সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণরূপে অগণতান্ত্রিক ও অসাংবিধানিক
স্টাফ রিপোর্টার : বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ করার প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন সংগঠন নিন্দা জানিয়েছে। তারা বলেন, ১৪ দলের কথায় জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধের সুযোগ নেই। এই সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণরূপে অগণতান্ত্রিক ও অসাংবিধানিক। গতকাল বুধবার দেয়া পৃথক পৃথক বিবৃতিতে তারা এ কথা বলেন।
ভিসিসি: সরকারের চরম ব্যর্থতা আড়াল করতে ও চলমান রাজনৈতিক সংকট থেকে জনগণের দৃষ্টি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতেই ভোটারবিহীন সরকার বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে বলে মন্তব্য করেছেন ভয়েস অব কনসাস সিটিজেন (ভিসিসি) চেয়ারপার্সন এম. গোলাম মোস্তফা ভুইয়া। তিনি বলেন, দেশের বিদ্যমান পরিস্থিতিতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগই সংকটের একমাত্র সমাধান। তা না করে সরকার পরিস্থিতিকে আরো ঘোলা করার জন্যই জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধ করছে। কোনো দল অথবা জোটের এখতিয়ার নেই অপর দলকে নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার। এই সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণরূপে অগণতান্ত্রিক ও অসাংবিধানিক।
গতকাল বুধবার জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধের সিদ্ধান্তের প্রতিক্রিয়ায় গণমাধ্যমে প্রেরিত এক বিবৃতিতে এসব কথা বলেন।
বিবৃতিতে গোলাম মোস্তফা ভুইয়া বলেন, আওয়ামী লীগ নিজে জামায়াতকে সঙ্গে নিয়ে আন্দোলনের ইতিহাস ভুলে গেছে, তারা অতীতকে অস্বীকার করতে চায়। জামায়াত বাংলাদেশের প্রত্যেকটি গণতান্ত্রিক আন্দোলনে রাজপথে ছিল। শুধু তাই নয়, বাংলাদেশের প্রত্যেকটি গণতান্ত্রিক নির্বাচনে জামায়াত অংশগ্রহণ করেছে এবং সংসদে তাদের প্রতিনিধি ছিল।
পাকিস্তান আমলে কমিউনিস্ট পার্টিকে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, যারা স্বৈরাচার তারা এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তাদের এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে হয়। জনগণেরই দায়িত্ব তারা কার রাজনীতি গ্রহণ করবে, কার রাজনীতি গ্রহণ করবে না। এ জন্য একটি অবাধ, সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দরকার।
তিনি আরো বলেন, শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সহিংসতায় প্রাণহানিতে নিজেদের পদত্যাগের দাবি থেকে জনদৃষ্টি ভিন্ন দিকে সরাতেই সরকার এই সময়ে জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধের উদ্যোগ নিয়েছে। সহিংসতার দায় চাপিয়ে জঙ্গী মতাদর্শ কিংবা জঙ্গিবাদী যুক্তিতে তারা এটা করতে যাচ্ছে। ভবিষ্যতে আত্মরক্ষার্থে জামায়াত তাদের ঘনিষ্ঠ হলে আওয়ামী লীগের এই অবস্থান থাকবে না।
লেবার পার্টি: ১২ দলীয় জোটের অন্যতম শীর্ষ নেতা ও বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান লায়ন মো. ফারুক রহমান বলেছেন, ১৪ দলের কথায় জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধের সুযোগ নেই। এই সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণরূপে অগণতান্ত্রিক ও অসাংবিধানিক। এর তীব্র নিন্দা এবং প্রতিবাদ জানাই। জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধের সিদ্ধান্তের প্রতিক্রিয়ায় মঙ্গলবার গণমাধ্যমে লেবার পার্টির মুখপাত্র মো. শরিফুল ইসলাম প্রেরিত এক বিবৃতিতে এসব কথা বলেন তিনি।
বিবৃতিতে ফারুক রহমান বলেন, আওয়ামী লীগ জামায়াতকে সঙ্গে নিয়ে আন্দোলনের ইতিহাস ভুলে গেছে, তারা অতীতকে অস্বীকার করতে চায়। আওয়ামী লীগের ক্ষমতা এখন নড়বড়ে। বাংলার ঘরে ঘরে আজকে এই সরকারের পদত্যাগের ধ্বনি উঠেছে। তাই জোর করে ক্ষমতা আঁকড়ে ধরে রাখার লক্ষ্যে তারা এখন জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধ করতে চায়। এর মধ্য দিয়ে তারা দেশের বিদ্যমান পরিস্থিতি থেকে জনদৃষ্টি ভিন্ন দিকে সরাতে চায়। তবে বাংলার জনগণ জামায়াত-শিবিরসহ কোনো গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলের নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত মেনে নেবে না।
এ ছাড়া জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধের সিদ্ধান্তের আরও নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন লেবার পার্টির মহাসচিব মো. আমিনুল ইসলাম, ভাইস চেয়ারম্যান লায়ন মো। তারিক আলম রাজা, এডভোকেট জাকির হোসেন, যুগ্ম মহাসচিব মো. হুমায়ুন কবির, সৈকত চৌধুরী প্রমুখ নেতারা।
কল্যাণ পার্টি : বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান লায়ন শামসুদ্দিন পারভেজ এবং মহাসচিব সাংবাদিক আবু হানিফ এক যুক্ত বিবৃতিতে বলেন, বাংলাদেশের সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলনগুলোতে নেতৃত্ব দেয়া, জাতীয় সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হওয়া এবং দুর্নীতিমুক্ত মন্ত্রণালয় চালানো জামায়াতে ইসলামীকে নির্বাহী আদেশে নিষিদ্ধ করার উদ্যোগ বর্তমান সরকারের রাজনৈতিক দেউলিয়াত্বের বহিঃপ্রকাশ।
তারা বলেন, দীর্ঘ ১ মাসের ছাত্র আন্দোলন যখন বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে ঠিক সেই মুহূর্তে জাতির দৃষ্টি অন্যদিকে নেয়ার হীন উদ্দেশে সরকার এ উদ্যোগ গ্রহণ করেছে, আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাই।
তারা ডিবি হেফাজতে থাকা ৬ সমন্বয়ককে পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দিতে এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো খুলে দেয়ার দাবি জানান।
বাংলাদেশ ন্যাপ : ১৪ দলের বৈঠকে জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের শরীক দল বাংলাদেশ ন্যাপের চেয়ারম্যান এম এম শাওন সাদেকী ও মহাসচিব ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল বারিক। গতকাল বুধবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তারা বলেন, ১৪ দল আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন একটি রাজনৈতিক জোট। কোনো দল অথবা জোটের এখতিয়ার নেই অপর দলকে নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার। এই সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণরূপে অগণতান্ত্রিক ও অসাংবিধানিক। আমরা এর তীব্র নিন্দা এবং প্রতিবাদ জানাই।