মঙ্গলবার ০৫ ডিসেম্বর ২০২৩
Online Edition

আগরতলার রাজবাড়ীতে এক বিকেল

 

ইবরাহীম খলিল 

প্রায় ছয় মাস সময় ধরে উশখুশ করছিলাম ভারতে যাবো বলে। কিন্তু সময়-সুযোগ করে ওঠতে পারছিলাম না। এই ছয় মাস ধরে অনেককে ধর্ণা দিলাম যে চলো আমার সঙ্গে। একা একা প্রথমবার যেতে ভালো লাগছে না বিদেশ বিভূইয়ে। যার সঙ্গে কথা বলেছি একই কথা- প্রথমবার একা যাওয়া ঠিক হবে না। যখনই সঙ্গে যাওয়ার কথা বলেছি; তখনই যাই-যাবো বলে পরে আর রাজি হয়নি। গতবছর নভেম্বরের ৭ তারিখ আমার ভিসার মেয়াদ শেষ। সবাই বলাবলি করা শুরু করলো প্রথমবার ভিসা পাওয়ার পর না গেলে পরবর্তীতে ভিসা দিতে অস্বীকার করতে পারে ভারতের দূতাবাস। একই সাথে অন্য দেশও এই বার্তা পাবে যে ভিসা পাওয়ার পর এই লোকটি আর যায় না। অবশেষে একাই রওয়ানা দিলাম ২০২২ সালের নভেম্বর মাসের এক তারিখ। আমার গন্তব্য ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের রাজধানী আগরতলা। আমার মধ্যে একধরনের উত্তেজনা কাজ করছে। উত্তেজনার সঙ্গে বেশি কাজ করছে ভয়। কারণ আর কখনো দেশের সীমানা পেরিয়ে অন্য দেশে যাইনি। ইমিগ্রেশন, কাস্টমস, চেকপোস্ট, বিজিবি, বিএসএফ, চেকিং ইত্যাদির কথা মনে হলেই হকচকিয়ে উঠি। তার আগে এক সপ্তাহ ধরে চললো প্রিপারেশন। সুমন মামার তাগিদে আস্তে আস্তে করে প্রস্তুতি সম্পন্ন করলাম। 

ঢাকা থেকে ট্রেনে করে আখাউড়া রেলস্টেশনে গিয়ে পৌঁছলাম সকাল সোয়া ১০টার দিকে। রেলস্টেশনের পাশ থেকে আমাকে নিয়ে অটোগাড়ি চলছে আখাউড়া স্থল বন্দরের দিকে। ১৫/২০ মিনিটের মধ্যে আমি পৌঁছে গেলাম আখাউড়া স্থলবন্দরে। নতুন জায়গাতে আমার মধ্যে এক ধরনের অস্থিরতা। এই বুঝি দেরি হয়ে গেল। কোনটা কি অফিস। কার কাছে কি জিজ্ঞেস করতে হবে। কিভাবে সীমানা পার হতে হয়। ইমিগ্রেশনে আবার কি জিজ্ঞেস করে। এর জবাবই বা কি দেবো। আবার কোন ঝামেলা হয় কি-না। ফরমালিটিজ কিছু বাকী আছে কি-না। আগেই অবশ্য জেনেছিলাম যে আখাউড়া স্থলবন্দর অন্যান্য বন্দরের চেয়ে পার হওয়া সহজ। এখানে অনেক বিষয়েই ছাড় দেওয়া হয়। মনের মধ্যে ওসওয়াসা। ডলার নিতে পারিনি। রূপিও নেইনি। সঙ্গে নিয়ে যাচ্ছি টাকা। এতে আবার কোনা ঝামেলা তৈরি হয় কি-না। 

আমি রাস্তার বাম পাশ থেকে রাস্তা পার হয়ে ডানপাশের ঢালুতে থাকা ইমিগ্রেশন অফিসে ঢুকলাম। হাতে ট্রলি টানতে টানতে রুমে প্রবেশ করতেই সিকিউরিটির একজন বললেন ব্যাগটা বাইরে রেখে আসার জন্য। তিনি আশ^স্ত করলেন যে বাইরে ব্যাগ কিছু হবে না। সম্ভবত তিনি বুঝতে পারলেন যে এই লাইনে আমি নতুন। তিনি জানতে চাইলেন যে আমি ট্রাভেল ট্যাক্স দিয়েছি কি-না। মাথায় নেতিবাচক জবাব দিতেই তিনি পাশে থাকা সোনালী ব্যাংকে গিয়ে ট্যাক্স দিয়ে আসতে বললেন। আমি তার কথামতো সোনালী ব্যাংকের শাখায় গেলাম। তেমন ভিড় নেই। তাই ট্রাভেল ট্যাক্স কথাটা উচ্চারণ করতেই একজন কর্মকর্তা হাত বাড়িয়ে আমার কাছ থেকে ৫০০ টাকার নোট নেন এবং দুটি রিসিভ কপি আমার হাতে ধরিয়ে দেন। ওই কর্মকর্তা সঙ্গে সঙ্গে আমাকে অফার করলেন যে, কিছু রূপি লাগবে কি-না। আমি যেহেতু এখানকার কিছুই জানি না; তাই তার কথাটা এড়িয়ে গেলাম। বললাম রূপি লাগবে না।

