বুধবার ২৯ মার্চ ২০২৩
Online Edition

বারমুডা ট্রায়াঙ্গেলের রহস্য

আবু মহি মুসা

বিজ্ঞানীরা বারমুডা ট্রাঙ্গেলের রহস্যের কারণ আজও উদঘাটন করতে পারেননি। এটা তাদের পক্ষে উঘাটন করা সম্ভব হবে না। কেন সম্ভব হবে না এ বিষয়ে ভূমিকা স্বরূপ প্রাঙ্গিক কিছু কথা বলা প্রয়োজন। বারমুডা ট্রায়াঙ্গেলের বিষয়টি বস্তুবাদী বা ভাববাদী ক্ষেত্র নয়। এটা মিশ্রক্ষেত্রের বিষয়। এখানে বস্তুবাদী এবং ভাববাদী উভয়েই চিন্তা করতে পারেন।

আমরা অনেকেই জানি না, পৃথিবীতে এমন কতগুলো জায়গা আছে  যেখান থেকে মাঝে মাঝে নাবিকসহ সামুদ্রিক জাহাজ এবং বহু প্লেন অদৃশ্য হয়ে গেছে। কোথায় হারিয়ে যায়, এর সন্ধান বিজ্ঞানীরা আজও দিতে পারেননি। এরকম একটি জায়গা, আটলান্টিক মহাসাগরের পশ্চিম জলভাগ, দেখতে ত্রিভূজ আকৃতির মতো, যা বার্মুডা ট্রাঙ্গেল নামে পরিচিত। এর তিন দিকে রয়েছে বার্মুডা, পোয়ের্তোরিকো এবং ফ্লোরিডা। এই বিশেষ অঞ্চলে নিখোঁজ হওয়ার আগে সেই সকল জাহাজ ও বিমান থেকে যে বার্তা পাঠানো হয়েছিল, তাতে বলা হয়েছে, তাদের কম্পাসের কাঁটা আশ্চর্যজনকভাবে ভন্ ভন্ করে ঘুরতেছিল। যারা অলৌকিক ব্যাপারে বিশ্বাসী নন, তারা বলেন, এটা একটা কল্পিত কাহিনী। কিন্তু এটা কি কল্পিত কাহিনী ছিল? এর প্রথম ঘটনাটি ঘটেছিল ১৯৪৫ সালের ৫ ডিসেম্বর। ঐ দিন ফ্লোরিডার ফোর্ট লডারডেল বিমান ঘাঁটি থেকে চৌদ্দজন অভিজ্ঞ পাইলট পাঁচটি বোমারু বিমান নিয়ে আকাশে উড়ছিলেন। আবহাওয়া ছিল বেশ পরিষ্কার। কিছু সময় পরেই বিমান ঘাঁটিতে খবর এলো, স্কোয়াড্রন লিডার চার্লস টেলর বলছেন, ‘আমরা বিপদে পড়েছি। পথ হারিয়ে ফেলেছি। কোথাও কোনো স্থল দেখা যাচ্ছে না।’ তারা আরো বলেছেন, ‘আমরা কোথায় তা বলতে পারছি না। কোন দিকে যাচ্ছি তাও বুঝতে পারছি না। সমুদ্রের এ জায়গা একেবারেই অচেনা।’ তাদের শেষ কথা ছিল, ‘আমরা পানিতে ডুবে যাচ্ছি।’ এরপর তাদের সাথে বেতারে আর কোনো যোগাযোগ স্থাপন করতে পারেননি। তাদেরকে উদ্ধার করার জন্য তের জন ক্রুসহ একটি উদ্ধারকারী বিমান পাঠানো হলো, কিন্তু তারাও হারিয়ে যাওয়া বিমানের কোনো সন্ধান দিতে পারলো না। পরবর্তীকালে তিনশ’ বিমান এবং কয়েক ডজন জাহাজ নিয়ে বারমুডা থেকে মে´িকো উপসাগর পর্যন্ত তন্ন তন্ন করে খোঁজা হয়েছে, কিন্তু ছটি বিমান তলিয়ে যাবার কোনো চিহ্ন পর্যন্ত পাওয়া গেল না। বিজ্ঞান এত উৎকর্ষ লাভ করেছে, কেউ যদি সেই মহাসমুদ্রে একটি কয়েন ফেলে রেখে আসে তা বিজ্ঞানীদের খুঁজে বের করা কোন ব্যাপার নয়। গত পচাত্তর বছর ধরে দুশো সামুদ্রিক জাহাজ এবং ২০টি বিমান ডুবে গেছে এই এলাকায়। 

