শনিবার ০৯ নবেম্বর ২০২৪
Online Edition

কবিতা

সভ্যতার ফেরিওয়ালা

মির্জা মুহাম্মদ নূরুন্নবী নূর

রাঙা ভোর দুলিয়ে আজ  ফজর এসেছে দুয়ারে

বহুদিন পর আঁধারে লুকায়িত সুবহে সাদিক এখন

আমাদের বাড়ির দহলিজের দ্বারপ্রান্তে দেদীপ্যমান

একমুঠো রোদের উত্তাপে স্যাঁতস্যাঁতে ভেজা জমিনটা এখন

চাষাবাদের উপযোগী হয়ে উঠেছে বেশ

প্রয়োজন আবাদের, দরকার একদল কাজপাগল চাষির

চাই সাহসী যোদ্ধা, পাকা বোদ্ধা আর আমানতদার ফেরেশতা

কবি আব্দুল্লাহ বিন রাওয়াহার আগমন সময়ের দাবি

ঘরে ঘরে কাজী নজরুলের রাজবন্দীর জবানবন্দীর আবৃত্তি চাই

ফররুখ আহমদ আর সৈয়দ ইসমাইল হোসেন সিরাজীর কবিতা

পঠিত হোক পথে ঘাটে মাঠে প্রান্তরে

ইকবাল আবারও কালের মুয়াজ্জিন হয়ে দর্শন ছড়াক

গাজালীর মতো পরিক্ষিত ছাত্র এখন কালের দাবি

বাদশা আলমগীরের আদর্শ আসুক শিক্ষা বিস্তারের গাইডলাইনে

আমি সাথে আছি আমি বরাবরই পাশে থাকবো

আমাদের বাড়ির আঙিনায় জোনাকির আলো জ্বলুক

পাখিদের কিচিরমিচির আওয়াজে মুখরিত হোক বাগানবাড়ি

গহীন অরণ্য মাড়িয়ে আবারও ফিরুক বিজয়ী সভ্যতা

আমি সেই সভ্যতার ফেরি করতে করতে ফিরে যেতে চাই

আমার কাক্সিক্ষত মঞ্জিলে, জান্নাতের বাগানবাড়িতে।

অতিথিশালা

হাফিজুর রহমান

 

ফিরে গেলেই একবার- প্রমাণ করে দিব

আমিও ছিলাম পৃথিবী নামের এই অতিথিশালায়

শুধুমাত্র একটিবারের জন্য ভ্রমণের;

না-জানা সময়ের, নিয়ে এসেছিলাম ভিসা।

 

আমি এসেছি বেড়াতে, শিখতে- শেখাতে 

আমি এসেছি নেয়ার থেকে বেশি দিতে;

অতিথিদের মাঝে অতিথি হয়ে- 

পর্যাপ্ত সম বরাদ্দে-এই জগৎ স্রষ্টার ইচ্ছায়।

 

এখানের আতিথেয়তায়- অতিথিরাও লোভী হয়!

লুটপাট করে, কেড়ে নেয়- একে অন্যের হক;

ভুলে যায়, অতিথিগণ চিরস্থায়ী নয়!

নির্দিষ্ট সময়ের পূর্বে, ফিরতে হবে একসময়।

 

ঘোর

শামীম শাহাবুদ্দীন

 

হাসলে তুমি হাসে তোমার আঁখি

ওই দু’চোখে পথ হারানোর অপেক্ষাতেই থাকি!

কাঁদলে তুমি অশ্রু জলে

বরফ গলে নদী হলে

সেই নদীটা অনায়াসেই সাঁতরে দেবো পাড়ি

আরজি শুধু সঙ্গে থাকুক তোমার মতো নারী।

 

হাঁটলে তুমি প্রকৃতিও হাঁটে তোমার সাথে

কেশের বনে হারাই পথিক যেমনে হারায় রাতে

থামলে তুমি ঘড়ির কাটা নিমিষে যায় থেমে

আকাশের ওই চাঁদটা বুঝি ধরায় আসে নেমে।

 

কাচভাঙ্গা ওই মিষ্টি হাসি ঝনঝনিয়ে বাজে

বনের কোকিল, ময়না, শালিক গান ভু্লে যায় লাজে

মেঘকালো কেশ ছড়াও যখন রাত্রি নেমে আসে

কেশের ফাঁকে কাক্সিক্ষত মুখ চাঁদের মতো হাসে।

 

তুমি দেবী না মানবী সংশয়েতে থাকি

বোধ ও বিবেক তোমার ঘোরেই থাকে মাখামাখি!

 

না থাকার শূন্যতায় 

রবিউল রতন

 

একদিন তোর অজান্তেই চলে যাব 

অন্য এক ধূসর ভ্রমণে, 

অলীক সীমান্তে উড়ে যাবে নিঃসঙ্গ কবুতর! 

