ইসরাইলের বর্বর হামলায় আরো ৪৮ ফিলিস্তিনী নিহত
সংগ্রাম ডেস্ক: ফিলিস্তিনে ইসরাইলী হামলায় ৪৮ জন নিহত হয়েছে। পশ্চিম তীরে তুবাসে একটি গাড়িতে ইসরাইলী বোমা হামলায় অন্তত ৬ ফিলিস্তিনী নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও তিনজন। গতকাল বৃহস্পতিবার ফিলিস্তিনী স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং রেড ক্রিসেন্ট এই তথ্য জানিয়েছে। এক প্রতিবেদনে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা এই খবর জানিয়েছে। রয়টার্স, আনাদুলো, ওয়াফা। এক বিবৃতিতে ইসরাইলী সেনাবাহিনী বলেছে, ‘ইসরাইলী বিমান বাহিনীর একটি বিমান উত্তর জর্ডান উপত্যকার তুবাস এলাকায় তিনটি লক্ষ্যবস্তুতে সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের ওপর হামলা চালিয়েছে।’ তারা সেনাদের জন্য হুমকিস্বরূপ ছিল বলে দাবি করেছে ইসরাইল।
এছাড়া ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখ-ে ইসরাইলী বর্বর হামলায় আরও ৪২ ফিলিস্তিনী নিহত হয়েছেন। এতে করে উপত্যকাটিতে নিহতের মোট সংখ্যা ৪০ হাজার ৮৬০ ছাড়িয়ে গেছে। এছাড়া গত বছরের অক্টোবর থেকে চলা এই হামলায় আহত হয়েছেন আরও ৯৪ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনী। বুধবার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাজা উপত্যকায় ইসরাইলের চলমান হামলায় কমপক্ষে আরও ৪২ ফিলিস্তিনী নিহত হয়েছেন। এতে করে গত বছরের অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত মোট মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৪০ হাজার ৮৬১ জনে পৌঁছেছে বলে বুধবার অবরুদ্ধ এই ভূখ-ের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে। মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, নিরলস এই হামলায় আরও অন্তত ৯৪ হাজার ৩৯৮ জন ব্যক্তিও আহত হয়েছেন।
মন্ত্রণালয় বলেছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ইসরাইলী বাহিনীর অব্যাহত আগ্রাসনে ৪২ জন নিহত এবং আরও ১০৭ জন আহত হয়েছেন। অনেক মানুষ এখনও ধ্বংসস্তূপের নিচে এবং রাস্তায় আটকা পড়ে আছেন কারণ উদ্ধারকারীরা তাদের কাছে পৌঁছাতে পারছেন না। ফিলিস্তিনী স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ মনে করছে, গাজা উপত্যকা জুড়ে ধ্বংস হওয়া বাড়ির ধ্বংসস্তূপের নিচে এখনও ১০ হাজারেরও বেশি লোক নিখোঁজ রয়েছেন। মূলত গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির দাবি জানিয়ে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাব সত্ত্বেও ইসরাইল অবরুদ্ধ এই ভূখ-ে তার নৃশংস আক্রমণ অব্যাহত রেখেছে।
উল্লেখ্য, গত ৭ অক্টোবর হামাসের নজিরবিহীন আন্তঃসীমান্ত হামলার পর থেকে ইসরাইল গাজা উপত্যকায় অবিরাম বিমান ও স্থল হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। ইসরাইলী এই হামলায় হাসপাতাল, স্কুল, শরণার্থী শিবির, মসজিদ, গির্জাসহ হাজার হাজার ভবন ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে। এছাড়া ইসরায়েলি আগ্রাসনের কারণে প্রায় ২০ লাখেরও বেশি বাসিন্দা তাদের বাড়িঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন।
মূলত ইসরায়েলি আক্রমণ গাজাকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছে। জাতিসংঘের মতে, ইসরাইলের বর্বর আক্রমণের কারণে গাজার প্রায় ৮৫ শতাংশ ফিলিস্তিনী বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। আর খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি এবং ওষুধের তীব্র সংকটের মধ্যে গাজার সকলেই এখন খাদ্য নিরাপত্তাহীন অবস্থার মধ্যে রয়েছেন। এছাড়া অবরুদ্ধ এই ভূখ-ের ৬০ শতাংশ অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে। ইসরায়েল ইতোমধ্যেই আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে গণহত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছে।
ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় গত বছরের ৭ অক্টোবর থেকে নৃশংসতা চালিয়ে যাচ্ছে ইহুদিবাদী ইসরাইল। তাদের বর্বরতায় নির্বাক গোটা বিশ্ব। এবার প্রকাশ্যে এল নতুন আরেক নৃশংসতার দৃশ্য।
অধিকৃত পশ্চিম তীরের তুবাস গভর্নরেটের ফারা শরণার্থী শিবিরে ১৬ বছর বয়সী এক ফিলিস্তিনী কিশোরকে গুলী করে হত্যা করে ইসরাইলী বাহিনী। এরপর তার মৃতদেহ সামরিক বুলডোজার দিয়ে টেনে নিয়ে গেছে ইহুদিবাদী সেনারা। বৃহস্পতিবার বার্তা সংস্থা ওয়াফা এ তথ্য জানিয়েছে। সংস্থাটি জানিয়েছে, সেনারা কিশোরটির দিকে বেশ কয়েক রাউন্ড গুলী ছুড়ে, তাকে গালাগালি করে এবং অ্যাম্বুলেন্স ক্রুদের তার কাছে পৌঁছাতে বাধা দেয়। তারপর তারা একটি সামরিক বুলডোজার ব্যবহার করে তাকে ক্যাম্প থেকে টেনে নিয়ে যায়। নিহতের নাম মাজেদ ফিদা আবু জেইনা বলে শনাক্ত করেছে সংস্থাটি।
ইসরাইলী বাহিনী তুবাস শহরে একটি গাড়িতে বোমা হামলার সময় এই হত্যাকা- ঘটল। বৃহস্পতিবার ভোরে আরও পাঁচজন ফিলিস্তিনি যুবককে হত্যা করেছে ইসরাইলী বাহিনী।