বারমুডা ট্রায়াঙ্গেলের এই বিশেষ অঞ্চলটি একটি রহস্যজনক ক্ষেত্র এবং এই রহস্যের পিছনে অনুসন্ধান চালিয়ে বিজ্ঞানীরা এটাকে একটি ম্যাগনেটিক ফিল্ড হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। পৃথিবীতে এরকম আরো কয়েকটি ম্যাগনেটিক ফিল্ডের কথা জানা যায়। পৃথিবীর প্রধান দুটো ম্যাগনেটিক ফিল্ডের একটির অবস্থান উত্তর মেরুতে এবং অপরটির অবস্থান  দক্ষিণ মেরুতে।

বিজ্ঞানীদের ধারণা, ভিন্ গ্রহের বুদ্ধিমান মানুষেরা অথবা এলিয়েন নামক বুদ্ধিমান প্রাণীরা ঐ সব এলাকায় একটা চুম্বক ক্ষেত্র তৈরি  করে সামুদ্রিক জাহাজ এবং প্লেন অদৃশ্য করে অন্য কোন গ্রহে নিয়ে যায়। অবশ্য তাদের এ ধারণার পেছনে যুক্তি আছে। পৃথিবীর কোথাও প্লেন বিধ্বস্ত হলে বা সামুদ্রিক জাহাজ ডুবে গেলে অন্ততঃপক্ষে তার ধ্বংসাবশেষের সন্ধান পাওয়া যায়। অথচ হারিয়ে যাওয়া প্লেন এবং সামুদ্রিক জাহাজ সমুদ্রে ডুবে গেছে, তার কোন ধ্বংসাবশেষ আজ পর্যন্ত খুঁজে পাওয়া যায়নি। কাজেই এমন ধারণা অমূলক নয় যে ভিন গ্রহের বুদ্ধিমান মানুষেরা চুম্বক ক্ষেত্র তৈরি করে তার মাধ্যমে এসব জাহাজ এবং প্লেন অদৃশ্য করে অন্য গ্রহে নিয়ে যায়। যুক্তির কারণেই অনেকের কাছে বিষয়টি বিশ্বাসাযোগ্য বলে মনে হতে পারে। বাস্তব ক্ষেত্রে এসব ধারণা কিন্তু সম্পূর্ণ ভুল। তাহলে প্রশ্ন জাগতে পারে, হারিয়ে যাওয়া প্লেন এবং সামুদ্রিক জাহাজ কোথায় গেছে?

দক্ষিণ মেরু এবং উত্তর মেরুর ম্যাগনেটিক ফিল্ড দুটোসহ  বার্মুডা ট্রায়াঙ্গেলের মতো পৃথিবীতে মোট ১২টি ম্যাগনেটিক ফিল্ড রয়েছে। প্রধান দুটো ম্যাগনেটিক ছাড়া ইকুয়েডরে দক্ষিণে ৫টি এবং উত্তরের ৫টি ম্যাগনেটিক ফিল্ড রয়েছে। বিস্ময়কর যে প্রতিটি ক্ষেত্রের দূরত্ব ৭ড়ক্ক ডিগ্রি অর্থাৎ প্রতিটি ক্ষেত্র পরস্পরের কাছ থেকে সমান দূরত্বে অবস্থা করছে। প্রশ্ন হতে পারে পৃথিবীতে এর ভূমিকা কী? বিনা প্রয়োজনে কি এগুলো সৃষ্টি করা হয়েছে? এখানে আরো বিস্ময়ের ব্যাপার, যিনি এ বিষয়টি সৃষ্টি করেছেন, প্রাণীকুলকে পৃথিবীতে বসবাসের জন্য, তিনি কত বড়  বিজ্ঞনী (আল্লাহ)। অনেকে বলবেন, এটা প্রকৃতিগতভাবে সৃষ্টি। তারা কি  বিশ^াস করবেন, মা সন্তান প্রসব করেন, এটাও প্রকৃতিগতভাবে সৃষ্টি হয়ে থাকে? 