মেইন রোডের পাশ দিয়ে ভারতের সীমানার দিকে হাঁটতে থাকলাম। সামনের দিকে তাকিয়ে দেখি আমার ডান ও বামপাশে বিশাল উঁচু কাঁটাতারের বেড়া। মাঝখানে ভারতে প্রবেশের রাস্তা। বেড়াটা এমনভাবে দেওয়া হয়েছে যে কোন মানুষ্য জাতি ডিঙ্গিয়ে যাওয়া অসম্ভব। কিছুক্ষণ হাঁটতেই রাস্তার ডানপাশে বিএসএফ দাঁড়িয়ে। আমি তাদের দিকে এগুতে থাকলাম। একজন বিএসএফ সদস্য আন্তরিকতার সঙ্গে আমার দিকে দুই কদম এগিয়ে এলো। হাতে থাকা পাসপোর্ট তার দিকে এগিয়ে দিলাম। উল্টে দেখে আমাকে পাসপোর্ট ফেরত দিয়ে সামনের দিকে যাওয়ার অনুমতি দিলো। আমি পৌঁছে যাই ভারতের সীমানায়। 

সীমানার ওপারে পার হয়ে ত্রিপুরায় প্রবেশ করে আমি এক নতুন সমস্যায় পরলাম। আমার কাছে টাকা আছে। রূপি কিংবা ডলার নেই। এখানে কিছু করতে হলে রূপি লাগবে। মানিএক্সচেঞ্জ কোথায় আছে তাও জানা নেই। অটোরিকশাচালকরা মানি এক্সচেঞ্জে নিয়ে যাবে বলে আশ্বস্ত করলেও ভাড়া কমাচ্ছে না। বড় যন্ত্রণা হলো আমিতো জানি না যে আগরতলা কোনদিকে আর বটতলাই বা কোন রাস্তা ধরে যেতে হবে। 

অটো রিকশাওয়ালাদের চেঁচামেচির মধ্যেই আমার সামনে এক যুবকের উদয় হলো। হালকা-পাতলা চেহারা। উঁচা-লম্বা। দেখতে বেশ সুদর্শন। নাম তার রুবেল। পুরো নাম মোস্তফিজুর রহমান রুবেল। গাজীপুরের রাজেন্দ্রপুরে বাড়ি। পড়াশোনা করেছে মালয়েশিয়াতে। ইউরোপের অনেক দেশ তার সফর করা। এছাড়া বিশ্বের অনেক দেশের মাটিতে পা পড়েছে তার। তবে ত্রিপুরার আগরতলায় তার আগমন আমার মতোই নতুন। 

আমাকে একা দেখে এগিয়ে এসে আমার সাথে কথা বলতে চাইলো। আমিও আগ্রহ নিয়েই তার সঙ্গে কথা বললাম।  সীমানা পার  হওয়ার পর মনে মনে আমি এমন কাউকেই খুঁজছিলাম। আমি রুবেলকে সঙ্গে পেয়ে যেন অন্ধের যষ্ঠি হাতে পেলাম। প্রথমে পরিচিত হলাম তার সঙ্গে। দেখলাম কথাবার্তায় ভদ্র। তার সম্পর্কে জানার পর আমি অনেকটাই আশ্বস্ত হলাম। একেতো রুবেল ট্যুরিজমে অভিজ্ঞ। অন্যদিকে আমিও একই এলাকার মানুষ। কথাবার্তা-সহযোগিতার মানসিকতা কেমন যেন মিলে যাচ্ছে। রুবেল আমাকে প্রস্তাব করলো চলেন এক সাথে যাওয়া যাক। কথা শেষে অটোরিকশাতে দুজন ওঠে গেলাম। দুজনেরই গন্তব্য বটতলা। বড় রাস্তা পার হয়ে কয়েকটি মোড় ঘুরে ফ্লাইওভারের পাশে হোটেল রাঙ্গামাটির কাছে এসে থামলো। 

