রবিবার ১০ ডিসেম্বর ২০২৩
Online Edition

ভেজা আংটি

মোঃ আব্দুর রহমান

টপ করে এক ফোঁটা কদমের জল ঝরে পড়লো আংটিটার উপরে। সঙ্গে সঙ্গে ওড়নাটা দিয়ে মুছতে শুরু করলেন শিউলি। আর মুখে ইশ! ইশ! শব্দে আফসোসের করুণ সুর বেজে উঠলো। আহারে! যেন অনেক বড় ক্ষতি হয়ে গেলো...। এতো বড় ক্ষতিটা তিনি মানতেই পারছেন না। তবে কাউকে কিছু বলতেও পারছেন না। কারণ যতই অপরাধ করুক, আষাঢ়ে কদম ফুল বলে কথা। যেটা তার আবার খুব প্রিয়, তার উপরতো আর প্রতিশোধ নেওয়া চলে না।

তবে কষ্টটা এক জায়গায় শিউলির। এই আংটি তার প্রাণ শিমুলের পরিয়ে দেওয়া। পাঁচ বছরের প্রেমের স্বীকৃতির টিকিট আর কী। যেটা পারিবারিকভাবেই পাওয়া। তবে এর জন্য করতে হয়েছে অনেক সংগ্রাম আর মান অভিমান। তার ফলেই মিলেছে পরিবারের ইতিবাচক মতামত। এবার অবশ্য কদম ফুলের দিকে তাকিয়ে ওড়নায় মুখ ঢেকে হাসতে শুরু করলেন শিউলি। কারণ আষাঢ় এসেছে মানেই শ্রাবণও আসবে। আর শ্রাবণ এলেইতো ধুমধাম করে বিয়ে হবে শিমুল এবং শিউলির। কদম ফুলের ফোঁটাটা হয়তো সেই খবরটাই জানিয়ে দিলো শিউলিকে আর একবার।

যাহোক সঙ্গে সঙ্গে ফোন দিল শিমুলকে। ওপাড়ে ফোনটা তুললো শিমুল। কেমন আছো জান? ভালোই আছি। তবে আর কিন্তু মাত্র এক মাস আছে। তাই না কী!

-হ্যাঁ, আর জানো খবরটা জানালো কে? জানিয়েছে আষাঢ়ের কদম।

এবার দুজনেই নানান কথায় আর কল্পনা-জল্পনায় হেসে কুটি কুটি হতে থাকলো। পাশ থেকে শিউলির মা মেয়ের এমন হাসি মাখা মুহূর্তটা দেখে; আল্লাহর কাছে দু'হাত তুলে দোয়া করলো।"ওদেরকে সুখী করো আল্লাহ।"

 

কথায় কথায় একটু কেশে উঠলো শিমুল। সঙ্গে সঙ্গে শিউলি জিজ্ঞেস করলো, তুমি কাশছো কেন? তোমার কী হয়েছে? তুমি ডাক্তার দেখাওনি? ওষুধ খাওনি? কেন?

এতোগুলি প্রশ্ন একত্রে শুনে কোনটা রেখে কোনটার উত্তর দিবে কূলকিনারা না পেয়ে অবশেষে শিমুল বললো," আচ্ছা, কী আশ্চর্য!  তুমি এতোটা সিরিয়াস হচ্ছো কেন? একটু কাশিইতো হয়েছে...।

আবার থামিয়ে বললো,"মিথ্যা বলো না। বলো তোমার জ্বর হয়নি?"

-ঠিক আছে বাদ দাও আমি ডাক্তার দেখিয়ে নেবো। অনেক বুঝিয়ে শুনিয়ে এবারের মতো ফোনটা রাখলো শিমুল।

শিমুল ঢাকায় ব্যাংকে চাকরি করে। আর শিউলি সবেমাত্র অনার্স শেষ করলো। তাই বিয়ের সঙ্গে সঙ্গে শিউলিকে নিয়ে ঢাকায় চলে আসবে। শিউলি ভারি মিষ্টি মেয়ে, সাংসারিক এবং সর্বোপরি কথা হলো ওরা দুজন দুজনকে খুব ভালোবাসে। বাড়িও ওদের একই গ্রামে। ভালোবাসাটাই ওদের সুখী হওয়ার বড় পুঁজি এবং দলিল।

এদিকে দেখতে দেখতে আষাঢ় মাসের শেষ রাত। কাল ভোরেই বাড়ি পৌঁছাবে শিমুল। এমনকি কালকেই গায়ে হলুদ; তারপরের দিন বিয়ে। ভাবতেই কেমন যেন লাগছে শিউলির। তবে সমস্যা হলো একটাই। গত এক সপ্তাহ যাবৎ সে শিমুলের সাথে যোগাযোগ করতে পারছে না। এদিকে আশার কথা হলো, তাঁর বাবা তাকে জানিয়েছে শিমুল খুব কাজে ব্যস্ত আছে; তবে সময়মতো সে ঠিক আসবে।

প্রতিদিন ভোরবেলা মোরগের ডাকে ঘুম ভাঙলেও আজ শিউলির ঘুম ভাঙলো মোবাইল ফোনের শব্দে। ফোনটা বোঝা গেলো শিমুলের বাবা করেছে। কিন্তু, এ কী! হঠাৎ শিউলির বাবা কথা বলতে পারছে না! গলা কাঁপছে, একসময় কেঁদেও উঠলো! আর বললো কী হয়েছিল? ডেঙ্গু জ্বর? আজ এ্যাম্বুলেন্সটা বিকালে পৌঁছাবে? জানাযা হবে বিকালে?

শিউলির বুঝতে পারলো কার কী হয়েছে। কারণ এক সপ্তাহ ধরে যোগাযোগ নেই। শিমুলের সেই জ্বর এবং কাশির কথা। ওষুধ না খাওয়ার কথা। আর সেসব অবহেলা থেকেই ডেঙ্গু! তারপর এ্যাম্বুলেন্স এবং...!  এসব ভাবতে ভাবতেই শিউলির চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়তে লাগলো আংটিটার উপরে। তবে আজ আর ভেজা আংটিটা মোছার কোন আগ্রহই দেখালো না শিউলি। আষাঢ়টা পেরিয়ে শ্রাবণের প্রথম সকালে শুধু নিশ্চুপভাবে বসে রইলো...।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