রবিবার ১০ ডিসেম্বর ২০২৩
Online Edition

অবৈধ আ’লীগ সরকারকে বিদায় করেই ঘরে ফিরব

গতকাল মঙ্গলবার রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ মোড়ে (রাজবাড়ী থেকে শরীয়তপুর অভিমুখে) বিএনপির রোডমার্চ পূর্ব সমাবেশে বক্তব্য রাখেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী                         -সংগ্রাম

স্টাফ রিপোর্টার : বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, অবৈধ সরকারকে বিদায় করেই তারপর আমরা ঘরে ফিরব। গতকাল মঙ্গলবার সকালে রাজবাড়ী সদর উপজেলার গোয়ালন্দ মোড় এলাকায় রোডমার্চ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন। তিনি বলেন, মানবতার মা বেগম খালেদা জিয়া খুবই অসুস্থ। তাকে চিকিৎসা করা খুবই জরুরি কিন্তু সরকার নানান রকম দোহাই দিয়ে কালক্ষেপণ করছে। আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগ, সংসদ বিলুপ্ত, নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং একদফা আদায়ের লক্ষ্যে এ রোডমার্চ অনুষ্ঠিত হয়। গতকাল সকাল সাড়ে ১২ টায় রাজবাড়ির গোয়ালন্দ মোড় থেকে এই রোড মার্চ শুরু হয়। এটি রাজবাড়ী, গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর হয়ে শরীয়তপুর গিয়ে সন্ধ্যার পর শেষ হয়। গত ২১ সেপ্টেম্বর বিএনপি সিলেট বিভাগ, ২৩ সেপ্টেম্বর বরিশাল বিভাগ, ২৬ সেপ্টেম্বর খুলনা বিভাগ এবং ২৯ সেপ্টেম্বর ময়মনসিংহ বিভাগে রোড মার্চ হয়। এটি বিএনপির পঞ্চম রোড মার্চ। আগামী ৫ অক্টোবর চট্টগ্রাম বিভাগে রোড মার্চ অনুষ্ঠিত হবে।  বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটি ও চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা জয়নাল আবেদীন ফারুকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু, ফরিদপুর বিভাগের সহসাংগঠনিক সম্পাদক খন্দকার মাশুকুর রহমান মাশুক, সেলিমুজ্জামান সেলিম, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জহুরুল হক শাহাজাদা মিয়া, বিএনপির ফরিদপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ, কৃষক দলের সহসভাপতি অ্যাডভোকেট আসলাম মিয়া, রাজবাড়ী জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট লিয়াকত আলী বাবু, যুগ্ম-আহ্বায়ক রেজাউল করিম পিন্টু, সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট কামরুল আলম, জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশীদ হারুন, পাংশা উপজেলা বিএনপির সভাপতি চাঁদ আলী খান, বালিয়াকান্দি উপজেলা বিএনপির সভাপতি গোলাম শওকত সিরাজ, গোয়ালন্দ উপজেলা বিএনপির সভাপতি নিজাম উদ্দিন শেখ, সাধারণ সম্পাদক মোশারফ হোসেন মুসা প্রমুখ বক্তব্য রাখেন । সরকার হটানোর আন্দোলনে রাজপথের কর্মসূচির জন্য সর্বাত্মক প্রস্তুতির আহ্বান জানিয়ে আমির খসরু বলেন, ফরিদপুর মানুষ বাংলাদেশের মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার ও সাংবিধানিক অধিকারের জন্য রাস্তায় লড়ে যাচ্ছেন। আগামী দিনে যে ডাক আসবে সেখানে সবাই রাস্তায় থাকতে হবে।

 

তারেক রহমান বলেছেন, ফয়সালা কোথায় হবে? রাজপথে। রাস্তায় আজকে সেজন্য লক্ষ জনতা নেমেছে। এই সময়ে ‘ভোট চোর, শেখ হাসিনা ভোট চোর’ শ্লোগানে নেতাকর্মীরা মুখর করে তোলে সমাবেশস্থল।

আবারো দ্রুত অসুস্থ খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিয়ে বিদেশে পাঠানোর দাবি জানিয়ে আমির খসরু মাহমুদ বলেন, আমরা আর যদি তার মুক্তি দেরি হয়, তার চিকিৎসা দেরি হয় এই ফ্যাসিবাদী অবৈধ সরকার ও রেজিমকে উচ্চ মূল্য দিয়ে বিদায় দিতে হবে। সরকারের রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, গণতান্ত্রিক রাজনীতি ধবংস করার জন্য দেশনেত্রীকে মিথ্যা মামলা দিয়ে সাজা দিয়ে জেলে পাঠানো হয়েছে। তাদের ভয় এই জনপ্রিয় নেত্রী যদি বাইরে থাকে তাদের অবৈধ সরকার টিকে থাকার কোনো সুযোগ নাই। যে কারণে দেশনেত্রীকে শুধু জেলে দেয়নি তাকে চিকিতসা থেকে বঞ্চিত করে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে। জনগণ জেগে উঠেছে। অবশ্যই এই সরকারের পতন ঘটাতে হবে।

