মঙ্গলবার ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪
Online Edition

কিশোরগঞ্জের হাওড় পর্যটকদের পদচারণায় মুখরিত

কিশোরগঞ্জ বিশাল হাওড়ের একাংশ

 

শামছুল আলম সেলিম : কিশোরগঞ্জ জেলার হাওড় হাজারো পর্যটকের পদচারণায় এখন মুখরিত। বাংলাদেশের কোথাও হাওড়ের মাঝখানে এত দীর্ঘ সড়ক নেই। প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ বিভিন্ন এলাকা থেকে সাবেক রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এর স্বপ্নের অলওয়েদার সড়কটি দেখতে ভিড় করছেন। রাস্তার দু’পাশে থৈ থৈ পানি, আকাশে সাদা মেঘের ভেলা। মেঘ আর জলের এই মনোরম মিতালির সামনে বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে থাকা। সড়কের পাশে বসে বুক ভরে নির্মল বাতাস উপভোগ আর হাওরের অপরূপ সৌন্দর্য দেখে ক্ষণিকের জন্য পর্যটকদের হারিয়ে যায় মন।

দিগন্ত বিস্তৃত এ সড়ককে ঘিরে দুঃখ ঘুচেছে হাওড়বাসীর। বর্ষায় কর্মহীন অনেক মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটেছে। এ জন্য হাওড়ের সৌন্দর্য উপভোগ করতে আসা হাজারো পর্যটক আর এলাকাবাসী সরকারের কাছে অপার এ লীলাভূমিকে দ্রুত পর্যটন এলাকা হিসেবে ঘোষণার জোর দাবি জানিয়েছেন।

কেবল হাওড়ের অলওয়েদার সড়কই নয়, মহামান্য রাষ্ট্রপতির বাড়ির পশ্চিমে তিন শতাধিক একর জায়গা নিয়ে মিনি ক্যান্টনমেন্টের প্রস্তাবিত নির্মাণাধীন জায়গার সৌন্দর্য উপভোগ করতেও অনেক ভিআইপিরা আসছেন মিঠামইনে। বিশেষ করে সাপ্তাহিক ছুটির দিনে পর্যটকদের উপচেপড়া ভিড় দেখা যায়। তবে পর্যটকদের ফেলে দেওয়া প্লাস্টিক সামগ্রী হাওড়ের পরিবেশের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এদিকে প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে রাস্তার মনোরম দৃশ্য উপভোগ করতে শত শত ট্রলার মোটরসাইকেল নিয়ে পর্যটক ও পিকনিক পার্টির লোকজন হাওড় ভ্রমণে যাচ্ছেন। 

মিঠামইন বাজারের লঞ্চঘাটে স্পিটবোট, ট্রলার, ইঞ্জিনচালিত নৌকা আর লঞ্চের বহর লেগেই থাকে। সেখান থেকে পর্যটকরা পায়ে হেঁটে অলওয়েদার সড়ক ও সাবেক রাষ্ট্রপতির বাড়ি পরিদর্শন করছেন। প্রতিদিন হাজার হাজার দর্শনার্থীর ভিড় লেগেই রয়েছে সেখানে।

প্রশাসনিকভাবে রাস্তায় পর্যটকদের মোটরবাইক ও সড়কের পাশে ইঞ্জিনচালিত ট্রলার নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। তবে অটোরিকশা নিয়ে রাস্তায় চলাচল করার অনুমতি রয়েছে। তিন থানার পুলিশের নিরাপত্তায় রয়েছে অলওয়েদার সড়ক পর্যটন কেন্দ্র।

জানা গেছে, জেলার হাওরাঞ্চল ইটনা-মিঠামইন ও অষ্টগ্রাম উপজেলায় সরাসরি সড়ক যোগাযোগের জন্য ২০১৫ সাল থেকে ২০২০ সালের জুন মেয়াদে অলওয়েদার সড়কটি নির্মিত হয়েছে। এ রাস্তাটি স্থাপিত হওয়ায় এসব এলাকার আর্থসামাজিক অবস্থার অভূতপূর্ব উন্নতি হয়েছে। ৮৭৪ কোটি ৮ লক্ষ টাকা ব্যয়ে নির্মিত সড়কে বহু মানুষ খুঁজে পেয়েছেন কর্মসংস্থান।

ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রাম সড়ক নির্মাণের ফলে হাজারো মানুষের ভাগ্যের চাকা ঘুরেছে। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে লাভবান হয়েছেন এসব উপজেলার মানুষ। হাওড়ের বুকচিরে নির্মিত দীর্ঘ নান্দনিক সড়ক দেখতে হাজারো মানুষ ভিড় করেন। ফলে এলাকায় ক্ষুদ্র দোকানি, রেঁস্তোরা মালিক, নৌকার মাঝি, নসিমন-করিমন-লেগুনা-অটোরিকশা-মিশুকের চালক মিলিয়ে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে অসংখ্য মানুষের।

বছরে ৬ মাস যে হাওড়বাসী অলস বসে থাকতো এখন তারা পর্যটকদের সেবায় মহাব্যস্ত। ইটনা থেকে মিঠামইন ও অষ্টগ্রামের সড়ক দেখতে যেতে হয় পানি পথ পাড়ি দিয়ে। ফলে মাঝিরা খুঁজে পেয়েছেন আয়ের উৎস। সবাই ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রাম সড়ক দেখতে আসছেন। একটি মাত্র রাস্তা কীভাবে একটি জনপদের অর্থনৈতিক অবস্থা বদলে দিচ্ছে তা বিস্ময়কর। দিগন্তবিস্তৃৃত জলরাশি, নয়নাভিরাম সড়ক ও হাওড়ের অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখতে দেশের নানা প্রান্ত থেকে পর্যটকদের ঢল নামে সেখানে।

অনেক পর্যটক জানান, রাস্তার পাশে হাওড়ের মধ্যে হোটেল-মোটেল তৈরি করার একান্ত প্রয়োজন। কারণ এখানে সরকারি দুটি ডাকবাংলো ছাড়া রাত্রিযাপন করার মত ভালো কোনো হোটেল নেই। অনেক পর্যটক পরিবার-পরিজন নিয়ে এসে থাকার জায়গার অভাবে দিনব্যাপী ঘুরে নিজ নিজ গন্তব্যে চলে যেতে বাধ্য হন।

তাদের মতে, সড়কের দু’পাশে সাঁতার কাটার জন্য বিশাল জায়গা রয়েছে। এখানে হোটেল-মোটেল হলে মানুষ আর সমুদ্রপাড়ে যাবে না। তাছাড়া এই অলওয়েদার সড়ক হাওড়ের সৌন্দর্যকে মোহনীয় করে তুলেছে। পাশেই অত্যাধুনিক মেরিন একাডেমি নির্মাণ করা হচ্ছে। ক্যান্টনমেন্টের পাশে ঘোড়াউত্রার পুরাতন নদীতে হবে ক্যান্টনমেন্ট লেক। এ জন্য সাপ্তাহিক ছুটির দিনে হাওড়ে প্রচন্ড ভিড় লক্ষ্য করা যায়।

কিশোরগঞ্জ-৪ (ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রাম) আসনের সংসদ সদস্য ও সাবেক রাষ্ট্রপতির বড় ছেলে রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক বলেন, ভ্রমণ করতে আসা পর্যটকদের জন্য আগামীতে হোটেল-মোটেল নির্মাণ করাসহ নানা সুযোগ-সুবিধা তৈরি করা হবে। তিনি আরও বলেন, মানুষ এখন আর কুয়াকাটা সমুদ্র বন্দর যেতে চায় না। হানিমুনের জন্য এটাই উপযুক্ত স্থান বলে মনে করি। হাওর তথা দেশের এ সম্পদকে রক্ষা করার জন্য তিনি সকলে প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

অন্যান্য জেলা থেকে হাওড়ে কিভাবে আসবেন তা জেনে নিন। কিশোরগঞ্জ -ভৈরব মহাসড়কের কটিয়াদী বাস স্ট্যান্ড থেকে, উজানচর থেকে, পুলেরঘাট থেকে হাওরের প্রধান গেইট নিকলী বেড়িবাঁধে যাতায়াত করা যায়। আবার কিশোরগঞ্জ শহর থেকে বালিখলা যাতায়াত করা যায়। 

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ

string(11) "18.97.14.81"