রবিবার ১০ ডিসেম্বর ২০২৩
Online Edition

জামিল স্যারের বুদ্ধি

ছাবিলা ইয়াছমিন মিতা

শাফী এখনও ক্লাসে বসে কান্না করছে। টিফিনের সময় তার প্রিয় কলমটা ব্যাগ থেকে কে যেন চুরি করেছে। এই তো এক সপ্তাহ আগে ছোট্ট মামা দুবাই থেকে নিয়ে এসেছে কলমটা।  এই কলম তো আর যে সে কলম নয়। যে শাফী না কেঁদে থাকতে পারবে। ওটা একটা জাদুর কলমও বলা যায়, কলমটা ধরে মুখে বললেই কলম নিজের মতো করে লিখে দেয়।  সবাই মনে মনে সায়িমকে সন্দেহ করছে, কারণ ক্লাসের মধ্য সব চেয়ে গরীব ছাত্র সায়িম। স্কুল ড্রেস হলেও কি হবে, একটা সস্তা জামা পরে আর একটা ছেড়া ব্যাগ নিয়ে সে প্রতিদিন স্কুলে আসে। এ জন্য হেড স্যার সায়িমকে মোটেও সহ্য  করতে পারে না, এটা ওটা বলে সারাক্ষণ অপমান করে, আর সায়িম মাথা নিচু করে সব কিছু মেনে নেয়, কারণ তার মা বলেছে, মা বাবার পরে একজন শিক্ষকের অবদান সব থেকে বেশি, শিক্ষকের শাসন আদর ভালোবাসা নিয়েই নাকি শিক্ষা লাভ করতে হয়।

সবাই সায়িমকে সন্দেহ করলেও শাফি একবারের জন্যও সায়িমকে সন্দেহ করেনি, কারণ ছোট বেলা থেকেই সে সায়িমকে চেনে, সায়িম তার বাসায় যাওয়া আসা করে, তাদের বাসায় কত দামি দামি জিনিস পড়ে থাকে, সায়িম কোন দিন ছুঁয়েও দেখেনি, মামা যেদিন কলমটা এনেছিলো সে তো প্রথমে দেখেছিলো, সায়িম চাইলে তো বাসা থেকেও নিতে পারতো।

হেড স্যার ক্লাসে এলো হাতে জোড়া বেত নিয়ে। স্যার আগেই শুনেছে শাফির কলম চুরি হয়েছে, তাইতো স্যার চোর ধরার জন্য লাঠি নিয়ে এসেছে।

স্যার ক্লাসে এসেই সায়িমকে ডাকল আর সায়িমের হাত ধরে চোখ পাকিয়ে বললো-

ঃ বল কলমটা কোথায় রেখেছিস্ত

ঃ আমি নেইনি স্যার।

ঃ তুই নিসনে তো কে নিয়েছে? তোর বাপ এসে নিয়ে গেছে নাকি? এই বলে স্যার সপাং সপাং করে কয়েকটা বাড়ি দিলো সায়িমকে, তারপর আবার বললো-

ঃ ভালোয় ভালোয় বল কলমটা কোথায় রেখেছিস্ত

ঃ বিশ্বাস করেন স্যার আমি নেইনি। 

ঃ তবে কে নিয়েছে?

ঃ হয়তো অন্য কেউ নিয়েছে?

ঃ অন্য কেউ নিয়েছে মানে ? এই ভিখারীর বাচ্চা তুই ছাড়া এই স্কুলে গরীর কে আছে, যে সেই নেবে?

এবার সায়িমের পাশে বসা রাফিউলকে বললো এই রাফি এর ব্যাগটা চেক করো তো, স্যার বলার সাথে সাথে ছুটে এলো, অনিক আর সুমন, ওরা সায়িমের ব্যাগ তন্নতন্ন করে খুঁজলো, তারপর বললো, না ব্যাগে তো নেই।

স্যার নিজেই সায়িমকে চেক করলো, না তার পকেটে গায়ের কোথাও নেই।

স্যার আরও রেগে বললেন কই রেখেছিস বল, নয়তো তোর পিটিয়ে চামড়া তুলে দেব, এই বলে স্যার আবারও সায়িমকে মারতে লাগলেন।

 

এমন সময়  পাশ দিয়ে যাচ্ছিলো জামিল স্যার, হেড স্যারের হুংকার আর বেতের শব্দ শুনে দরজায় দাঁড়ালো। 

ছোট্ট বাচ্চাকে অমন করে মারতে দেখে বললো-

ঃ কি হইছে স্যার, ছেলেটাকে মারছেন কেন?

ঃ আর বলবেন না স্যার, এই সব ছোট লোকের বাচ্চারা জীবনে তো কিছু দেখেনি, আর কারো ভালো জিনিস দেখলে মাথা ঠিক থাকে না, সেটা চুরি করার ধান্দা খোঁজে।

ঃ কি বলেন স্যার কার কি চুরি হলো?

