ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে যেসব বর্বরতা পাষাণকেও কাঁদিয়েছে
সংগ্রাম অনলাইন: বাংলাদেশীদের জন্য ঘটনাবহুল ও রাজনৈতিক বাঁকবদলের আগস্ট মাস জাতির স্মরণীয় থাকবে চিরকাল। ইতিহাসের সবচেয়ে ব্যাপক ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের সাক্ষী হয়েছে বাংলাদেশ। দীর্ঘ দেড় দশকের বেশি সময় দোর্দণ্ড প্রতাপের সঙ্গে শাসন করার পর দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলো শেখ হাসিনা।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের লং মার্চ টু ঢাকা কর্মসূচি ঘিরে সহিংসতায় ঢাকাসহ সারাদেশ যেনো এক রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। সেদিন সূর্য্য ওঠার সাথে সাথে ঢাকার রাজপথ সরকার পথনের স্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে। বেলা ১১টার পর থেকে ঢাকার পথে ঢল নামে হাজারো লক্ষ মানুষের। কারফিউ উপেক্ষা করে বিভিন্ন স্থান থেকে আসতে শুরু করে ছাত্র-জনতা। এক পর্যায়ে শাহবাগ, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারসহ গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে লোকে লোকারণ্য হয়ে ওঠে।
ব্যাপক উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার মধ্য দিয়ে ভেঙে পড়ে গত দেড় দশকের স্বৈরশাসনে দুর্বল হয়ে পড়া রাষ্ট্রযন্ত্রের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। স্বাধীনতার পর এই প্রথম প্রায় তিনদিন প্রশাসনশূন্য অবস্থায় ছিল সমগ্র বাংলাদেশ।
তবে, অভিঘাত মোকাবেলা করতে অনেক রক্ত ঝরাতে হয়েছে বাংলাদেশকে। এসব ঘটনার মধ্যে মানুষকে সবচেয়ে বেশি হৃদয়বিদারক করে তুলছে কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা।
গণঅভ্যুত্থানকালে পুলিশের যেসব বর্বরতা পাষাণকেও কাঁদিয়েছে, এর অন্যতম সাভারে ইয়ামিন হত্যা। রাজধানীর মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির এই শিক্ষার্থী গত ১৮ জুলাই দুপুরে সাভারে গুলিবিদ্ধ হওয়ার পরও জীবিত ছিলেন। পুলিশ গুলিবিদ্ধ অবস্থায় তাঁকে সাঁজোয়া যানের ওপরে ‘শুইয়ে’ মহড়া দেয়।
সে সময় ধারণ করা মর্মস্পর্শী ভিডিওতে দেখা যায়, আহত অবস্থায় সাঁজোয়া যানের ওপর থেকে তাঁকে সড়কে ফেলে দেয় পোশাক পরিহিত এক পুলিশ সদস্য। তখনও জোরে শ্বাস নিচ্ছেন ইয়ামিন।
অন্যদিকে আশুলিয়ায় পুলিশের বর্বরতা হত্যাকন্ডের ঘটনা মর্মস্পর্শী করার মতো ছিলো। একটি ভ্যান গাড়িতে পড়ে ছিল কয়েকজনের নিথর দেহ। পাশ থেকে আরও একটি লাশ তুলছিলেন পুলিশ সদস্যরা। সেই লাশ ঢাকার জন্য পুলিশ সদস্যরা ব্যবহার করেছিলেন ময়লা চাদর ও রাস্তার পড়ে থাকা ব্যানার। তারপরও ভ্যানের ওপরে ঝুলতে দেখা যায় নিথর দেহের হাত-পা-মাথা। ভ্যানে রাখা লাশগুলোই পরে পুলিশের গাড়িতে নিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। এমন বীভৎস ও লোমহর্ষক ঘটনার একটি ভিডিও ক্লিপ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
পুলিশের গুলিতে আবু সাঈদ নামে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) কোটা সংস্কার আন্দোলনের সমন্বয়ককে বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে তাকে লক্ষ্য করে পুলিশ গুলি চালাই, সেখানেই আবু সাঈদ লুটিয়ে পড়ে এবং মৃত্যুবরণ করে।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনে নিহত হওয়া মুগ্ধর কথা তো সবাই জানেন, উত্তরায় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষ বাধে পুলিশের। সে সংঘর্ষে আহত হয় অনেকে। সেদিন আহতদের যারা হাসপাতালে পৌঁছে দিয়েছেন, তাদেরই একজন বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের এমবিএর শিক্ষার্থী মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধ। সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ একটি গুলি এসে লাগে মুগ্ধর কপালে। সাথে সাথে মাঠিতে লুটিয়ে পড়ে মুগ্ধর নিথর দেহ।
এমন অগণিত নাম না জানা নিহতের সাক্ষী হয়ে আছে দেশের মানচিত্র। এখনো অগণিত আহতরা হাসপাতালের বিছানাই মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে।