মুক্তির প্রহর গুনছে জনগণ
অস্ত্র দিয়ে কী হয়? যুদ্ধ হয়। যুদ্ধেও আছে রকমফের। কেউ আগ্রাসন চালাতে যুদ্ধ করে, কেউ আবার যুদ্ধ করে আত্মরক্ষার জন্য। তবে অস্ত্র এক জায়গায় থেমে থাকেনি। অস্ত্র নিয়ে গবেষণা হচ্ছে, হচ্ছে প্রতিযোগিতও। বিশ্ববাসী আতঙ্কে আছে পারমাণবিক অস্ত্রের অনাকাংখিত বিস্তারে। অবশ্য অস্ত্র নিয়ন্ত্রণের আলোচনা হয়, তবে ফলপ্রসূ হয় না। কারণ পরাশক্তিবর্গের অস্ত্র প্রতিযোগিতা এবং অস্ত্র ব্যবসা। তাদের ভূ-রাজনীতিও অস্ত্র বিস্তারের পক্ষে কাজ করছে। এর বড় উদাহরণ রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধ।
কিয়েভ থেকে রয়টার্স জানায়, পশ্চিমা কোম্পানিগুলোর অংশগ্রহণে ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা শিল্পখাতকে ‘বৃহৎ সমরাস্ত্র শিল্প কেন্দ্রে পরিণত করতে চান দেশটির প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। ৩০ সেপ্টেম্বর শনিবার তিনি এমন আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। রাশিয়ার বিরুদ্ধে চলমান পাল্টা আক্রমণে ইউক্রেনীয় বাহিনীকে অস্ত্র সরবরাহ আরও বাড়বে বলে মনে করছেন জেলেনস্কি। উল্লেখ্য যে, কিয়েভ সরকার আয়োজিত একটি ফোরামে বক্তৃতা করার সময় জেলেনস্কি এসব কথা বলেন। এই ফোরামে আন্তর্জাতিক অস্ত্র নির্মাতা কোম্পনিগুলো অংশ নেয়। রাশিয়ার অব্যাহত বোমা হামলা সত্ত্বেও কীভাবে ইউক্রেনে যৌথভাবে অস্ত্র উৎপাদন করা যায়, তা নিয়ে আলোচনা করেন তিনি। ফোরামে অংশ নেওয়া আড়াই শতাধিক পশ্চিমা কোম্পানির নির্বাহীদের উদ্দেশে জেলেনস্কি বলেন, ‘ইউক্রেন প্রতিরক্ষা ম্যারাথনের এমন একটি পর্যায়ে রয়েছে, যখন পিছিয়ে না গিয়ে এগিয়ে যাওয়াটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সম্মুখ যুদ্ধক্ষেত্রে প্রতিদিনই সাফল্য পাওয়া প্রয়োজন। ফোরামে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট আরও বলেন, ‘আমাদের প্রতিরক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম এবং আমাদের সেনাদের ব্যবহার করা প্রতিটি উন্নত প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা স্থানীয়ভাবে তৈরিতে আমরা আগ্রহী। এসব অস্ত্র এখন সম্মুখ যুদ্ধক্ষেত্রে ইউক্রেনকে সেরা সাফল্য এনে দিচ্ছে।’ জেলেনস্কি বলেন, আকাশ প্রতিরক্ষা ও মাইন নিষ্ক্রিয় করার সরঞ্জাম তাৎক্ষণিক অগ্রাধিকার তালিকায় রয়েছে। স্থানীয়ভাবে ক্ষেপণাস্ত্র, ড্রোন ও গোলাবারুদ উৎপাদন আরও জোরদার করতে চায় ইউক্রেন।
উপলব্ধি করা যায়, বর্তমান ভূ-রাজনীতি শুধু যুদ্ধের নতুন নতুন ক্ষেত্রই তৈরি করছে না, প্রতিরক্ষা শিল্পখাতকেও ‘বৃহৎ সমরাস্ত্র শিল্পকেন্দ্রে’ও পরিণত করছে। ফলে অস্ত্র নিয়ন্ত্রণের বদলে অস্ত্র বিস্তার ঘটছে। অস্ত্রের বিস্তার ঘটলে, এর প্রয়োগও হবে। অর্থাৎ তৈরি হবে আরও নতুন যুদ্ধক্ষেত্র। এ বিষয়ে পরাশক্তিবর্গ অতীব সৃজনশীল এবং স্মার্টও বটে। ভূ-রাজনীতির বলয়ে তারা জড়িয়ে ফেলেছেন পৃথিবীর বহু দেশকে। ইরাক, আফগানিস্তানের পর ইউক্রেন; সামনে হয়তো আমরা লক্ষ্য করবো নতুন কোনো যুদ্ধক্ষেত্র। সেখানে মারণাস্ত্রের আঘাতে মারা যাবে নর-নারী, শিশু। আগুনে ধ্বংস হবে শস্যক্ষেত্র। ফসল ও জ¦ালানি তেলের দাম আরও বেড়ে যাবে। মানুষের জীবন-যাপন আরও কষ্টকর হয়ে উঠবে। তবে সভ্যতার শাসকরা গেয়ে যাবেন উন্নয়ন ও প্রগতির জয়গান। অথচ এমন সভ্যতার রাহুগ্রাস থেকে মুক্তি প্রহর গুণছে সাধারণ জনগণ।