বুধবার ২৯ নবেম্বর ২০২৩
Online Edition

সময় ও জীবন 

নাজমুন নাহার নীলু 

'ওরে মুমিন তুই কেন বেখবর

ঘুমিয়ে করেছিস ভোর

হেলায়-ফেলায় কাটিয়েছিস প্রহর'

মানবজীবন এক নির্দিষ্ট সময়ের কাছে বন্দী।,সে পৃথিবীতে এসেছে ক্ষণিকের জন্য।এই ক্ষণিকের জীবনে কেউ ৪০/৫০/৬০/৭০/এভাবে কাটায় আবার কেউ মায়ের জঠরেই মৃত্যুবরণ করে। সর্বোচ্চ হাজার বছর বাঁচতে পারে কিংবা এর কম বেশী। জীবনের এই সময় সকলের কাছে মাত্র এক মুহুর্ত।সময় থেকে যাবে জীবন ফুরিয়ে যাবে। থেকে যাওয়া সময়ের হিসাব দিতে হবে মহান রাব্বুল আলামীনের কাছে।জীবন থেমে গেলে হিসাবের খাতা আর পাল্টানো যাবেনা।তাহলে করনীয় কি? কিভাবে হিসাবে সঞ্জয় বৃদ্ধি হবে?কেন‌ই আমাদের সঞ্চয় করতে হবে ইত্যাদি অগণিত প্রশ্ন এসে ভীড় করে জীবনের খাতায়। বুদ্ধিমান সেই যে নিজের সময়কে কাজে লাগিয়ে জীবনকে তৈরি করে আখেরাত ও দুনিয়া উভয়ের জন্য।

সময়

সময় আসলে কি? নোবেল বিজ্ঞানী পদার্থ বিজ্ঞানী রিচার্ড ফিনম্যান বলেছেন,"আমরা পদার্থ বিজ্ঞানীরা প্রতিদিন‌ই সময়কে নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি, কিন্তু সময় যে আসলে কি তার সদুত্তর দেয়া ধারনাতীত ভাবে অসম্ভম।"

সময় মানব জীবনকে নিয়ন্ত্রণ করে। আল্লাহর কাছে সময় একটা মূল্যবান বিষয়।সময় হলো

 দিবারাত্রির আবর্তন-বিবর্তন।রাত্রি উপনীত হলে অন্ধকার ছেয়ে যায়। আর দিন প্রকাশ পেতেই সমস্ত জিনিস উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। এ ছাড়া রাত কখনো লম্বা আর দিন ছোট, আবার দিন কখনো লম্বা আর রাত ছোট হয়ে থাকে। এই দিবারাত্রি অতিবাহিত হওয়ার নামই হল কাল, যুগ বা সময়।

আল্লাহ বলেন,"এবং সূর্য ও চন্দ্রকে বশীভূত করেছেন; প্রত্যেকে নির্দিষ্ট মিয়াদে আবর্তন করে।"(সূরা রা'দ:২)

এই আয়াতের ব্যাখ্যায় তাফসীরে বায়েনায় বলা হয়েছে। এর একটি অর্থ এই যে, 'প্রত্যেকে নির্দিষ্টকাল পর্যন্ত আবর্তন করবে।' অর্থাৎ কিয়ামত অবধি আল্লাহর নির্দেশ মোতাবেক চলতে থাকবে। মহান আল্লাহ বলেন, ﴿وَالشَّمْسُ تَجْرِي لِمُسْتَقَرٍّ لَّهَا ذَلِكَ تَقْدِيرُ الْعَزِيزِ الْعَلِيمِ﴾ অর্থাৎ, সূর্য তার স্থির হওয়ার সময় পর্যন্ত চলছে, এটা পরাক্রমশালী, সর্বজ্ঞের নিয়ন্ত্রণ। (সূরা ইয়াসীন ৩৬:৩৮) দ্বিতীয় অর্থ এই যে, চন্দ্র এবং সূর্য উভয়েই নিজ নিজ কক্ষপথে আবর্তন করছে। সূর্য নিজের চক্র এক বছরে এবং চন্দ্র এক মাসে পূর্ণ করে নেয়। যেমন মহান আল্লাহ বলেন, ﴿وَالْقَمَرَ قَدَّرْنَاهُ مَنَازِلَ﴾ অর্থাৎ, চন্দ্রের জন্যে আমি নির্দিষ্ট করেছি বিভিন্ন কক্ষপথ। (সূরা ইয়াসীন ৩৬:৩৯)

মূলত বছর,মাস,সপ্তাহ,দিন-ক্ষণের যে গণণা তাই সময়ের পরিসংখ্যান মাত্র।কত সময় অতিক্রম করেছে ও করবে আল্লাহ ছাড়া কেউ জানেনা!