এটা খুবই সাধারণ ব্যাপার যে, কোন চুম্বকদন্ডকে সুতোয় বেঁধে যদি ঝুলানো হয়, তাহলে দেখা যাবে চুম্বকদন্ডটি লম্বালম্বিভাবে উত্তর-দক্ষিণমুখী হয়ে অবস্থান করছে। যে কারণে ঝুলন্ত চুম্বকদন্ড বা দিক নির্ণয় যন্ত্রের কাঁটা উত্তর-দক্ষিণমুখী হয়ে থাকে। এই ম্যাগনেটিক ফিল্ডগুলোর প্রয়োজনীয়তা কী এ সম্পর্কে আমাদের অনেক জিজ্ঞাসা।

এমন কথা হয়তো আজ পর্যন্ত কোনো বিজ্ঞানী বলেননি যে, পৃথিবীর অভ্যন্তরে প্রতিনিয়ত পারমাণবিক বিস্ফোরণ ঘটে। এ কারণে পৃথিবীতে একটি ফোর্স তৈরি হয়। এই ফোর্সের কারণে পৃথিবী সূর্যের চারদিকে ঘুরছে। বিদ্যুৎচালিত নয়, মেনুয়াল রাইস মিলে ষ্টার্ট দেয়ার পর চিমনি দিয়ে দোয়া বের হয়। অন্য পথে তাকে আবার বাতাস টেনে নিতে হয়। ম্যাগনেটিক ফিল্ডগুলো বিমানের ইঞ্জিনের মতো বাতাস টেনে নেয় না কিন্তু তার আকর্ষণের মাধ্যমে ফিল্ডের মধ্যে যা পাবে তাই টেনে নেবে। আর ভিতরের লাভা চিমনির ধোঁয়ার মত পৃথিবীর দুর্বল স্থান থেকে বের হয়ে যাবে।   

ইতোপূর্বে যে সকল ম্যাগনেটিক ফিল্ড থেকে প্লেন এবং সামুদ্রিক জাহাজ হারিয়ে গেছে, তার মধ্যে বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল এবং জাপানের  ডেভিলস্ সী উল্লেখযোগ্য। এই ম্যাগনেটিক ফিল্ডগুলো কিছু আছে স্থলভাগে। এর মধ্যে কতটা সমুদ্রে এবং কতটা স্থলে, এ তথ্য এ মুহূর্তে দেয়া সম্ভব নয়। আফ্রিকার মরুভূমিতে এরকম একটি ম্যাগনেটিক ফিল্ড আছে বলে জানা গেছে। এগুলো যে ম্যাগনেটিক ফিল্ড, এ সিদ্ধান্তে পৌঁছতে বিজ্ঞানীদের অনেক পরীক্ষা নিরীক্ষা চালাতে হয়েছে। 

