শুক্রবার ০৮ ডিসেম্বর ২০২৩
Online Edition

খুলনায় ৮৭ টাকার স্যালাইন ২০০ টাকায় বিক্রি!

 

খুলনা ব্যুরো: চলতি বর্ষা মওসুমে মশার উপদ্রব বৃদ্ধি পাওয়ায় ডেঙ্গুজ¦রসহ পানিবাহিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্তের হারও বেশ বেড়েছে। আর এ সুযোগে একশ্রেণির অসাধু ব্যক্তি চিকিৎসার অন্যতম উপাদান স্যালাইনের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। খুলনা মহানগরীর বিভিন্ন ওষুধের দোকানে, ফার্মেসীতে এখন মাত্র ৮৭ টাকার স্যালাইন বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকা দরে। এছাড়া মেয়াদ উত্তীর্ণ ও বিক্রি নিষিদ্ধ ফিজিশিয়ান’স স্যাম্পলও চড়াদামে বিক্রি করছেন তারা। এদিকে রোগী ও স্বজনদের সু-নির্দিষ্ট অভিযোগের প্রেক্ষিতে বিষয়টির সত্যতা যাচাই করতে মাঠে নেমেছে জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। এ অধিদপ্তরের খুলনা বিভাগীয় ও জেলা কার্যালয়ের কর্মকর্তারা বৃহস্পতিবার অভিযান চালিয়ে এ ধরনের দু’টি ফার্মেসীসহ অন্যান্য অভিযাগে ৫টি প্রতিষ্ঠানকে মোট ৩১ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। 

জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর খুলনা জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. ওয়ালিদ বিন হাবিব বলেন, জনস্বার্থে এ ধরনের অভিযান চলমান থাকবে। 

জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর খুলনা জেলা কার্যালয়ের সূত্র জানান, নগরীর শান্তিধাম মোড়স্থ নিউ দীলিপ ফার্মেসীতে ৮৭ টাকা ১৪ পয়সা মূল্যের এনএস স্যালাইন ২০০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছিল। এছাড়া প্রতিষ্ঠানটিতে ওষুধের মোড়কে দাম কেটে বর্ধিত দাম বসানো এবং মেয়াদ উত্তীর্ণ ও বিক্রি নিষিদ্ধ ফিজিশিয়ান’স স্যাম্পল বিক্রির উদ্দেশ্যে সংরক্ষণ করা হয়। এ অভিযোগে প্রতিষ্ঠান মালিককে ২৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। 

অপরদিকে, মেয়াদ উত্তীর্ণ ওষুধ ও বিক্রি নিষিদ্ধ ফিজিশিয়ান’স স্যাম্পল বিক্রির উদ্দেশ্যে সংরক্ষণ করায় খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে অবস্থিত মেসার্স সাহিদা মেডিকেল হলের মালিককে ২ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এছাড়া নোংরা পরিবেশে মিষ্টি তৈরি করায় খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনের সাতক্ষীরা ঘোষ ডেয়ারীকে এক হাজার টাকা জরিমানা, মূল্য তালিকা না থাকায় একই এলাকায় নিউ মন্দিরা স্টোরকে এক হাজার টাকা এবং মূল্য তালিকা না থাকা ও অননুমোদিত পণ্য বিক্রির অভিযোগে কাজী স্টোরকেও ২ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। আলাদা দুটি অভিযানের নেতৃত্ব দেন ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর খুলনা বিভাগীয় কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক প্রণব কুমার প্রামাণিক ও খুলনা জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. ওয়ালিদ বিন হাবিব। সহযোগিতা করেন কৃষি বিপণন কর্মকর্তা শাহরিয়ার আকুঞ্জি, ক্যাব সদস্য জেড. এন. সুমন এবং আনসার সদস্যবৃন্দ।

এদিকে খুলনা বিভাগে ডেঙ্গু রোগী ভর্তি ছাড়াল ৯ হাজার ৯৫১ জন। এসময়ে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৯ হাজার ১৪ জন। ডেঙ্গুতে মৃত্যু হয়েছে মোট ৩৫ জনের। মারা যাওয়ার মধ্যে খুমেক হাসপাতালে ১০ জন, খুলনায় ২ জন, সাতক্ষীরায় ১ জন, যশোরে ৬ জন, মাগুরায় ১ জন, কুষ্টিয়ায় ৬ জন, ঝিনাইদহে ৩ জন, নড়াইলে ১ জন, এবং সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৫ জন ডেঙ্গু রোগীর মৃত্যু হয়। বর্তমানে সরকারি হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গু রোগী ভর্তি আছে ৭৬৯ জন এবং রেফার্ড করা হয় ১৩৩ জনকে।

খুলনা বিভাগে (বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা থেকে শুক্রবার সকাল ৮টা পর্যন্ত) গত ২৪ ঘন্টায় বিভাগের ৮ জেলায় ও সরকারি দুই মেডিকেল হাসপাতাল মিলে নতুন করে ১৭০ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছে। এ সময়ে বিভাগের ৩ জেলায় নতুন করে তিন জন ডেঙ্গু রোগীর মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া গত ২৪ ঘন্টায় খুলনা মেডিকেল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালে ৩৭ জন এবং সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৪ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছে। 

খুলনা বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সূত্র মতে, গত একদিনে খুলনা বিভাগের ৮ জেলায় নতুন করে সরকারি হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছে ১৭০ জন। এ সময়ে বিভাগের তিন জেলায় ৩ জন ডেঙ্গু রোগীর মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে সাতক্ষীরা, নড়াইল ও কুষ্টিয়ায় একজন করে ডেঙ্গু রোগীর মৃত্যু হয়। বিভাগে ৮ জেলায় সরকারি হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গু রোগী ভর্তির মধ্যে খুলনায় ৩ জন, সাতক্ষীরায় ৪ জন, যশোরে ৩৬ জন, ঝিনাইদহে ৮ জন, মাগুরায় ২৭ জন, নড়াইলে ২০ জন, কুষ্টিয়ায় ১৪ জন এবং মেহেরপুরে ১৭ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছে। 

খুমেক হাসপাতালের আরএমও ডা. সুহাস রঞ্জন হালদার বলেন, গত ২৪ ঘন্টায় খুমেক হাসপাতালে নতুন করে ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছে ৩৭ জন। এ সময়ে ডেঙ্গুতে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৩৬ জন। বর্তমানে হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসাধীন আছে ১১৯ জন। এ পর্যন্ত খুমেক হাসপাতালে ১২৯৪ জনকে ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসা প্রদান করা হয়। এর মধ্যে সুস্থ হয়ে বাড়িতে ফিরেছেন ১১৬৫ জন এবং ১০ জনের মৃত্যু হয়।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