 জীবন

জীবন সময়ের কাছ থেকে কিছু দিনের জন্য ধার করা অস্তিত্ব।যার শেষ আছে।নানা ধরনের পরিবর্তন করার ক্ষমতা রাখে।

*পারেনা শুধু সময়কে আটকে রাখতে।

*জীবন কর্মের প্রতিফল রেখে যায়।

*এই কর্মফলের উপর ভিত্তি করে মানুষের বিচার হবে।

*চিরসত্য হলো জীবন ঘড়ি মানুষের প্রত্যহ বিবর্তনশীল কর্মধারায় প্রবাহিত একটি সীমিত হায়াতের ওপর নির্ভরশীল। 

*كل نفس ذاءقة الموت

অর্থ:*প্রত্যেক প্রাণী মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে"(সূরা আলে-ইমরান:১৮৫)যেসব সৃষ্টির প্রাণ আছে তাদের সবাইকে এক সময় মরতেই হবে।এ আয়াতে নাফস মানে,প্রাণ, জীবন,প্রাণী ইত্যাদি।

*রাসুল সা:আল্লাহর  নামে কসম করতে গিয়ে বলেছেন -"যার হাতে আমার জীবন"

সময় ও জীবন

*মহান আল্লাহ পাক বলেন,"সময়ের কসম, মানুষ আসলে বড়‌ই ক্ষতির মধ্যে রয়েছে তবে তারা ছাড়া যারা ঈমান এনেছে ও সৎকাজ করতে থেকেছে এবং একজন অন্যজনকে হক কথা ও সবর করার উপদেশ দিতে থেকেছে।"(সূরা আসর)এখানে মহান আল্লাহ সময়ের গুরুত্ব উল্লেখ করে করণীয় তুলে ধরেছেন।

জীবনকে অনুভব করতে চাইলে সময়ের সঠিক শ্রম দিতে হবে। মানুষের জীবন সময়ের সমষ্টি দিয়ে তৈরি।সময় সব সময় একভাবে থাকে না।'তুমি যদি সময়কে সময়ে না কাটো,তাহলে সময় তোমাকে কেটে ফেলবে।'অর্থাৎ সঠিক সময় সঠিক কাজ যদি না করতে পারি তাহলে ক্ষতি ব্যক্তির হবে সময়ের কিছুই হবে না।সময় আপন বেগে চলে যাবে। জীবনের খাতায় কিছুই জমা হবে না। পার্থিব জীবনে সময় মতো লেখা পড়া, চাকুরী,বিয়ে, সন্তান -সন্ততি ,ফসল রোপণ এসব সময় মতো না হলে জীবনের খাতা  ধূসর হয়ে যায়।,তেমনি সময় মতো হলে জীবন রঙিন হয়ে ওঠে।যেহেতু জীবন সময়ের কাছে বন্দী তাই সময়কে কাজে লাগিয়ে দুনিয়া ও পরকাল উভয়ের জন্য কাজ করার তাগিদ এসেছে কুরআন ও হাদীসে। জীবন ফুরিয়ে গেলে সময় আর কাজে আসেনা। 

