বৃহস্পতিবার ৩০ নবেম্বর ২০২৩
Online Edition

পাশ্চাত্য বিক্ষুব্ধ মুসলিম মানস

ড. আবদুল লতিফ মাসুম

মানুষের মন একটি জটিল বিষয়। পৃথিবীতে যত মানুষ আছে ততটাই মন আছে। চেহারার দিক দিয়ে মানুষ যেমন একে অপরের থেকে পৃথক তেমনি মনটাও একে অপরের থেকে ভিন্নতর। তবে মোটা দাগে কোন কোন ক্ষেত্রে মানুষের মন এক রকম। এই এক রকম হওয়ার জন্য বিশেষ অবস্থা, বিশেষ কারণ আছে। মনীষী ইবনে খালদুন মানুষের বৈচিত্র্যের মাঝে ঐক্যের সূত্রগুলো নির্নয় করেছেন। তিনি বলেছেন মানস গঠনের কারণগুলো হচ্ছে: বিশ্বাস, আবেগ, খাদ্যাভাস, জীবনধারা, আবহাওয়া, পেশা, ভূমিগঠন, নদী অথবা সাগর সমীপতা প্রভৃতি। একে আসাবিয়াত তত্ত্ব বা গোত্রদর্শন বলা হয়। এমনি এমনিতে নিজের অজান্তে মানুষ একই জীবন ধারায় বেড়ে ওঠে। স্বাভাবিক ভাবেই একই বিশ্বাস ও আবেগকে ধারণ করে। মানুষের অতীত ইতিহাস প্রমাণ দেয় যে, শত শত বছর ধরে এক সাথে বসবাস করে গড়ে উঠেছে গোত্রের ঐক্য। একসাথে মানুষ ঘুরে বেড়াত এক অঞ্চল থেকে অন্য অঞ্চলে। এক সময় মানুষের বেদুইন বা যাযাবর জীবনের অবসান ঘটিয়ে স্থির হয় কোন নির্দিষ্ট অঞ্চলে। এভাবে গড়ে ওঠে রাজা, রাজ্য, রাজধানী এবং বড় বড় সা¤্রাজ্য। আরও পরে রাজার বা স¤্রাটের পতন শেষে প্রজার শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়। জনগণের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়। শোনা যায় প্রজাতন্ত্র, নিয়মতন্ত্র এবং জনগণের মত শব্দাবলি। 

ষোল শতকের দিকে কথিত এক থাকার চেতনা আর মানুষের অধিকার একত্রে হয়ে জাতীয় রাষ্ট্রের সৃষ্টি করে। জাতীয় রাষ্ট্র জাতীয় ঐক্যের সৃষ্টি করে। তবে নিরঙ্কুশ জাতীয় ঐক্যের ধারণা কুহেলিকাময়ই থেকে যায়। রাষ্ট্রের মধ্যে রাষ্ট্র। একটি জাতির অভ্যন্তরে অন্য একটি জাতি বা উপজাত সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়। রাষ্ট্রের কর্তাব্যক্তিরা বিজ্ঞজনদের উপদেশে চেষ্টা করেন: এক মনোভাব তৈরির। একে বলে ‘জাতিগঠন প্রক্রিয়া’। আরও শক্ত এবং আনুষ্ঠানিভাবে বলা যায়, ‘রাষ্ট্র গঠন প্রক্রিয়া’। স্বাভাবিক পরিচয় অথবা আদিষ্ট পরিচয়ের হতাশা ব্যর্থতা, সঙ্কট একটি বহমান বিষয়। জাতীয় রাষ্ট্র সৃষ্টি হতে হতে মানুষের ভূমির উপর নির্ভরশীলতা কমে আসে। কৃষি ভিত্তিক সমাজব্যবস্থা ভেঙে বাণিজ্যভিত্তিক সমাজব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়। নতুন নতুন আবিষ্কার, কারিগরি বিদ্যা এবং উদ্ভাবিত প্রকৌশলের কারণে ইউরোপ বাণিজ্যের নামে প্রায় গোটা পৃথিবীকে দখল করে। তখন বিশাল ও দূরের ঐ সব দখল বজায় রাখার জন্য একই রকম মনোভাবের ধারণা দুর্বল হয়ে পড়ে। ‘জোর যার মুল্লুক তার’ এই অনিয়ম নিয়মে পরিণত হয়। কিন্তু সমস্যা হয় মানুষজনকে নিয়ে। যারা চিরকাল এক সাথে একই ছাতার নিচে থেকেছে তাঁরা নতুন শক্তি প্রয়োগের নীতিকে মেনে নিতে চায় না। এজন্য ঐসব বিরোধী বিদ্রোহী মানুষকে বস করার নতুন বুদ্ধি খাটায় নতুন নতুন দেশ দখলকারীরা। শক্তি প্রয়োগের পাশাপাশি তারা সম্মতি আদায়ের চেষ্টা করে। দখলকারীরা রাজনীতি, অর্থনীতি, শিল্প সংস্কৃতি শাসনব্যবস্থায় এমন সব পরিবর্তন আনে যার ফলে শাসিত জনগণ তাদের অধীন হয়ে পড়ে। অধিনতার পাশাপাশি সুবিধাভোগী স্থায়ী সমর্থক তৈরি করে তারা। এক অপরের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দিয়ে তারা তাদের শাসন শোষণকে দীর্ঘায়িত করার চেষ্টা করে। প্রথমত: ইউরোপের ইংরেজ, ফরাসী, স্পেনিশ, পর্তুগীজ এবং ওলন্দাজরা এবং অবশেষে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ সমস্ত পাশ্চাত্য অধীন ভূখন্ডে ঐ সব নীতিমালার প্রতিফলন ঘটায়।

