মঙ্গলবার ০৫ ডিসেম্বর ২০২৩
Online Edition

আধুনিক জাহিলিয়াত এবং আধুনিক বিশ্ব

ড. সাইয়েদ মুজতবা আহমাদ খান

মহান আল্লাহর দাসত্ব বা আনুগত্য করা থেকে বিরত থাকার নামই জাহিলিয়াত। আল্লাহ্  ও তাঁর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বাদ দিয়ে, রাসুলে আকরাম (সা: ) এর আদর্শকে দূরে সরিয়ে কেবল মানব রচিত মতাদর্শ দ্বারা জীবন চালানো, ব্যক্তি থেকে জীবনের সকল স্তর ও বিভাগকে মানুষের তৈরি নিয়ম নীতি পদ্ধতির মাধ্যমে চালানোর প্রয়াস যখন চলে, তখোন একে কি নামে অভিহিত করা যায় বা আখ্যায়িত করা চলে ? এক কথায় একেই  বলে জাহিলিতের সর্ব গ্রাসী আগ্রাসন। অন্য ধর্মের লোকদের কথা এখানে বাদ দেয়াই যুক্তিযুক্ত।  অন্য ধর্মের অন্য জাতির লোকেরাতো মুসলিম নয়। আমরা যারা নামে ধামে মুসলিম, আমরা কর্মটা করছি কি ? নিজেদেরকে ঘোষণা দিচ্ছি পাক্কা মুসলিম হিসেবে । গরু খাচ্ছি দেদারছে,  গোগ্রাসে। কিন্তু আমাদের জীবনের কোথাও কি ইসলামের পূর্নাঙ্গ অনুসরণ হচ্ছে ? পূনার্ঙ্গ থাক  যোজন দূরে সিকিভাগও হচ্ছে না। তবে কী আমরা আধুনিক জাহিলিয়াতের সর্বগ্রাসী আগ্রাসন দ্বারা আক্রান্ত অবশ্যই। এক্ষেত্রে শতভাগ সত্য হলো আমরা মুসলমানরা ভেজাল মার্কা মুসলমান হিসেবে নিজেদেরকে দাঁড় করাতে সক্ষম হয়েছি। এ রকম পারদর্শিতা অন্য জাতির মধ্যে আসলেই কম। ব্যক্তি জীবনে ছিটেফোটা লোক দেখানো আনুগত্য করি মাত্র আল্লাহর ও রাসুল ( সা: ) এর । কিন্তু জীবনের প্রায় নিরানব্বই ভাগই জাহিলিয়াতের অন্ধকারে নিমজ্জিত। আল্লাহ রাসুল ( সা:) সেখানে নির্বাসিত । জীবনের  প্রায় সিংহভাগ যেখানে আধুনিক জাহিলিয়াতের করাল গ্রাসে আক্রান্ত -তবে আমরা যাচ্ছি কোথায় ? অনুভূতি, বিবেক বিবেচনা সবই কি ভোতা ও ভন্ডুল হয়ে গেলো? 

কুরআনুল কারিমে ঘোষিত হয়েছে। যারাই আল্লাহর নাযিলকৃত বিধান অনযায়ী ফায়সালা করে না তারাই কাফের। বা সত্য অস্বীকার কারী। আবার জালিম ও ফাসেক হিসেবেও আখ্যায়িত করা হয়েছে অন্যত্র।