পরকালে প্রতিটি মুহূর্তের কাজের হিসাব দিতে হবে।

*আল্লাহপাকের ঘোষণাঃ"আর যে ব্যক্তি আমার 'যিকির'(কুরআন -হাদীসের নসিহত)হতে বিমুখ হবে তার জন্য দুনিয়ায় হবে সংকীর্ণ জীবন,আর কিয়ামতের দিন আমরা তাকে অন্ধ করে উঠাব।সে বলবে,হে আমার রব!দুনিয়ায় তো আমি চক্ষুষমান ছিলাম,কেন‌ আমাকে অন্ধ করে তুললে?আল্লাহ বলবেন -হ্যাঁ এমনিভাবেই তো আমার আয়াত গুলো তখন তোমার নিকট এসেছিল তুমি তখন তা ভুলে গিয়েছিলে।ঠিক সেভাবেই আজ তোমাকেও ভুলে যাওয়া হচ্ছে।("সূরা ত্বা-হা:১২৪-১২৬।)

* হাদিস শরিফে রয়েছে, ‘রোজ হাশরে শেষ বিচারের দিনে প্রতিটি মানুষ পাঁচটি প্রশ্নের উত্তর দেওয়া ছাড়া এক কদমও নড়তে পারবে না। তার জীবনকাল কী লক্ষ্যে কাটিয়েছে? যৌবনকাল কী কাজে ব্যয় করেছে? কোন পথে আয় করেছে? কী কাজে ব্যয় করেছে? জ্ঞান অনুযায়ী কর্ম সম্পাদন করেছে কি না?’ (তিরমিজি ৪:৬১২/২৪১৬, মিশকাত: ৫১৯৭, ইবনে হিব্বান, সহিহ্ আলবানি)। কিন্তু মানুষ মোহের ঘোরে আচ্ছন্ন হয়ে সময়কে অবহেলা করে যাচ্ছে।

সৌভাগ্যবান কারা?

যারা জীবনকে কাজে লাগিয়েছে।নেক আমল করার জন্য সর্বদা সচেষ্ট থেকেছে।

একবার রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে প্রশ্ন করা হলো, সৌভাগ্যবান কারা? তিনি বললেন, সৌভাগ্যবান তারা, যারা দীর্ঘায়ু লাভ করেছে এবং তা নেক আমলের মাধ্যমে অতিবাহিত করেছে। পুনরায় জিজ্ঞেস করা হলো, দুর্ভাগা কারা? তিনি বললেন, দুর্ভাগা তারা যারা দীর্ঘায়ু পেয়েছে এবং তা বদ আমলে কাটিয়েছে বা আমলবিহীন অতিবাহিত করেছে। (তিরমিজি: ২৩২৯, মুসনাদে আহমাদ: ১৭৭৩৪, হিলইয়াতুল আউলিয়া ৬:১১১, মিশকাত: ২২১০, সহিহ্ আলবানি)।

*আমলের মাধ্যমে জীবন অতিবাহিত করা ব্যক্তি সৌভাগ্যবান। আমাদের আমলগুলো ইসলামের পূর্ণাঙ্গ দীনের মধ্যে প্রবেশ করে শাণিত করার মধোই রয়েছে মু'মিনের সৌভাগ্য লাভের উপায়।

মু'মিনের জীবন

একজন মুসলিমের জীবন তখনই সার্থক হয়ে ওঠে যখন দুনিয়ার জীবনের পাশাপাশি আখেরাতের জন্য নিজেকে তৈরি করে। দীর্ঘস্হায়ী জীবনের জন্য ক্ষণস্হায়ী জীবনের যাবতীয় ভোগ-বিলাস ত্যাগ করে আখেরাতের জবাবদিহিতার ভয়ে দুনিয়ার সময়কে কাজে লাগায়।"আমি তো তোমাদেরকে পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠিত করেছি এবং ওতে তোমাদের জীবিকার ব্যবস্থাও করেছি। তোমরা খুব অল্পই কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন কর।"(সূরা আরাফ:১০)

দুনিয়ার জীবনে প্রতিষ্ঠিত হতে যেয়ে, জীবিকার সন্ধানে হালাল পথে টিকে থাকতে নানা বাঁধা আসে। সেগুলো মোকাবেলা করা সত্যিই কষ্টসাধ্য! দূর্নীতি,অন্যায়, অবিচার, মদ,জুয়া,ব্যাভিচার,অন্যের অধিকার হরণ ইত্যাদি ।সকল ক্ষেত্রে অন্যায় পরিহার করে চলা তাক‌ওয়াবান মু'মিনের কাজ।মুত্তাকীর জীবনে 