মুসলিম মানসের পাশ্চাত্যকরণ

নীতিমালার ঐ অনুসরণকে রাষ্ট্র বিজ্ঞানের ভাষায় বলে রাজনৈতিক সামাজিকীকরণ। এর মূল উদ্দেশ্য সমাজের প্রচলিত বিশ্বাস মূল্যবোধের পরিবর্তন। কর্তৃত্ব বা রাষ্ট্র নাগরিক সাধারণের জন্য যে মানস তৈরি করতে চায় কথিত রাজনৈতিক সামাজিকীকরণের মাধ্যমে সে আদর্শের শিক্ষা, দীক্ষা এবং প্রেরণা সৃষ্টি করে। ইউরোপীয় সাম্রাজ্যবাদ প্রায় সমগ্র মুসলিম বিশ্বে তাদের কর্তৃত্বে সক্ষম হয়। তখনকার রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্ব স্বাধীনতা রক্ষায় ব্যর্থ হলেও সামাজিক ও ধর্মীয় নেতৃত্ব প্রতিবাদ জানায়। প্রতিরোধ গড়ে তোলে। উদাহরণ হিসেবে আমাদের এতদ্বাঞ্চলের কথা বলা যায়। ইংরেজরা গোটা ভারত দখল করলেও মুসলিম মানস দখলে নিতে পারেনি। ১৭৯৩ সালে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত এবং ১৮৩৫ সালে ফার্সীর পরিবর্তে ইংরেজী রাষ্ট্রভাষা করা হলে রাজ্যহীন মুসলমানরা আরও বিত্তহীন এবং মর্যাদাহীন হয়ে পড়ে। এ অবস্থায় দেশের আলেম শ্রেণী প্রতিরোধের সূচনা করেন। আলেমরা ফতোয়া দেন যেহেতু ‘দারুল ইসলাম’: মুসলমানদের দেশ দারুল হারব: বিধর্মীদের দেশে পরিণত হয়েছে সুতরাং ইংরেজদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা প্রতিটি ভারতীয় মুসলমানের জন্য ফরজ। আলেমরা ইংরেজী শিক্ষার বিরুদ্ধেও অবস্থান গ্রহণ করেন। পাশ্চাত্য সংস্কৃতিকেও তারা চ্যালেঞ্জ করেন। বালাকোট এবং ১৮৫৭ সালের প্রথম আযাদী সংগ্রামে এরা অকাতরে রক্ত ঢেলে দেয়। তাদের এসব ত্যাগ তিতিক্ষা আন্দোলন সংগ্রামের প্রমাণ শহীদ সৈয়দ আহমেদ বেরলভী, সৈয়দ নিসার আলী তিতুমীর, ফকির মজনু শাহ এবং হাজী শরিয়তুল্লাহ প্রমুখ। মুসলমানদের সম্মুখ যুদ্ধের ক্রমাগত পরাজয় যখন তাদের নিদারুন হতাশায় নিক্ষেপ করে তখন মুসলমানদের একটি অগ্রসর অংশ আপোসকামীতার পথ বেছে নেয়। তখনকার সময় ও সমাজের প্রেক্ষিতে আলেমদের রক্তদান যেমন ছিল গৌরবের তেমনি মুসলিম সমাজকে রোষাণল থেকে রক্ষার জন্য আপোসকামিতার নীতি ছিল বাস্তবসম্মত। এদের মধ্যে অগ্রসর ছিলেন: সৈয়দ আহমদ খান, নওয়াব আবুদল লতিফ, হেকিম আজমল খান, ব্যারিস্টার এ রসুল এবং সৈয়দ আমীর আলী। পরবর্তীকালের নিয়মতান্ত্রিক রাজনৈতিক নেতৃত্ব ছিল এদেরই ধারাবাহিকতার উত্তরাধীকার। এখানে অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে উল্লেখ করতে হয় যে আপোসকামী ঐ অংশ ইংরেজদের প্রতি সহযোগিতার হাত সম্প্রসারণ করলেও তারা ছিলেন ইসলামী আদর্শের প্রতি অসম্ভব অনুগত এবং অনড় নিষ্ঠাবান। কিন্তু তাদের এই আদর্শ বা