শনিবার ০৯ নবেম্বর ২০২৪
Online Edition

স্বত:স্ফূর্ত হরতাল পালিত

স্টাফ রিপোর্টার: একতরফা তফসিলের প্রতিবাদসহ সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে বিএনপি-জামায়াতে ইসলামীসহ সমমনা দল ও জোটগুলোর ডাকা ৪৮ ঘন্টার হরতাল স্বত:স্ফূর্ত পালিত হয়েছে। দুইদিনের হরতালের দ্বিতীয় দিনে গতকাল সোমবার দেশব্যাপী বিক্ষোভ মিছিলসহ পিকেটিং করেছে সরকার বিরোধীরা। আজ মঙ্গলবার সকাল ৬টায় এ হরতাল কর্মসূচি শেষ হয়েছে। হরতালে দেশের স্বাভাবিক কার্যক্রম ছিল অনেকটা নিষ্ক্রিয়। রাজধানীসহ দেশের অধিকাংশ জেলায় দূরপাল্লার যানচলাচল ছিল বন্ধ। রাজধানীতে পুলিশ পাহারায় কিছু বাস চলেছে। তবে টার্মিনালগুলো ছিল যাত্রীশূন্য। কয়েকটি লঞ্চ ছাড়লেও যাত্রী তেমন ছিল না। বিলম্বে কয়েকটা ট্রেন ছেড়েছে। এদিকে হরতাল কর্মসূচি পালনকালে গতকালও আন্দোলনকারীদের উপর চড়াও হয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সরকার সমর্থকরা। বিএনপি জানিয়েছে গত ২৪ ঘন্টায় সারাদেশে তাদের প্রায় পাঁচশত নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এছাড়া মোট মামলা ১৭ টি এবং মোট আসামী ১৯৯০ জনের অধিক নেতাকর্মী (এজাহার নামীয়সহ অজ্ঞাত)। মোট আহত ৮০ জনের নেতাকর্মী। একইসাথে জামায়াতসহ অন্যান্য দলের শতাধিক নেতাকর্মী আহত ও বেশ কিছুকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এদিকে একই দাবিতে আগামী বুধ ও বৃহস্পতিবার সারদেশে ৪৮ ঘন্টার অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে সরকার বিরোধীরা। 

বিএনপির বিক্ষোভ : ‘একতরফা’ হরতালের তফসিল ঘোষণার প্রতিবাদে ৪৮ ঘন্টা হরতালের দ্বিতীয় দিনে গতকাল রাজধানীতে ‘ঝটিকা’ মিছিল করেছে বিএনপি। সকালে বিক্ষোভ মিছিলে অংশ নিয়েছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, সরকারের বিরুদ্ধে চারদিকে অন্ধকার ধেয়ে এসেছে। অবৈধ সরকারের মসনদ আর ধরে রাখতে পারবে না। নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া দেশে কোনো নির্বাচন জনগণ হতে দেবে না।

রিজভী হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, গ্রেফতার, মিথ্যা মামলা, বাড়ি বাড়ি তল্লাশি চালিয়ে পরিবারের সদস্য ধরে নিয়ে গিয়ে একদফার আন্দোলনকে সরকার রুখতে পারেনি। বিএনপিসহ সমমনা জোটদের নেতা-কর্মীরা সারাদেশে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে স্বত:স্ফূর্তভাবে আমাদের শান্তিপূর্ণ হরতালে রাজপথে নেমেছে। এই অবৈধ সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত জনগণ রাজপথ ছাড়বে না। আমরা বিশ্বাস করি, জনগণের দাবি মেনে সরকার অচিরেই পদত্যাগে বাধ্য হবে।

৪৮ ঘন্টার হরতালের দ্বিতীয় দিন গতকাল সোমবার সকাল সাড়ে ৬টায় কাওরান বাজারের সোনারগাঁও সড়ক ও সকাল সাড়ে ৭টায় দয়াগঞ্জের দয়াগঞ্জ মোড়ে ১৫/২০ জন নেতা-কর্মীকে নিয়ে রিজভী ‘ঝটিকা’ মিছিল করেন। মিছিলে নেতা-কর্মীরা ‘খালেদা জিয়ার ভয় নাই, রাজপথ ছাড়ি নাই’, ‘আজকের হরতাল সফল হোক সফল হোক’, ‘একতরফা নির্বাচন মানি না, মানবো না’ ইত্যাদি শ্লোগান দেয়। এ সময়ে দলের কেন্দ্রীয় নেতা ডা. রফিকুল ইসলাম, ডা. পারভেজ রেজা কাকন, দুল কাদির ভুঁইয়া জুয়েলসহ ছাত্র দল ও শ্রমিক দলের নেতা-কর্মীরা অংশ নেন। রিজভী ১০/১১ মিনিট মিছিলে অংশ নিয়ে পরে চলে যান।