সুতরাং আমরা যারা নিজেদেরকে আল্লাহ রাসুলের ( সা: ) অনুগত বা মুসলিম হিসেবে দাবী করি তারা যদি আল্লাহর আদেশ নির্দেশকে অমান্য করে জীবন চালাই, দেশ ও জাতি চালানোর কসরত করি-তারা কি হিসেবে আল্লাহর নিকট গ্রহীত হবো। তা কিন্তু ভাবা হয় না, ভাবি না। তার কথাও চিন্তার মধ্যে আনার চিন্তা ও করি না । কস্মিন কালেও না । তাহলে অবস্থাটা কি দাঁড়াচ্ছে-দাঁড়াচ্ছে। আমরা মুখে যতই বলি আমরা মুসলিম আমরা এক আল্লাহকে একমাত্র মাবুদ মানি, তার রাসুলকে তাঁর বান্দা ও রাসুল হিসেবে স্বীকৃতি দেই। তা কিন্তু একদম ডাহা মিথ্যে দাবীর মধ্যে শামিল হয়ে যাচ্ছে। আধুনিক জাহিলিয়াতের ছোবলে আমরা বিষদগ্ধ এবং দিশেহারা । আমরা বিভ্রান্ত আমরা পথহারা। এটাই সাব্যস্ত হয়ে যাছে। জাহিলিয়াতের কর্ম সকল যুগের একই রকমের। অর্থাৎ জাহিলিয়াতের কর্ম বৈশিষ্ট্যই হচ্ছে মানব জাতিকে আল্লাহর পথ ও মত হতে দূরে রাখা, আল্লাহর আনুগত্য হতে মানুষকে বঞ্চিত করা। যুগে যুগে জাহিলিয়াত নানা ধরনের রূপে ও বৈশিষ্ট্য ধারণ করে মানবজাতিকে পথভ্রষ্ট করে অর্থাৎ মানুষের চিরকালের শত্রু ও অমঙ্গলকারী ইবলিশের চেলা তৈরীতে জাহিলিয়াত বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। আল কুরআনের ঘোষণা আল্লাহ বন্ধু বা পৃষ্ঠপোষক হচ্ছেন ঈমানদার লোকদের। তিনি তাদের অন্ধকার থেকে আলোকের দিকে বের করে নিয়ে আসেন। আর কাফিরদের বন্ধু পৃষ্ঠপোষক হচ্ছে আল্লাহদ্রোহী, সীমালংঘনকারী লোকেরা।  তারাই তাদের বের করে আনে আলো থেকে পুঞ্জীভূত অন্ধকারের দিকে (বাকারা ২৫৭) 