রক্ষণশীলতা আধুনিকায়ন এবং সমাজ প্রগতির মুখে খড়কুটোর মতই ভেসে যায়। যতই সময় অতিক্রান্ত হতে থাকে ততই পাশ্চাত্য প্রভাব প্রতিপত্তি সুযোগ সুবিধা লোভ লালসা শিক্ষিত মুসলিম জনগোষ্ঠীকে ইসলামী আদর্শ থেকে দূরে ঠেলে দেয়। পাকিস্তান আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ যেমন মহাম্মদ আলী জিন্নাহ, লিয়াকত আলী খান, চৌধুরী মহাম্মদ আলী, চৌধুরী খালেকুজ্জামান, শেরেবাংলা একে ফজলুল হক এবং হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী কেউই সর্বাত্মকভাবে ইসলামী রাষ্ট্র বা আদর্শের অনুসারী ছিলেন না। সৈয়দ আহমেদকে যদি পাশ্চাত্যমুখী প্রথম প্রজন্ম বলতে হয় তাহলে এদেরকে বলতে হয় দ্বিতীয় প্রজন্ম। এরপর গঙ্গাযমুনা, সিন্ধু, মেঘনায় অনেক পানি প্রবাহিত হয়েছে। ভারত বিভক্তির পর স্বাধীনতার বিষয়টি দিয়েছে আপাতত: স্বস্তি। এর পরের প্রজন্ম আক্রান্ত হয়েছে মতাদর্শগত বিভেদে। তখনকার সময় পাশ্চাত্যের শিক্ষা সভ্যতা যেমন গণতন্ত্রের শিক্ষা দিয়েছে অপরদিকে সমাজতন্ত্রের মত আর একটি পাশ্চাত্য রেডিকেল মতাদর্শ বিপুল সমাদরে আকৃষ্ট করেছে যুব শ্রেণীকে। তাই উচ্চারিত হয়েছে: “ইয়ে আযাদী ঝুটা হ্যায় লাখ ইনসান ভূখা হয়।” এই সেদিন সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের আগ পর্যন্ত সমাজতন্ত্রের শ্লোগান জাগারুক ছিল। অনেকে বলছেন: সমাজতন্ত্রের আবেদন এখনও নিঃশেষ হয়ে যায়নি। অপরদিকে ইসলামকে রাষ্ট্র ব্যবস্থায় প্রতিষ্ঠার সংগ্রামও বিগত শাতাব্দীর শেষদিক থেকে লক্ষ্যণীয় হয়ে ওঠে। ১৯৭৯ সালে ইরানে ইসলামী বিপ্লব বিগত শতাব্দীর  সবচেয়ে আলোচিত ঘটনার একটি। এর মাধ্যমে পাশ্চাত্যে ইসলাম সম্পর্কে যে নেতিবাচক ঢেউ এর সৃষ্টি হয় তা ইউরোপ আমেরিকায় ইতিবাচক প্রভাব সৃষ্টি করে। এই উত্থিত ঢেউকে প্রতিহত করবার জন্যই ৯/১১ এর মর্মান্তিক ঘটনা ঘটানো হয়েছে বলে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানেরা বিশ্বাস করে। ৯/১১ এর পরবর্তীকালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক আফগানিস্তানে অন্যায় হস্তক্ষেপ এবং ইরাকে সাদ্দাম স্বৈরাচার হটানোর নামে কর্যত: দেশটি দখলের ঘটনা মুসলিম বিশ্বকে বিচলিত করে তোলে। উল্লেখ করার মত বিষয় এই যে ঐতিহাসিক আমলে কথিত ইসলাম বিরোধী সেই ইউরোপীয় শক্তি ব্রিটেন, ফ্রান্স, জার্মানী, রাশিয়া সকলেই কমবেশি এসব কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করে। কয়েকটি মুসলিম রাষ্ট্র যাদের শাসকরা পাশ্চাত্যের দালাল বলে কথিত তারাও ঐসব অপারেশনে অংশগ্রহণ করে।