রিজভী জানান, সারাদেশে বিএনপি ও সমমনা জোটের নেতা-কর্মীরা শান্তিপূর্ণভাবে রাস্তায় অবস্থান নিয়ে হরতাল পালন করছে। নানা বাধা-বিপত্তির মধ্যেও রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে যুব দল, স্বেচ্ছাসেবক দল, কৃষক দল, শ্রমিক দল, মহিলা দল, ছাত্র দল, জাসাসসহ ঢাকা মহানগর বিএনপির নেতা-কর্মীরা মিছিল করছে।

হরতাল সফলে রাজধানীর ৫টি এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল করেছে জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দল ঢাকা মহানগর দক্ষিণের নেতাকর্মীরা। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এ এ জহির উদ্দিন তুহিন ও সাধারণ সম্পাদক সাদ মোর্শেদ পাপ্পা শিকদারের নেতৃত্বে ঢাকা দক্ষিণের ধোলাইপাড় মোড় থেকে যাত্রাবাড়ী, লালবাগ বাটা মসজিদ হতে স্টাফ কোয়ার্টার, কাকরাইল মোড় হতে শান্তিনগর বাজার, ধানমন্ডি শংকর, সবুজবাগ বাসাবো সিনেমা হলের সামনে থেকে পাটোয়ারী গলি পর্যন্ত বিক্ষোভ মিছিল হয়েছে। মিছিলগুলোতে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এ এ জহির উদ্দিন তুহিন, সাধারণ সম্পাদক সাদ মোর্শেদ পাপ্পা শিকদার, ছাত্রদলের সাবেক কেন্দ্রীয় সহসভাপতি জয়দেব জয়, স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি ওয়াহিদুর রহমান বাণী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

হরতাল সফলে রাজধানীর মগবাজার রেলগেট-হাতিরঝিল এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল করেছে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। 

ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি নিজাম উদ্দিন রিপনের নেতৃত্বে হাতিরঝিল মোড় থেকে মগবাজার রেলগেট পর্যন্ত শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ মিছিলে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের যুগ্ম সম্পাদক মাসুম বিল্লাহ, মহানগর পূর্বের যুগ্ম আহ্বায়ক আরমান হোসেন বাপ্পি, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহসভাপতি সাঈদ ফকির।

জামায়াতের বিক্ষোভ : তফসিল প্রত্যাহার, সরকারের পদত্যাগ ও কেয়ারটেকার সরকার প্রতিষ্ঠা, আমীরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমানসহ সকল রাজনৈতিক নেতাকর্মী ও আলেম-ওলামার মুক্তি এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণের দাবিতে ডাকা ৪৮ ঘণ্টা হরতালের দ্বিতীয় দিনে হরতাল সফলে ঢাকার বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ মিছিল ও পিকেটিং করছে জামায়াতে ইসলামী। সোমবার ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ ও উত্তর রাজধানীর ১২টির বেশি স্পটে মিছিল করেছে। জানা গেছে, জামায়াতে ইসলামী ঢাকার দুই মহানগরের নেতাকর্মীরা রাজধানীর শেওড়াপাড়া, কল্যাণপুর, মগবাজার, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক, ভাটারা, রামপুরা, যাত্রাবাড়ী, বঙ্গবাজার, শাহজাহানপুর, ডেমরা এলাকাসহ আরও কয়েকটি স্পটে মিছিল ও পিকেটিং করে।

অন্যান্য দল : একতরফা’ নির্বাচনে ঘোষণায় সরকার ‘গণদুশমন’ এ পরিণত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছে গণতন্ত্র মঞ্চ। হরতালের দ্বিতীয় দিনে দুপুরে বিক্ষোভ মিছিল শেষে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে গণতন্ত্র মঞ্চের নেতা বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক এই মন্তব্য করেন। 

গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বলেন, সরকার ভাবছে, এই পুলিশ দিয়ে, বিজিবি দিয়ে, র‌্যাব দিয়ে, দমনপীড়ন করে তারা(সরকার) একতরফা নির্বাচন পার করে ফেলবে। তারা আরেকটি নির্বাচন করে তারা ক্ষমতায় বসবে, তারপর বিদেশীদের পায়ে-টায়ে ধরে সব ব্যবস্থা করে ফেলবে। 

সকাল সাড়ে ১১টায় গণতন্ত্র মঞ্চের নেতা-কর্মীরা বিজয়নগর, পুরাতন রাজস্ব বোর্ড ভবন ও শিল্পকলা একাডেমি সড়ক দিয়ে মিছিলটি জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এসে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করে। নেতারা ‘জ্বালিয়ে দাও, পুড়িয়ে দাও, ফ্যাসিবাদের আস্তনা’ ‘একতরফা নির্বাচন মানি না, মানব না’, ‘ভোট চোর চোর, শেখ হাসিনা ভোট চোর’ ইত্যাদি শ্লোগান দেয়। ভাসানী অনুসারী পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক আবু ইউসুফ সেলিমের সভাপতিত্বে ও বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির রাজনৈতিক পরিষদের সদস্য আকবর খানের সঞ্চালনায় এই সংক্ষিপ্ত সমাবেশে জেএসডির সিরাজ মিয়া, নাগরিক ঐক্যের মুফাখখারুল ইসলাম নবাব, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের ইমরান ইমন প্রমুখ নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন।

‘একতরফা’ তফসিলের প্রতিবাদে সকালে বিজয় নগর ও নয়াপল্টনের সড়কে নুরুল হক নূরের নেতৃত্বে গণঅধিকার পরিষদ, ফারুক হাসানের নেতৃত্বে গণঅধিকারের আরেক অংশ নওয়াব আলী আব্বাস খানের নেতৃত্বে ১২ দলীয় জোট, হারুন চৌধুরীর নেতৃত্বে গণতান্ত্রিক বাম ঐক্য এবং নেয়ামুল বশিরের নেতৃত্বে এলডিপি নেতা-কর্মীরা মিছিল করে।

তালাবদ্ধ বিএনপি কার্যালয়: এদিকে বিএনপির নয়া পল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয় তালাবদ্ধ অবস্থায় আছে। গত ২৮ অক্টোবরের মহাসমাবেশ পুলিশ পন্ড করে দেয়ার পর রাত থেকে এই কার্যালয়ে নেতা-কর্মী কাউকে দেখা যায়নি, কার্যালয়ের কলাসিবল গেইট তালাবদ্ধ দেখা যায়। গতকাল বিকেলে দেখা গেছে, কার্যালয়ের দুই পাশে বসানো পুলিশী নিরাপত্তা এখনো বলবৎ আছে। সন্দেহ হলেই তল্লাশি করছে পুলিশ। পথচারীরা জানান, তাদের মোবাইলও চেক করছে পুলিশ। 

চলছে না দূরপাল্লার বাস : অবরোধের ন্যায় হরতালের মধ্যেও আতঙ্ক আর যাত্রী সংকটের কারণে চলনি দূরপাল্লার বাস। রাজধানীতে পুলিশ পাহারায় কিছু গণপরিবহন চললেও সংখ্যায় কম। সোমবার সকাল সাড়ে ৮টা থেকে ১০টা পর্যন্ত কল্যাণপুর, টেকনিক্যাল, গাবতলী আন্তঃজেলা বাস টার্মিনাল সরেজমিনে দেখা যায়, সড়কে চাপ কম যানবাহনের। পুলিশের উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেলেও যানবাহনের চাপ নেই সিগন্যালগুলোতে। গত দুইদিন খা খা করছে গাবতলী আন্তঃজেলা বাস টার্মিনাল। সরেজমিনে দেখা যায়, বেশিরভাগ কাউন্টারই খোলা। কিন্তু টিকিট বেচাবিক্রি নেই। কাউন্টারে নেই যাত্রী। হাঁকডাক নেই কাউন্টারগুলোতে। অনেক বাস কাউন্টার দেখা গেছে বন্ধ। একই চিত্র মহাখালী ও সায়েদাবাদে। সারিসারি করে শতশত বাস রাখা থাকলেও যাত্রী বা চালক হেলপার কেউই নেই। 

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ

string(14) "44.220.255.141"