কবিতা
কবি হবে কবি
সায়ীদ আবুবকর
কবি হবে কবি?
দারুণ খুশির খবর জানাই
আমরা কবি-লেখক বানাই,
বলতে পারো এ আমাদের
প্রফেশান ও হবি।
কবি হবে কবি?
কবি হবে কবি?
কোন্ কবি চাও হতে, বাপু,
নজরুল, না রবি?
পারবে হতে সবই।
কিন্তু, বাপু, সবার আগে
হাজার হাজার টাকা লাগে;
টাকার পরে পা-ুলিপি;
মজার কথা বলি-
হোক না লেখা যেমন তেমন,
ছাপলে মনে হবে এমন-
এ যে গীতাঞ্জলি!
সারা বছর কবি বানাই
নানান ছাঁচে ফেলে
সেই কবিদের হাঁটে উঠাই
ফেব্রুয়ারি এলে।
বইমেলাতে দাঁড় করিয়ে,
দুহাতে দেই বই ধরিয়ে,
দাঁত কেলিয়ে তাঁরা তখন
তুলতে থাকে ছবি,
যে দ্যাখে সে হেসে বলে
দাঁতকেলানো কবি।
কবি হবে কবি?
লেখক হবে লেখক?
সংকটের দেয়ালে রক্তছাপ
তুহীন বিশ্বাস
ইচ্ছেগুলো লজ্জায় মুখ লুকোয়,
সংকটের কংক্রিট দেয়ালে রক্তছাপ।
আত্মসম্মানের নির্লজ্জ আত্মসমর্পণ!
স্বপ্নগুলোর বাধ্যতামূলক নির্বাসন।
সঞ্চিত সফলতা মলিন হয় আলস্যে,
ব্যর্থতার অন্তর্জালে বন্দী আছে সময়।
গিরগিটির মতো রং বদলায় জীবন;
অন্ধকারে হোঁচট খাচ্ছে চেনা মুখগুলো।
নিঃসঙ্গ অবসাদে
রফিকুল ইসলাম
চাঁদের অন্ধত্বে পড়া না হোক
নিঃসঙ্গ জীবনের কোন গল্প
সেদিন দেখা হলে না হয় বাকি কথা বলবো।
পাষাণের নিচে চাপা পড়ে থাক
মমতাসিক্ত প্রতিটি সকাল,
পড়ে থাক স্মৃতিভারে কাল থেকে মহাকাল
স্বপ্নরা পড়ে থাক পথিকের পথে
যেতে যেতে না হয় কেউ কুড়িয়ে নিবে সাথে।
বসন্ত এসে জাগাবে পাখির গান
দখিন হাওয়ায় প্রভাত আসুক রোজ
ফাগুন দিনে আমায় কেউ, নাইবা নিল খোঁজ।
ক্লান্ত প্রদীপ কেঁপে কেঁপে নিভে যাক
শুকতারা না হয় খসে পড়ুক পৃথিবীর প্রান্ত,
পড়ে থাক না হয় শরাবের শূন্যপাত্র,
সময় নিঃসৃত স্রোতে ডুবে থাক
শব্দহীন রাতে একাকিত্ব আঁধারের গাত্র
কি এমন ক্ষতি! ক'টা দিনই তো আর মাত্র!!