মুসলিম বিশ্বে সৃষ্ট ব্যর্থতা

উপরোক্ত আলোচনা থেকে সম্ভবত এটা স্পষ্ট হয়েছে যে মুমলিম বিশ্বে পাশ্চাত্য তাদের উদ্দেশ্যমূলক কার্যক্রমের মাধ্যমে একটি স্থায়ী দালাল শ্রেণী সৃষ্টিতে সক্ষম হয়েছে। ১৭৫৭ সালের ভাগ্য বিপর্যয় থেকে ১৯৪৭ সালে ইংরেজ অবমুক্তি পর্যন্ত আমরা যদি তাদের গৃহীত রাজনৈতিক অর্থনৈতিক সামাজিক প্রশাসনিক কার্যক্রম পর্যালোচনা করি তাহলে দেখবো দুধরনের দ্বৈততা মুসলিম মানসে জেকে বসেছে। প্রথমত এবং প্রধানত ব্রিটিশ সরকার কর্তৃক গৃহীত কার্যব্যস্থাদী যার ফলে নাগরিক সাধারণ্যে বিভক্তি এবং মুসলিম সাধারণ মানসে উদ্দেশ্যমূলক ভাবে দ্বৈধতার সৃষ্টি হয়েছে। দ্বিতীয়ত এত শত বছর (ভারতের ক্ষেত্রে ১৯০ বছর) গোলামী আর তাদের শাসনতান্ত্রিক রাজনৈতিক প্রথা পদ্ধতি শাসন তোষণের নীতি সৃষ্ট উপনেবিশিক মানসিকতা। মোঘল ভারতের মানুষেরা একটি কেন্দ্র শাসিত রাধাধিরাজের অনুগত ছিল। তাদের স্বকীয় শাসন পদ্ধতি ছিল। কেন্দ্র থেকে গ্রাম পর্যন্ত প্রসারিত ছিল তাদের সুশাসন ব্যবস্থা। আইন-ই-আকবরীতে পন্ডিত আবুল ফজল এর নৈপূণ্যময় বর্ণনা দিয়েছেন। ভারতে ব্রিটিশ শাসন আমাদের শাসনের জন্য তাদের রাজনৈতিক পদ্ধতি আমদানি করেছে। ১৮৫৮ সালে মহারানী ভিক্টোরিয়া কর্তৃক স্বহস্তে ভারতের শাসনভার গ্রহণকাল থেকে ১৯৪৭ সালে ভারত বিভাগ আইন পর্যন্ত যদি আমরা বিশ্লেষণ করি তাহলে দেখবো শাসন সংস্কারগুলো আমাদের ‘অধীনতামূলক মিত্রতা’ শিখিয়েছে। ক্রমান্বয়ে ১৮৬১, ১৯০৯, ১৯১৯ এবং ১৯৩৫ সালের শাসন সংস্কার আমাদের ব্রিটেনে প্রচলিত ওয়েস্ট মিনিস্টার সিস্টেম বা সংসদীয় রাজনৈতিক পদ্ধতির প্রতি আমাদের অভ্যস্ত করেছে। অভ্যস্ত এ নীতির কারণে উপমহাদেশের স্বাধীনতা প্রাপ্ত সকল দেশই ঐ পদ্ধতিকে উৎকৃষ্ট জ্ঞান করেছে। তাদের রাজনৈতিক দল ব্যবস্থা আমাদের রাজনৈতিক সমাধানের জন্য মোক্ষম বিবেচিত হয়েছে। তাই প্রাচ্যের লি কোয়ান ইউ যখন পাশ্চাত্যের গণতন্ত্রকে চ্যালেঞ্জ করেন তখন বিস্মিত হওয়ার কিছু থাকে না।

১৮৮৫ সালে তাদের একজন অবসরপ্রাপ্ত আই সি এফ কর্মকর্তা লর্ড হিউম আমাদের মুক্তির জন্য জাতীয় কংগ্রেস প্রতিষ্ঠা করেছিল। ব্রিটিশ ভারতের রাষ্ট্র ভাষা বিবেচনায় ১৮৩৫ সালে ফার্সিকে বাতিল করে ইংরেজী আরোপ করে। এ ধরনের কাজ তারা এদেশেই করেছে তা নয়। যেখানে যেখানে তাদের কর্তৃত্ব ও রাজত্ব ছিল সর্বত্রই ইংরেজী বাধ্যতামূলক করেছে। তাই আজ ইংরেজী স্বীকৃত আন্তর্জাতিক ভাষা। মানবজাতির যোগাযোগের সাধারণ মাধ্যম। ইংরেজী যে কারণে প্রথম আন্তর্জাতিক ভাষা সে কারণেই ফারসী হচ্ছে দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক ভাষা। এটি ভাষার কোন কৃতিত্ব নয়। বরং গোলাম বানানোর পারঙ্গমতার সুফল। এই পারঙ্গমতার সুফল গোটা শিক্ষা ব্যবস্থায় পরিব্যপ্ত। ভারতে ব্রিটিশ শিক্ষা ব্যবস্থার প্রবর্তক লর্ড টমাস সেকালে ১৮৩৫ সালে লিখেছিলেন: “আমরা এখনই এমন একটি গোষ্ঠী সৃষ্টির সর্বতো চেষ্টা করবো যারা আমাদের এবং শাসিত লক্ষ সাধারণ মানুষের মধ্যে দোভাষীর কাজ করবে। তার হবে সেই লোকজন যারা রং এ রক্তে হবে ভারতীয় কিন্তু ব্যবহার, মতামত, নৈতিকতা এবং বুদ্ধিমত্তায় হবে ইংরেজ।” (উদ্ধৃত সেলিম মনসুর: ২০০৮:১০) ভারত থেকে ইংরেজদের পাততাড়ি গোটানোর ৬৫ বছর পরেও ভারতীয় ইংরেজদের উপস্থিতি এ উপমহাদেশের রাষ্ট্রে রাষ্ট্রে রন্ধ্রে রন্ধ্রে অনুভূত হচ্ছে। মুসলমানদের জন্য এটি অধিকতর বিব্রতকর এই জন্য যে ইসলাম তাদেরকে একটি নির্দিষ্ট জীবন দর্শন এবং বিশিষ্ট সংস্কৃতি দিয়েছে। তাদের স্বকীয়তার তীব্রতার জন্য আজকের সভ্যতার সঙ্কটের কথা বলা হচ্ছে। মুসলমানরা গোটা পৃথিবী ব্যাপী পাশ্চাত্য সৃষ্ট সঙ্কট এবং নিজস্ব স্বকীয়তার দ্বিধা-দ্বন্দ্বে গভীরভাবে নিমজ্জিত। তাদের ঐ দ্বৈধতা তাদের দৃশ্যমান দেহাবয়ব, পোশাক আসাক এবং খাদ্যাভাসে স্পষ্ট। মুসলিম নারী হেজাব পরবে কি পরবে না এ রকম একটু সামান্য বিষয় অসামান্য উত্তপ্ত পাশ্চাত্য দুনিয়া।