এরকম একটি প্রশ্ন জাগা স্বাভাবিক যে, ম্যাগনেটিক ফিল্ড থেকে হারিয়ে যাওয়া বিমান বা জাহাজগুলো কোথায় গেছে? বিজ্ঞানীরা এর উত্তর দিতে না পারলেও আমরা এর সঠিক সন্ধান দিতে পারবো বলে আমাদের বিশ^াস। উত্তর মেরু এবং দক্ষিণ মেরুর প্রধান ম্যাগনেটিক ফিল্ডের সাথে বাকী প্রত্যেকটি ম্যাগনেটিক ফিল্ডের সংযোগ আছে। এবং প্রত্যেক ম্যাগনেটিক ফিল্ডের একটি অদৃশ্য ইন্টার ডোর রয়েছে। হারিয়ে যাওয়া জাহাজ বা বিমান এই ম্যাগনেটিক ফিল্ড থেকে পৃথিবীর অভ্যন্তরে চলে যায় মাধ্যাকর্ষণের কারণে। বিমানের পাইলটরা এমন কথাই বলেছেন যে আমরা ডুবে যাচ্ছি। ডুবে যাওয়ার কারণটাই ছিল মাধ্যাকর্ষণ শক্তি। পৃথিবীর অভ্যন্তরের কেন্দ্রে কত লক্ষ ডিগ্রি হিট থাকে এটা বিজ্ঞানীরা বলতে পারবেন। পৃথিবীর অভ্যন্তরে যাওয়ার পর এ সব জাহাজ এবং বিমান নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। যেখানে বিমান বা সামুদ্রিক জাহাজ গেলে তার ধ্বংসাবশেষ তো দূরের কথা,  বিন্দুমাত্র চিহ্ন পাওয়ার কোনো সম্ভাবনা থাকে না। অর্থাৎ পৃথিবীর লাভার সাথে মিশে একাকার হয়ে যায়। এখানে আরো একটি প্রশ্ন জাগতে পারে যে এই ম্যাগনেটিক ফিল্ডগুলোর সাথে পৃথিবীর কেন্দ্রের সাথে কোনো সুড়ঙ্গ পথ আছে কিনা, যে সুড়ঙ্গ পথ দিয়ে জাহাজ এবং বিমান পৃথিবীর পেটের ভিতর চলে যায়? 

জাহাজ এবং বিমানগুলো সুড়ঙ্গ দিয়ে পৃথিবীর পেটে কীভাবে চলে যায় এ বিষয়ে আলোচনার আগে জানার দরকার এই ম্যাগনেটিক ফিল্ডগুলোর ভূমিকা কী? আমরা জানি পৃথিবী সূর্যের চারদিকে ৬৭ হাজার মাইল বেগে ঘুরছে। পৃথিবী সূর্যের আকর্ষণেই ঘুরুক বা পৃথিবীর অভ্যন্তরীণ পারমাণবিক বিস্ফোরণের কারণেই ঘুরুক। এই ম্যাগনেটিক ফিল্ডগুলোর আকর্ষণ পৃথিবীকে বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা করে থাকে। অন্যদিকে এই ম্যাগনেটিক ফিল্ড না থাকলে এখানে কোনো প্রাণীর সৃষ্টি হত না। যেমন, মহাকাশে নভোচারীরা কিন্তু ভেসে বেড়াচ্ছে। অন্য গ্রহ থেকে একটি ট্রেন তৈরি করে যদি পৃথিবীতে নামানো হয়, সে ট্রেনটি শূন্যে ভেসে বেড়াবে। যে কারণে পৃথিবী প্রাণী বা কোনো বস্তু ভেসে বেড়াচ্ছে না। তার মানে পুরো পৃথিবী একটি ম্যাগনেটিক প্রভাবে মধ্য রয়েছে। ঠিক  তেমনি, ম্যাগনেটি নির্যাসের সমুদ্রে আমরা ডুবে আছি। সেই ¯্রষ্টার পরিকল্পিত সৃষ্টি এটা। এই ম্যাগনেটিক ফিল্ডগুলো না থাকলে এখানে কোনো প্রাণীর সৃষ্টি হত না। 

