বিয়ে না করার প্রবণতা: চীনে একের পর এক বন্ধ হয়ে যাচ্ছে কিন্ডারগার্টেন স্কুল
সংগ্রাম অনলাইন: চীনের প্রাপ্ত বয়স্ক তরুণ-তরুণীদের মধ্যে বিয়ে না করার প্রবণতা এবং লাগাতার নিম্ন জন্মহার ও তার জেরে শিশুদের সংখ্যা কমতে থাকায় একের পর এক কিন্ডারগার্টেন স্কুল বন্ধ হয়ে যাচ্ছে চীনে। দেশটির শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে দেওয়া সর্বশেষ বুলেটিনে জানানো হয়েছে এ তথ্য। ২০২২ সালে চীনজুড়ে যেখানে ২ লাখ ৮৯ হাজার ২০০টি কিন্ডারগার্টেন স্কুল ছিল, পরের বছর ২০২৩ সালে তা হ্রাস পেয়ে নেমে এসেছে ২ লাখ ৭৪ হাজার ৪০০টিতে। অর্থাৎ মাত্র এক বছরে দেশটিতে ১৪ হাজার ৮০০টি কিন্ডারগার্টেন স্কুল বন্ধ হয়েছে। শতকরা হিসাবে এক বছরে চীনে ১ দশমিক ২ শতাংশ কিন্ডারগার্টেন স্কুল বন্ধ হয়ে গেছে।
গত ২৯ অক্টোবর দেশটির শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক বার্ষিক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়।
একইসঙ্গে কিন্ডারগার্টেনে ভর্তি হওয়া শিশুর সংখ্যা তৃতীয়বারের মতো কমে গেছে। গত বছরে দেশটিতে কিন্ডারগার্টেনে ভর্তি হওয়া শিশুর সংখ্যা ১১.৫৫ শতাংশ বা ৫.৩৫ মিলিয়ন কমে ৪০.৯ মিলিয়নে দাঁড়িয়েছে।
২০২৩ সালে চীনে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যাও ৫ হাজার ৬৪৫টি কমে ১ লাখ ৪৩ হাজার ৫০০টিতে নেমে এসেছে, যা আগের বছরের চেয়ে ৩.৮ শতাংশ কম।
রয়টার্স বলছে, গত বছর চীনজুড়ে জন্ম নিয়েছে মাত্র ৯০ লাখ শিশু। ১৯৪৯ সালের পর এটিই সর্বনিম্ন শিশু জন্মের সংখ্যা।
সম্প্রতি পূর্ব চীনের নিংবো শহরের গর্ভধারণযোগ্য বয়সের নারীদের ওপর চালানো এক জরিপে দেখা গেছে, প্রায় অর্ধেক সিঙ্গেল, নিঃসন্তান নারীরা একটি সন্তান নেবার পক্ষে। এক-তৃতীয়াংশেরও বেশি নারী কোনো সন্তানই নিতে চান না। ১৫ শতাংশ নারী দুটি সন্তান চান এবং ১ শতাংশেরও কম নারী এরচেয়ে বেশি সন্তান নিতে আগ্রহী।
আরও দেখা গেছে, জরিপে অংশ নেওয়া ৫৬ শতাংশ নারী বিয়েকে ঐচ্ছিক ব্যাপার মনে করেন এবং প্রায় ৬ শতাংশ নারী বিয়ে করার কোনো প্রয়োজনীয়তাই দেখেন না।
গবেষকেরা বলছেন, এ মুহূর্তে চীনের জন্মহার হওয়া উচিত ২ দশমিক ১; কিন্তু গত বছর জন্মহার ছিল ১-এর চেয়েও কম।
চীনের জন্মহার ও মোট জনসংখ্যা দুটোই কমার কারণে নতুন শিক্ষার্থীর সংখ্যাও কমছে। ক্রমহ্রাসমান জনসংখ্যার কারণে দেশটির ভবিষ্যতের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি গুরুতর হুমকিতে রয়েছে। ইতিমধ্যে চীনের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি মন্থর হয়ে পড়ছে।
চীন জনসংখ্যা ও উন্নয়ন গবেষণা কেন্দ্রের হিসাব অনুসারে, দেশটির প্রজনন হার ২০২২ সালে ১.০৯-এ নেমে এসেছে। জনতাত্ত্বিকরা ধারণা করছেন, এ হার গত বছর ১.০-এর নিচে নেমে গেছে, যদিও কোনো সরকারি পরিসংখ্যান নেই।
প্রজনন হার হচ্ছে মহিলাপ্রতি গড় সন্তান জন্মদানের হার। কোনো দেশের জনসংখ্যাকে স্থির রাখতে প্রয়োজনীয় প্রজনন হার ধরা হয় ২.১।
২০২৩ সালে চীনের অন্যতম ধনী শহর সাংহাইয়ে মোট প্রজনন হার ০.৬-এ নেমে এসেছে।
জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশনের ২০২১ সালের তথ্য অনুযায়ী, চীনে নবজাতক ও শিশু আছে, এমন ৩০ শতাংশেরও বেশি পরিবারের চাইল্ড কেয়ার প্রয়োজন। কিন্তু মাত্র ৫.৫ শতাংশ পরিবার তাদের সন্তানকে নার্সারি বা প্রি-কিন্ডারগার্টেনে ভর্তি করেছে।
চীনে একদিকে যেমন জন্মহার কমছে, তেমনি অন্যদিকে বাড়ছে বয়স্কদের সংখ্যা। ফলে অনেক কিন্ডারগার্টেনকে এরই মধ্যে বৃদ্ধনিবাসে পরিণত করা হয়েছে।
চীনের জনসংখ্যাবিদ হে ইয়াফু বলেন, জন্মহার কমলে শিশুর সংখ্যা কমবে এবং শিশুর সংখ্যা কমলে কিন্ডারগার্টেন স্কুল বন্ধ হবে—এটিই স্বাভাবিক। তবে এটি কোনো ইতিবাচক ব্যাপার নয়। আমাদের এ ব্যাপারে এখনই সচেতন হওয়া উচিত।