বিষকাঁটা
জেসমিন সুলতানা চৌধুরী
মনোবাগে ফুটেছিল ফুল কারো অজান্তে
একটু একটু সুরভি ছড়াত ভাবনাতে
সে সুবাস কখনো করতো উদ্বেলিত
কখনো আন্দোলিত
আবার কখনো উৎসাহিত
কখনো কখনো উৎকণ্ঠিত,
কখনো আবার আতঙ্কিত ।
নীরব ভাষায় দেখি চলন-বলন
ধীরে ধীরে বাড়ে মর্মবেদন ।
সুবাস যেন নিমেষেই বাসি হয়ে গেল
কখন যেন পোকা ধরেছে
একটু একটু করে নষ্ট করেছে
সে ফুলের সৌরভ আর কাছে টানে না
ভালো লাগা রঙও যেন ফিকে হয়ে গেল
ভুল করে যদি তুলে নিতাম হাতে
কাঁটার বিষে নীল হতাম তাতে
ফুলের সুবাসটুকু ছিল শুধুই মরীচিকা ।
যদি খোঁপায় গেঁথে দিতাম, হতো কলঙ্কটীকা
ভুল করেও যদি করতাম ভুল
আজীবন দিতে হতো সে ভুলের মাশুল।
দোহাই ফাঁদ পেতো না
এবি ছিদ্দিক
এটাকে কোন নিষিদ্ধ বলয় বলা যাবে না
শুধুই সামাজিক সংবিধানের চিহ্ন মাত্র
তারচেয়ে বরং প্রাগৈতিহাসিক চিত্রসমূহ উত্তম
কৃত্রিম ছেঁড়া- মসৃণ বস্ত্রগুলোই উত্তম উদাহরণ
উজাড় করে দিও - দোহাই ফাঁদ পেতো না!
এমনিতেই দোষের লানত গলায় ঝুলছে!
দেশি শিং মাছের ঝোল সবাই পছন্দ করে
গরম ভাতে হাতপাখার বাতাস দিও
ভালোবাসি সবাইকে - কেউ আমার পর নয়
ক্ষুণিœবৃত্তির জন্য আছে একজন - ঠিক এমন
নিবিড় আঁখক্ষেত আর শালবন ঘেরা দেশে -
বেড়ে ওঠে এ মরদ যৌবনে এঁকেছে আলপনা।
গচ্ছিত নোনাজল
সাবরিনা জাহান সুমি
জীবনের কোনটাই নিজের জন্য নয়।
বেঁচে থাকার আকুতি, ভালো থাকাটা,
ভালো থাকার জন্য এত দুশ্চিন্তা, এত
এত পরিকল্পনা-ছোটাছুটি কোনটাই
নিজের জন্য নয়।
ইস্পাতের পৃথিবীতে সীমাহীন যন্ত্রণা,
হাজারো গ্লানি-অপূর্ণতা নিয়ে যে বসবাস,
যে দীর্ঘশ্বাস তাও নিজের জন্য নয়,
অন্যের জন্য।
এই যে শতেক নিবেদনে আশাতুর হয়ে
নীড় খোঁজে যে মন
তাও কাচের টুকরোর মতো ঝনঝনিয়ে
নিপতিত হয় ভূপৃষ্ঠে
যা কি'না নিজের জন্য নয়, অন্যের জন্য।
মন ভাঙা কষ্ট,হৃদয়ের আর্তনাদ,
চোখ ফেটে গড়িয়ে পড়া জলের আহাজারি
তাও অন্যের জন্য।
কত প্রেম, কত ভালোবাসার মোহ টান,
যত্নআত্তি, কত প্রস্তুতি-অনুশীলন
একটাও নিজের জন্য নয় অন্যের জন্য।
এই যে বারংবার মৃত্যুর জন্য করা শত অভিযাচন,
জীবিত হয়েও স্বদিচ্ছায় মৃতের কাতারে দাঁড়ানো
সেও তো নিজের জন্য নয় অন্যের জন্য।
সব সময় অন্যকে ভালো রাখতে আমার আমিকে
ক্ষয়ে ক্ষয়ে নিঃশেষিত করছি,
হেঁটে হেঁটে পৌঁছে যাচ্ছি অসীমের দোরগোড়ায়।
নিয়ত অস্বিত্ব বিসর্জনেও হচ্ছি অন্যেরই চক্ষুশূল।
নিজের সঞ্চিত বলে আর কিছু নেই,
পথ হাতড়ালে খুঁজে পাই রাশিরাশি গচ্ছিত নোনাজল,
শুধু নোনাজল।