চাঁপাদার বিলে এক বিকেল

সাঈদুর রহমান লিটন
আজ চাঁপাদার বিলে গিয়েছিলাম। হইচই হয়েছে খুব। অনেক দিন কোথাও যাওয়া হয় না তো তাই মজাটা অন্তর ছুঁয়ে গিয়েছে। চাঁপাদার বিল ফরিদপুর হতে মাত্র হাতেগোনা কয়েক কিঃমিঃ দূরে। কানাইপুর থেকে দক্ষিণ দিকে চার/পাঁচ কিলোমিটার গেলেই রণকাইল উচ্চ বিদ্যালয়। এই বিদ্যালয়ের পিছনেই চাঁপাদার বিল। এখন অবশ্য আর কেউ চাঁপাদার বিল বলে না। এখন এই বিলের নাম হয়েছে পদ্ম বিল। অনেকেই এখন পদ্মবিল নামেই ডাকে। কারণ কয়েক বছর যাবৎ এখানে প্রচুর পদ্মফুল ফুটে । বেশ কয়েক বছর ধরে চাঁপাদার বিলের নাম পদ্ম বিল শুনে আসছি। অনেকেই সেখানে যায়। আমার কাছের অনেক মানুষ গিয়েছে। বিলের প্রকৃতির অপার সৌন্দর্যের গুণকীর্তন করেছে। যাই যাই করে আর যাওয়া হয় নাই। এই ভেবে যে বাড়ির কাছে একটা বিল কি আর এমন ভালো লাগবে? জাস্ট অবজ্ঞা। কিন্তু মানুষেরা গাড়ি ভাড়া করে নিয়ে দেখি যায় । অনেক সুনাম করে। তাই এক বোন চাঁপাদার বিল দেখার আমন্ত্রণ করলে আর না বলতে পারি নাই। অগত্যা রওয়ানা দিলাম। তিন চাকার গাড়ি নিয়ে। আমি বাপ্পি আর বাপ্পির আম্মুকে নিয়ে। করিমপুর থেকে আরো চারজন যোগদান করেছিলো। তারা হলো কারিবা, রাফসান এবং ওদের মা, আদিবা ও আরবি। সবার মনে ভারি কৌতূহল ।
চাঁপাদার বিল আসলেই কী খুব প্রকৃতির অপার লীলায় ভরপুর! নাকি গালগল্প। কাশিমাবাদ থেকে যোগ দিল বুলি, জিমি আর মদিনা। খুব সুন্দর একটা টীম শিশু-কিশোর এবং যুবক নিয়ে। সব শ্রেণির ভ্রমণ পিপাসু মানুষ নিয়ে চললাম চাঁপাদার বিল। দারুণ উত্তেজনা কাজ করছে। কেউ কেউ দুই এক লাইন গান জুড়ে দিচ্ছে। গ্রাম ছাড়া ঐ রাঙামাটির পথ আমার মন ভুলায়রে ...।
দশ পনের মিনিটের মধ্যে পৌছে গেলাম কাক্সিক্ষত গন্তব্যে। আমরা যখন পৌঁছালাম বেলা তখন সবে চারটে বেজেছে। তখন খুব বেশি মানুষ আসে নাই। কেমন জানি শুধো শুধো লাগছিল। যাকে বলে আল্যে আল্যে। হেঁটে হেঁটে যতদূর এগুলাম ততো ভালো লাগতেছি। বিস্তর এলাকা জুড়ে বিল। মাঝ দিয়ে বয়ে বইয়ে গেছে একটা ইট বিছানা রাস্তা। রাস্তার উভয় পাশে সদ্য ধোয়া পাটকাঠি দাঁড় করিয়ে রাখা আর পাট পচানো ঘ্রাণ, সব মিলিয়ে আমাকে মোহিত করছিলো। তারই মধ্যে এগিয়ে গেলে ইট বিছানো রাস্তা শেষ। তারপর শুধু পানি আর পানি আর জলজ উদ্ভিদ। বিধাতার সৃষ্টির সকল সৌন্দর্য যেন বিছিয়ে রেখেছে চাঁপাদার বিলে। মন উজাড় করে দেখতে মন চায় পানির ভাসমান সবুজ অভয়ারণ্য । দেখে চোখ ফিরানো যায় না।