স্যার কিছু বলার আগেই স্যারের ছেলে অনিক বললো, স্যার শাফির কলম সায়িম চুরি করেছে।

ঃ জামিল স্যার এবার ভিতরে প্রবেশ করে সবাই কে উদ্দেশ্য করে বললো, আচ্ছা সায়িম যে কলমটা চুরি করেছে, সেটা কি কেউ দেখেছো?

ঃ হেড স্যার বলে উঠলো, এ ছাড়া আর কে নেবে? এর ভিতরে কি এ ছাড়া আর  কেউ গরীবের বাচ্চা আছে নাকি?

  জামিল স্যার বললো, মাফ করবেন স্যার, শুধু যে গরীবের সন্তানেরা চুরি করে এমনটা তো নয়।

হেস স্যার মুখটা ভেংচি কেটে বললো তবে আপনি বের করে দেন দেখি!

জামিল স্যার একটু মুচকি হাসি দিয়ে বললেন স্যার আমি একবার চেষ্টা করে দেখি?

ঃ আচ্ছা দেখেন, তারপর বিড় বিড় করে বললেন, গাধা ঘোড়া গেলো তল, পিঁপড়া বলে কত জল। বলেই ধপাস করে চেয়ারে বসলেন। 

ঃ জ্বি স্যার কিছু বললেন? জামিল স্যারের প্রশ্ন।

ঃ না, আপনি আপনার কাজ করেন ।

 জামিল স্যার সায়িমকে কোলের ভিতরে নিয়ে আদর করে বললেন, বাবা তুমি কলমটা সত্যি নিয়েছো?

ঃ না স্যার আমি কলমটা নেইনি, চোখ মুছতে মুছতে জানালো সায়িম।

ঃ হেড স্যার আবার রাগে গজ গজ করে বললো এই ভাবে বললে কি চোর কখনও স্বীকার হয়?  কয়েক ঘা বসালেই  তারপরে  না  স্বীকার হবে। জামিল স্যার হেড স্যারের কথায় কান না দিয়ে  সায়িমের মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন আচ্ছা ঠিক আছে।

এবার স্যার সবাইকে উদ্দেশ্য করে বললেন: বাবারা মায়েরা তোমরা সবাই আমার সামনে এসে দাঁড়াও তো।

সবাই স্যারের সামনে এসে দাঁড়ালো, এবার স্যার বললেন, এবার সবাই হাত পিছনে রেখে পিছন ফিরে দাঁড়াও, স্যারের কথা মতো সবাই পিছন ফিরে দাঁড়ালো, এবার স্যার বললেন, সবাই হাতটা মেলে ধরো, সবাই হাত মেলে ধরতেই স্যার বললেন এই তো চোর পেয়ে গেছি, ঐ তো তার হাতে ঐ কলমের কালির দাগ দেখা যাচ্ছে।

স্যারের কথা শেষ হতে না হতেই হেড স্যারের ছেলে অনিক হাতটা সামনে নিয়ে চোখের সামনে ধরলো, তারপর বললো কই স্যার আমার হাতে তো কালির দাগ নেই। স্যার একটু হেসে বললো আমি কি বলেছি তোমার হাতে কালির দাগ আছে?

অনিক এবার থতোমতো খেয়ে গেলো।

জামিল স্যার এবার হেড স্যারের দিকে তাকিয়ে বললো স্যার আমি কি অনিকের ব্যাগটা চেক করতে পারি ?

ঃ কি বলতে চাচ্ছেন আপনি? হেড স্যার অনেকটা মেজাজ নিয়ে বললো।

জামিল স্যারের কথা শুনে অনিক তাড়াতাড়ি গিয়ে নিজের ব্যাগটা বুকের সাথে জাপটে ধরলো।

জামিল স্যার এবার সাহসের সাথে বললো, স্যার তবে আপনি নিজেই আপনার ছেলের ব্যাগটা খুলে দেখান দেখি?

জামিল স্যারের কথা শুনে হেড স্যার রাগে ফায়ার হয়ে, অনিকের কাছ থেকে হেকচা টান দিয়ে ব্যাগটার বইগুলো ঝাড়া মেড়ে ফেলতেই গোটাং করে কলমটা মাটিতে পড়ে গেলো।

জামিল স্যার এবার আস্তে আস্তে নিচু হয়ে কলমটা তুলে, হেড স্যারের হাতে দিয়ে বললো, স্যার ছোট লোকের ছেলে মেয়েরা ভালো কিছু জীবনেও দেখেনি তো, তাই অকারণে মার খায়।

সবাই তাকিয়ে আছে সামনের দিকে। জামিল স্যারের কি বুদ্ধি। 

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