ম্যাগনেটিক ফিল্ড থেকে বিমান জাহাজ কোথায় হারিয়ে গেছে এ ব্যাপারে বিজ্ঞানীরা বসে নেই। এ নিয়ে তাদের মনে বহু জল্পনা কল্পনা চলছে। এ সব সামুদ্রিক জাহাজ এবং প্লেন কোথায় হারিয়ে গেছে? নাকি এর পেছনে ভিন গ্রহের বুদ্ধিমান মানুষের কোন হাত আছে,  এটাও তারা মনে করেন। অনেক কল্পিত কাহিনী বেরিয়েছে ভিন গ্রহের বুদ্ধিমান মানুষকে নিয়ে। বলা হয়ে থাকে যে ভিন্ন গ্রহের বুদ্ধিমান মানুষদের বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তি এত উন্নত যে এ সব জাহাজ তারা তুলে নিয়ে যাচ্ছে গবেষণার জন্য। পৃথিবীর বিজ্ঞানীরা সত্যি সত্যি যদি এমন ধারণা পোষণ করে থাকেন, তাহলে এটা হবে তাদরে মারাত্মক ভুল এবং এই ভুলের জন্য বহু বছর তাদের পিছিয়ে থাকতে হবে। 

এই ম্যাগনেটিক ফিল্ডগুলোর প্রয়োজনীয়তা কী এমন প্রশ্ন থাকা স্বাভাবিক। আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো তাদের বার্তা আদান প্রদানের জন্য ওয়াকি টকি ব্যাবহার করে থাকে। এ জন্য বিভিন্ন দালানে রিপিটার বসানো আছে। অথবা আমরা যে অপারেটরের মোবাইল সেট ব্যাবহার করে থাকি, সে সব অপারেটরের টাওয়ার স্থাপন করা রয়েছে বিভিন্ন দালানের ছাদের ওপর। যাতে সকল স্থানের মোবাইলগুলো নেটওয়ার্কে আওতায় আসে। ঠিক তেমনি উত্তর মেরু এবং দক্ষিণ মেরুতে দুটো প্রধান ম্যাগনেটি ফিল্ড রয়েছে। যা পরস্পরকে আকর্ষণ করে। পুরো পৃথিবীকে মাধ্যাকর্ষণের নেটওয়ার্কের আওতায় আনার জন্য আরো পাঁচটি করে দশটি ম্যাগনেটিক ফিল্ড রয়েছে। পৃথিবী ৬৭ হাজার মাইল বেগে সূর্যের চারিদিকে ঘুরছে। এত গতিতে ঘোরার পরেও আমরা কিন্তু একটুও টের পাচ্ছি না। যেমন, ট্রেন  যত জোরেই চলুক না কেন. ট্রেনের যাত্রীরা কিন্তু তেমন কিছু অনুভব করে না। এটাও অনেকটা এরকম। আমরা মনে করতে পারি, পৃথিবী নামক একটি দ্রুতগতিসম্পন্ন রকেটে অবস্থান করছি। আমাদেরও একটি যাত্রা আছে। যাত্রার শেষ সীমাও আছে। অনেক যাত্রী নেমে গেছে তার মাঝপথে (মৃত্যু)। এর রহস্যটা এখানে।   

বিজ্ঞানীরা বিভিন্নভাবে এর ব্যাখ্যা দেয়ার চেষ্টা করেছেন। ১৯৮২ সালে রুশ গবেষণা জাহাজ ‘ভিটিয়াজ’ বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল এলাকায় অনুসন্ধান চালায়। এটি সেখানে একবার হ্যারিকেনের কবলে পড়ে এবং বেতার যোগাযোগে বিঘœ সৃষ্টি হয়। এরকমই অস্বাভাবিক ঘটনা এখানে ঘটতে পারে। পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর বিজ্ঞানীরা বলেছেন, বারমুডা ট্রাঙ্গেলের ঘটনা একটি মুখরোচক প্রচার মাত্র। আমরা তাদের এ বক্তব্যের সাথে একমত নই। এই ম্যাগনেটিক ফিল্ডগুলোর প্রত্যেকটির একটি ইন্টার ডোর রয়েছে। প্রশ্ন হচ্ছে, সেই ডোরগুলোর কী কোন সুড়ঙ্গপথ আছে? এরও একটি ব্যাখ্যাসহ উত্তর দিতে আমরা সক্ষম।

