শুক্রবার ০৮ ডিসেম্বর ২০২৩
Online Edition

ডেঙ্গু ও গণসচেতনতা

 এ মাসে ডেঙ্গুতে মৃত্যু ও আক্রান্তের সংখ্যা আগের তুলনায় বেড়েছে। পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবর অনুযায়ী দেশে এ পর্যন্ত ৮ শতাধিক মানুষ মারা গিয়েছে ডেঙ্গুতে। গেল মাসের তুলনায় মৃত্যুর হারও বেশি। গত মাসে গড়ে প্রতিদিন ১১ জন করে মারা গিয়েছে ডেঙ্গুতে। আর চলতি মাসে গড়ে প্রতিদিন ১৩ জনেরও বেশি প্রাণ হারিয়েছে এ রোগে। 

বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা এর আগে একাধিক বার সতর্ক করেছে। কিন্তু কোনও সতর্কবার্তাই কাজে আসছে না। একদিনে ডেঙ্গুতে সর্বোচ্চ ৩ হাজার ২৯ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। চলতি বছরে এ পর্যন্ত ১ লাখ ৬১ হাজার ৯৬৪ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে, এখন গ্রামাঞ্চলে রাজধানীর চাইতে দ্বিগুণের বেশি ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হচ্ছে। এমনকি স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী ঢাকার পর ডেঙ্গুতে মৃত্যু বেশি বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগে। এ দুই বিভাগে ইতোমধ্যে মারা গিয়েছে যথাক্রমে ৭১ ও ৬৯ জন।

ডেঙ্গুরোগ কী ও কেন এবং এর প্রতিকারইবা কী, তা নিয়ে গত কয়েক বছর ধরে অনেক লেখালেখি হয়েছে। ডেঙ্গুরোগের বাহক এডিশ মশা এ দেশে বীরবিক্রমে বংশ বিস্তার করে চলছে। বরাবরই প্রশাসনিক ব্যবস্থাগ্রহণের পাশাপাশি জনসচেতনতার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়। কিন্তু আগে যেখানে এ রোগ কেবল রাজধানীতে সীমাবদ্ধ ছিল, সেখানে এর উপদ্রব বিভিন্ন মেট্রোপলিটন শহরসহ এখন গ্রামেগঞ্জেও ছড়িয়ে পড়ছে উদ্বেগজনকভাবে। ফলে ডেঙ্গু মোকাবিলা করা আজ বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সম্প্রতি ঢাকায় এক সচেতনতামূলক সভায় কীটতত্ত্ববিদ ও স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলেন, এক ফোঁটা পানিতেও এডিস মশা শতাধিক ডিম পাড়ে। সেই পানিটা তিনদিনের বেশি জমে থাকলেই সেখান থেকে লার্ভা তৈরি হয়ে জন্ম নিতে পারে পূর্ণাঙ্গ এডিস মশা। ঘরের ভেতর এমন অনেক জায়গা থাকে, যেখানে তিন দিন কেন, দিনের পর দিন পানি জমে থাকে। আশপাশের জায়গার কথা তো বলাই বাহুল্য। এ ছাড়া নতুন নতুন ভ্যারিয়েন্ট আবিষ্কৃত হচ্ছে যা মানুষকে আরও বিপাকে ফেলছে। তাহলে প্রশ্ন জাগে, মানুষ কীভাবে ডেঙ্গুমুক্ত থাকবে?

অবস্থা দেখে ও বিদ্যমান পরিস্থিতিতে মনে হয়, সারাদেশে এবং ঘরে ঘরে মশা নির্মূল করা কঠিন। তাই সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বনের কোনও বিকল্প নেই। প্রত্যেক নাগরিককেই নিজ নিজ অবস্থান থেকে সজাগ ও সচেতন হতে হবে। প্রতিদিন ফ্রিজারের ওয়াটার ট্রেতে ও বারান্দায় কীটনাশক স্প্রে করতে হবে। দিনের বেলায়ও মশারি খাটিয়ে ঘুমাবার অভ্যাস করতে হবে। বলা বাহুল্য, মশারিই এখন ডেঙ্গুর বড় দাওয়াই এতে কোনও সন্দেহ নেই। কর্মস্থলে মশা থাকলে আগে মশা মারুন। তারপর  কাজে মনোনিবেশ করুন। ঘরবাড়ি তো বটে, আশপাশের পরিবেশ সর্বদা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। ডেঙ্গু আক্রান্ত হবার পর প্রথম থেকেই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। এর পাশাপাশি কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে  বলতে চাই, রাজশাহী ও খুলনাসহ যেসব অঞ্চলে স্যালাইনের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে এবং এতে রোগীরা বিপাকে পড়েছে, সেখানে অবিলম্বে এ সমস্যার সমাধান করা হোক। কেন না ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীকে দিনে এক থেকে দুই লিটার এবং কোনও কোনও ক্ষেত্রে এরও বেশি স্যালাইন দেয়ার প্রয়োজন হয়। কিন্তু শিরায় প্রয়োগ করা যায়, এমন এক ব্যাগ স্যালাইন ২০০ টাকা দিয়েও কোনও কোনও অঞ্চলে কিনতে পাওয়া যাচ্ছে না। আবার প্লাটিলেট সংগ্রহেও ভোগান্তি বাড়ছে। সরকারি হাসপাতালগুলোতে প্লাটিলেট পৃথকীকরণে প্রয়োজনীয় মেশিনের সংকট রয়েছে। এ জন্য বেসরকারি হাসপাতালে ছুটছে রোগীরা এবং সেখানে প্রতিব্যাগ প্লাটিলেট সংগ্রহ করতে খরচ হচ্ছে ২০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা পর্যন্ত। এ সংকটেরও অবসান হওয়া একান্ত জরুরি। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে, এক শ্রেণির মানুষ অসুখ-বিসুখকে পূঁজি করে বাণিজ্য করার ধান্ধায় থাকে। এদের প্রতিহত করাও খুব দরকার।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