মঙ্গলবার ০৫ ডিসেম্বর ২০২৩
Online Edition

শাপলা তোলার শখ

মোখতারুল ইসলাম মিলন 

সপ্তম শ্রেণীতে পড়ে মিতু। বড়বোন মীম কলেজে পড়ে। বাবা-মায়ের এই দুই রাজকন্যা। চার সদস্যের একটি ছোট পরিবার। বাবা রফিক মিয়া খুব দায়িত্বশীল একজন মানুষ। মেয়েদের পড়াশোনার প্রতি খুবই নজরদারি করেন তিনি। কোন প্রকার ফাঁকি দেওয়া মোটেও সম্ভব না। মিতুদের বাড়ির পাশেই ছিল একটি বিল। বর্ষা মৌসুমে বেশ পানিতে ডুবে যেতো। দূর থেকে দেখলে সাদা ধবধবে মনে হতো। মিতুর শখ জাগে বিল থেকে শাপলা তুলবে। বড়বোন মীমকে ডেকে বলছে, আপু চলো না আমার সাথে, বিলে গিয়ে কয়টি শাপলা নিয়ে আসি। না, যেতে পারবো না আজ অন্য কোন একদিন, বড়বোন মীম আপুর উত্তর। মিতুর জেদ আজকেই যেতে হবে, কী আর করার! ছোটদের আবদার আর না বলার সুযোগ নেই। তখন বিকেলের গোধূলি আলোয় বিলের পানিতে যেন চিকচিক করছে। বিলের পাড়ে এসে মিতু ডাকছে নৌকা, এই মন্টু মামা। আমাদেরকে আপনার নৌকায় করে নিয়ে যান শাপলা তুলবো আমরা। একটি ডিঙি নৌকায় উঠে বসে মীম আপু আর মিতু। বেশ আনন্দিত মনোরম প্রকৃতি, মন জুড়ানো এক অনুভূতি। নৌকা চলছে ধীরে ধীরে। মিতু হাত দিয়ে পানি ছিটিয়ে মাঝে মাঝে মীম আপুর গায়ে দিচ্ছে। বেশ খুশিতে দু’জনই। কিন্তু শাপলা দেখতে পাচ্ছে না। ফুল ফুটে আছে এমন শাপলা যেন দেখাই মিলছে না । খুঁজতে খুঁজতে অনেক দূর চোখ পড়ল, দেখে বেশ সুন্দর সাদা শাপলা ফুটে আছে। মামা নৌকা ওখানেই নিয়ে চলেন। পৌঁছে যায় শাপলার কাছে।

মীম আপু বড় বড় কিছু শাপলা তুলে নেয়, মিতু হাতে নাগাল পায় না। আর নাগাল পেতে গেলে নৌকা থেকে পড়েও যেতে পারে। মীম আপু সব শাপলা তুলে নৌকায় রেখে দেয়। এদিকে আকাশ মেঘাচ্ছন্ন হয়ে আসছে। হঠাৎ বাতাস বইছে। বিদ্যুৎ চমকানোর বেশ গুরুম গুরুম বিকট আওয়াজ শুনতে পাচ্ছে। মন্টু মামা নৌকা দ্রুত চালানোর চেষ্টা করুন, হয়তো ঝড় আসছে। বিলের ওপারে চলে গিয়েছিল তারা। বিলের মাঝ পর্যন্ত আসতেই টপটপ বৃষ্টি ফোঁটা শুরু হয়ে যায়। মুষলধারে বৃষ্টি। আপু ভিজে গেলাম তো! বোকা আমিও তো ভিজতেছি দেখছিস না? বড় বড় বৃষ্টি ফোঁটা মাথায় পড়ছে। তারা যেন কাঁদতেও পারছে না। আবার সহ্য করতেও পারছে না। এদিকে বৃষ্টিতে ভিজে একাকার। আসতে আসতে বেশ সময় লেগে যায়। বাড়িতে আসার পর বাবা মা তাদের এই অবস্থা দেখে ভীষণ রেগে যায় তাদের ওপর। রাতে ভীষণ জ্বরে আক্রান্ত হয়ে পড়ে দু’জনই। শাপলা তোলার শখ যেন আর নেই। হঠাৎ বৃষ্টি যেন তাদের শখ সমাপ্ত করে দেয়। 

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