শনিবার ০২ ডিসেম্বর ২০২৩
Online Edition

প্রহারের আরেক ঘটনা

‘প্রহার’ বিষয়টি ভালো লাগার মত বিষয় নয়। মানুষ মানুষকে ভালো বাসবে, সঙ্গত আচরণ করবে- এটাই তো স্বাভাবিক। কিন্তু আমাদের সমাজ কি সেই স্বাভাবিক অবস্থায় আছে? সমাজবদ্ধ জীবন-যাপনের দর্শনটাই যেন আমরা ভুলে গেছি। আমাদের সমাজে প্রহারের ঘটনা এখন মামুলি বিষয়ে পরিণত হয়েছে। হত্যা ও নিষ্ঠুর নির্যাতনের ঘটনা এতটাই বেড়ে গেছে যে, প্রহার নিয়ে আলাদা করে ভাবার চেতনাই যেন সমাজের মানুষ হারিয়ে ফেলেছে। এমন বাস্তবতায় সুপ্ত রয়েছে অশনি সংকেত। আর এমন বাস্তবতায় তো আমরা একদিনে কিংবা এক বছরে পৌঁছিনি। দীর্ঘদিনের অজাচার, অনাচার, পাপ, অন্যায় ও নীতিহীনতা আমাদের সমাজকে যেন এক কৃষ্ণ গহ্বরের মুখে নিয়ে এসেছে। সবাই মিলেমিশেই কি আমরা এই কাজটি করেছি? পরিবার, সমাজ, প্রতিষ্ঠান, সবাই? এমন ভাবনায় কি খুব ভুল আছে?

প্রহারের নানা মাত্রা আছে। তবে মূল কথা হলো, প্রহারের মাধ্যমে মানুষ মানুষকে আঘাত করে। এই কাজটি কেমন? এই কাজটি কি মানবিক? মানুষ মানুষকে আঘাত করবে বলেই কি সমাজবদ্ধ হয়েছে? বিষয়টি এমন নয়, তবে মানুষের মধ্যে ভুল-ত্রুটি থাকতে পারে। সেই ত্রুটি সংশোধনের জন্য শিক্ষার প্রয়োজন। শিক্ষা কি শুধু বিদ্যালয়ে হয়? শিক্ষার ব্যবস্থা পরিবারে থাকতে পারে। থাকতে পারে সমাজ-সংস্কৃতিতেও। যথা জায়গায় যথা কাজ হচ্ছে না বলেই আজ মানুষ মানুষকে আঘাত করতে কুণ্ঠিত নয়, হত্যা করতেও নির্বিকার। শিক্ষা ‘অবয়বের মানুষকে’ প্রকৃত মানুষ হিসেবে পরিগঠিত করতে পারে। বিশ্ববিদ্যালয় তো হলো শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপিঠ। বিশ্ববিদ্যালয়ে সোনার ছেলেরা পড়বে। তাদের সোনালী আচরণে সমাজ, দেশ আলোচিত হবে। এক সময় তেমন চিত্র আমরা লক্ষ্য করেছি। গ্রামের বিচার-আচার বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদের জন্য অপেক্ষা করতো। ছুটিতে গ্রামে এসে বিচারের মাধ্যমে তারা ন্যায় প্রতিষ্ঠা করতো। এখন তেমন চিত্র লক্ষ্য করা যায় না। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের সেই দালান আছে, আছে ছাত্রও। কিন্তু কিছু একটা নেই। সেই ‘নেই’-এর অন্বেষণটা এখন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।

 

বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন ছাত্র ছাত্রকে প্রহার করে, হত্যাও করে। এই রমজানে, সংযমের মাসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কবি জসীম উদ্দীন হলের সামনে এক ছাত্র প্রহার করলো তার একদল সহপাঠী। আহত জোবায়ের ইবনে হুমায়ুন ঢাবির অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। অভিযুক্ত ছাত্ররাও একই বর্ষে ছাত্র। তারা ‘প্রলয়’ নামের ক্যাম্পাসভিত্তিক একটি গ্যাংয়ের সদস্য। ব্যথিত জোবায়েরের মা হামলাকারীদের বিরুদ্ধে শাহবাগ থানায় মামলা করেছেন। তিনি অভিযোগ করেন, অভিযুক্তরা তার ছেলেকে হত্যার উদ্দেশ্যে স্ট্যাম্প, রড, চামড়ার বেল্ট ও বাঁশের লাঠি দিয়ে এলোপাতাড়ি মারধর করেন। এতে ছেলের ডান পায়ের লিগামেন্ট ছিঁড়ে যায়। এছাড়া পিঠে ও চোয়ালে আঘাত পান ছেলে। কিন্তু এমন নির্মম প্রহারের কারণ কী? জোবায়েরের মা বলেন, তার ছেলে ক্যাম্পাসে বন্ধুদের নিয়ে ইফতার করছিল। হঠাৎ একটি প্রাইভেট কার তাদের গায়ে কাদা ছিটায়। সে প্রশ্ন করে, এভাবে গাড়ি চালাচ্ছিলে কেন? ‘প্রলয়’ গ্যাংয়ের সদস্যদের কি এভাবে প্রশ্ন করা যায়? অতএব প্রহার। দম্ভ ও শক্তির প্রদর্শন করলো সহপাঠি ছাত্ররা। বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষা-দীক্ষা তাদের মার্জিত ও ন্যায়িনিষ্ঠ করতে পারলো না। শিক্ষা ব্যবস্থা সম্পর্কে কি আমাদের নতুন করে ভাবতে হবে?

 

 

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