ঢাকা, মঙ্গলবার 03 December 2024, ১৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী
Online Edition

ভারতে ৪০ জন বাংলাভাষী মুসলমানকে বন্দিশিবিরে প্রেরণ

একটি বাসে কড়া নিরাপত্তা দিয়ে গোয়ালপাড়ার ট্রানজিট ক্যাম্পে যখন নিয়ে যাওয়া হয়, সেই সময়ের একটি ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।

সংগ্রাম অনলাইন: ভারতে ৪০ জন বাংলাভাষী মুসলমানকে বন্দিশিবিরে প্রেরণের অভিযোগ পাওয়া গেছে। ভারতের উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য আসামে এ ঘটনাটি হযেছে। গত প্রায় এক মাসে, তিন দফায় বরপেটা জেলার ওই বাসিন্দাদের বিদেশি হিসাবে চিহ্নিত করেছে ওই রাজ্যের ফরেনার্স ট্রাইব্যুনাল। ওই নারী-পুরুষদের একটি বাসে কড়া নিরাপত্তা দিয়ে গোয়ালপাড়ার ট্রানজিট ক্যাম্পে যখন নিয়ে যাওয়া হয়, সেই সময়ের একটি ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।

ছড়িয়ে পড়া ওই ভিডিওতে দেখা যায়, চিহ্নিত হওয়া বিদেশিদের পরিবার-পরিজন যেমন কান্নাকাটি করছেন, তেমনই বাসের ভেতরে বসা চিহ্নিত হওয়া বিদেশিরাও চিৎকার করে কাঁদছেন। আত্মীয় পরিজনদের কেউ কেউ রাস্তায় শুয়ে পড়েও কান্নাকাটি করছেন।

এদের মধ্যে নয়জন নারী আছেন। আটকদের মধ্যে অন্তত একজনের সন্ধান পাওয়া গেছে যার পরিবার দাবি করছে তার নাম জাতীয় নাগরিক পঞ্জীর চূড়ান্ত তালিকায় রয়েছে, অর্থাৎ তিনি যে ভারতেরই নাগরিক, তা এক জটিল প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে যাওয়ার পরে ভারত সরকারের স্বীকৃতি পেয়েছে।

অ্যাক্টিভিস্টরা বলছেন, আগস্ট ৮-৯ তারিখে ২২জনকে এবং ২ সেপ্টেম্বর আরও ২৮ জনকে এভাবে থানায় ডেকে নিয়ে গিয়ে হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। আসামের বিদেশি চিহ্নিতকরণ ট্রাইব্যুনালে তাদেরকে হাজির করা হয়। পরে তাদের সবাইকে গোয়ালপাড়ার মাতিয়ায় চিহ্নিত হওয়া বিদেশিদের জন্য যে ট্রানজিট ক্যাম্প আছে, সেখানে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

বরপেটার অতিরিক্ত পুলিশ সুপারিন্টেডেন্ট বিদ্যুৎ বিকাশ বরা ভুইঞা সংবাদ সংস্থা এএনআইকে জানিয়েছেন, জেলার সীমান্ত পুলিশ সোমবার বরপেটার বিভিন্ন থানায় বসবাসকারী ২৮ জন চিহ্নিত বিদেশিকে আটক করেছে। বিদেশি ট্রাইব্যুনালের নির্দেশে বিদেশি বলে চিহ্নিত হওয়ার পরেই এদের গ্রেফতার করা হয়। এদের মধ্যে নয় জন নারী ও ১৯ জন পুরুষ আছেন। সব আনুষ্ঠানিকতার শেষে এদের গোয়ালপাড়ার শিবিরে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। গত মাসেও একইভাবে ২২ জন চিহ্নিত হওয়া বিদেশিকে আটক করা হয়েছিল।

ডিমাপুর গ্রামের বাসিন্দা নুরজাহান খাতুন গণমাধ্যমকে বলছিলেন, থানা থেকে বলেছিল যে কিছু কাগজপত্র নিয়ে দেখা করতে, সই করতে হবে। সেই মোতাবেক আমার স্বামী থানায় যায়। কিন্তু সেখান থেকে পুলিশ সুপারের অফিসে পাঠানো হয়, আর তারপরেই গ্রেফতার করে ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হয় তাকে।

অ্যাক্টিভিস্ট ফারুক খান বলেন, আমরা কাগজপত্র সব পরীক্ষা করে দেখতে পাই যে ২০০৪ সালে থানা থেকে একটি রিপোর্ট দেওয়া হয় যে জাহেদুল ইসলাম নাকি বাংলাদেশ থেকে এসেছিলেন। তার ভিত্তিতে তার ট্রাইব্যুনালে গিয়ে মামলা লড়া দরকার ছিল কিন্তু তার যুক্তি ছিল যে মিথ্যা অভিযোগের মামলা কেন লড়ব, কেন ভারতীয় হওয়া সত্ত্বেও সেটা প্রমাণ করতে হবে!

প্রথমের দিকে কয়েক লক্ষ ডি-ভোটারকে চিহ্নিত করা হলেও পরে ধীরে ধীরে সই সংখ্যা কমতে থাকে। সম্প্রতি আসাম সরকার রাজ্য বিধানসভায় জানিয়েছে, এই মুহূর্তে সেখানে এক লক্ষ ১৯ হাজার ৫৭০ জন ডি-ভোটার আছেন।অন্যদিকে ডি-ভোটার বলে চিহ্নিত করার পরে এক ব্যক্তিকে বিদেশি ট্রাইব্যুনালে যেতে হয় নিজেকে ভারতীয় বলে প্রমাণ করতে।

এই ট্রাইব্যুনালগুলো আধা-বিচারালয় এবং এখানে বিচার কাজ পরিচালনা করেন যে ট্রাইব্যুনাল সদস্যরা, তারা আদতে বিচারক নন। আসাম সরকার এদের চুক্তি ভিত্তিতে নিয়োগ করেন। এরকম প্রায় একশোটি এরকম ট্রাইব্যুনাল সারা আসামে কাজ করে।

 

সূত্র: বিবিসি বাংলা

 

 

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ

string(11) "18.97.14.80"