নিউজিল্যান্ডের কাছে সিরিজ হারল বাংলাদেশ
স্পোর্টস রিপোর্টার: নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ হারল স্বাগতিক বাংলাদেশ। প্রথম ম্যাচ বৃষ্টিতে পন্ড হলেও দ্বিতীয় ও তৃতীয় ম্যাচ জিতে ২-০ ব্যবধানে সিরিজ জিতল নিউজিল্যান্ড। ফলে ১৫ বছর পর বাংলাদেশের মাটিতে সিরিজ জিতলো কিউইরা। গতকাল শেষ ম্যাচে বাংলাদেশ হেরেছে ৭ উইকেটে। আগে ব্যাট করে বাংলাদেশ অলআউট হয় ১৭১ রানে। জবারে ১৭২ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে নিউজিল্যান্ড ৩৪.৫ ওভারে ৩ উইকেট হারিয়ে ১৭৫ রান করে ম্যাচ জিতে নেয় ৭ উইকেটে। ৯১ বল হাতে রেখে জয় পায় কিউইরা। নিকোলস ৫০ ও ব্লান্ডেল ১৯ রানে অপরাজিত ছিলেন। দেশের হয়ে সর্বোচ্চ ২ উইকেট নেন শরিফুল। এক উইকেট নেন নাসুম। জয়ের জন্য নিউজিল্যান্ডের সামনে ১৭২ রানের টার্গেটটা সহজই ছিল। এমন সহজ লক্ষ্যে খেলতে নেমে দারুণ শুরু করে নিউজিল্যান্ড। শুরুতে বাংলাদেশি বোলাররা কোনো পার্থক্য গড়তে পারেননি। এক প্রান্তে ফিন অ্যালেন ঝড়ো শুরু করলেও অন্য প্রান্তে উইল ইয়ং খেলছেন দেখেশুনেই। দুজনে কোনো উইকেট না হারিয়ে ৭ ওভারে যোগ করেন ৩৩ রান। দলীয় ১৪৯ রানে প্রথম উইকেট হারায় নিউজিল্যান্ড। শরিফুলের শর্ট বলে পুল করতে চেয়েছিলেন অ্যালেন। ঠিকঠাক টাইমিং হয়নি। ডিপ ফাইন লেগে ক্যাচ ধরেন নাসুম। ২৬ বলে ২৮ রান করেন অ্যালেন। পরের বলেই বোল্ড ডিন ফক্সক্রফট। মিডল স্ট্যাম্পে করা ফুল বল হালকা মুভ করে। লাইন মিস করেন ডিন। সরাসরি ভেঙে যায় উইকেট। অভিষেক ম্যাচে শূন্য রানে ফিরেন ডিন। শরিফুল ১ রান দিয়ে নেন ২ উইকেট। পরপর দুই বলে শরিফুলের দুই উইকেটের পর আর বাধা সৃষ্টি করতে পারেনি বাংলাদেশের বোলাররা। প্রতিরোধ গড়ে দলকে দারুণভাবে জয়ের দিকে এগিয়ে নেয় ইয়ং-নিকোলস। দুজনের জুটি করে দলকে ১৩০ রানে নিয়ে যায়। দলীয় ১৩০ রানে নাসুমের বল ডিফেন্স করতে চেয়েছিলেন ইয়ং। কিন্তু কাজ হয়নি। বল আঘাত করে উইকেটে। চলতি ম্যাচে নাসুম দেখা পান প্রথম উইকেটের। ৮০ বলে ৭০ রান করে ফেরেন ইয়ং। ১০টি চার ও ১টি ছয়ে ৮০ বলে ৭০ রান করেন ইয়ং। ক্রিজে নিকোলসের সঙ্গী ব্লান্ডেল। শেষ পর্যন্ত আর কোন উইকেট না হারিয়ে দলকে জয় এনে দেন এই দুই ব্যাটার। তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেতে নিউজিল্যান্ডকে বড় টার্গেট দিতে পারেনি বাংলাদেশ। জয়ের জন্য মাত্র ১৭২ রানের টার্গেট দিতে পারে স্বাগতিকরা। আগে ব্যাট করে ৩৪ দশমিক ৩ ওভারে ১৭১ রানে অলআউট হয়েছে বাংলাদেশ। দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৭৬ রান করেন শান্ত। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২১ রান করেন মাহমুদুল্লাহ। এই ইনিংস খেলার পথে বাংলাদেশের চতুর্থ ব্যাটার হিসেবে ওয়ানডেতে ৫ হাজার পূর্ণ করেন মাহমুদুল্লাহ। শেষ ওয়ানডেতে টস জিতে প্রথমে ব্যাটিং করার সিদ্বান্ত নেন ১৬তম অধিনায়ক হিসেবে অভিষেক হওয়া শান্ত। ইনিংস শুরু করে তৃতীয় ওভারে দলীয় ৮ রানের মধ্যে বিদায় নেন জাকির ও তানজিদ হাসান তামিম। দ্বিতীয় ওভারে পেসার এডাম মিলনের বলে বোল্ড হন ১ রান করা জাকির। পরের ওভারে ট্রেন্ট বোল্টের বলে স্লিপে ক্যাচ দিয়ে ৫ রানে আউট হন তানজিদ। শুরুর ধাক্কা সামলে উঠার চেষ্টা করেন শান্ত ও তাওহিদ হৃদয়। ৩টি বাউন্ডারিতে ভালো শুরু করেন হৃদয়। কিন্তু ইনিংসটা বড় করতে পারেননি তিনি। মিলনের বলে উইল ইয়ংকে ক্যাচ দিয়ে ১৭ বলে ১৮ রান করে ফিরেন হৃদয়। দলীয় ৩৫ রানে হৃদয় ফেরার পর ক্রিজে শান্তর সঙ্গী হন মুশফিকুর রহিম। পাল্টা আক্রমণে দ্রুত রানের চাকা ঘুরিয়েছেন শান্ত। ১২তম ওভারের মধ্যে ৬টি চার মারেন তিনি। ১৩তম ওভারে ছক্কায় বলকে প্রথম সীমানা ছাড়া করেন মুশফিক। পরের ওভারে দ্বিতীয় ছক্কা আদায় করেন তিনি। ২টি ছক্কায় দারুণ আত্মবিশ^াসী মুশফিক ১৬তম ওভারেই প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন। নিউজিল্যান্ড অধিনায়ক পেসার লুকি ফার্গুসনের বলে বোল্ড হওয়া মুশফিক ২৫ বলে ২১ রান করেন। শান্তর সাথে ৫৯ বলে ৫৩ রান যোগ করেন তিনি। এরপর শান্তকে নিয়ে দলের রানের চাকা ঘুরিয়েছেন মাহমুদুল্লাহ। ২০তম ওভারে ওয়ানডে ক্যারিয়াারের পঞ্চম হাফ-সেঞ্চুরি তুলে নেন ৫৫ বল খেলা শান্ত। নিজের সর্বশেষ দুই ইনিংসে ৮৯ ও ১০৪ রান করেছিলেন তিনি। ২টি চারে উইকেট সেট হয়েও বেশি দূর যেতে পারলেন না মাহমুদুল্লাহ। মিলনের বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেন ২৭ বলে ২১ রান করা অভিজ্ঞ এ ব্যাটার । এই ইনিংসের সুবাদে ৫ হাজার রান ক্লাবে তামিম ইকবাল, মুশফিকুর রহিম ও সাকিব আল হাসানের সঙ্গী হন মাহমুদুল্লাহ। মাহমুদুল্লাহর মত ২টি চারে ইনিংস শুরু করে বোল্টের দ্বিতীয় শিকার হয়ে ১৩ রানে আটকে যান মাহেদি হাসান। ১৫৬ রানে ষষ্ঠ উইকেট হারায় বাংলাদেশ। শেষ স্বীকৃত ব্যাটার হিসেবে উইকেটে ছিলেন শান্ত। কিন্তু অফ-স্পিনার কোল ম্যাককোঞ্চির বলে রিভার্স করতে গিয়ে লেগ বিফোর আউট হন শান্ত। রিভিউ নিয়েও বাঁচতে পারেননি ১০টি চারে ৮৪ বলে ৭৬ রান করা শান্ত। ১৬৮ রানে সপ্তম ব্যাটার হিসেবে শান্তর আউটের পর বাকী ৩ উইকেটে মাত্র ৩ রান পেয়ে ৩৪ দশমিক ৩ ওভারে ১৭১ রানে গুটিয়ে যায় টাইগাররা। এসময় হাসান মাহমুদ ১, নাসুম আহমেদ ৭ ও শরিফুল ইসলাম ১ রানে আউট হন। নিউজিল্যান্ডের মিলনে ৩৪ রানে ৪টি, বোল্ট-ম্যাককোঞ্চি ২টি করে এবং ফার্গুসন-রাচিন রবীন্দ্র ১টি করে উইকেট নেন।