সীমান্ত হত্যার বিচার দাবি
প্রকৃত বন্ধু পাওয়া এখন বেশ কঠিন ব্যাপার। বন্ধু দেশের বিষয়টিও এখন প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়েছে। বন্ধু দেশের সীমান্তে এখন কী ঘটছে? ফেলানি থেকে স্বর্ণা দাশ, সীমান্তে প্রতিটি হত্যার বিচার দাবি করেছে জুলাই গণঅভ্যুত্থান ফোরাম। সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের নির্বিচার হত্যাকান্ড ও ভারতীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে আয়োজিত প্রতিবাদ ও গণবিক্ষোভ কর্মসূচিতে বক্তারা বলেছেন, চোরাচালান, মাদক কারবারি ও গরু চুরির কথা বলে সীমান্তে বাংলাদেশীদের হত্যার বৈধতা দিয়েছে আওয়ামী লীগ সরকার। তারা জনগণের পক্ষে কথা না বলে ভারতের পক্ষে কথা বলেছে। বক্তারা আরও বলেছেন, বিগত সময়ে সীমান্তের প্রতিটি হত্যাকান্ডের বিচারের উদ্যোগ নিতে হবে। প্রয়োজনে যেতে হবে আন্তর্জাতিক আদালতে।
উল্লেখ্য যে, কুড়িগ্রামের অনন্তপুর-দিনহাটা সীমান্তের খিতাবের কুঠি এলাকায় ২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি বিএসএফ সদস্যরা ১৫ বছর বয়সী কিশোরী ফেলানি খাতুনকে গুলী করে হত্যা করেছিল। ফেলানির লাশ দীর্ঘ সময় ধরে ঝুলে ছিল কাঁটাতারের বেড়ায়। এ ঘটনার ১৩ বছর পর ১ সেপ্টেম্বর মৌলভীবাজারের কুলাউড়া সীমান্তে নিহত হয় ১৪ বছর বয়সী আর এক কিশোরী স্বর্ণা দাশ। ঘাতক সেই বিএসএফই। প্রায় প্রতিদিনই হত্যার মতো এমন অপকর্মে লিপ্ত থাকে বিএসএফ। জুলাই গণঅভ্যুত্থান ফোরাম আয়োজিত সমাবেশে অংশ নিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নুসরাত তাবাসসুম বলেন, ‘ফেলানি থেকে স্বর্ণা দাশ, প্রতিটি হত্যার বিচার চাই। আবরার হত্যার বিচার চাই। একই সঙ্গে সেই প্রশ্নেরও উত্তর খুঁজবো, কেন বাংলাদেশের বুকে এতদিন ভারতের বিরুদ্ধে কিছু বলা যেতো না?’ বাংলাদেশ কি ভারতের কলোনি হয়ে গিয়েছিলো, বাংলাদেশকে কি গোপনে ভারতের কাছে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছিলোÑএমন প্রশ্ন তুলে নুসরাত বলেন, ‘যদি হয়ে থাকে, তাহলে নতুন করে স্বাধীনতা পুনরুদ্ধার করে নেবো।’ সমাবেশে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী কাজী সুলতান মাহমুদ বলেন, ‘২০০০ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের সীমান্তে ১ হাজার ১৪৪ বাংলাদেশীকে খুন করেছে ভারত। চোরাচালান, মাদককারবার, গরু চুরির কথা বলে এসব হত্যাকান্ডের বৈধতা দেওয়া হয়েছিল।’ ফোরামের অন্যতম সমন্বয়ক আশরেফা খাতুন বলেন, ভারতের সঙ্গে কোনো আপস হবে না। আমরা পানির ন্যায্য হিস্যা বুঝে পেতে চাই।’
জুলাই গণঅভ্যুত্থান ফোরাম ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের বক্তব্য আমরা জানলাম। ছাত্রনেতারা সীমান্তে হত্যা এবং পানি বঞ্চনা নিয়ে ক্ষুব্ধ। তারা এসব অন্যায় এবং বঞ্চনার ন্যায্য সমাধান চান। আমরা তো ভারতকে প্রতিবেশী বন্ধুরাষ্ট্র হিসেবেই বিবেচনা করতে চাই। দীর্ঘ সময়ের আচরণে আমরা তেমন প্রমাণই রেখেছি। কিন্তু সুপ্রতিবেশীর স্বাক্ষর রাখতে ভারত সক্ষম হয়নি। কত বৈঠক হলো, কত সিদ্ধান্ত হলো, কিন্তু সীমান্তে বাংলাদেশী হত্য বন্ধ হয়নি। আন্তর্জাতিক নদীতে বাঁধ দিয়ে ভাটির দেশকে পানিতে কষ্ট দেওয়া কি কোনো বন্ধুসুলভ কাজ? এ নিয়ে কথা হয়, কিন্তু ভারত কথা রাখে না। এসব কি আগ্রাসনের বৈশিষ্ট্য নয়? বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখার ক্ষেত্রে ভারতের সুস্পষ্ট করণীয় আছে। ভারত সেই কর্তব্য পালনে এগিয়ে আসে কিনা, সেটাই এখন দেখার বিষয়।