হেমন্তকাল শেষ পর্যায়ে। গরম নেই তেমন একটা। আবার শীতও আসেনি। নাতিশীতোষ্ণ অবস্থা। তাই এসি রুমের দরকার নেই। আমরা ঠিক করলাম— নন এসি রুমেই উঠবো। এই সময়ে এসি রুমে ওঠা হবে আমাদের জন্য গরীবের ঘোড়া রোগ। হোটেলে উঠতে উঠতে বেলা ৩টা বেজে যায়। হালকা ফ্রেশ হওয়ার পর খাটে শরীর এলান দিতেই পেটে প্রচন্ড ক্ষুধা অনুভব হতে থাকে। এমনিতেই ভোর থেকে ব্যাপক ধকল গেছে শরীরের ওপর দিয়ে। এই ত্রিপুরা আগরতলায় আসার জন্যই নির্ঘুম রাত। ভোর থেকে ছুটে চলা। বিজিবি-বিএসএফ ইমিগ্রেশন পুলিশসহ অন্যান্য ঝামেলা শেষ করে হোটেলে উঠে স্বস্তি অনুভব করলাম। 

বাংলাদেশ থেকে আমাকে বলা হয়েছিল ইন্ডিয়াতে প্রবেশ করেই সেদেশের একটি মোবাইল সিম কিনতে হবে। কিন্তু সিম কিনলাম না। প্রত্যাশা ছিল যে. ওয়াই-ফাই আছে এমন হোটেলে ওঠবো। সেখানে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে যোগাযোগ রক্ষা করবো।  কিন্তু রুবেল সেই সুবিধা পাচ্ছে না। তাই তার মন খারাপ। আমি আমার মোবাইল থেকে বাংলাদেশের সবার সঙ্গে কথা বলতে পারলাম। রুবেলকে জানালাম আগরতলা থেকেও আমি আমার মোবাইল ফোন থেকে কথা বলতে পারছি। আমি ফোনে আমার স্ত্রী এবং বাচ্চাদের সঙ্গেও কথা বললাম। তাদের জানালাম আমি ভালভাবেই পৌঁছাতে পেরেছি। তাতে সবাই খুশি। কথা বলেছি বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গেও। তারা সবাই আমার কথা শুনে অবাক হলো। তারাও বললো আরেকবার আগরতলা এলে টেলিটকের সিম নিয়ে আসবে। 

কিছুটা আশ্চর্য হলাম যে, টেলিটক সিমে আরেকটি দেশের সীমানার কয়েক কিলোমিটার ভেতরে থেকেও দিব্যি কথা বলতে পারছি। এর রহস্য বুঝতে পারলাম না। যেখানে সীমানা পার হলেই আর নেটওয়ার্ক থাকার কথা না। 

বাংলাদেশের মানুষের কথাবার্তা থেকে শুরু করে খাওয়া দাওয়া এবং আচার আচরণের সঙ্গে রয়েছে ব্যাপক মিল। আগরতলার মানুষের আলাপচারিতা এবং পোশাক আশাক সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যসহ এমন অনেক বিষয় আছে যা বাংলাদেশের মানুষের জীবনাচারের সঙ্গে মিলে যায়। আগরতলায় গিয়ে কিছু বিষয় ছাড়া মনেই হয়নি যে আমি বাংলাদেশের বাইরে আছি। এই শহরকে নিয়ে জানার আছে অনেক কিছু। 

হোটেলে ফিরে  কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে আমি আর রুবেল বের হলাম দুপুরের খাবার গ্রহণ করতে। নতুন এক শহরের রাস্তায় দুই নতুন আগন্তুক বের হলাম। রুবেলের মধ্যে সবকিছুতেই স্বাভাবিক আচরণ। কারণ তার বিদেশ বিভূঁইয়ে  থেকে অভ্যস্ত। আমি তার মতো সবকিছুতে স্বাভাবিক না। তাকে ফলো করছি। বলতে গেলে তাকে দেখে পা ফেলার চেষ্টা করছি। তার খাওয়া দেখে খাওয়ার চেষ্টা করছি। 

