পাকিস্তানকে হোয়াইটওয়াশ ঐতিহাসিক টেস্ট সিরিজ জয়
রফিকুল ইসলাম: পাকিস্তানের মাটিতে পাকিস্তানকে হোয়াইটওয়াশ করে ঐতিহাসিক টেস্ট সিরিজ জয় করেছে বাংলাদেশ। রাওয়ালপিন্ডিতে প্রথম টেস্টে পাকিস্তানকে ১০ উইকেটে হারানোর পর দ্বিতীয় টেস্টে পাকিস্তানকে ৬ উইকেটে হারিয়ে ইতিহাস গড়েছে বাংলাদেশ। এরফলে প্রথমবারের মতো পাকিস্তানকে হোয়াইটওয়াশের লজ্জায় ফেলে টাইগাররা। এই জয়ে পাকিস্তানীদের বিপক্ষে প্রথমবারের মতো টেস্ট সিরিজ জয় করল বাংলাদেশ। এ নিয়ে বিদেশের মাটিতে তৃতীয়বার টেস্ট সিরিজ জিতলো টাইগাররা। ২০০৯ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে প্রথম টেস্ট সিরিজ জিতেছিল বাংলাদেশ। এটিই ছিল দেশের বাইরে বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট সিরিজ জয়। এরপর ২০২১ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে একমাত্র টেস্ট জিতে দ্বিতীয় সিরিজ নিশ্চিত করে বাংলাদেশ। আর নিজেদের মাটিতে একবারই ইংল্যান্ডের কাছে টেস্টে হোয়াইটওয়াশ হয়েছিলো পাকিস্তান। এবার দ্বিতীয়বারের মত সেই লজ্জায় ডুবল দলটি। এবার তারা হোয়াইটওয়াশ হলো বাংলাদেশের কাছে। ব্যাটে-বলে-ফিল্ডিংয়ে-বাংলাদেশের কাছে অসহায় আত্মসমর্পন করেছে শান মাসুদের দল। অথচ টেস্ট ক্রিকেটে সব সময়ই শক্তিশালী দল পাকিস্তান। কিন্তু সেই দলটি নিজেদের মাঠে ২ ম্যাচের টেস্ট সিরিজে বাংলাদেশের কাছে হারলো ২-০ ব্যবধানে। দুই ম্যাচ টেস্ট সিরিজের শেষ ম্যাচে পাকিস্তানকে ৬ উইকেটে হারিয়েছে বাংলাদেশ। প্রথম ইনিংসে ২৭৪ রানে অলআউট হয়ে যায় স্বাগতিকরা। এরপর নিজেদের প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশ করে ২৬২ রান। পাকিস্তান পরের ইনিংসে ১৭২ রানে অলআউট হলে ১৮৫ রানের লক্ষ্য দাঁড়ায় বাংলাদেশের সামনে। তবে জিততে খুব বেশি কষ্ট হয়নি সফরকারীদের। মাত্র ৪ উইকেট হারিয়ে ১৮৫ রান করে বাংলাদেশ জয় পায় ৬ উইকেটে। দ্বিতীয় টেস্টে জয়ের জন্য বাংলাদেশের সামনে টার্গেট ছিল ১৮৫ রান। জয়ের জন্য টার্গেটটা হাতের নাগালেই ছিল। অবশ্য ১৮৫ রানের পুঁজি নিয়েও বাংলাদেশকে আটকানোর পরিকল্পনা ছিল পাকিস্তানের। কিন্তু দলটি সফল হয়নি। বাংলাদেশ আধিপত্য বিস্তার করেই জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে। গতকাল রাওয়ালপিন্ডি টেস্টের শেষ দিনে বিনা উইকেটে ৪২ রান নিয়ে খেলা শুরু করে বাংলাদেশ।
তখন জয়ের জন্য দরকার ছিল ১৪৩ রান। ব্যাট করতে নেমে ৫ ওভার ব্যাট করে ১৬ রান যোগ করেন দুই ওপেনার সাদমান ইসলাম ও জাকির হাসান। এরপর মীর হামজার বলে বোল্ড হয়ে যান জাকির। ৩৯ বলে ৪০ রান করেন বাঁহাতি ব্যাটার। এতে ৫৮ রানের ওপেনিং জুটি ভাঙে বাংলাদেশের। জাকিরের পর পরই উইকেট বিলিয়ে দেন আরেক ওপেনার সাদমান। ৫১ বলে ২৪ রান করে খুররম শেহজাদের বলে শান মাসুদের হাতে ক্যাচ হন তিনি। ৭০ রানে পতন হয় দ্বিতীয় উইকেটের। মুমিনুল হকের সঙ্গে ৫২ রানের জুটি করে মধ্যাহ্নবিরতিতে যায় বাংলাদেশ। কিন্তু বিরতি থেকে এসেই পাকিস্তান স্পিনার সালমান আলি আগার বলে আব্দুল্লাহ শফিকের হাতে ক্যাচ হন বাঁহাতি এই ব্যাটার। ৮২ বলে ৩৮ রান করে ফেরত যান বাংলাদেশ অধিনায়ক শান্ত। এছাড়া দলীয় ১৫৩ রানের মাথায় নিজের বিপদ ডেকে আনেন মুমিনুল। আবরার আহমেদের বলে মিডঅনে থাকা ফিল্ডার সাইম আইয়ুবের কাছে ক্যাচ হন তিনি। ৭১ বলে ৩৪ রান করে সাজঘরে ফেরত যান তিনি। তখন বাংলাদেশের প্রয়োজন ছিল মাত্র ৩০ রানের। বাকি ৩০ রান বেশভাবেই তুলে নিয়েছেন সাকিব আল হাসান ও মুশফিকুর রহিম। মুশফিক ২২ আর সাকিব ২১ রানে অপরাজিত থেকে বিজয়ীর বেশে মাঠ ছাড়েন। এর আগে হাসান মাহমুদ ও নাহিদ রানার ব্যাটিংয়ে দ্বিতীয় ইনিংসে ১৭২ রানে অলআউট হয় পাকিস্তান। এতে বাংলাদেশ লক্ষ্য পায় ১৮৫ রানের। টেস্ট ক্যারিয়ারে প্রথম ফাইফার পূর্ণ করেন হাসান। আর ৪ উইকেট নেন দ্রুতগতির পেসার নাহিদ। বাকি এক উইকেট যায় তাসকিন আহমেদের পকেটে। এর আগে লিটন কুমার দাস এবং মেহেদি হাসান মিরাজের প্রথম ইনিংসে ১৬৫ রানের বিশ্বরেকর্ড জুটিটা টাইগারদের আত্মবিশ্বাস যোগায়। টেস্ট ক্রিকেটে ৫০ এর আগে ৬ উইকেট হারানোর পর ৭ম উইকেটে ১৬৫ রানের জুটি এর আগে কেউ করতে পারেনি। লিটন পেয়েছিলেন ক্যারিয়ারের চতুর্থ শতক। প্রথম ইনিংসে পাকিস্তানের ২৭৪ রানের জবাবে বাংলাদেশ গিয়েছিল ২৬২ পর্যন্ত। এই জয়ে বিশ^ টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের পয়েন্ট টেবিলে দুই ধাপ এগিয়ে চতুর্থ স্থানে উঠলো বাংলাদেশ। ৬ ম্যাচে ৩টি করে জয়-হারে ৪৫.৮৩ শতাংশ পয়েন্ট আছে টাইগারদের। এই টেস্ট হারে পয়েন্ট হারালেও অষ্টম স্থানেই আছে পাকিস্তান। ৭ ম্যাচে ২ জয় ও ৫ হারে ১৯.০৫ শতাংশ পয়েন্ট আছে পাকিস্তানের। টেবিলের শীর্ষে আছে ভারত ও অস্ট্রেলিয়া।
সংক্ষিপ্ত স্কোর: পাকিস্তান প্রথম ইনিংসে ৮৬.১ ওভারে ২৭৪/১০ (হামজা ০*, আগা সালমান ৫৪, আবরার ৯, আলী ২, খুররাম শাহজাদ ১২, বাবর আজম ৩১, মোহাম্মদ রিজওয়ান ২৯, আব্দুল্লাহ ০, শান মাসুদ ৫৭, সাইম আইয়ুব ৫৮, সৌদ শাকিল ১৬)
বাংলাদেশ প্রথম ইনিংসে ৭৮.৪ ওভারে ২৬২/১০ (হাসান ১৩*; নাহিদ ০, লিটন ১৩৮, জাকির ১, সাদমান ১০, শান্ত ৪, মুমিনুল ১, মুশফিক ৩, সাকিব ২, মিরাজ ৭৮, তাসকিন ১)
পাকিস্তান দ্বিতীয় ইনিংসে ৪৬.৪ ওভারে ১৭২/১০ (সালমান ৪১*, হামজা ৪*; আবরার ২, আলী ০, রিজওয়ান ৪৩, বাবর ১১, মাসুদ ২৮, সাইম ২০, খুররাম ০, শফিক ৩)
বাংলাদেশ দ্বিতীয় ইনিংসে ৫৬ ওভারে ১৮৫/৪ (মুশফিক ২২*, সাকিব ২১*; জাকির ৪০, সাদমান ২৪, শান্ত ৩৮, মুমিনুল ৩৪)।
ফল: বাংলাদেশ ৬ উইকেটে জয়ী।
ক্রিকেট টিমকে তারেক রহমানের অভিনন্দন
পাকিস্তানের মাটিতে দ্বিতীয় ম্যাচ জিতে প্রথমবার টেষ্ট সিরিজ জয়ের সঙ্গে সঙ্গে পাকিস্তানকে হোয়াইটওয়াশ করে ইতিহাস গড়ায় বাংলাদেশ ক্রিকেট দলকে হৃদয় নিংড়ানো অভিনন্দন জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। গতকাল সোমবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বার্তায় তিনি অভিনন্দন জানান।
অভিনন্দন বার্তায় তিনি বাংলাদেশের এই বিজয়কে ঐতিহাসিক এবং ক্রিকেট খেলায় আরো এক ধাপ এগিয়ে যাওয়া উল্লেখ করে বলেন, ক্রিকেটে বাংলাদেশের দামাল ছেলেরা সারাবিশ্বে বাংলাদেশের জন্য ধারাবাহিক যে সম্মান বয়ে আনছে তাতে আমি গৌরবান্বিত। ভবিষ্যতে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল বিশ্বের অপ্রতিদ্বন্দ্বী দলগুলোকে হারিয়ে বাংলাদেশের সম্মান অক্ষুন্ন রাখতে সক্ষম হবে বলে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি। আমি বাংলাদেশ ক্রিকেটের সাথে সংশ্লিষ্ট কোচ, কর্মকর্তাসহ সবাইকে প্রাণঢালা অভিনন্দন জানাচ্ছি এবং বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করছি।