সোমবার ০৪ ডিসেম্বর ২০২৩
Online Edition

এডিস মশার থাবা

গত কয়েক মাসে ডেঙ্গুজনিত অগণিত মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছে। সেসব খবরে মানুষের মনে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। সম্প্রতি এক দম্পতির রাউফ ও রাইদা নামের দুই শিশুর মৃত্যুতে কেবল যে তাদের বাবা-মা-নিকটাত্মীয় দিশেহারা হয়েছেন তাই নয়, এ দুই শিশুর অকাল মৃত্যু যেন দেশের বহু মানুষের হৃদয় ছুঁয়েছে। ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে কয়েকদিনের ব্যবধানে না ফেরার দেশে চলে যায় রাউফ ও রাইদা। এদের একজনের বয়স ৯ এবং আরেক জনের ৪ বছর। শিশু দুটির স্মৃতি তাদের বাবা-মাকে প্রতিমুহূর্তে কাঁদাচ্ছে। সন্তান হারানোর কষ্ট ভুলতে বাসা বদল করেছেন তাদের বাবা-মা। গত কয়েক মাসে ডেঙ্গুজনিত এমন বহু শোকের ঘটনা ঘটেছে, যা বহুদিন অনেকের মনে থাকবে।

আসলে এডিস মশার ভয়াল থাবায় জনজীবন বিপন্ন। বিপর্যস্ত। বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার মানুষ ডেঙ্গুর কাছে এখন জিম্মি। চোখের সামনে চিরদিনের জন্য চলে যাচ্ছে তরতাজা প্রাণ। বাবা-মার সামনেই হারিয়ে যাচ্ছে তাদের প্রিয় সন্তান। প্রিয়জনকে হারিয়ে তাদের স্বজনরা দিশেহারা। প্রশ্ন হলো, আর কত মূল্যবান প্রাণ হারানোর পর দেশবাসী সচেতন হবে? সরকারি হিসেবে চলতি বছরের ৯ মাসে একদিন থেকে ২৫ বছর বয়সি অসংখ্য মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে এবং সহস্রাধিক মারা গিয়েছে। তিলে তিলে গড়ে তোলা সন্তানদের এমন মৃত্যু কোনওভাবেই মেনে নিতে পারছেন না অভিভাবকরা। একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সামনে ঝুলছে তিন অবুঝ শিক্ষার্থীর শোকের ছবি। তাদের তিনজনের জীবন কেড়ে নিয়েছে ঘাতক ডেঙ্গুমশা। কালো ব্যানারে মোড়ানো তিন শিশুর ছবি দেখে অনেকেই নীরবে চোখ মোছেন। অন্য শিক্ষার্থীরাও দাঁড়িয়ে কাঁদেন। তাদের সান্ত¡না দেবার ভাষা কারও জানা নেই। ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এক শিক্ষকের মন্তব্য, আমাদের এ সমাজ এসব অবুঝ শিশুর জীবন রক্ষা করতে পারছে না। বর্তমানে অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই এমন শোকের ব্যানার ঝুলছে।

মশকনিধন কেন সফল হচ্ছে না, তা নিয়ে বহু আলোচনা চলছে। এক কর্তৃপক্ষ অন্য কর্তৃপক্ষকে মনে করিয়ে দিচ্ছে, মশকনিধনে কার কতখানি দায়। কিন্তু এরই মধ্যে একের পর এক মূল্যবান জীবনহানি ঘটে যাচ্ছে। এসব তথ্য শুনে আমাদের অসহায়বোধ করা ছাড়া আর কীইবা করবার আছে! উল্লেখ্য, চলতি বছর ডেঙ্গুতে একদিন থেকে ৫ বছর বয়সি শিশু আক্রান্ত হয়েছে ৯ হাজার ৯৩৪ জন এবং মারা গেছে ৩২ জন। ৬ থেকে ১০ বছর বয়সি শিশু আক্রান্ত হয়েছে ৯ হাজার ৯৩৭ জন এবং মারা গেছে ৪১ জন।

আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে এডিসের উৎপাত বেড়েছে। এডিসের উৎপাত বৃদ্ধির জন্য অপরিকল্পিত নগরায়ণও দায়ী। এ প্রজাতির মশা প্রতিকূল জলবায়ুর সঙ্গে টিকে থাকবার সক্ষমতাও অর্জন করতে শুরু করছে। এডিসের উৎপাত শুধু বর্ষাকালে নয়, বছরজুড়েই থাকবে। কাজেই ডেঙ্গু থেকে বাঁচতে বছরব্যাপী মশকনিধন ও অন্যান্য কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে হবে। যেভাবেই হোক, ডেঙ্গুর উৎস পুরোপুরি নির্মূল করতে হবে। অন্যথায় পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে এবং জীবনহানি ঘটবে।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