১.মানসিক কষ্ট (সূরা বালাদ,আয়াত:৪)

২.মু'মিনের জীবন পরীক্ষা ক্ষেত্র (সূরা মূলক:২)

৩.দুঃখের সাথে সুখের সন্ধান(ইনশিরাহ,আয়াত-৫-৬)

৪.মু'মিনের জন্য আল্লাহ‌ই যথেষ্ট(সূরা তালাক:২-৩,সূরা তাওবা:১২৯)

৫.ঈমানদারগণ সফল(সূরা মু'মিনূন,১)

৬.উত্তম কাজ করা-আল্লাহ উত্তম কাজ করা ব্যক্তিদের ভালোবাসেন।(সূরা বাকারা:১৯৫) 

৭.সব অবস্হায় আল্লাহকে ভয় করে।-"হে ঈমানদারগণ!তোমরা আল্লাহকে ভয় করে চল।প্রত্যেকের খেয়াল রাখা উচিত যে,সে আগামী দিনের (পরকালের) জন্য কি ব্যবস্থা করেছে। আল্লাহকে আরো ভয় করে চল। আল্লাহ অবশ্যই তোমাদের সব আমলের খবর রাখেন।"(সূরা হাশর:১৮)

এসবের মধ্যে দিয়ে অতিবাহিত হয়।তাই মু'মিন সর্বাস্হায় আল্লাহর নেয়ামতের শুকরিয়া আদায় করে। সবর করে আখেরাতের প্রতিদান পাওয়ার আশায়।সে জীবনকে সময়ের হাতে ছেড়ে দেয় না।বরং ক্ষণস্হায়ী জীবনকে  সময়ের মধ্যে কাজে লাগাতে প্রচেষ্টা চালায়। 

*রাসূল সা: বলেছেন,যে ব্যক্তি নিজের নাফসকে নিয়ন্ত্রণ করে এবং মৃত্যুর পরবর্তী জীবনের জন্য কাজ করে,সেই প্রকৃত বুদ্ধিমান।আর নিজেকে কুপ্রবৃত্তির গোলাম বানায় অথচ আল্লাহর নিকট প্রত্যাশা করে, সেই ব্যর্থ।(তিরমিযী)

মু'মিনের জীবনে সময়।

একজন নিষ্ঠাবান মুসলমান দুনিয়ার জীবনকে খেল-তামাশা মনে করতে পারেনা। কেননা আল্লাহপাক মানুষকে খলিফার দায়িত্ব দিয়ে দুনিয়ায় পাঠিয়েছেন। এই দায়িত্ব পালনে মু'মিন সদা তৎপর থাকে।তাই সে সময়কে কাজে লাগিয়ে আখেরাতের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করতে থাকে।মু'মিন সব সময়ঃ-

১.সময়ের প্রতি কর্তব্যনিষ্ঠা ও দায়িত্ববান হবেঃ সময় নিয়ে আফসোস বিষয়ে কুরআন দুটি অবস্হানের কথা বর্ণনা করেছেন ১.জীবনের অন্তিম মুহূর্ত(সূরা আল মুনাফিকুন-৯-১০)২.আখিরাতের মুহূর্তে।(সূরা আল ফাতির-৩৭) সচেতন মু'মিন সময়ের প্রতি সব সময় নিষ্ঠাবান দায়িত্ব পালনে আগ্রহী হয়ে ওঠে। রাসূল স, বলেছেন,"সে ব্যক্তি প্রকৃত জ্ঞানী যে ব্যক্তি প্রতিদিনের সময়টুকুকে চারভাগে বিভক্ত করে এক অংশে সারাদিনের কাজের হিসাব করে,আর এক ভাগ আল্লাহ তা'আলার সমীপে দোয়া ও নির্জনে কান্নাকাটি করে,অন্যভাগে জীবিকা উপার্জনের জন্য চেষ্টা ও পরিশ্রম করে ।অপর ভাগ পার্থিব জীবনের সুখ -শান্তির জন্য আল্লাহ তা'আলা যা কিছু দিয়েছেন তা উপভোগ করে।"

