ঢাকা, বৃহস্পতিবার 1 June 2023, ১৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩০, ১১ জিলক্বদ ১৪৪৪ হিজরী
Online Edition

সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকায় কেনা অধিকাংশ ইভিএম নষ্ট 

সংগ্রাম অনলাইন ডেস্ক: সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকায় কেনা দেড় লাখ ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) অধিকাংশ নষ্ট হয়ে গেছে। ৪০ হাজার ইভিএম স্থায়ীভাবে নষ্ট হয়েছে।  অবহেলা ও অযত্নের কারণে ইভিএমগুলো ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়েছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই পরিস্থিতির জন্য নির্বাচন কমিশন (ইসি) দায়ী। মাঠ পর্যায়ে চটের বস্তা আর নোংরা জায়গায় ইভিএমগুলো সংরক্ষণ করা হয়। তাছাড়া মেশিনগুলো উপযুক্তভাবে ভোটে ব্যবহার করা সম্ভব হয়নি। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে গেছে যে, অনেক ইভিএমের নম্বর প্লেটও মুছে গেছে। কিছু ইভিএমের ভেতরে পানি ঢুকেছে। এ ছাড়া উইপোকা ও তেলাপোকা নষ্ট করেছে অনেক মেশিন।

২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে উচ্চমূল্যে কেনা এই মেশিনগুলো এখন সচল করতে ১ হাজার ২৬০ কোটি টাকা সরকারের কাছে চেয়েছে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি। অন্যদিকে, বারবার তাগাদা দিলেও নির্বাচন কমিশনের কাছে বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরির (বিএমটিএফ) পাওনা ১৯১ কোটি টাকা পরিশোধ করছে না।

এ বিষয়ে ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ বলেন, ইভিএম মেশিন মেরামতেই ১ হাজার ২৬০ কোটি টাকা প্রয়োজন। নির্বাচন কমিশনকে ইভিএম সরবরাহ করে বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরি। ১ লাখ ১০ হাজার ইভিএম মেরামতে ১ হাজার ২৬০ কোটি টাকা চেয়েছিল প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানটি। সেইভাবে অর্থ চেয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে।

২০১৮ সালের ভোটের আগে ৩ হাজার ৮২৫ কোটি টাকায় গৃহীত প্রকল্পের অধীন ক্রয়কৃত ইভিএমগুলো সচল করতে এই মুহূর্তে প্রয়োজন আরও ১ হাজার ২৫৯ কোটি ৯০ লাখ টাকা। সংগ্রহের পাঁচ বছরের মধ্যেই ব্যাপকভাবে নষ্ট হয়েছে ইভিএমগুলো।

ভোটকেন্দ্রের সবগুলোতেই ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার করা হবে।

বিভিন্ন সময়ে বিএমটিএফ ও ইসির পরীক্ষায় দেখা যায়, নির্বাচনে ব্যবহারের পর ইভিএম ভাঙা ও ক্ষতিগ্রস্ত। ইভিএম-এর ভেতরে পানি ও কাদামাটি জমে আছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই সিকিউরড কানেকটিং কেবল ও পাওয়ার কেবল নেই। তাড়াহুড়ো করে কে এম হুদা কমিশন দেড় লাখ ইভিএম কিনলেও সেগুলো সংরক্ষণের কোনো ব্যবস্থা করেনি। ফলে সেসব ইভিএম সচল করতে চরমে বেগ পোহাতে হচ্ছে কাজী হাবিবুল আউয়াল কমিশনকে।

একেকটি মেশিন কিনতে তখন খরচ হয়েছিল ২ লাখ ৩৪ হাজার টাকা। যা পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে ব্যবহৃত ইভিএমের চেয়ে দাম কয়েক গুণ বেশি। কিন্তু এত দামি মেশিন কোথায় রাখা হবে, তার জন্য প্রকল্পতে কোনো ব্যবস্থা রাখা হয়নি। ফলে যথাযথ যত্ন ছাড়াই এগুলো রাখা হয় মাঠ কর্মকর্তাদের কার্যালয়ে। ইভিএমে মেশিন একটি নির্দিষ্ট তাপমাত্রা, আর্দ্রতায় সংরক্ষণ করতে হয়। কিন্তু ইসির হাতে থাকা মেশিনগুলো অপরিকল্পিতভাবে রাখা হয়। যদিও বিএমটিএফে নিয়ন্ত্রিত তাপমাত্রায় মেশিনগুলো থাকলেও অন্য মেশিনগুলো নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ ছাড়াই উপজেলাগুলোর নির্বাচন অফিসের আলো-বাতাসহীন বদ্ধ কক্ষে পড়ে থেকে অকেজো হয়ে পড়ে।

ইসি সূত্রে জানা গেছে, অর্থ মন্ত্রণালয় অর্থ ছাড়ের পর ইভিএমগুলো সচল করতে কমপক্ষে ছয় মাস সময় লাগবে। ১ লাখ ৫০ হাজার ইভিএমের মধ্যে ১ লাখ ১০ হাজার মেরামত করা লাগবে। ৮০ হাজার ইভিএম ভারী এবং ৩০ হাজার ইভিএম হালকা মেরামতের প্রস্তাব দিয়েছে প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান বিএমটিএফ। বাকি ৪০ হাজার ইভিএম মেরামত ব্যয় সাশ্রয় হবে না বলে জানিয়েছে সরকারি এ সংস্থাটি। অর্থাৎ এই ৪০ হাজার মেশিন পুরোপুরি অকেজো হয়ে গেছে। একেকটি ইভিএম ভারী মেরামত করতে ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে প্রায় ১ লাখ ৩২ হাজার টাকা। সেগুলোর প্রতিটির কন্ট্রোল ইউনিট এবং ইন্টারনাল ও এক্সটারনাল ডিসপ্লে মেরামতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৯৪ হাজার ২০০ টাকা। প্রতিটি ইভিএম-এর সঙ্গে দুটি করে ব্যালট ইউনিট মেরামতে লাগবে আরও ৩৭ হাজার ৬০০ টাকা। সবমিলিয়ে লাগবে ১ হাজার ৫৪ কোটি ৪০ লাখ টাকা। ৮০ হাজার মেশিনে এ ধরনের মেরামতের প্রয়োজন হবে। অপরদিকে হালকা মেরামত লাগবে এমন ইভিএমের সংখ্যা ৩০ হাজার।  এর প্রতিটির মেরামতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৬৮ হাজার ৫০০ টাকা। এর সঙ্গে যুক্ত হবে সরকারের ভ্যাট, ট্যাক্স ও অন্যান্য চার্জ। 

রক্ষণাবেক্ষণের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একাধিক ব্যক্তি জানিয়েছেন, উন্নতমানের ইভিএম পরিচালনা এবং সংরক্ষণের ব্যাপারে কমিশন বরাবরই উদাসীন ছিল। বিভিন্ন নির্বাচনে ইভিএমের সঠিক ব্যবহারও করতে পারেনি—এই মেশিনের সঙ্গে যুক্ত কর্মকর্তারা।

২০১০ সালের ১৭ জুন দেশে যন্ত্রের মাধ্যমে ভোটগ্রহণের প্রচলন শুরু করে বিগত ড. এ টি এম শামসুল হুদার নেতৃত্বাধীন কমিশন।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