আমির খসরু বলেন, আমরা এখন হাটে মাঠে ঘাটে যেখানেই যাই সবাই জিজ্ঞেস করে ‘আর কয়দিন?’ এর মানে কী? মানে হলো এই সরকারের পতন হয় না কেন, এই সরকার আর কয়দিন ক্ষমতায় থাকবে? জনগণ এখন এই সরকারের পতনের দিন গুনছে। অনেকে ঘণ্টাও গুনছে।

আওয়ামী লীগকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, ধানাই-পানাই অনেক করেছেন আর করতে দেওয়া হবে না। দেশে যদি সুষ্ঠু নির্বাচন হয় তাহলে এই গোলাপগঞ্জ-ফরিদপুরেই আওয়ামী লীগ অনেক সিট পাবে না। এই অঞ্চল থেকে ভবিষ্যতে আওয়ামী লীগের জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা নেই। তাদের সাথে কেউ নেই। দেশেও নেই, বিদেশেও নেই। আওয়ামী লীগ বিগত ২০১৪ ও ২০১৮ সালে নির্বাচনের নামে যা দেখিয়েছে আমি এর  নাম দিয়েছি ভোট চুরির প্রকল্প। নির্বাচনে জিততে এই ভোট চুরির প্রকল্পই তার একমাত্র ভরসা। শেখ হাসিনার এই ভোট চুরির প্রকল্পে দুর্নীতিবাজ দলীয় কিছু কর্মকর্তা আছেন, আছেন দলীয় কিছু পুলিশ, লুটেরা ব্যবসায়ী ও কতগুলো রাজনৈতিক দুর্বৃত্ত।

আমেরিকার ভিসানীতি নিয়ে আমীর খসরু বলেন, এই ভিসা নীতিতে তাদের হৃদয়ে কম্পন শুরু হয়েছে। কার ভিসা ক্যান্সেল হয়, কার পরিবারকে দেশে পাঠিয়ে দেয় তারা এখন সেই চিন্তায় আছে। তিনি আরও বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এদেশ ঘুরে গেছে। তারা বলেছে এখানে সুষ্ঠু নির্বাচনের কোনো পরিবেশ নেই। তাই তারা নির্বাচনে পর্যবেক্ষক পাঠাবে না। বিদেশিরা যেটা বলেছে তার সঙ্গে আমাদের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি পুরো মিলে গেছে।

প্রধান বক্তার বক্তব্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান বলেন, দেশে আমরা যখন কোনো সভা সমাবেশ করতে চাই, তার প্রায় জায়গাতেই সরকার দলীয় গুন্ডারা হামলা চালানোর পাঁয়তারা করে। তিনি বলেন, খালেদা জিয়াকে রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে দেওয়া হচ্ছে না। তিনি যদি এভাবে বিনা চিকিৎসায় মারা যান তাহলে এর সকল দায়ভার সরকারকে বহন করতে হবে।

এই পথসভায় অন্তত দুশতাধিক পিকআপ, দেড় শতাধিক মাইক্রোবাস ও হাজার খানেক মোটরসাইকেলে হাজার হাজার নেতাকর্মী অংশগ্রহণ করেন। পথসভা চলাকালে রাজবাড়ী রাস্তার মোড় এলাকায় গাড়ি চলাচল করে অত্যন্ত ধীরগতিতে। পথসভায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। পথে পথে হাজার নেতাকর্মী এই বহরে যোগ দেয়। রাজবাড়ীর বসন্তপুর বাসস্ট্যান্ড হয়ে রোডমার্চের বহরটি দুপুর ২টার দিকে ফরিদপুরের রাজবাড়ী রাস্তার মোড়ে এসে অতিথিদের বক্তব্যের পর ঢাকা-বরিশাল মহাসড়ক ধরে বিকেল ৩টা ১৫ মিনিটের দিকে ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলার তালমার মোড়ের উদ্দেশে ছেড়ে যায়। এরপর ওই একই মহাসড়ক ধরে মাদারীপুরের দিকে আগায় রোডমার্চের বহর। পথে গোপালগঞ্জ জেলার মুকসুদপুর উপজেলার বরইতলা মোড়ে পথসভা করেছে বিএনপি। সেখান থেকে মাদারীপুর জেলার মস্তফাপুর মোড়ে পথসভা শেষে মাদারীপুর শহর হয়ে শরীয়তপুর স্টেডিয়াম অভিমুখে যায় রোডমার্চের বহর। সেখানে সন্ধ্যার পর রোডমার্চের বহর পৌঁছানোর পর স্টেডিয়াম মাঠে অনুষ্ঠিত হয় সমাবেশ। সেখানেই এই রোডমার্চের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়। সমাপনী অনুষ্ঠানে কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতারা বক্তব্য রাখেন।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