কুষ্টিয়ায় পাট চাষের আশানুরূপ ফলন না হওয়ায়

মাহমুদ শরীফ, কুমারখালী (কুষ্টিয়া) : কুষ্টিয়ায় এবার পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি। আশানুরূপ ফলন না হওয়ায় কৃষকদের মুখে হাসি নেই। তার ওপর পাটের বর্তমান দাম দর নিয়ে চিন্তিত তারা। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে পানির অভাবে পাট জাগ দেওয়ার শঙ্কা। বিভিন্ন সময়ে দরপতন, ন্যায্যমূল্য না পাওয়া, উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি, শ্রমমূল্য বৃদ্ধি ও জাগ দেওয়ার পানির অভাবে কৃষকরা পাট চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে। অনেকে পাট চাষ ছেড়ে শাকসবজি ও মরিচ চাষে ঝুঁকছে।
কুষ্টিয়া জেলায় পাট চাষে কৃষকরা ভারতীয় একটি জাতের বীজের ওপর নির্ভরশীল ছিল। এ বছর অতিরিক্ত খরা ও পোকামাকড়ে আক্রান্ত হওয়ায় আশানুরূপ ফলন মেলেনি। তবে এ ব্যাপারে সহায়তাসহ নতুন জাত সম্প্রসারণে কাজ করছে কৃষি অফিস।
কুষ্টিয়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে ৬ উপজেলায় ৪১ হাজার ৭০০ হেক্টর জমিতে পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু চাষ হয়েছে ৩৭ হাজার ৭৪২ হেক্টর জমিতে। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে চার হাজার হেক্টর কম।
ঊর্ষাকালের আষাঢ় মাস শেষ হয়ে শ্রাবণ চলছে। এখন পাট কাটা ও জাগ দিতে ব্যস্ত সময় পার করছে কৃষকরা। তবে আশানুরূপ বৃষ্টি না হওয়ায় জাগ দিতে চিন্তি কৃষকরা। পানির অভাবে পাট পচানো নিয়ে শঙ্কায় আছে তারা। পর্যাপ্ত পানি পাওয়া না গেলে পাটের গুণগতমান নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
কুমারখালী উপজেলার চাপড়া ইউনিয়নের নগর সাঁওতা গ্রামের কৃষক মেজবার আলী জানান, বর্তমানে একজন দিন মজুরের ৫০০-৬০০ টাকা হাজিরা। তার ওপর বেড়েছে বিভিন্ন কৃষি উপকরণের দাম। এক বিঘা জমিতে পাট হয় ৫-৬ মণ। পাট কেটে তা জাগ দিয়ে শুকিয়ে ঘরে তুলতে মণপ্রতি দুই হাজার টাকার বেশি খরচ হয়। কিন্ত পাটের বাজার মূল্য ২ হাজার থেকে ২ হাজার ৫০০ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে। ফলে পাট চাষে আমাদের লোকসানের মুখে পড়তে হচ্ছে বলেও তিনি জানালেন।
বর্তমানে পুরোদমে পাট কাটা, গাদা দেওয়া, জাগ দেওয়া, ধোয়া ও শুকানোর কাজে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে চাষিরা। এদিকে পাটকাঠির মূল্যও নেই আগের মত। পানের বরোজে আর পাটকাঠি ব্যবহার তেমন হচ্ছেনা। পারটেক্স কোম্পানিগুলোও পিছুটান দেওয়ায় পাটকাঠি এখন শুধুই জ¦ালানি।
পাট চাষে অনাগ্রহ কেন জানতে চাইলে আছালত শেখ নামে আরেক কৃষক বলেন, খাল-বিলে অধিকাংশ সময় পানি থাকেনা। আবার কোনো কোনো খালে মাছ চাষ করায় পানি নষ্ট হওয়ার আশঙ্কায় পাট জাগ দেওয়া ও আঁশ ছাড়ানোর ক্ষেত্রে বেশ সমস্যা হয়। তাই পাট চাষে তেমন আগ্রহ নেই।
কৃষক মির্জা শেখ বলেন, চার বিঘা জমিতে পাট চাষ করে জাগ দেওয়ার পানির অভাবে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে। তা ছাড়া উৎপাদন খরচ ও ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় এখন পাট চাষ ছেড়ে দিয়ে শাকসবজি ও মরিচের চাষ করছি।
এ ব্যাপারে কুষ্টিয়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক হায়াত মাহমুদ বলেন, পাটের উৎপাদন বৃদ্ধিতে কৃষকদের প্রশিক্ষণসহ প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। সেই সঙ্গে নতুন জাতের বীজ, সার, প্রণোদনা প্রদান এবং প্রযুক্তির ব্যবহারে সব রকম সহযোগিতা দেওয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, এতদিন জেলায় কৃষকরা পাট চাষে ভারতীয় জাত জেন আর ও -৫২৪ বীজের ওপর নির্ভরশীল ছিল। অতিরিক্ত খরা ও পোকামাকড়ে আক্রান্ত হয়ে এই জাতটি কৃষকদের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেনি। কৃষকদের কথা চিন্তা করে বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিজেআরআই) উদ্ভাবিত জাত বিজেআরআই তোষা পাট-৮ (রবি-১) চাষ জেলায় জনপ্রিয় করতে মাঠ পর্যায়ে কাজ করছে কৃষি বিভাগ।