*আমীরূল মু'মিনীন ওমর রা, বলেছন-"আল্লাহ তায়ালা কর্তৃক তোমাদের হিসাব-নিকাশ নেওয়ার পূর্বে নিজের হিসাব নিজেই খতিয়ে দেখ।"

*আপন কর্মের রেকর্ড পড়।আজ তোমার নিজের হিসাব করার জন্য তুমিই যথেষ্ট।"(সূরা বনী ইসরাইল :১৪)

২.সময়ের সদ্ব্যবহার করা-"তিনিই সেই সত্তা যিনি সূর্যকে দীপ্তিমান ও চন্দ্রকে আলোকময় বানিয়েছেনএবং ওর (গতির) জন্যে কক্ষসমূহ নির্ধারিত করেছেন, যাতে তোমরা বছরসমূহের সংখ্যা ও (সময়ের) হিসাব জানতে পার।আল্লাহ এসব বস্তু অযথা সৃষ্টি করেননি, তিনি জ্ঞানবান সম্প্রদায়ের জন্য এই সমস্ত নিদর্শন বিশদভাবে বর্ণনা করেন।"(সূরা ইউনূস:৫)

৩.সালাত আদায়-২৪ঘন্টা সময়ের মধ্যে ৫বার সালাত আদায়ের বিধান সময়ের প্রতিটি মুহূর্তকে ব্যবহার করার তাগিদ রয়েছে।"নিশ্চয় নামায মুসলমানদের জন্য একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ফরয করা হয়েছে।"(সূরা নিসা:১০৩)

"নিশ্চয়ই নামায মানুষকে পাপ,অন্যায়,অশ্লীলতা এবং লজ্জাহীনতার কাজ হতে বিরত রাখে।"(সূরা আনকাবুত:৪৫)

"নিশ্চয়ই সে মু'মিন সফলকাম যে নামাযে ভয় ও বিনয় অবলম্বন করে ‌"(সূরা মু'মিনুন:১-২)

৪.মৃত্যুর চিন্তা করাঃ"মানুষের হিসাব নিকাশের সময় কত নিকটবর্তী অথচ তারা গাফিলতিতে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে।"(সূরা আম্বিয়া:১)

৫.সময়ের অপচয় না করাঃসময়ের অপচয় বলতে পার্থিব জীবনকে ভোগ-বিলাসের মধ্যে ডুবিয়ে রাখা। অর্থাৎ আখেরাতের সঞ্চয়ে মনযোগী না হয়ে দুনিয়ার জীবনকে উপভোগ করতে থাকা।মু'মিন সব সময় হিসেব করে পদক্ষেপ নিবে।বিচারের দিনে প্রতিটি মানুষ পাঁচটি প্রশ্নের উত্তর দেওয়া ছাড়া এক কদমও নড়তে পারবে না। তার জীবনকাল কী লক্ষ্যে কাটিয়েছে? যৌবনকাল কী কাজে ব্যয় করেছে? কোন পথে আয় করেছে? কী কাজে ব্যয় করেছে? জ্ঞান অনুযায়ী কর্ম সম্পাদন করেছে কি না?’ (তিরমিজি ৪:৬১২/২৪১৬, মিশকাত: ৫১৯৭, ইবনে হিব্বান, সহিহ্ আলবানি)। কিন্তু মানুষ মোহের ঘোরে আচ্ছন্ন।

৬.ইবাদতের জন্য আগামীকাল নির্ধারণ না করাঃ

প্রতিদিনের কাজ প্রতিদিন করা।আজ না করলেও চলবে আগামীকাল করব। এই মানসিকতা পরিহার করে চলা।১

*প্রিয় নবীজি (সা.) বলেন, ‘তোমরা পাঁচটি জিনিসকে তার বিপরীত পাঁচটি জিনিসের পূর্বে মূল্যায়ন করো ও তার সদ্ব্যবহার করো। তোমার যৌবনকে বার্ধক্যের পূর্বে, সুস্থতাকে অসুস্থতার পূর্বে, সচ্ছলতাকে দারিদ্র্যের পূর্বে, অবসরকে ব্যস্ততার পূর্বে, জীবনকে মৃত্যুর পূর্বে।’ (বায়হাকি, শোআবুল ইমান: ১০২৪৮, মুসনাদে হাকিম: ৭৮৪৬, আত-তারগিব ওয়াত-তারহিব, ৪:২০৩, ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিমের শর্ত অনুযায়ী হাদীসটি সহীহ তবে তারা হাদীসটি তাদের গ্রন্হে বর্ণনা করেননি।)