পাশ্চাত্য ও মুসলিম বিশ্ব

পাশ্চাত্য মানে ইউরোপ আমেরিকা প্রভাবিত বিশ্ব। এ কারণে প্রাচ্যের অস্ট্রেলিয়া ভৌগলিকভাবে পূর্ব গোলার্ধে অবস্থি হলেও পাশ্চাত্য সমাজের অন্তর্গত। ভাগ্য অন্বেষায়, ব্যবসায় বাণিজ্য এবং অবশেষে প্রভাব বিস্তারের প্রতিযোগিতায় পাশ্চাত্য শক্তি প্রায় সমগ্র প্রাচ্যকে গ্রাস করে। মধ্যযুগ থেকে ঠা-াযুদ্ধের অবশেষ অর্থাৎ সোভিয়েত ইউনিয়নের ভাঙন এবং বার্লিন দেওয়ালের পতন পর্যন্ত এ গ্রাস কমবেশী অব্যাহত থাকে। ২০০৪ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নউইয়র্কে টুইন টাওয়ার ধ্বংসের পর ঐ গ্রাস নতুন নামে নতুন রূপে আবির্ভূত হয়।

পাশ্চাত্যের ঐ বহুমুখী গ্রাসের ফলে মারত্মকভাবে সর্বনাশের সম্মুখীন হয় মুসলিম বিশ্ব।ইসলামের সূচনা থেকেই ইউরোপ এবং মুসলিম বিশ্বের পারস্পরিক শক্রতা, প্রতিদ্বন্দ্বিতা, প্রতিযোগিতা একটি ঐতিহাসিক সত্য। ইসলামের আগে খ্রীষ্ট ধর্ম ছিল আরব জাহানে প্রভাবশালী ধর্ম। ইসলামের বিকাশ এশিয়ার সমগ্র পশ্চিম অঞ্চল এবং আফ্রিকার সমগ্র উত্তর  অংশে ছড়িয়ে পড়ার ফলে খ্রীষ্ট প্রাধান্যশীল ইউরোপের সাথে মুসলমানদের সংঘাত অনিবার্য হয়ে ওঠে। পৃথিবীর চলমান অন্য ধর্ম বৌদ্ধ, কনফুসিয়াসইজম এবং হিন্দু ধর্ম অনুসারী অঞ্চলগুলোর সাথে হাজার মাইলের ব্যবধান হেতু ইসলামের প্রাথমিক যুগে কোন দ্বন্দ্ব সংঘাতের কারণ ছিল না। মুসলিম বাহিনী কর্তৃক ৭১১ সালে স্পেন জয় এবং ১৬৮৩ সালে তুর্কী বাহিনী ভিয়েনা পর্যন্ত দখল করে নিলে ইউরোপীয় শক্তি অস্তিত্বের শঙ্কট অনুভব করে। ৬৩৮ সালে খ্রীষ্টানদের পবিত্রস্থান যীশুখ্রীষ্টের জন্মভূমি জেরুজালেম মুসলমানদের করতলগত হলে খ্রীষ্ট মুসলিম মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধ তীব্র হয়। পরবর্তীকালে গোটা মধ্যযুগ ধরে অর্থাৎ ১০৯৬ থেকে ১২৯১ পর্যন্ত খ্রীষ্টান ও মুসলমানদের মধ্যে ধর্মযুদ্ধ সংগঠিত হয়। মুসলমানরা বলে ‘জেহাদ’ আর খ্রীষ্টানরা বলে ‘ক্রসেড’। এই জেহাদ আর ক্রসেড দ্বারা সভ্যতা এতটাই প্রভাবিত হয়েছে যে এই একবিংশ শতাব্দীতে দাড়িয়ে একজন ওসামা বিন লাদেন ‘জেহাদ’ ঘোষণা করছেন এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট বুশ ‘ক্রসেড’  উচ্চারণ করছেন। মুসলিম বিশ্বের মধ্যযুগের অবিশ্বরনীয় মিশরের ফাতেমীয় শাসক কুর্দি গাজী সালাহউদ্দিন এবং বৃটেনের সম্রাট রিচার্ড তাদের মহত্বের দ্বারা ধর্মযুদ্ধের আপাতত: অবসান ঘটালেও চির বহিৃমান সেই যুদ্ধের অবসান আজও হয়নি। ১৬৮৩ সালে সম্মিলিত ইউরোপীয় বাহিনীর কাছে তুর্কীদের যে পিছু হটা শুরু হয়েছিল সেখান থেকে ১৯১৯ সালের ভার্সাই চুক্তির মাধ্যমে তুর্কী তথা সমগ্র মুসলিম বিশ্বের সর্বাত্মক পরজয় নিশ্চিত হয়। ঐ সময়ে মরক্কো থেকে ইন্দোনেশিয়া পর্যন্ত এক ইঞ্চি ভূমিও মুসলমানদের দখলে ছিল না যা সর্বতোভাবে স্বাধীন ও সার্বভৌম ছিল।