ঘাটে অনেকগুলো নৌকা বাঁধা। নৌকা ভাড়া করে বিল পরিদর্শন করতে হয়। আমরা একটা নৌকা ভাড়া করলাম। পড়ন্ত বিকাল। পানির মধ্যে ক্লান্ত সূর্যের ছবি দেখা যাচ্ছে। পানি আর সূর্য যেন মিতালী করছে। আমাদের টিম থেকে হই হুল্লোড় করছে। অবশ্য বিলের মধ্যে আরো যত নৌকা আছে সেই নৌকাগুলো থেকে ও হই হুল্লোড়ের শব্দ পাওয়া যাচ্ছে। কেউ কেউ পানি ছিটিয়ে ও মজা নিচ্ছে। আসলে মন প্রাণ ঢেলে দিয়ে নৌকায় আনন্দে মেতে উঠছে সবাই। বিলের মধ্যে অসংখ্য কচুরিপানা। যা বিলের সৌন্দর্য কে বাড়িয়েছে হাজার গুণ। মাঝে মাঝে শাপলা ফুল দেখা যাচ্ছে। কেউ শাপলা ফুল তুলছে। ফুলের সাথে যে নলের মতো ডাটা সেটা তরকারি হিসেবে কেউ কেউ খায়। আমাদের মধ্য থেকেও খাওয়ার জন্য শাপলা তুলে নিলো। শাপলা তুলে অনেক মজা পেয়েছে সবাই। আমাদের সবারই শাপলা তোলার প্রথম অভিজ্ঞতা। সেলফি তোলার জন্য ব্যস্ত হয়েছে আমাদের টিমের লোকজন।
মদিনা নৌকার পিছন থেকে সামনে চলে এলো সেল্ফি নেওয়ার জন্য। জিমি, বুলি সবাই যোগ দিলো। আমি ও বাঁধনের আম্মু ফাঁক বুঝে একটা সেল্ফি নিলাম। সপ্না ভাবি সহ সবাই আমরা সেল্ফি তুললাম। এর মধ্যে চোখে পড়লো মাথার উপর দিয়ে ড্রোন উড়ছে। সম্ভবত বিলের ছবি তুলছে। তুলবে না কেন? মানুষের মন জয় করার তামাম সুন্দর এই চাঁপাদার বিলে দেখতে পেলাম। অনেক পদ্ম পাতা গোল হয়ে পড়ে আছে পানিতে। মাঝে মাঝে লাল সাদা ফুল ফুটেছে। এখনো ভরপুর ফুল ফোটে নাই। তারপর ও হালকা পাতলা ফুলগুলো হৃদয় কেড়ে নেয় ওদের লাবণ্যে।
হঠাৎ পদ্ম পাতার উপর একটা টাকি মাছ লাফিয়ে উঠল। বাপ্পি আর রাফসান ধরার জন্য বৃথা চেষ্টা করলো। অসাধারণ অভিজ্ঞতা। এমনটি কখনো দেখি নাই আমি। সময় চলে যাচ্ছে। কিন্তু মন যেতে সাঁয় দিচ্ছে না। একবার সূর্য ডুবু ডুবু ভাব হলো। সেই সময় বিলের কি নিদারুণ পরিবেশ হলো তা ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। তখনো বিল ভরা মানুষ আর নৌকার শব্দে মাতিয়ে তুলছে। নৌকা ঘাটে ভিড়লো। আমরা নিজের ঠিকানায় রওয়ানা দিলাম।