বুধবার ২২ জানুয়ারি ২০২৫
Online Edition

যুক্তরাষ্ট্রের ছাত্র আন্দোলন

স্নাতক সমাপনী অনুষ্ঠান বাতিল হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে। নিউইয়র্ক থেকে এ কেমন খবর দিল রয়টার্স? যুক্তরাষ্ট্রের মত একটি উন্নত দেশে, যে দেশের শাসকরা ও মহাজনরা পৃথিবীর দেশে-দেশে জ্ঞান-বিজ্ঞান ফেরি করে বেড়ান, সেখানেই কিনা বাতিল হচ্ছে স্নাতক সমাপনীর মতো আলোকিত অনুষ্ঠান! কিন্তু কেন? কোনো সন্ত্রাসী গোষ্ঠী কিংবা অন্ধকারের কোনো প্রাণী কি এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি করলো? শাসকদের কন্ঠে তো দোষারোপের এমন কথা প্রায়ই শোনা যায়। না, নিউইয়র্ক থেকে রয়টার্সের বয়ানে তেমন কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। বরং রয়টার্সের বয়ানে বলা হয়েছে, ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরাইলের হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভে উত্তাল যুক্তরাষ্ট্রের শতাধিক বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ। বিক্ষোভকারীদের হটাতে মারমুখী আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। ইতিমধ্যে দুই হাজারের বেশি শিক্ষার্থীকে আটক করা হয়েছে। এরই মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে স্নাতক সমাপনী অনুষ্ঠানের সময় ঘনিয়ে এসেছে। এমন পরিস্থিতিতে এসব অনুষ্ঠান বাতিল করেছে কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয়, আবার কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয় দিচ্ছে পিছিয়ে। উপলব্ধি করা যায়, উদ্ভূত পরিস্থিতির কারণে স্বয়ং বিশ^বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ স্নাতক সমাপনী অনুষ্ঠান বাতিল করছে, এখানে কোনো জঙ্গীগোষ্ঠী কিংবা অন্ধকারের কোনো প্রাণীর হাত নেই। তাহলে উদ্ভূত পরিস্থিতির ব্যাখ্যা কী? বিষয়টি খুবই স্পষ্ট। কর্তমান বিশ্বব্যবস্থা তো ন্যায়-নীতি বা মানবিক ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত নয়। ভূরাজনীতির নামে পরাশক্তির বলয়ে পৃথিবী বিভক্ত। এখন যুক্তরাষ্ট্রের নীতি হলো, আগ্রাসন ও যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত হলেও অন্ধভাবে ইসরাইলকে সমর্থন করে যাবে সে। এমন অপরাজনীতি পছন্দ নয় যুক্তরাষ্ট্রের মুক্তমনের মানবতাবাদী ছাত্রদের। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তাই যুক্তরাষ্ট্রের ভ্রান্তনীতির বিপক্ষে দাঁড়িয়েছে এবং গাজায় ইসরাইলি হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ অব্যাহত রেখেছে। ছাত্রদের এ আন্দোলন থেকে যুক্তরাষ্ট্রের দাম্ভিক শাসকরা কোনো আলো নেয়নি, গ্রহণ করেনি কোনো বার্তাও। বরং তারা বার্তা গ্রহণ করেছেন ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু থেকে। ইসরাইল গাজায় চালিয়ে যাচ্ছে নৃশংস দমন-পীড়ন ও হত্যাকান্ড, আর যুক্তরাষ্ট্রের বাইডেন প্রশাসনের পুলিশ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে চালিয়ে যাচ্ছে দমন-পীড়ন ও গ্রেফতার অভিযান। এমন উগ্র ও অগণতান্ত্রিক আচরণ বিশ্ববিদ্যালয়ের আলোকিত শিক্ষার্থীরা মেনে নিবে কেমন করে? ফলে যুক্তরাষ্ট্রে এখন সৃষ্টি হয়েছে এক বিশেষ পরিস্থিতি।

স্বচ্ছ দৃষ্টিতে বিবেচনা করলে সহজেই উপলব্ধি করা যাবে যে, যুক্তরাষ্ট্রে উদ্ভূত পরিস্থিতির জন্য, স্নাতক সমাপনী অনুষ্ঠান বাতিলের জন্য ছাত্ররা মোটেও দায়ী নয়। বরং এর জন্য দায়ী বাইডেন প্রশাসনের ভ্রান্ত ইসরাইল তোষণ নীতি এবং পুলিশের চন্ড আচরণ। যুক্তরাষ্ট্রের জনগণ বিষয়টি বেশ ভালোভাবেই উপলব্ধি করতে পারছেন। বিভিন্নভাবে তারা তাদের মতামত প্রকাশ করছেন। ইসরাইল বিরোধী প্রতিবাদ মিছিল তার বড় প্রমাণ। গত শতকের ষাটের দশকে ভিয়েতনামে যুক্তরাষ্ট্রের দাম্ভিক শাসকদের আগ্রাসনকে ঠিক মনে করেনি যুক্তরাষ্ট্রের ছাত্র-জনতা। তারা তখন প্রতিবাদমুখর হয়ে উঠেছিলেন। ভিয়েতনাম যুদ্ধর মত গাজা যুদ্ধেও লক্ষ্য করা যাচ্ছে একই চিত্র। ন্যায়ের সংগ্রামে যুক্তরাষ্ট্রের ছাত্র-জনতার বিজয় আমাদের কাম্য।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