মুসলিম বিশ্বের বিভক্ত অভ্যুদয়

প্রথম মহাযুদ্ধের অনেক আগে পরস্পর বিচ্ছিন্ন শতধা বিভক্ত মুসলিম বিশ্ব ক্রমাগতভাবে ইউরোপীয় শক্তির পদানত হয়। ১৭৫৭ সালে পলাশীর যুদ্ধে স্বাধীনতার সূর্য অস্তমিত হয়। ১৮৫৭ সালে মুঘলদের শেষ উত্তরাধীকারী হতভাগ্য বাহাদুর শাহ জফরের ভাগ্য বিপর্যয় ঘটে। ইংরেজরা সমগ্র ভারত দখল করে নেয়। ১৬০২ সালে ইন্দোনেশিয়া দখল করে অপর ইউরোপীয় শক্তি ওলন্দাজ বা ডাচরা। ফরাসীরা  সমগ্র ইন্দোচীন দখল করে নেয়। ভারত দখলের সমসাময়িককালে ইংরেজরা মালয়েশিয়া দখল করে নেয়। পূর্ব আফ্রিকা, কেনিয়া, তানজানিয়া, মালাগাছি, উগান্ডা, দক্ষিণ আফ্রিকায় ব্রিটিশ রাজত্ব কায়েম হয়। পশ্চিম আফ্রিকা এবং উত্তর আফ্রিকার সমগ্র মুসলিম দেশগুলো ফরাসী সাম্রাজ্যবাদের কবলে চলে যায়। প্রথম মহাযুদ্ধ অবশেষে স্বাক্ষরিত ভার্সাই চুক্তি মোতাবেক তুর্কী ওসমানীয়া সাম্রাজ্য ভাগ বাটোয়ারা করে নেয় ইউরোপী মিত্র শক্তি। পাশ্চাত্য তাদের সুবিধে মত মুমলিম বিশ্বকে ছিন্ন বিচ্ছিন্ন করে দেয়। ওসমানীয় সাম্রাজ্যের প্রদশেগুলো হয়ে যায় রাষ্ট্র। লেবানন নামে নতুন খ্রীষ্ট প্রবাবিত রাষ্ট্রের সৃষ্টি হয়। কুয়েত, কাতার, ওমান এমন ছোট ছোট রাষ্ট্রের সৃষ্টি করে  পাশ্চাত্যের প্রভাব বলয় প্রলম্বিত এবং সম্পদ স্বার্থ নিশ্চিত করা হয়। অপরদিকে তুর্কী বীর কামাল পাশা তুরস্ক রাষ্ট্রের অস্তিত্ব বজায় রাখতে সামর্থ হয়। তাঁর এই সামর্থ মুমলিম বিশ্বর জন্য আশির্বাদ না হয়ে অভিশাপ হয়ে দেখা দেয়। কামাল পাশা তুর্কীদের ভাগ্য বিপর্যয়ের জন্য ‘ইসলাম’কে দায়ী করেন। ১৯২৩ সালে চূড়ান্তভাবে মুসলিম বিশ্বের নাম নেহাত ঐক্যের প্রতীক খেলাফতের অবলুপ্ত ঘোষণা করেন। তুর্কী ভাষায় কুরআন পড়েতে বাধ্য করেন। ইসলামী সংস্কৃতির সমূলে উৎপাটন করেন। ইসলামী পোষাকের পরিবর্তে ইউরোপীয় পোশাক পরিধানে বাধ্য করেন। সেনাবাহিনী থেকে ইসলামী আদর্শ এবং চেতনার বিনাশ সাধন করেন। ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর ব্যর্থতার দায়ভার তিনি ইসলামের উপর চাপিয়ে দেন। ইউরোপীয়দের মতো হতে পারলেই জাতে উঠবেন ধারণা করলেও, ন্যাটোর সদস্য হিসেবে পাশ্চাত্যের বরকন্দাজ হলেও আজও ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য পায়নি তুরস্ক। সেীভাগ্যের কথা আরব বসন্তের অনেক আগেই সেখানে ইসলামী শক্তির আবির্ভাব ঘটেছে। কামাল পাশা কর্তৃক নিজ আদর্শ বিসর্জন এবং খ্রীষ্টান আদর্শ গ্রহণ করায় দৃশ্যত: খুশী হয় পশ্চিমা বিশ্ব। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ অবসানে ইউরোপীয় শক্তি অবসানে যে বিভক্ত প্রদেশ গুলো জাতীয় রাষ্ট্র রূপে আবির্ভাব ঘটলেও কামাল পাশার ভূত তাদের আষ্টে পিষ্টে গ্রাস করে। বিভক্ত ভূখ-ের সাথে সাথে আদর্শের বিভক্তি পাশ্চাত্য বনাম ইসলমী আদর্শের দ্বন্দ্ব হযে উঠে মুসলিম বিশ্বের সবচেয়ে সংবেদনশীল সমস্যা।