বৃহস্পতিবার ০১ জুন ২০২৩
Online Edition

কৃষ্ণচূড়ার ডালে ডালে আগুন লেগেছে

॥ আসগর মতিন ॥

গরমের এ সময়টা প্রকৃতি আমাদের উপহার দেয় বাহারি নানা ফুল। তার মধ্যে কৃষ্ণচূড়া একটি। কৃষ্ণ বা কালো এর নামের সাথে যুক্ত হলেও এর ফুল উজ্জ্বল লাল রং এর । বহু দূর থেকে দেখা যায়। মনে হবে যেন ডালে ডালে আগুন লেগেছে। সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গের শৈল শহর দার্জিলিং এ আর সেখান থেকে ফেরার পথে শিলিগুড়িতে দেখলাম বহু গাছে ঝুলছে লাল লাল কৃষ্ণচূড়া ফুল। কলকাতার বিভিন্ন এলাকাতেও একই দৃশ্য দেখেছি। ঢাকা চট্টগ্রামের পার্কগুলোতে আর বড় বড় রাস্তার পাশের উঁচু উঁচু গাছেও ফুটে আছে এই ফুল। আমাদের  সাহিত্যে, গানে এর বেশ ব্যবহার আছে। 

এর রং এত লাল যে দূর থেকে দেখে মনে হবে আগুন। কবি কল্পনায় সে ভাবনা থেকে বলা হচ্ছেÑ কৃষ্ণচূড়ার ডালে ডালে আগুন লেগেছে। কৃষ্ণচূড়া গাছ বেশ বড় ও উচুঁ হয়, সর্বোচ্চ ১২ মিটার পর্যন্ত। আশপাশে বেশ ছড়িয়ে পড়ে। প্রচুর ফুল ফোটে। এই বৃক্ষ জাতীয় উদ্ভিদটির বৈজ্ঞানিক নাম ডেলোনিক্স রেজিয়া (Delonix regia)। এটি ফ্যাবেসি (Fabaceae) পরিবার বা ফ্যামিলির অন্তর্গত, উপ পরিবার বা সাব ফ্যামিলি হচ্ছে ক্যাসালপিনিওইডায়ে। বর্গ হচ্ছে ফ্যবালেস।  এটি গুলমোহর নামেও পরিচিত। লাল  কৃষ্ণচূড়াই বেশি দেখা যায়,  কমলা, হলুদও হয়। এর পাতা উজ্জ্বল সবুজ। কৃষ্ণচূড়া  মাদাগাস্কারের শুষ্ক পত্রঝরা বৃক্ষের জঙ্গলের গাছ। তবে  বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে এটি জন্মানো সম্ভব হয়েছে। সৌন্দর্য বর্ধক গুণ ছাড়াও, এই গাছ ছায়া দিতে বিশেষভাবে উপযুক্ত। 

এটি পত্র ঝরা বৃক্ষ, শীতে গাছের সব পাতা ঝরে যায়। বাংলাদেশে গ্রীষ্ম কালে এ ফুল ফোটে, বর্ষায়ও থাকে। ফুলগুলো বড় চারটি পাপড়ি যুক্ত। পাপড়িগুলো প্রায় ৮ সেন্টিমিটারের মত লম্বা হতে পারে। কৃষ্ণচূড়া  জটিল পত্র বিশিষ্ট এবং এর প্রতিটি পাতা ৩০-৫০ সেন্টিমিটার লম্বা এবং ২০-৪০ টি উপপত্র বিশিষ্ট। ক্যারিবিয়ান অঞ্চল, আফ্রিকা, হংকং, তাইওয়ান, দক্ষিণ চীন, বাংলাদেশ, ভারত সহ বিশ্বের অনেক দেশে এটি জন্মে । 

ভারতবর্ষে  এপ্রিল-জুন সময়কালে কৃষ্ণচূড়া ফুল ফোটে। আমি দিল্লীতেও রাস্তার ধারে ও  বাগানে এই গাছ দেখেছি। আগ্রায় তাজমহলের ভেতরে ও বাইরেও এই গাছ দেখেছি। বিভিন্ন দেশে কৃষ্ণচূড়ার ফুল ফোটার সময় বিভিন্ন। এখন ঢাকার বিভিন্ন পার্ক ও সড়কের দুই পাশে কৃষ্ণচূড়া ফুটেছে। বেশি গাছ দেখা যায় সংসদ ভবন এলাকা, এয়ারপোর্ট রোড, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা, রমনা পার্ক এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। বিভিন্ন শহরে, প্রত্যন্ত গ্রামেও এর দেখা মেলে। কৃষ্ণচূড়ার মতো দেখতে কিন্তু ফুল হলুদ এটা হলো রাঁধাচূড়া। রাজধানীতে এটিও দেখা যায়। এগুলো রোড সাইড বা রোড ডিভাইডার ট্রি হিসেবে বেশ নাম করেছে। অনেকেই কৃষ্ণচূড়া ও রাঁধাচূড়া ফুল দুটিকে গুলিয়ে ফেলেন। কনকচূড়াকে মনে করেন রাঁধাচূড়া। আসলে তিনটি ফুলই আলাদা। কৃষ্ণচূড়ার বৈজ্ঞানিক নাম আগেই বলেছি- Delonix regia। রাঁধাচূড়ার বৈজ্ঞানিক নাম ক্যাসালপিনিয়া পুলচেরিমা (Caesalpinia pulcherrima), আর কনকচূড়ার বৈজ্ঞানিক নাম পেল্টোফোরাম টেরোকারপাম (Peltophorum pterocarpum) . কৃষ্ণচূড়া ফুলের মঞ্জরি অনেকটা থোকার মত এবং ফুলের আকার বেশ বড়। কৃষ্ণচূড়া গাছের ছোট সংস্করণ বলা চলে রাধাচূড়াকে। রাধাচূড়া ফুলেরও রং লাল, কমলা, হলুদ হয়, তবে মনে রাখা দরকার রাধাচূড়া একটি ছোট উদ্ভিদ। রাধাচূড়া ফুলের মঞ্জরি অনেকটা প্যাগোডার মত উপরের দিকে উঠে যায়। ফুলের আকার কৃষ্ণচূড়ার চেয়ে ছোট। কনকচূড়াও কৃষ্ণচূড়ার মতোই বৃক্ষ জাতীয় বড় উদ্ভিদ, তবে ফুলের রং হলুদ। ডালের আগায় কয়েকটি আলাদা আলাদা ফুলের মঞ্জরি ঊর্ধ্বমুখী হয়ে বের হয়। ফুলের কলিগুলো থাকে গোলগোল। এই ফুল দেখতে কৃষ্ণচূড়া বা রাঁধাচূড়ার মতো হয় না।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