বৃহস্পতিবার ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩
Online Edition

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি ‘আলতাদিঘী’

মুসফিকা আঞ্জুম নাবা

অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি আমাদের এই প্রিয় বাংলাদেশ। যেদিকেই তাকাই চোখ জুড়িয়ে যায়। এদেশের সাগর, বিস্তীর্ণ মাঠ, সবুজ বন-বনানী, পাহাড়, সুবিশাল ম্যানগ্রোভ, নদনদী, সুবিস্তৃত আকাশ যা এক অপূর্ব চিত্তহারী সৌন্দর্যের সৃষ্টি করে। ঠিক তেমনি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরা ‘আলতাদিঘী’ । 

‘আলতাদিঘী’ দেশের উত্তরাঞ্চলের নওগাঁ জেলার ধামইরহাট উপজেলায় অবস্থিত। এটি বাংলাদেশের অন্যতম  দর্শনীয় ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যম-িত উদ্যান। গাছগাছালি ঘেরা সবুজ প্রকৃতি যেন আলতাদিঘীকে আকর্ষণীয় করে তুলেছে। এখানে ১ কিলোমিটার দিঘী থাকায় এই দিঘীকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে সুবিশাল বনভূমি। বনভূমির ঠিক মাঝখানেই এই দিঘী। প্রাচীন দিঘীগুলির মধ্যে এটিই বোধ হয় বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ সচল। আলতাদিঘীর পশ্চিমে প্রাকৃতিক শালবন ও দক্ষিণে মইশড় উত্তর পাশ ঘেঁষে রয়েছে বাংলাদেশ ভারত সীমান্ত। শালবন এবং পাহাড়ি এলাকার মতো বনের উঁচু নিচু রাস্তায় হাঁটলে গ্রাম বাংলার বিচিত্র রূপের দেখা পাওয়া  যায়। এখানে শালগাছ ছাড়াও বিভিন্ন প্রজাতির গাছ দেখা যায়। যেমন: জারুল, আমলকি, সোনালী, শিমুল, কুমারীলতা, নানা ধরনের বনফুল প্রভৃতি । 

দিঘীর নামানুসারে আলতাদিঘি গ্রামের নাম করা হয়েছে। প্রাচীন দিঘীটিকে বৌদ্ধ যুগের নিদর্শন মনে করেন ঐতিহাসিকরা। কারণ, দীঘির কাছেই পাল শাসনামলে নির্মিত জগদ্দল বৌদ্ধ বিহার দেখতে পাওয়া যায়। এই বিহারে বিষ্ণু, শিব এবং কষ্টিপাথরের কারুকার্যখচিত নারীর মুখম-লের প্রতিকৃতি রক্ষিত আছে। শীতকালে অসংখ্য অতিথি পাখির আগমন ঘটে এই দীঘিতে। স্থানীয় মানুষের মুখে একটা লোককাহিনী প্রচলিত আছে যে, প্রজা সাধারণের পানীয় জলের সঙ্কট নিরসনকল্পে রাজা বিশ্বনাথ রাজমাতার সন্তুষ্টির জন্য দীঘিটি খনন করেন। রাজমাতার শর্ত ছিল যে, তিনি পায়ে হেঁটে যতদূর অবধি যেতে পারবেন সেই পর্যন্ত দিঘীটি খনন করতে হবে। রাজমাতার শর্ত পূরণের বিষয়ে মন্ত্রীর সঙ্গে রাজা পরামর্শ করে আলতা নিয়ে আসেন। অতঃপর, একদিন ঘটা করে মন্ত্রীবর সবাই রাজমাতাকে অনুসরণ করেন এবং রাজমাতা হাঁটতে শুরু করেন। কিন্তু রাজমাতার হাঁটা আর শেষ হয় না, তিনি হাঁটতেই থাকেন । 

তারপর পরিস্থিতি প্রতিকূল দেখে মন্ত্রীবর দিঘীর শেষ প্রান্তে  রাজমাতার পায়ে আলতা ছিটিয়ে  দিয়ে তাকে থামিয়ে  দেন এই বলে যে, রাণী মা আপনার পা ফেটে রক্ত বেরিয়েছে। আপনি  আর হাঁটতে পারবেন না। যেই স্থানে গিয়ে রাজমাতা হাঁটা বন্ধ করেছিলেন। শুরুর স্থান থেকে সেই অবধি পর্যন্ত রাজা বিশ্বনাথ দিঘী খনন করেছিলেন। সেই থেকেই এই দিঘীটি আলতাদিঘী নামে হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। সুবিশাল আলতাদিঘীতে আছে প্রায় ৫৫ প্রজাতির দেশীয় মাছ এবং ১৪ হাজার প্রাতির বিভিন্ন জলজ প্রাণীর বসবাস। আলতাদিঘী উদ্যানে মেছোবাঘ, গন্ধগোকুল, শিয়াল, অজগর ও বানর পাওয়া যায়। এছাড়াও বিভিন্ন প্রজাতির পাখি, যেমন পেঁচা, কাঠঠোকরা, বাবুইপাখি, টিয়া, শালিকও রয়েছে এই উদ্যানে। পোকামাকড়সহ নানা প্রজাতির জীববৈচিত্র্য রয়েছে। বিশেষত শালগাছকে আলিঙ্গন করে গড়ে ওঠা উঁই পোকার ঢিবিগুলো সবচেয়ে বেশি আকর্ষণীয়। ২০১৬ সালে বাংলাদেশের বন অধিদপ্তর বিশেষ জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ এলাকা ঘোষণা করে।

প্রতিদিনই বহুসংখ্যক দর্শনার্থী আসেন দেশের উত্তারাঞ্চলীয় নওগাঁ জেলার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি এই উদ্যানে। তাই এই প্রাকৃতিক উদ্যানে দেশের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র হিসাবে গড়ে তোলা সম্ভব। এ বিষয়ে সরকার সহ পর্যটন মন্ত্রণালয়কে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা দরকার। 

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