প্রধান উপদেষ্টাকে সাবেক মন্ত্রীর স্ত্রীর খোলা চিঠি
সংগ্রাম অনলাইন: অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনকে মুক্তি দিতে খোলা চিঠি দিয়েছেন মোশাররফ হোসেনের স্ত্রী আয়েশা সুলতানা।
গত মঙ্গলবার (২৯ অক্টোবর) এ চিঠি দেন তিনি। গত ২৭ অক্টোবর রাজধানীর ভাটারা থানাধীন এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয় ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনকে।
ওই খোলাচিঠি হুবহু তুলে ধরা হলো------
“মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা মহোদয়,
আমার সালাম এবং আন্তরিক শুভেচ্ছা নিবেন। আমি নিম্নস্বাক্ষরকারী চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুলে আপনার নেতৃত্বাধীন স্কাউট টিম মেম্বার ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এর স্ত্রী।
দেশের বিশেষ পরিস্থিতিতে আপনি বাংলাদেশ সরকারের দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন। শপথ গ্রহণের পর আপনি আইনের শাসন বজায় রাখার এবং দুঃশাসনের অবসানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের বিষয় হল রাজধানীর পল্টন থানায় ২০২২ সালের ৭ ডিসেম্বর এর ঘটনায় একটি হত্যা মামলায় আমার স্বামী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনকে (৮২) অসৎ উদ্দেশ্য নিয়ে মিথ্যা মামলায় আসামি করা হলো। যার নম্বর-৪৮/৪০২। অথচ ২০২২ সালের ৭ই ডিসেম্বর তিনি ছিলেন কক্সবাজারে। উক্ত মামলা গত ২৭ অক্টোবর ২০২৪ খ্রি. তারিখে ডিবি পুলিশ বসুন্ধরার বাসভবন থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে।
পল্টন থানায় মামলার পর তার বিরুদ্ধে তিন থেকে দশ বছর আগের ঘটনায় মামলা করা হয়েছে বেশিরভাগ মামলা-ই বিগত কয়েকদিনে হয়েছে যেগুলো বানোয়াট এবং বেশ তাড়াহুড়ো করে দায়ের করা হয়েছে। জোরারগঞ্জ থানার মামলা নম্বর-৩, ৬ অক্টোবর ২০২৪,মামলা নম্বর-১৭, তারিখ ৮ অক্টোবর ২০২৪,মীরসরাই থানার মামলা নম্বর-১৮,তারিখ: ২৪ অক্টোবর, ২০২৪।
গত কয়েক বছর ধরে তিনি গুরুতর শারীরিক অসুস্থতায় ভুগছেন। তিনি বছর দুয়েক পূর্বে সিড়িতে পড়ে গুরুতর অসুস্থ হলে বঙ্গবন্ধু মেডিকেলে তার বড় হিপ সার্জারী হয়। কিন্তু ত্রুটিপূর্ণ সার্জারী হওয়াতে তিনি কারো সহায়তা ছাড়া হাঁটতে পারেন না। গ্রেপ্তারের সময় তার হুইলচেয়ারটিও সাথে নেওয়া হয়নি।
সাম্প্রতিক কোভিড-১৯ সংক্রমণের কারণে বেড়ে যাওয়া পারকিনসন রোগ এবং আন্তঃস্থায়ী ফুসফুসের রোগের সাথে চলমান লড়াই যার ফলে তার শ্বাস-প্রশ্বাসের অবস্থা দুর্বল হয়ে পড়ে। তার ভারসাম্যহীনতা এবং পারকিনসনের কারণে তিনি প্রায়শই পড়ে যাচ্ছেন।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এবং বাংলাদেশে তার স্বাস্থ্য পরিচর্যার সাথে জড়িত নিউরোলজিস্ট, অর্থোপেডিক সার্জন, পালমোনোলজিস্ট এবং ফিজিও থেরাপিস্ট তার স্বাস্থ্যের জন্য সমাধান করতে এবং আরও অবনতি রোধ করতে অবিলম্বে চিকিৎসার সুপারিশ করেছেন।
প্রস্তাবিত চিকিৎসা পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে - তার হিপ ফ্র্যাকচার সার্জারির সম্ভাব্য প্রত্যাবর্তন, জোরালো শারীরিক থেরাপি, তার পারকিনসন্স রোগের আরও অগ্রগতি রোধ করার জন্য নিউরো মূল্যায়ন, এবং তার অন্তর্বর্তী ফুসফুসের রোগের পুঙ্খানুপুঙ্খ অনুসরণ।