এবার আগরতলার রাস্তায় খাবার হোটেল খোঁজার পালা। খাবার হোটেল পেতে ১০/১৫ মিনিট হাঁটা লাগলো। দুএকটা হোটেল দেখে আগরতলা সিটি সেন্টারের উল্টাপাশে চন্দনা নামের একটি হোটেলে প্রবেশ করলাম। দেখি খুব একটা ভিড় নেই। মাঝারি মানের হোটেল। আমরা দু’জন খাবারের তালিকা একনজর দেখে নিলাম। হোটেলের রান্না খাবার অনেকটা ঢাকা শহরের হোটেলের মতোই মনে হলো। তবে হালকা ঝাল বেশি আর কিছুটা মসলার আধিক্য মনে হলো। এখানকার হোটেলগুলোতে মাংসের মধ্যে পাঁঠার মাংসের কদর বেশি। এরপর মুরগীর। আর গরুর মাংস কোন হোটেলেই পাওয়া যাবে না। কেউ হোটেলে গরুর মাংস খাওয়ার ইচ্ছা পোষণ করলে বিপদে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।     

দুপুরের খাবার শেষ হলে আমরা রাস্তায় বেরিয়ে পড়ি। আমাদের প্রথম টার্গেট আগরতলার রাজবাড়ি দেখা। শহরের মধ্যেই। খুব বেশি দূরে না। ঢাকা থেকে সুমন মামা বলে দিয়েছিলেন যে অবশ্যই যেন রাজবাড়িতে প্রথমে যাই। কারণ আগরতলার প্রাণকেন্দ্র অবস্থিত রাজবাড়িটি। আমরা রিকশায় করে ৩০ রূপিতেই পৌছে যাই রাজবাড়ীর সামনে।

উত্তর-পূর্ব ভারতের সবচেয়ে সমৃদ্ধ উজ্জয়ন্ত প্রাসাদ জাদুঘর। এই রাজবাড়িটি প্রায় ২০ একর জমির ওপর অবস্থিত। রাজবাড়ির সামনে রয়েছে ক্ষুদিরাম বসু এবং মাস্টার দ্যা সূর্যসেনের স্টিলের ভাস্কর্য্য। ১৯০১ সালে দিকে তৎকালীন রাজা রাধা কিশোর মানিক্য এই বাড়িটি তৈরি করেন। বাড়ীর সামনেই ডানপাশে মাঠের মধ্যে স্টিল দিয়ে তৈরি ‘আলোকিত করে রাখা রয়েছে ‘আই লাভ আগরতলা’।

রাজবাড়ির ভিতরে প্রবেশ করে চোখে পড়ে সুন্দর পরিপাটি সাজানো জাদুঘর। জাদুঘরটিতে আছে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যগুলো প্রতœতত্ত্ব, চারুশিল্পের অনেক নির্দশন। জাদুঘরের প্রতœতত্ত্ব বস্তর পাশে লেখা আছে ত্রিপুরা জাতির নিজস্ব ভাষা ককবরক, বাংলা ও ইংরেজি বিবরণ। একই সাথে বিভিন্ন গ্যালারিতে সাজানো রয়েছে দেবদেবীর  মূর্তি, মৃৎশিল্প, পোড়া মাটি ও ব্রোঞ্জ নির্মিত মূর্তি। সোনা-রুপা ও তামার মুদ্রাসহ তৈলচিত্র, বস্ত্র, অলঙ্কারও আছে। আদিম যুগের বেশ কিছু শিলালিপি ও সাজানো আছে সাথে বিভিন্ন মানচিত্রও। মহাকাব্য সংগ্রহে আছে এখানে। ত্রিপুরা রাজা মানিক্য রাজবংশের চিত্র ও ইতিহাস। উপজাতির সংস্কৃতি পেইন্টিং ভারতীয় বিভিন্ন সংস্কৃতির নিদর্শন। আরো আছে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথের বিভিন্ন বই রবীন্দ্র গ্যালারিতে। রাজবাড়ির বাইরে ছবি তোলা গেলেও ভিতরে ছবি তোলার উপায় নেই। 

এক জায়গা গিয়ে চোখ আটকে গেল বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের গ্যালারিতে। এই গ্যালারিতে রয়েছে মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশে থেকে আসা শরর্ণাথীদের বিভিন্ন দুর্লভ ছবি। আর এই ছবিগুলো তুলেছেন তৎকালীন ফটোসাংবাদিক রবিন সেনগুপ্ত। ছবিগুলোতে ফুটে উঠছে শরর্ণাথীদের দুর্দশার চিত্র। ১৯৭১ সালে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ ও অপারেশনসহ যুদ্ধের সময় বিভিন্ন পত্রিকাতে প্রকাশিত সংবাদ, ৭ মার্চের ভাষণের প্রতিকৃতি সাজানো রয়েছে গ্যালারিতে; যা নিজ চোখে না দেখলে বুঝানো  যাবে না।

