রোজা: আত্মশুদ্ধির নিরন্তর সাধনা

সংগ্রাম অনলাইন ডেস্ক: সিয়াম সাধনা বা রোজা রাখা বলতে নিছক উপস থাকাকে বুঝায় না। এটি কোন উদ্দেশ্যহীন নিস্প্রাণ আনুষ্ঠানিকতার নাম নয়। এর একটি উদ্দেশ্য রয়েছে। পবিত্র কুরআন মজিদে আল্লাহ রব্বুল আ'লামীন রোজার উদ্দেশ্যর কথা আমাদেরকে জানিয়ে দিয়েছেন। সূরা বাকারা, আয়াত ১৮৩ আয়াতে আল্লাহ বলেছেন, 'হে ঈমানদারগণ! তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেমন করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর; যাতে তোমরা তাকওয়া (গুনাহ থেকে বেঁচে থাকার গুন) অর্জন করতে পারো"।
গুনাহ থেকে বেঁচে থাকতে হলে মানুষকে অবশ্যই তার লোভ-লালসা ও কামনা-বাসনা তথা কুপ্রবৃত্তিকে দমন করতে হবে। পবিত্র রমজানের সিয়াম সাধনার উদ্দেশ্য তাই নিজেকে প্রবৃত্তির দাসত্ব থেকে মুক্ত করে আল্লাহর দাসে পরিণত করা। ম্যাসব্যাপী সিয়াম সাধনা হলো প্রবৃত্তির বিরুদ্ধে নিরন্তর সংগ্রামের সাধনা। প্রবৃত্তিকে দমন বা নিয়ন্ত্রণ করে আত্মসংযমের সাধনাই হলো রোজার মূল উদ্দেশ্য। আর এর চূড়ান্ত পরিণতি হলো আত্মশুদ্ধি অর্জনের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা।
কিন্তু অনেকের কর্মকাণ্ড দেখে মনে হয়, তারা রোজা রাখা বলতে শুধু উপোস থাকাকেই মনে করে। তারা রোজা রাখা সত্তেও নামাজ পড়ে না, কোরআন পড়ে না, সারাদিন সিনেমা, ভিডিও দেখে গেম খেলে সময় কাটায়। আসলে তারা রোজা রাখার নামে সারাদিন উপোস থাকে, কিন্তু রোজার উদ্দেশ্য, মাহাত্ম্য, তাৎপর্য সম্পর্কে কিছুই জানে না। ফলে রোজা রাখা সত্তেও তারা প্রবৃত্তির অনুসরণ করে চলে। তাই সময় থাকতেই এ বিষয়ে সচেতন হওয়া জরুরী।
মহান আল্লাহ রব্বুল আ'লামীন বলেছেন, আত্মশুদ্ধি ও স্রষ্টার স্মরণের মধ্যেই রয়েছে সফলতা। ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই সাফল্য লাভ করবে, যে পবিত্রতা অর্জন করে এবং তার প্রতিপালকের নাম স্মরণ করে ও সালাত আদায় করে।’ (সূরা আল-আ’লা, আয়াত: ১৪-১৫)
‘আর যে ব্যক্তি স্বীয় প্রতিপালকের সম্মুখে উপস্থিত হওয়ার ভয় রাখে এবং প্রবৃত্তি থেকে নিজেকে বিরত রাখে; জান্নাতই হবে তার আবাস।’ (সূরা আন-নাজিয়াত, আয়াত: ৪০-৪১)
আল্লাহর রাসূল নফসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করাকে ‘জিহাদুল আকবর’ বলেছেন। মাহে রমজানে সিয়াম পালন করাটাই সেই ‘জিহাদুল আকবর’। নফসকে যে ব্যক্তি কাবু রাখতে পারে প্রকৃতপক্ষে সে-ই প্রকৃত বীরের মর্যাদায় অধিষ্ঠিত হতে পারে।
মানুষের প্রকাশ্য দুশমন শয়তান নফসের ওপর প্রভাব বিস্তার করে মানবজাতিকে বিপথে পরিচালিত করার কাজে সদা সক্রিয় থাকে। কিন্তু মাহে রমজান এলে শয়তান বিপাকে পড়ে যায়। সে প্রকৃত রোজাদারকে কুমন্ত্রণা ও প্ররোচনার ফাঁদে আটকাতে ব্যর্থ হয়। রোজাদার এমন দৃঢ়প্রত্যয়ের সঙ্গে সব ধরনের পানাহার, কামাচার ও পাপাচার থেকে নিজেকে বিরত রাখেন যে শয়তান রোজাদারের দৃঢ়প্রত্যয়ের দেয়াল ভেদ করে তার নফসের ওপর কোনোভাবেই প্রভাব বিস্তার করতে পারে না।