উদাহরণ হিসেবে বল যায় ভারত চিড়ে পাকিস্তানের অভ্যুদয় হলেও সেখানে পূর্বোক্ত দ্বৈদতা আক্রান্ত মুসলমানদের প্রাধান্য লক্ষ্য করা যায়। পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠাতা জিন্নাহ ব্যক্তিগতভাবে সেক্যুলার ছিলেন। একটি ইসলামী রাষ্ট্রের সংবিধান রচনায়  বছর ব্যয়িত হয়। ইসলাম ও মুসলমানের নামে অর্জিত পাকিস্তানের পূর্বাঞ্চলে প্রথমত: বৈষম্য, শোষণ এবং অবশেষে গণহত্যা চালিয়েও ষেশ রক্ষা হয়নি। আরব বিশ্বে মরক্কো, জর্দান, সৌদি আরব, কুয়েত কাতারের মত রাজা বাদশা আমীর ওমরাহ শাসিত রাষ্ট্রের আবির্ভাব ঘটে। সেখানের শাসকরা ইসলাম বা শরীয়া অনুযায়ী দেশ শাসনে অস্বীকৃত হন। মিশর, লিবিয়া, আলজেরিয়া, নাইজেরিয়া, ইরান, সুদান, সিরিয়া প্রভৃতি দেশে প্রথমদিকে গণতন্ত্রের অনুসরণ অুনভূত হলেও পরে সামরিকতন্ত্র কায়েম হয়। ইরানে একদল শাহানশাহ জেকে বসেন। ইন্দোনেশিয়ায় জাতির পিতা সুকর্ন সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার মাঝপথে পাশ্চাত্যপন্থী সামরিক অভ্যুত্থানে গৃহবন্দী হয়ে পড়েন। আফ্রিকার নব্য স্বাধীন  মুসলিম দেশসমূহে সমাজতন্ত্র অথবা গণতন্ত্রের নামে প্রকারান্তরে স্বৈরতন্ত্র কায়েম হয়। প্রতিষ্ঠাকালীন সময়ে একমাত্র মালয়েশিয়া এবং পরবর্তীকালে পাকিস্তান থেকে রক্তের বিনিময়ে স্বাধীনতা অর্জনকারী বাংলাদেশে গণতন্ত্রে অনুশীলন চলছে। ১৯৯০ সালে উত্থিত ‘তৃতীয় তরঙ্গ’ অর্থাৎ এস.পি হান্টিংটন কথিত থার্ডওয়েডের কারণে পাকিস্তান, বাংলাদেশ, ইন্দোনেশিয়ায় গণতন্ত্রের উন্নয়ন ঘটেছে। সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নভুক্ত কাজাকিস্তান, তাজিকিস্তান, তর্কমেনিস্তান, উজবেকিস্তান, কিরগিজিস্তান প্রভৃতি রাষ্ট্রে পূর্ব অনুসৃত সমাজতন্ত্র এবং বর্তমান কাঙ্খিত গণতন্ত্রের  সংঘাতময় সময়ের আড়ালে কার্যত: স্বৈরতন্ত্র কায়েম রয়েছে। অতি সাম্প্রতিক আরব বসন্ত অনেক কার্যকর সময় অতিক্রম করে তিউনিশিয়া, লিবিয়া, মিশর, ইয়েমেনে নিয়মতান্ত্রিক গণতন্ত্রের অভিপ্রায় মরক্কো, জর্দান, কুয়েত কাতারে কমবেশী পরিবর্তন এসেছে। ইরাক আফগানিস্তান এখনও আমেরিকার দখলে রয়েছে। পাশ্চাত্য সেখানে তাদের কাক্সিক্ষত গণতন্ত্র কায়েম করার জন্য নিরলস (!) রক্ত ঝরিয়ে যাচ্ছে। সিরিয়ায় ২২ মাস যাবৎ গনতন্ত্রের সংগ্রাম চলছে। ষাট হাজার মানুষ স্বৈরাচার বিরোধী সংগ্রামে আত্মহুতি দিয়েছে। ইরানে তাদের নিজস্ব ধ্যান ধারণা অনুযায়ী গণতন্ত্র ক্রিয়াশীল রয়েছে। বর্তমান সময়ে পাশ্চাত্যের সাথে সবচেয়ে খারাপ সম্পর্ক ইরানের। ইরান যদি পারমানবিক শক্তি অর্জন করে তাহলে পাশ্চাত্যের সর্বনাশ (!) সাধিত হবে। অপরদিকে ইসরাইল পারমানবিক বোমা তার দখলে রাখলেও বিশ্বের  জন্য তা হুমকী স্বরূপ নয়। পাশ্চাত্যের তরফ থেকে এধরনের দ্বৈত নীতি এবং নীতি বহির্ভূত অবস্থান মুসলিম বিশ্বকে ক্ষুব্ধ করে তুলেছে।