তাছাড়া তিনি ডায়বেটিস, হৃদরোগ, থাইরয়েড, প্রাথমিক ডিমেনশিয়া সহ নানাবিধি শারীরিক জটিলতায় ভুগছেন। আমি এবং উনার সার্বক্ষণিক দুইজন সহকারী উনার ওষুধপত্র, খাওয়াদাওয়া তদারকি করি।
সেই ১৮ বছর বয়সে আমার বিয়ের পর থেকেই অনিশ্চয়তা এবং উদ্বেগের মধ্যে বসবাস করছি যখন আমার স্বামী জীবনের ঝুঁকি নিয়ে একজন এমপি হয়েও ৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের সশস্ত্র সংগ্রামে সরাসরি অংশগ্রহণ করেন। এটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক যে আজও ৭৩ বছর বয়সেও এই স্বাধীন বাংলাদেশে ৫৪ বছরের সংগ্রাম ও আত্মত্যাগের পরেও আমি একই ভয় ও উদ্বেগের মধ্যে বসবাস করছি।
তিনি মুক্তিযুদ্ধের সময় শুভপুর ব্রীজ উড়িয়ে দিয়ে আপনার জন্মস্থান চট্টগ্রাম এবং বাসিন্দাদের পাক বাহিনীর গণহত্যা থেকে রক্ষা করেছিলেন, বড় বড় দুঃসাহসিক অভিযান চালিয়ে পাক বাহিনীর বুকে কাঁপন ধরিয়ে দিয়েছেন। তৎকালীন খুব কম জনপ্রতিনিধি রণাঙ্গনে সম্মুখ যুদ্ধ করেছিলেন। তিনি হাতেগোনাদের মধ্যে একজন। তিনি সাতবার এমপি ছিলেন, ২ বার মন্ত্রী ছিলেন। একাধিকবার প্রতিপক্ষের আক্রমণে মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরে এসেছেন; কিন্তু কারো প্রতি প্রতিহিংসাপরায়ণ ছিলেন না। কারো ক্ষতি করেন নাই তিনি। জীবনভর উদারনৈতিক রাজনীতি করেছেন। তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতি করেছেন। কিন্তু যখন তিনি জনপ্রতিনিধি তখন তিনি দলমতের ভেদাভেদ করেন নাই।
কর্মজীবনে তিনি দেশ, চট্টগ্রাম, মিরসরাই এর মানুষের জন্য কাজ করেছেন। কৃষিজমির টপসয়েল রক্ষা, জলাধার রক্ষা আইন, জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ, সিঙ্গাপুর হংকং এর আদলে উর্ধ্বমুখী ভবনসহ অসংখ্য জনবান্ধব প্রকল্প তিনি বাস্তবায়ন করেছেন।
মিরসরাইতে ৩৩,০০০ একর জায়গায় এশিয়ার অন্যতম বৃহৎ অর্থনৈতিক অঞ্চল তার মস্তিষ্কপ্রসূত। যেখানে ৩০ লাখ লোকের কর্মসংস্থান হবে। বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয়তা লাভ করা ‘'থ্রি জিরো” ধারণার মত বাস্তবায়িত হচ্ছে এটি।
আমার পারিবারিক জীবনে উনাকে আমি ও আমার ছেলেমেয়েরা পাইনি। উনি সবসময় দেশের উন্নয়নে ছুটেছেন। গত ২ বছর ধরে অবসর জীবনে মূলত উনাকে পেয়েছি উনার বার্ধক্যজনিত কারণে। অথচ এই সময়েও আমাকে বন্দী জীবন যাপন করতে হচ্ছে।
১/১১ এর সময় সুযোগ থাকা সত্ত্বেও অনেকের মত তিনি বিদেশ চলে যাননি এবং তাকে কোন চার্জশিট ছাড়াই ১৯ মাস আটক রাখা হয়েছিল। বর্তমান উদ্ভুত পরিস্থিতিতেও অনেকের মত তিনিও বিদেশ চলে যেতে পারতেন। এমনকি দুর্বৃত্তদের দ্বারা ভাঙচুর ও হামলার একাধিক হুমকির পরেও কিন্তু তিনি আইনের শাসন, ন্যায়বিচার এর প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে নিজের বাসভবনেই অবস্থান করেছেন।
আপনার নেতৃত্বাধীন সরকার মিথ্যা মামলা, বেআইনী গ্রেপ্তার হয়রানিকে প্রশয় দিবে না বলে বিশ্বাস করি।
এমতাবস্থায় নানান শারিরীক জটিলতায় আক্রান্ত ৮২ বছর বয়স্ক ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এর মিথ্যা মামলার জামিনে আপনার সদয় দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।”