সংসদসহ সকল স্তরে প্রতিনিধিত্বশীল দলের নিবন্ধন বাতিল সুবিচারের প্রমাণ বহন করে না
স্টাফ রিপোর্টার: বর্তমান নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত তফসিলে ‘একতরফা’ নির্বাচনটি ‘একদলীয় বাকশালী নির্বাচন’ হবে বলে মন্তব্য করেছেন রুহুল কবির রিজভী। গতকাল সোমবার বিকালে এক ভার্চুয়াল সংবাদ ব্রিফিংয়ে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব একথা বলেন। তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন যে সরকারের পথরেখা অনুসারে চলবে তার প্রমাণ তারা নিজেরাই দিচ্ছে। সরকারের সাজানো প্রশাসনের কোন রদবদল করবে না বলে তারা জানিয়েছে। তাদের জন্য এটাই স্বাভাবিক। এই নির্বাচন কমিশন কি করে গ্যারেন্টি দিতে পারে যে, এখানে কোনো প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচন হবে...যাদেরকে আওয়ামী সরকারের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতেই নিয়োগ দেয়া হয়েছে...এটাই তো বাস্তব সত্য। কারণ প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ নির্বাচন কমিশনারদের রক্ত পরীক্ষা করে তাদেরকে কমিশনে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। সুতরাং এটি হবে প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন একদলীয় বাকশালী নির্বাচন। এই নির্বাচনে অংশগ্রহনের অর্থই হলো নির্বাচনী আত্মহত্যা।
জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন প্রসঙ্গে রিজভী বলেন, দেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন ২০১৩ সালে হাইকোর্টে সংখ্যাগরিষ্ঠের রায়ে বাতিল করার বিরুদ্ধে সুপ্রীম কোর্টে যে আপীল করা হয়েছিল গত রোববার তা ‘ডিসমিস ফর ডিফল্ট’ করা হয়েছে। আপীলকারী দল রায়টিকে ‘ন্যায়ভ্রষ্ট’ বলে উল্লেখ করে তাদেরকে সুবিচার থেকে বঞ্চিত করার অভিযোগ করেছে। সরকার বিরোধী রাজনৈতিক দল এবং রাজনৈতিক ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ন্যায়ভ্রষ্ট রায় প্রদানের মাধ্যমে তাদের সুবিচার থেকে বঞ্চিত করার দৃষ্টান্ত নতুন নয় বলেই দেশবাসী এই রায়ে বিস্মিত না হলেও সুবিচার লাভের শেষ আশ্রয়স্থল বিচার বিভাগে যুক্ত ব্যক্তিগণের রাজনৈতিক পক্ষপাতমূলক বক্তব্য এবং ক্ষমতাসীন সরকারের ইচ্ছা পূরণে সহায়তা করার ঘটনায় হতাশ হয়ে পড়ছে। যে রাজনৈতিক দলের বিস্তৃতি সারাদেশে দৃশ্যমান, জাতীয় সংসদ থেকে শুরু করে স্থানীয় সরকারের প্রায় সকল স্তরে প্রতিনিধিত্বশীল থাকার প্রমাণিত দৃষ্টান্তের অধিকারী...তবে নিবন্ধন বাতিল হওয়ার পাশাপাশি নাম গোত্রহীন অপরিচিত দলকে নিবন্ধন দেয়ার নির্দেশ দেয়ার দৃষ্টান্ত সুবিচারের প্রমাণ বহন করে না। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ক্ষমতাসীন সরকারের বিরোধিতা করা যেকোন রাজনৈতিক দলের গণতান্ত্রিক অধিকার এবং সেই অধিকারের সুরক্ষা বিচার বিভাগের কাছেই প্রাপ্য। এর ব্যাতিক্রম গণতন্ত্র ও ন্যায়বিচারের পরিপন্থি এবং অগ্রহণযোগ্য।
নির্বাচনের মাঠ খালি করতে কেন্দ্রীয় নেতাদের সাজা দেয়া হচ্ছে অভিযোগ করে দলের যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল, তথ্য বিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল, স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরফত আলী সপুসহ ১৪ জন নেতা এবং রংপুর জেলা বিএনপির সদস্য সচিব আনিসুর রহমান লাকু, মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব মাহফুজ উন নবী ডন, জেলা যুব দলের সহসভাপতি তারেক হাসান সোহাগ, মহানগর যুব দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব জহির আলম নয়নকে ‘মিথ্যা মামলায় ফরমায়েশি রায়ে সাজা’ প্রদানের নিন্দা জানান রিজভী।
তিনি বলেন, এসব ফরমায়েসী রায় সুপরিকল্পিত। নির্বাচনের আগে মাঠ ফাঁকা করার জন্য বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের শুধু মিথ্যা মামলায় গ্রেফতারই নয়, পুরনো মামলায় সাজা দেয়ার হিড়িক শুরু হয়েছে। সজীব তরুণ এসব নেতাদের যদি সাজা দিয়ে আটকিয়ে রাখা যায় তাহলে শেখ হাসিনার অবৈধ মসনদ টিকে থাকবে বহুদিন এই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে এসব নেতৃবৃন্দকে সাজা দেয়া হয়েছে। এদের পরিবার পরিজন অসহায়...কে তাদের পরিবারকে দেখবে?
কারাগারে বিরোধী দলের সাবেক সংসদ সদস্য দলের ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান ও জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) মহাসচিব আহসান হাবিব লিংকনকে কারাগারে ডিভিশন না দেয়ার ঘটনায় নিন্দা জানিয়ে রিজভী বলেন, এরা সংসদ সদস্য ছিলেন তাদেরকে ডিভিশন হয় না। কিন্তু আমি জানি, আমাদেরকে তো প্রায়ই এ্ সরকারের আমলে কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের ডিভিশন দেয়া হয়েছে.. শুধুমাত্র ক্ষমতাসীন দলের কানেকশনের কারণে। আর দেশের সুপরিচিত রাজনীতিবিদ ও এমপিদেরকে ইচ্ছাকৃতভাবে তাদেরকে ডিভিশন দেয়া হয়নি, তাদেরকে অমানবিক পরিবেশে মেঝেতে থাকতে দেওয়া হয়েছে। এই শীতে মেঝের ঠান্ডায় তারা চরম শ্বাসকষ্টসহ নানাবিধ রোগে ভুগছেন। আদালতের নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও কারাকর্তৃপক্ষ এখনো তাদেরকে ডিভিশন দিচ্ছে না।