পাশ্চাত্যের উদ্দেশ্যমূলক প্রচারণা

ইসলামের প্রচার প্রসার এবং প্রতিষ্ঠা যতই অগ্রগামী ততই বিক্ষুব্ধ পাশ্চাত্য মানস। ১৯৭৯ সালে ইরানের সফল বিপ্লবের পর পরই সালমান রুশদী কুরআনকে স্যাটানিক ভার্সেস বা শয়তানের পাদবলি বলে গাল দেন। ওয়াশিংটন, লন্ডন, প্যারিস বন সর্বত্রই প্রতিবছর প্রকাশিত অসংখ্য ইসলাম বিরোধী গ্রন্থ। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ইহুদী অর্থায়ন ও আনুকূল্য রয়েছে। অহরহ ইউরোপের দেশগুলোতে সংবাদপত্রে প্রকাশিত হচ্ছে মহাম্মদ (স:) এবং ইসলামকে রঙ্গ ব্যাঙ্গ করে অসংখ্য কার্টুন। নির্মিত হচ্ছে আপত্তিকর চলচ্চিত্র। এমন একটি মার্কিন চলচ্চিত্রের কারণে জ্বলে উঠে সমগ্র মুমলিম বিশ্ব।লিবিয়ায় মার্কিন রাষ্ট্রদূতের দু:খজনক মৃত্যুসহ প্রাণ হারায় শত শত মানুষ। জীবন সহায় সম্পদের এই বিপুল ক্ষয়ক্ষতি শুধুমাত্র তাদের হিংসা প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার জন্য। তারা মুসলমান নিধনের জন্য যে জুলিয়াম চ্যালেঞ্জ তৈরী করেছে তা তাদেরেই মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। 

উপসংহার

তবে আনন্দের কথা ফেরাউনের বিপরীতে মূসা আছেন। নমরুদের বিপরীতে ইব্রাহিম আছেন। আবু জাহেলের পরিবর্তে ওমর ওসমান আছেন। একজন হান্টিংটন যখন ক্লাশ অব সিভিলাইজেশন দেখেন তখন একজন জন এস পিজোটো, ‘ইসলামিক থ্রেট: মিথ অর রিয়ালিটি’ নিয়ে লিখে সত্যের পক্ষে কলম ধারণ করেন। তিনি যুক্তি দেখান যে ইসলামের চরমপন্থী অভিপ্রকাশটা ইসলামী বিশ্বের প্রতি যুক্তরাষ্ট্র ও পাশ্চাত্যের অনুসৃত নীতির প্রতিক্রিয়া মাত্র। মুসলমান মানেই সন্ত্রাসী, কুরআনের অন্তর্নিহিত আবেদনই সন্ত্রাসবাদ এ ধরনের বক্তব্যকে তিনি তার সর্বশেষ গ্রন্থ: ‘দ্য ফিউচার অব ইসলাম’ গ্রন্থে চ্যালেঞ্জ করেছেন। বিশ্ব বিশ্রুত পন্ডিত নোয়াম চমস্কী: ‘হেজিমনি আর সারভাইভাল’ গ্রন্থে মুসলিম বিশ্ব সম্পর্কে নেতিবাচক কার্যক্রম সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্রকে সতর্ক করেন। এডওয়ার্ড লুইসও মুসলমানদের সাথে শত শত বছরের বৈরিতা মনে করিয়ে দিয়ে প্রশ্ন করেছেন: ‘হোয়াইট ওয়েন্ট রং’! মুসলিম মানস কেন সংক্ষুব্ধ তিনি তার উত্তর খোজার চেষ্টা করেছেন। পৃথিবীতে যে প্রান্তেই থাকুক একজন ভাল মুসলমান সন্ত্রাসী হতে পারেন না। এদেশের কিছু পন্ডিত প্রবর পাশ্চাত্যের বিরোধীদের সুরে  সুর মিলিয়ে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে নিজ দেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্রের তালিকায় তুলতে চান। সত্যি কথাটি বলে সকল রাষ্ট্র প্রমাণের পক্ষেও বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চা আছে। সাবেক হলিডে সম্পদক এ,জেড.এম এনায়েতউল্লাহ খান জীবনের শেষ নিবন্ধটি এজন্যই লিখেছিলেন। দেশের প্রগতিশীল প্রবীন বুদ্ধিজীবী বদরুদ্দিন ওমর, ফরহাদ মাজহার এবং হায়দার আকবর আলী খান রনো প্রমুখ বুদ্ধিজীবী পাশ্চাত্য আগ্রাসনের বিরুদ্ধে স্বদেশের সার্বভৌমত্বের স্বার্থে যথার্থ ভূমিকা পালন করেছেন।

 

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