সমালোচনা থেকে নেওয়ার আছে
‘স্বাধীনতা’ শব্দটি শুধু প্রিয় নয়, গুরুত্বপূর্ণও বটে। স্বাধীনতা শব্দটি কখনো যুক্ত হয় ব্যক্তির সাথে, কখনো সংবাদ মাধ্যমের সাথে, কখনো বা দেশ ও জাতির সাথে। আরও লক্ষ্যণীয় বিষয় হলো, মহান স্রষ্টা মানুষকে স্বাধীন ইচ্ছাশক্তি দিয়ে সৃষ্টি করেছেন, যাতে সে বিকশিত হতে পারে। কবিরা বিষয়টি উপলব্ধি করেছেন। তাইতো লিখেছেন :
স্বাধীনতা হীনতায় কে বাঁচিতে চায় হে
কে বাঁচিতে চায়,
দাসত্ব-শৃংখল বলো কে পরিবে পায় হে
কে পরিবে পায়?
এ বিষয়টি আবার সংবাদ শিরোনাম হয়েছে। কাশ্মীরে সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতাহীনতা নিয়ে মতামত ছাপানোয় যুক্তরাষ্ট্রের দ্য নিউইয়র্ক টাইমস পত্রিকার ওপর বেশ ক্ষুব্ধ হয়েছে ভারত। দেশটির তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুর ১০ মার্চ শুক্রবার একাধিক টুইটে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ওই মতামত দুরভিসন্ধিমূলক ও কল্পনাপ্রসূত। নিবন্ধ প্রকাশের উদ্দেশ্য একটাইÑ ভারতের সম্মানহানি ঘটানো। মন্ত্রী তার দায়িত্বের জায়গা থেকে যা ভালো মনে করেছেন তা-ই বলেছেন।
ওই নিবন্ধটি যে সময় প্রকাশিত হয়, কাকতালীয়ভাবে ঠিক তখনই সুইডেনের ভি ডেম ইনস্টিটিউট তাদের ২০২৩ সালে প্রতিবেদন প্রকাশ করে। তাতে বলা হয়েছে, গত ১০ বছরের ঘটনাবলী ভারতকে বিশে^র সবচেয়ে খারাপ স্বৈরতান্ত্রিক দেশগুলোর অন্যতম করে তুলেছে। উল্লেখ্য যে, দ্য নিউইয়র্ক টাইমস-এ মুদ্রিত নিবন্ধটি লিখেছেন, কাশ্মীরের দ্য কাশ্মীর টাইমস পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক অনুরাধা ভাসিন। জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা প্রত্যাহারের পর ২০১৯ সাল থেকে কীভাবে সাবেক এ রাজ্যের সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতা হরণ করা হচ্ছে, সাংবাদিকদের ওপর নির্যাতন চলছে, তা তিনি বর্ণনা করেছেন। জাতীয় স্বার্থের নামে কীভাবে সাংবাদিকদের কণ্ঠ রোধ করা হচ্ছে, ভয় দেখানো হচ্ছে, নানা আইনের মিথ্যা মামলায় আটক করা হচ্ছে, বিদেশে যেতে বাধা দেওয়া হচ্ছে, এমন কি হত্যাও করা হচ্ছেÑ তা তিনি তুলে ধরেন।
আমরা জানি, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে প্রতিদিন ভালো-মন্দ নানা ঘটনা ঘটে থাকে। ওইসব ঘটনা নিয়ে নানা আলোচনা-সমালোচনা হয় এবং গণমাধ্যমে তা প্রকাশিত হয়। তবে লক্ষ্যণীয় বিষয় হলো; সাম্প্রতিক সময়ে ভারতের সরকার, গণতন্ত্র, বাকস্বাধীনতা, রাজনৈতিক কিংবা অর্থনৈতিক কোনো পরিস্থিতির সমালোচনা বিদেশী কোনো গণমাধ্যমে বা গবেষণা প্রতিষ্ঠানে করা হলে ভারত সরকার তা সহজভাবে নিতে পারছে না। সরকারিভাবে ওইসব সমালোচনাকে ভারতকে কালিমালিপ্ত করার অপপ্রচার ও চক্রান্ত হিসেবে অভিহিত করা হচ্ছে। ভি ডেম ইনস্টিটিউট বা ফ্রিডম হাউসের রিপোর্টের পাশাপাশি ভারত বিরোধতার তকমা সাঁটা হয়েছে হিডেনবার্গ রিসার্চ এবং বিবিসি’র কপালেও। দ্য নিউইয়র্ক টাইমসেও সেই একই কাতারে ফেললেন ভারতের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী। ওদের সমালোচনা থেকে কি নেওয়ার মত কিছুই নেই?