নজরুল সাহিত্যে মুসলিম ঐতিহ্য
এ কে আজাদ
(গত সংখ্যার পর)
আল্লাহকে পাইতে হলে রসূল (সাঃ) কে ভালবাসতে হবে এবং তাঁর প্রদর্শিত পথ ধরেই হাঁটতে হবে। তাঁর প্রদর্শিত পথই পবিত্র কুরআনে বর্ণিত মহান আল্লাহ নির্দেশিত পথ। কাজী নজরুল ইসলাম একটি গানে লিখেছেন-
আল্লাহকে যে পাইতে আয় হজরতকে ভালবেসে
আরশ কুরছি লওহ কালাম, না চাহিতেই পেয়েছে সে।
রসুল নামের রশি ধরে যেতে হবে খোদার ঘরে
নদী তরঙ্গে যে পরেছে ভাই, দাবিয়াতে সে আপনি মেশে।
...................................................
এই দুনিয়ায় দিবা রাতি ঈদ হবে তোর নিত্য সাথী
তুই যা চাস্ তাই পাবিরে ভাই আহমদ চান যদি হেসে
মানুষের অধিকার/মানুষে মানুষে ভেদজ্ঞান হীনতাঃ
ইসলামী জীবন ধারায় একটি গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক ঐতিহ্য হলো- ইসলামে কোন জাতি ও সম্প্রদায়গত ভেদাভেদ নাই। ভেদাভেদ নেই আমির ও ফকিরে। পবিত্র ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা নামে দু’টি ধর্মীয় ও সামাজিক অনুষ্ঠান পালন করা ও মুসলমানদের বহুদিনের ঐতিহ্য। ধনী গরীবের ব্যবধানহীনতা, সামাজিক সম অধিকার ইত্যাদি বিষয়ে ঈদের শিক্ষা নিয়ে কাজী নজরুল ইসলাম লিখেছেন-
আজি আরাফাত-ময়দান পাতা গাঁয়ে গাঁয়ে
কোলাকুলি করে বাদশা ফকিরে ভায়ে ভায়ে।
...................................................
আজি ইসলামী ডঙ্কা গরজে করি জাহান
নাই বড় ছোট সকল মানুষ এক সমান।
ইসলাম বলে- সকলের তরে মোরা সবাই
সুখ দুঃখ সমভাগ করে নেব সকলে ভাই,
নাই অধিকার সঞ্চয়ের
কারও আঁখিজলে, কারও ঝাড়ে ফিরে জ্বলিবে দ্বীপ
দু’জনার হবে বুলন্দ নসীব, লাখে লাখে হবে বদনসিব?
এ নহে বিধান ইসলামের। [ ঈদ মোবারক ]
সাম্য-প্রীতিঃ
সাম্য বিষয়ে ‘আজাদ’ কবিতায় নজরুল লিখেছেন-
অন্যেরে দাস করিতে কিংবা নিজে দাস হতে ওরে
আসেনিক দুনিয়ায় মুসলিম ভুলিলি কেমন করে?
ভাঙ্গিতে সকল কারাগার, সব বন্ধন ভয় লাজ
এলো যে কোরান, এলেন যে নবী, ভুলিলি সে সব আজ? [ আজাদ ]
“আমরা সেই সে জাতি’’ শিরোনামের গানে কাজী নজরুল ইসলাম লিখেছেন-
ধর্মের পথে শহীদ যাহারা আমরা সেই সে জাতি
সাম্য মৈত্রী এনেছি আমরা বিশ্বে করেছি জ্ঞাতি
আমরা সেই সে জাতি। ........................................................
আমিরে-ফকিরে ভেদ নাই, সবে ভাই সব এক সাথী
আমরা সেই সে জাতি।
দান খয়রাত:
প্রত্যেক সম্পদশালী লোকের উপরে তার গচ্ছিত সম্পদের উপরে শতকরা ২.৫০% হারে জাকাত প্রদান করা ফরত। গরীবে অর্থনৈতিক দুর্দশা থেকে মুক্তির জন্য এবং সমাজে অর্থনৈতিক ভারসাম্য রক্ষার জন্য এই বিধান ইসলামের মৌলিক সামজিক ঐতিহ্য হিসেবে বহু বছর ধরে পালন করে আসছে মুসলিম জাতি। যাকাতের পাশাপাশি, সাধারণ দান খয়রাত করাও মুসলিম ঐতিহ্যেরই অংশ। ধনীদের সম্পদে গরীবের অধিকার আল্লাহ নিশ্চিত করে দিয়েছেন। সে অনুযায়ী দান খয়রাত করা ইসলামের একটি অর্থনৈতিক বিধানও বটে। (চলবে)