা জোরে জোরে চেঁচামেচি করতে থাকে আর আমি কিছুটা বিরক্ত হয়ে ওকে একটা ধমক দেই বাবা। বাবা বললেন ওহ্ এটাই তাহলে আসল ঘটনা! অভিমান হয়েছে উনার। মা বললেন--- তোমরা একটা কাজ করো। তোমরা এখান থেকে এখন যাও, আমি চেষ্টা করে দেখি ওকে খাওয়াতে পারি কি না। বাবা ছেলে দুজনেই হাঁসের ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো। মা এবার হাঁসটাকে কাছে নিয়ে মাথায় হাত বুলাতে লাগলেন এবং নানান রকম আদরের কথা বলতে লাগলেন। বলতে বলতে অবশেষে খাবারের পাত্রে মুখ দিলো। মা খুশিতে চিৎকার দিয়ে বললেন কই তোমরা? এদিকে এসো! দ্যাখো ওনার মান ভেঙেছে। অবশেষে অনশন ভঙ্গ করে খাবার খাচ্ছে। মায়ের ডাকে দৌড়ে গেলো স্বপ্ননীল আর বাবা। গিয়ে দেখলো ঘটনা সত্যি। একটা অবুঝ প্রাণীর এমন অভিমান সবাইকে ভীষণভাবে আবেগ তাড়িত করলো। বিস্মিত করলো।