আল্লাহর দ্রোহী সীমালংঘনকারী শক্তির পূজারিরা আধুনিক সভ্যতার ও সংস্কৃতির  নামে  প্রাচীন জাহিলিয়াতের চারিত্র্য ঠিক রেখে  মানুষকে বিভ্রান্ত করে ছাড়ছে। মানুষকে দুনিয়া মুখী করে এ জগতই শেষ আর কোনো  কাল বা পরকাল নেই। পরকাল বাদ দিয়ে শুধু দুনিয়ার স্বার্থে স্বার্থান্ধ হয়ে জীবন পার করতে বিপুল ভাবে উব্ধুদ্ধ করে । আমরাও স্বার্থান্ধ মানুষের মতো হয়ে যাই। আল্লাহকে ভুলে আল্লাহর রাসুলের কথা বেমালুম চেপে রেখে কেবল দুহাতে টু পাইস  কামাইয়ের প্রচন্ধ ধান্ধায়, ভালোমন্দ বাছ বিচার না করে বৈধ অবৈধের ধার না ধরে বিপুল বিত্তের জন্য কেবল দৌড়াতে থাকি। হায়! আসলে আমাদের পেয়েছে–ভূতে -তথা আধুনিক জাহিলিয়াতের গোলকধাঁধা। তানা হলে আমরা এমোন কিংভূতকিমাকার হবো কেনো? আমাদের কি নেই সবই আছে। আল্লাহর কুরআন অবিকৃত অবস্থায় বর্তমান থাকার পরেও-রাসুলে আকরাম সাল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মুখ নি:সৃরিত বাণী এবং তার স্বর্ণময় কর্মকান্ড তার উজ্জলতম জীবনের সকল প্রামান্য ইতিকথা - যা আমাদের হাতের কাছে থাকা স্বত্বেও আমরা দু এমন দুর্ভাগা হলাম কেনো ? আমরা পুরানো জাহিলিয়াতের নতুন সংস্করণ তথাকথিত আধুনিক জাহিলিয়াতের পাল্লায় কোনো পড়ে যাচ্ছি, পাল্লায় পড়ে সবই খুইয়ে ফেলছি কোনো? অথচ আমরা কুরআন পড়ি, অন্তত রমযানে খতমে কুরআন হয়। হাজার হাজার মসজিদে লক্ষ লক্ষ হাফেজের মধুরতম উচ্চারণে আকাশ বাতাস মুখরিত হয় যায়। কিন্তু জাহিলিয়াত নামক বৃক্ষের একটি পাতা ও নরেনা বা ঝরে না। জাহিলিয়াত তার  স্থানে স্থান ুহয়ে আরো দৃঢ় চিত্ত হয় কঠিনতর রূপে ও আকৃতিতে খোদার এ দুনিয়াকে। পুঞ্জীভুত অন্ধকারের দিকে ধাবিত করতে, মানুষকে আল্লাহর আনুগত্য হতে দূরে সরিয়ে নিতে বদ্ধপরিকর হয়। আমরা শুধুই তামাশা দেখি, নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখি। অথচ উচিৎ ছিলো এতো কুরআন খতম হচ্ছে এই কুরআন থেকে শিক্ষা নিয়ে কুরআনের আলোকে দেশ সমাজ ও রাষ্ট্রকে আলোকিত করা। সমাজ রাষ্ট্রকে আল কুরআনের আদর্শে গড়ে তোলা।  কুরআনের আদর্শে সংবিধান প্রণয়ন করা, আইন কানুন  বিধি বিধান ব্যবসা বাণিজ্য শিক্ষা দীক্ষা গ্রহণ পূর্বক একটি কুরআনিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা জাতিকে উপহার দেয়া। কিন্তু সকলি গরল ভেল- আমাদের দ্বারা তা হচ্ছে না। অথচ আমরা রাসুলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লামের উম্মত বলে দাবী করি  কিন্তু তার আদর্শকে বেমালুম ভুলে বসে আছি। তথাকথিত আধুনিকতার  খোলস পড়ে আমরা আধুনিক জাহিলিয়াতের খোলাস পড়ে আধুনিক জহিলিয়াতের চেলা বনে বসে আছি।  এবং ভাবছি কিভাবে সকল সুযোগ সুবিধা কাজে লাগিয়ে উঁচুবনে যাবো এবং আখিরাতের তরী পার হতে অন্যরকম কলাকৌশল প্রয়োগ করে- স্বর্গারোহণ করবো। এতে বেশী ঝামেলা পোহাতে হবে বলে মনে করি না। এই যে অমূলক ও ভ্রান্ত ধারণা এবং আস্থা নিয়ে যারা বসে রয়েছি-এইটা কিন্তু একটা সর্বনাশা পথ ও পন্থা, এবং থেকে মুক্ত হওয়ার একটি মাত্র পথই খোলা সর্বোপরি রয়েছে আমাদের জন্যে এবং গোটা মানব জাতির মুক্তির জন্যে  আর  তা হচ্ছে আমাদেরকে  শুধু আল কুরআনের সৈনিক এবং মূর্ত প্রতীক হতে হবে। শুধু  আল কুলআনের মূর্ত সৈনিক  হলেই চলবে না। আল কুরআনকে জীবনের সকল ক্ষেত্রে বাস্তবায়িত করতে  চেষ্টা চালাতে হবে। আল কুরআনের আদর্শ দ্বারা জীবন জগত গড়তে হবে। আল কুরআনের শরণাপন্ন হতে পারলেই জাহিলিয়াতের সর্বগ্রাসী হস্ত  হতে মুক্ত হওয়া সম্ভব হবে। নচেৎ সবই গোল্লায় যেতে বাধ্য হবে। কারণ আধুনিক জাহিলিয়াত-আধুনিকতার নাম ভাঙ্গিয়ে যেসব চিন্তাধারা এবং কর্মকান্ড মানব জীবনে চালু করেছে- যে সব কিন্তু একদম পশুত্ববাদকেও হার মানিয়ে ছেড়েছে। মানবজীবনকে সর্বাংশে ধ্বংস এবং বিপন্ন করার সকল আয়োজন করেই ছাড়বে। এর থেকে মানব জাতিকে রক্ষা করতে  সক্ষম হয়নি। এবং কখনো হবে  না। এইটে একদম পরীক্ষিত এবং অকাট্যভাবে প্রমাণিত সুতরাং একমাত্র ঐশী আদর্শ ইসলাম ছাড়া মানব বংশকে ধ্বংসের হাত থেকে কেউ রক্ষা করতে পারবে না। পারেনি অতীতের কোনো কালে।  কেননা একমাত্র ইসলামই চির আধুনিক  যা সকল যুগ বা কালের মাপকাঠিতেই ইসলাম সফল এবং উত্তীর্ণ।  জনৈক মনীষীর মতে: আধুনিক জাহিলিয়াত ইতিহাসের অন্যান্য সকল জাহিলিয়াতের তুলনায় অধিক কর্দমাক্ত, অধিক জঘন্য এবং অধিক রূঢ় ও নির্মম। আধুনিক জাহিলিয়াত বর্তমান জগতের সব বাতিল আদর্শ কিংবা সকল ভেলকীবাজির সাথে ওৎপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে। মানব রচিত মতবাদ ও জীবন পদ্ধতির সাথে মিশে দেয়া ইবলিশেরই কাজ মাত্র । 

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