এই রাজবাড়ি জাদুঘর মন্দির দীঘি ঘুরে খুব ভালো লাগবে। জাদুঘরটিতে রয়েছে অনেক দুষ্প্রাপ্য জিনিস। পুরো রাজবাড়ি ঘুরে সাথে জাদুঘরে বিভিন্ন জিনিস দেখে ভারতের বিভিন্ন সংস্কৃতি সম্পর্কেও ধারণা পাওয়া যায়। 

রিকশা থেকে নেমেই আমরা কিছু ছবি তুলে নিলাম। বিশেষ করে রাজবাড়ির সামনে। ক্ষুদিরাম বসুর ভাস্কর্যের সামনে। ছোটবেলা থেকে যার ইতিহাস শুনে বড় হয়েছি। তার গান ‘একবার বিদায় দে মান ঘুরে আসি। হাসি হাসি পড়বো ফাঁসি দেখবে ভারতবাসী’। রাজবাড়ী প্রবেশের বাম পাশে ক্ষুদিরামবসুর ভাষ্কর্য আর ডান পাশে মাস্টার দ্যা সুর্যসেনের ভাস্কর্য। তার সামনে  স্টিলের তৈরি অক্ষরে ইংরেজীতে বড় করে লেখা ‘আই লাভ আগরতলা’। দেখলাম এখানে এসে সবাই কম বেশি ছবি তুলছে। কেউ আবার সেলফি তুলছে। বিশেষ করে ভাষ্কর্য্য দুটির সামনেই বেশি ছবি তুলছে। ছবি তোলা শেষ হলেই উৎ পেতে থাকা হকাররা চা-বিস্কুট খাওয়ার আবদার করছে। যাদের পড়নের পোশাক আশাক একটু ভাল তাদের কফি অফার করছে। কেউ বাংলায় বলছে আবার কেউ হিন্দিতে কথা বলছে। এই রাজবাড়ীর সামনে এসে কিছুটা হিন্দিবাসীর উপস্থিতি পেলাম। মনে হলো— এখানে হিন্দিরবাসীর উপস্থিতি বেশি।   

রাজবাড়ীর ভেতরে ঢুকতে গিয়ে ঘটলো এক ঘটনা। রুবেল দুজনের জন্য ২০ রূপি করে ৪০ রূপি দিয়ে দুজনের টিকিট কেটে আনলো। তার ধারণা ছিল ভারতীয়দের মতোই আমরাও ঢুকে যাবো রাজবাড়িতে। টিকিট কাটার আগে আমরা গেইটের সামনে দাঁড়িয়ে বেশ কিছু কথা আমাদের বাংলাদেশী ভাষায় বলেছি। তা মার্ক করে রেখেছিলেন গেইটম্যান। রুবেল যখন টিকিট হাতে গেইট দিয়ে প্রবেশ করতে গেল তখন আমাদের আটকে দিলো গেইট কিপার। সে আমাদের বললো  ‘হিন্দুস্থান আইডি প্রুফ করে গা’। গেইটম্যান কি বলছে আমি বুঝলাম না। তাকিয়ে রইলাম রুবেলের মুখের দিকে। 

রুবেল আমাকে বললো ভাই ওরা আমাদের কাছে ভারতীয় আইডি কার্ড চাচ্ছে। কারণও সে বুঝে ফেললো। কারণটা হলো—  বিদেশীদের জন্য আলাদা টিকিট এবং তা অনেক বেশি দাম। আমি রুবেলকে ডেকে পাশে এনে জিজ্ঞেস করলাম কেমনে বুঝলো যে আমরা ভারতীয় না। রুবেল বললো গেইটের সামনে দাঁড়িয়ে আমরা নিজেদের মধ্যে যে আলাপ করছিলাম তা ওই বেটা ফলো করেছে। 

বাধ্য হয়ে রুবেল আর আমি বেশি রূপিতেই বিদেশী নাগরিকের জন্য নির্ধারিত টিকিট কেটে রাজবাড়িতে প্রবেশ করলাম। 

সময় শেষ হয়ে যাওয়াতে আমাদের রাজবাড়ীর পুরো অংশ দেখার আগেই বেরিয়ে আসতে হয়। কিন্তু এই রাজবাড়ির পুরো অংশ না দেখে নিস্তার নাই। আবারো হয়তো আসা লাগবে এই ত্রিপুরার আগরতলায়। বিকেল ৫টা বেজে যাওয়ায় পুরোটা না দেখেই বেরিয়ে আসতে হলো রাজবাড়ী থেকে।

 

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