আগামী ২৯ সেপ্টেম্বর এক সাথে দুটি 'চাঁদ' পেতে যাচ্ছে পৃথিবী
সংগ্রাম অনলাইন: মহাকাশে ঘটতে চলেছে এক বিরল ঘটনা। স্বল্প সময়ের জন্য দ্বিতীয় একটি 'চাঁদ' পেতে যাচ্ছে পৃথিবী। পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণশক্তির টানে অনেক দূর থেকে ছুটে আসছে চাঁদের মতোই ওই উপগ্রহ। তার নাম দেওয়া হয়েছে ‘মিনি মুন’।
তবে, প্রশ্ন থাকতে পারে দ্বিতীয় এই 'চাঁদ' পৃথিবীর মানুষের জন্য কতটুকু কল্যাণ বয়ে আনতে পারে? মহাকাশে যখন দেখা যাবে দ্বিতীয় 'চাঁদ' টি তখন পৃথিবী কোনো ক্ষতির সম্মুখীন হবে কী ?
‘মিনি মুন’ যদিও আকাশে দৃশ্যমান চাঁদের মতো এত সুন্দর হবে না। এটি মূলত একটি গ্রহাণু, তাই আকার হবে অত্যন্ত ছোট। গ্রহাণুটির আসল নাম হলো ২০২৪ পিটি৫। কোনো কোনো বিজ্ঞানী এটাকে কোয়াসি মুন বা অর্ধেক চাঁদ বলেও উল্লেখ করেছেন।
জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা বলছেন, আগামী ২৯ সেপ্টেম্বর থেকে ২৫ নভেম্বর পর্যন্ত বাইরে থেকে উড়ে আসা একটি গ্রহাণু পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করে যাবে।
আমেরিকান অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল সোসাইটির একটি গবেষণায় এই গ্রহাণুর গঠন, ভ্রমণপথ ও অন্যান্য বিষয়গুলো উঠে এসেছে। এই গবেষণায় বলা হয়েছে, পৃথিবী প্রদক্ষিণ শেষে গ্রহাণুটি সূর্যকেন্দ্রিক একটি কক্ষপথে ফিরে যাবে।
সৌরজগতে রয়েছে অসংখ্য গ্রহ। প্রত্যেকেই একাধিক চাঁদ নিয়ে ঘুরপাক খায়। কিন্তু পৃথিবীর কাছে রয়েছে মাত্র একটিই চাঁদ। এই একের সঙ্গে এবার আরও এক যুক্ত হতে চলেছে। এমনই দারুণ তথ্য দিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। তাদের ধারণা যে, পৃথিবী শীঘ্রই আরও একটি চাঁদ পেতে পারে। অত্যন্ত বিরল জ্যোতির্বিজ্ঞানের ঘটনা ঘটতে চলেছে শিগগিরই।
এই গ্রহাণুটির ব্যাস প্রায় ১০ মিটার বা ৩৩ ফুট। পৃথিবীর পাশ কাটিয়ে যাওয়ার সময়ে, পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ দ্বারা প্রভাবিত হবে। কক্ষপথে ঢুকে প্রদক্ষিণও করবে দুই মাস ধরে; অর্থাৎ পৃথিবীর দুই নম্বর উপগ্রহ সাময়িকভাবে পৃথিবীর চারপাশে ঘুরবে। ২৫ নভেম্বরের পর, এটি পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ থেকে বেরিয়ে আসবে এবং তারপর আবার নিজেই কক্ষপথে চলে যাবে। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো যে, দুই মাসের জন্য এই গ্রহাণু যে শুধু পৃথিবীর উপগ্রহ হয়েই ঘুরবে, তা কিন্তু নয়, বিজ্ঞানীদের গবেষণায় বিশেষ সাহায্য করবে এটি। এর দ্বারা তৈরি চৌম্বক ক্ষেত্র থেকে অনেক নতুন নতুন তথ্যও জানতে পারা যাবে বলে আশা করছেন বিজ্ঞানীরা।
এরকম অস্থায়ী চাঁদের দেখা আগেও পেয়েছে পৃথিবী। ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে পৃথিবীর কক্ষপথে '২০২০ সিডি ৩' নামের একটি গ্রহাণুর দেখা পান বিজ্ঞানীরা। এরপর গবেষণায় জানা যায়, শনাক্ত হওয়ার আগে কয়েক বছর ধরে আমাদের গ্রহকে প্রদক্ষিণ করছিল গ্রহাণুটি।
পৃথিবীর দিকে দ্রুত গতিতে আসা গ্রহাণুগুলো সাধারণত আমাদের বায়ুমণ্ডলে আছড়ে পড়ে, বা ভস্মীভূত হয়ে যায়। উপগ্রহ বা চাঁদের মতো পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করতে হলে একটি গ্রহাণুকে সঠিক গতি এবং দিক মেনে পৃথিবীর দিকে আসতে হবে।
বিজ্ঞানী মার্কোস জানান, মিনি মুনে পরিণত হতে যাওয়া কোনো গ্রহাণুকে ঘণ্টায় ২ হাজার ২৩৭ মাইল গতিতে পৃথিবীর ২৮ লাখ মাইলের মধ্যে আসতে হবে।
বিজ্ঞানীরা গবেষণাপত্রে লিখেছেন যে, পৃথিবীর কাছাকাছি বস্তুগুলি একটি ঘোড়ার নালের মতো পথ অনুসরণ করে। যখন এটি ঘুরতে ঘুরতে কোনো গ্রহের কাছে আসে, তার গতিবেগ খুব বেশি হয় না। কিছু সময় ঘুরে তারা আবার নিজেদের কক্ষপথে ফিরে যায় কিংবা শক্তি হারিয়ে ধ্বংস হয়ে যায়।
তবে, ২০২৪ পিটি৫ কিন্তু ধ্বংস হবে না। পৃথিবীর চারপাশে ঘুরে, তা সূর্যের চারপাশে ঘুরতে চলে যাবে। যতদিন এটি পৃথিবীর চারপাশে ঘুরবে; এটিকে কিন্তু খালি চোখে দেখা যাবে না। মহাকাশের দৃশ্য পর্যবেক্ষণ করার জন্য বিশেষ সরঞ্জাম ছাড়া ২০২৪ পিটি৫ অধরাই থাকবে।
জানা গেছে, ১৯৮১ ও ২০২২ সালেও এই ধরনের ঘটনা ঘটেছিল; অর্থাৎ মাধ্যাকর্ষণশক্তির টানে আগেও পৃথিবীর কক্ষপথে ঢুকে পড়েছিল দুটি গ্রহাণু। কিছুদিন থাকার পর মহাকর্ষটান কাটিয়ে বেরিয়েও গিয়েছে গ্রহাণুগুলি। চাঁদ মামা নতুন সঙ্গী পেলেও এই মিনি মুনকে দেখা যাবে কেবল উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন টেলিস্কোপেই। ফলে ছোট চাঁদ মামার দর্শন খালি চোখে করতে পারবে না পৃথিবীবাসী।