*ইমাম আবু হানিফা (র.)-এর দাদা তাঁর পিতা ছাবিত (র.)-কে পারস্যের নওরোজের দিনে হজরত আলী (রা.)-এর কাছে নিয়ে গিয়েছিলেন এবং আলী (রা.)-কে কিছু হাদিয়া পেশ করেছিলেন। হাদিয়াটি ছিল নওরোজ উপলক্ষে। তখন আলী (রা.) বললেন, ‘নওরোজুনা কুল্লা ইয়াওম।’ অর্থাৎ ‘মুমিনের নওরোজ প্রতিদিনই।’ মুমিন প্রতিদিনই তার আমলের হিসাব-নিকাশ করবে এবং নব উদ্যমে আখিরাতের পাথেয় সঞ্চয় করবে। (আখবারু আবি হানিফা র.)

৭.সময়ের প্রতি অবহেলা থেকে সাবধান হ‍ওয়াঃ

সময়ের প্রতি অবহেলা সম্পর্কে সাবধান করে কোরআনে কারিমে বলা হয়েছে, ‘প্রাচুর্যের প্রতিযোগিতা তোমাদের মোহাচ্ছন্ন করে রাখে, যতক্ষণ না তোমরা সমাধিগুলো দেখতে পাও (তোমাদের মৃত্যু হয়)। এটি কখনো সংগত নয়! অচিরেই তোমরা জানতে পারবে। আবারও বলি, এটি মোটেই সমীচীন নয়; তা তোমরা অনতিবিলম্বে জানতে পারবে। না, তোমাদের নিশ্চিত জ্ঞান থাকলে অবশ্যই তোমরা মোহগ্রস্ত হতে না। তোমরা (সময়ের প্রতি উদাসীন কর্মে অবহেলাকারীরা) অবশ্যই জাহান্নাম দেখবে (তাতে প্রবেশ করবে)। পুনশ্চ! অবশ্যই অতি অবশ্যই তোমরা জাহান্নাম চাক্ষুষ দেখে (তাতে প্রবেশ করে তার শাস্তি ভোগ করে) প্রত্যয় লাভ করবে। অতঃপর অবশ্যই সেদিন তোমাদের প্রদত্ত সব নেয়ামত সম্পর্কে প্রশ্ন করা হবে।’ (সুরা তাকাসুর : ১-৮)

ওমর ইবন আবদুল আজিজ বলেছেন : রাত-দিন তোমরা কাজে ডুবে থাক অতএব সময়ও তোমাদের মাঝে ডুবে থাকবে! মূলত ঘৃণার আলামত হলো সময় নষ্ট করা। আর সময় হলো একটি তলোয়ার তুমি তাকে নষ্ট না করলে সেও তোমাকে নষ্ট করবে না। সর্বদায় এক ভালো অবস্থা থেকে আরো উন্নত অবস্থানের জন্য প্রাণান্তকর উন্নতির চেষ্টা করা মুমিনের উপর ওয়াজিব। (আল্লামা ইউসুফ আল-কারযাভী, মুসলিম জীবনে সময়, পৃ.২০)।

আবদুল্লাহ ইবন মাসউদ (রা:)বলেন : ‘সে দিন আমি অত্যন্ত লজ্জিত হয়েছি, যে দিনের সূর্য ডুবে গেছে। আমার আয়ু কিছুটা হলেও ফুরিয়ে গেছে, অথচ আমার আমলের কোনো উন্নতি হয়নি!’

সময় থাকতে জীবনকে আল্লাহর রঙে রঙিন করি। তাঁর পছন্দনীয় পথে ইবাদত-বন্দেগী করে আখেরাতের পাথেয় সঞ্জয় করি।আল্লাহ আমাদের তৌফিক দান করুন।আমীন।।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