হয়তো তখন- তোর মনে উঁকি দেবে সেইসব কথা।

সামুদ্রিক চোখে না বলা কথার ঝড় হবে, 

সারারাত নির্ঘুম দুচোখে 

জানালায় তাকিয়ে দেখবে ধূসর এক পৃথিবীর মুখ, 

নিশ্চুপ নিষ্প্রাণ! 

না থাকার শূন্যতায় পুড়বে বেদনার গহীন,

ঠোঁটের কার্নিশে বয়ে যাবে জলের স্রোতধারা।  

নিশ্চয়ই একদিন এখানে দাঁড়িয়ে 

সমাধির ঘাসগুলি দুচোখ ভরে দেখবে, 

চারপাশে দেখবে না থাকার অদ্ভুত হাহাকার।

 

 

দুঃখ আমার 

মমতা মজুমদার

 

এক জীবনে কী আর আছে

ভালোবাসে দুঃখ যাকে;

বুকের ব্যথায় কষ্ট যেমন

মিলেমিশে থাকে কাছে!

কেউ তো জানুক, কোন প্রয়াসে

বাড়ছে অসুখ মন আকাশে।

যতই দেখাও হাসি তোমার 

সবাই তবে জানুক এবার 

প্রিয়তম দুঃখ আমার।

 

নক্ষত্র 

শাদমান শাহিদ

 

একটা নক্ষত্র খসে পড়বে আর টের পাবে না পৃথিবী

তা কী করে সম্ভব 

টের পেলো এবং কেঁপে উঠল

কেঁপে উঠলো তাগুত

কেঁপে উঠল মিথ্যার দেয়াল এবং ফেটে গেলো

মানুষ দেখলো মানুষকে

মানুষ দেখলো কতটা ভারি হতে পারে একজন মানুষের ওজন

দেখলো একজন মানুষ কীভাবে ছুঁয়ে যায় কোটি কোটি মন

কীভাবে জোর হারিয়ে ফেলে একটি দ্রুতগতিসম্পন্ন এম্বুলেন্সের চাকা 

দশ সেকেন্ডের পথ পেরোতে লাগলো দশঘণ্টা

 

মানুষ দেখলো কীভাবে একজন মানুষ মৃত্যুকে অতিক্রম করে যায় 

কীভাবে হয়ে গেল অন্তহীন মহাকালের যাত্রী

কোন প্রকার গান কবিতা আর ডুগডুগি ছাড়া।

 

 

দাবাড়ু 

রফিকুল নাজিম

 

তোমার ঘোড়া ছুটছে বেগে- দাবার বোর্ডটা জুড়ে

তোমার দানে মরছে সৈন্য- নৌকা ঘাটের দূরে।

চোখের দানে করছো ঘায়েল হস্তী মন্ত্রী রাজা

নেই তলোয়ার ঢাল বর্শা; পাচ্ছে দারুণ সাজা।

তোমার ঘোড়া ছুটছে ক্ষ্যাপা- আমার প্রান্ত শেষে

আমার রাজা হার মেনেছে- তোমায় ভালোবেসে।

 

এখানে মানুষ নেই 

মোহাম্মদ ইসমাইল 

 

চারদিকে এতো অরাজক মানুষের ভিড় ;

চারপাশে কেন এতো এ-ই শোরগোল অস্থির? 

কে কাকে কী বোঝাতে চাই ;

কে শুনে কার কথা এই বিলকুল ইশারায়? 

একটু স্বস্তিকা, একটু দম ফেলবার অভিলাষ 

এইখানে বলতে গেলে একেবারে তা এক অসহ্য হাসফাস! 

চারদিকে এতো মানুষ, মানুষের ঠেলাঠেলি;

অথচ, এখানে কোনো মানুষ নেই,

সবটা শুধু মানুষ নামের দলাদলি!

 

বন্দি জীবন

নকুল শর্ম্মা 

 

জোনাক পোকার আলোর মতো জীবন 

কতবার পিষে গেছে দানবের দল,

বেঁচে উঠি মৃত্যুকে ডিঙিয়ে অমরত্বের আশায়। 

ক্ষুদ্র পরিসরে এ যেনো এক চিড়িয়াখানা 

খাঁচায় বন্দি বাঁদর ছানার খেলা,

সময়ের ফোড়নে চিমটি কাটে হিংসুটে মানুষের দল।

তবু বেঁচে থাকি বিড়ালের প্রাণ নিয়ে 

আঘাতের কারুকাজে বিচিত্র অলঙ্করণের দাগ,

সটান দাঁড়িয়ে থাকে মৃত্যুহীন ছায়ার অবয়ব।

 

 

 

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ

string(14) "44.220.255.141"