মাতৃ ভাষা বাংলা ভাষা খোদার সেরা দান
স্টাফ রিপোর্টার : ভাষার মাস ফেব্রুয়ারির চতুর্থ দিন আজ শনিবার। ১৯৫২ সালের ৪ ফেব্রুয়ারির ঘটনার সংক্ষিপ্ত চিত্র তুলে ধরে উইকিপিডিয়ায় বলা হয়েছে, পূর্ব সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্ররা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে এসে সমবেত হয়। সমাবেশ থেকে আরবি লিপিতে বাংলা লেখার প্রস্তাবের প্রতিবাদ এবং বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে গ্রহণের দাবি জানানো হয়। ছাত্ররা তাদের সমাবেশ শেষে এক বিশাল বিক্ষোভ মিছিল বের করে। ছাত্ররা বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা ঘোষণার দাবিতে তখনকার সময়ের সবচেয়ে বড় একটি মিছিল নিয়ে রাজপথ প্রদক্ষিণ করে।
এদিন ঢাকা শহরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো ছিল উত্তাল-আন্দোলনমুখর। সেদিন সর্বদলীয় কর্মপরিষদের পূর্ব সিদ্ধান্ত অনুযায়ী রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে ঢাকা শহরের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রী মিছিল করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে জমায়েত হয়ে এক সভার আয়োজন করে। মোস্তফা কামালের ‘ভাষা আন্দোলন : সাতচল্লিশ থেকে বায়ান্ন’ গ্রন্থে উল্লেখ করা হয়, “ওই দিন বিকেলে কর্মপরিষদের উদ্যোগে এক জনসভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় জননেতা মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী, অধ্যাপক (প্রিন্সিপাল) আবুল কাসেম এবং অন্যান্য রাজনৈতিক ও ছাত্র নেতাগণ ক্ষমতাসীন সরকারের চুক্তি ও প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের নিন্দা করেন এবং বাংলা ভাষার দাবি সুপ্রতিষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত অবিরাম সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন। আরো ঘোষণা করা হয়, ২১শে ফেব্রুয়ারি অন্যতম রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে প্রদেশব্যাপী সাধারণ ধর্মঘট পালিত হবে।
সেদিন বিকেলে সুপ্রিম কোর্ট বার লাইব্রেরি হলে ঢাকার ছাত্র, বুদ্ধিজীবী, রাজনৈতিক নেতা ও সংস্কৃতিবিদদের এক বৈঠকে রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন পরিচালনার জন্য ‘সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা কর্মপরিষদ’ গঠিত হয়। কাজী গোলাম মাহবুবকে এই পরিষদের আহ্বায়ক নিযুক্ত করা হয়। এ প্রসঙ্গে দৈনিক আজাদের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, “৩১ জানুয়ারি সুপ্রিমকোর্ট বার লাইব্রেরি হলে মওলানা ভাসানীর সভাপতিত্বে রাষ্ট্রভাষা সমস্যা পর্যালোচনার জন্য যে কর্মী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় সেখানে কাজী গোলাম মাহবুবকে আহ্বায়ক মনোনীত করে ৪০ সদস্যের একটি সর্বদলীয় কর্মপরিষদ গঠিত হয়। সভায় আবুল হাশিম, খালেক নেওয়াজ খান, হামিদুল হক চৌধুরী, অলি আহাদ, আব্দুল মতিন প্রমুখ বক্তৃতা করেন। সেখানে সিদ্ধান্ত নেয়া হয় যে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হবে বাংলা। পশ্চিম পাকিস্তানের জনগণের ইচ্ছানুযায়ী উর্দু অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। এছাড়া সভায় নাজিমুদ্দিনের বক্তৃতার তীব্র নিন্দা করে প্রস্তাব নেয়া হয়।”
ঐদিন সকাল ১১টা থেকে শহরের স্কুল-কলেজের ছাত্ররা মিছিল করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে সমবেত হতে থাকে। সেখান থেকে দশ-বারো হাজার ছাত্র-ছাত্রীর মিছিল রাজপথে নেমে আসে। মুখ্যমন্ত্রী নূরুল আমিনের বাসভবন বর্তমান বাংলা একাডেমির ‘বর্ধমান হাউস’-এর সামনের রাস্তা ছাত্রদের শ্লোগানে শ্লোগানে দৃশ্যপট রচনা করে। মিছিলের প্রধান শ্লোগান ছিল ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই’, ‘আরবী হরফে বাংলা লেখা চলবে না’ ইত্যাদি। সেদিনের মিছিলে আশপাশ থেকে সাধারণ মানুষও অংশগ্রহণ করে।