১৯৪৩ সালে ফিলাডেলফিয়া ল্যাবটেরিতে পরীক্ষা চালানোর পর সমুদ্রে পরীক্ষা চালানো হয়। সে পরীক্ষাটা ছিল এরকম, যেমন দুটো কৃত্রিম ম্যাগনেটিক ফিল্ড, যা একটি ঢাকার বুড়িগঙ্গায়, অন্যটি চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরে স্থাপন করা হলো। নাবিকদের ডেষ্ট্রয়ারের মধ্যে রেখেই প্রবল চুম্বক ক্ষেত্রের ম্যাগনেটিক জেনারেটর চালানো হলো। তারপরই চোখের সম্মুখ থেকে মন্ত্রের মতো ডেষ্ট্রয়ারটি অদৃশ্য হয়ে গেল। যেমন বুড়িগঙ্গা থেকে ডেস্ট্রটি  চিটাগাং পোর্টের ম্যাগনেটিক ফিল্ডের মধ্যে চলে গেল নিমিষে। এ পরীক্ষার উদ্দেশ্য ভিন্ন গ্রহের বুদ্ধিমান মানুষ এরকম পদ্ধতিতে ওই সব বিমান এবং জাহাজ তুলে নিয়ে যেতে সক্ষম কিনা? এ থেকেও তারা ধারণা করে নিয়েছেন যে ভিন গ্রহের বুদ্ধিমান মানুষ এসব জাহাজ এবং বিমান নিয়ে যেতে পারে বলে ধারণা করেন। কিন্তু এই পরীক্ষার পরিণতি ছিল ভয়াভহ। ডেস্ট্রয়ারের মধ্যে থাকা নাবিকরা আর স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারেননি। তাদের পুরো শরীর ম্যাগনেটাইজড্ হয়ে গেছে। কোনো দালানের সাথে ধাক্কা খেলে সাথে সাথে তাদের শরীরে আগুন ধরে যেত। যারা ডেস্ট্রয়ারের মধ্যে ছিলেন সে সব নাবিকরা একটা 

ভয়ংকর ম্যাগনেটিক প্রভাবের মধ্যে চলে গেছেন। কাঁচের দেয়ালে টর্চ লাইটের আলোর প্রতিফলন ঘটালে সে আলো কাঁচের দেয়াল ভেদ করে দেয়ালের অপর দিকে যেতে পারে, ঠিক তেমনি এ সব নাবিকরা আলোর মতো কাঁচের দেয়াল ভেদ করে অপর পাশে যেতে পারতেন। 

ওই সব ম্যাগনেটিক ফিল্ডগুলো ছিল তেমনি। ইন্টার ডোর থাকলেও কোনো দৃশ্যমান সুরঙ্গপথ ছিল না। বুঝাই যাবে না ওই জায়গায় এরকম  রহস্যজনক কোনো সুরঙ্গ আছে। কিন্তু ওই ম্যাগনেটিক ফিল্ড থেকে কোনো বস্তু অদৃশ্য হয়ে যেতে পারে। এবং সে বস্তুটি মধ্যাকর্ষণের ফলে পৃথিবীর পেটের মধ্যে চলে যাবে। এ বিষয়টি সহজবোধ্য করার জন্য একটি বাস্তব ঘটনার কথা উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করতে চাই। আন্ডাগ্রাউন্ড পত্রিকার জুনিয়র এক সাংবাদিক। আমার খুবই ভক্ত। বিভিন্ন সময়ে এসে টাকা ধার নিত। আর ফেরত দিত না। একদিন আমার বাসায় এসে দুশো টাকা ধার চাইলো। খুবই অনুনয় বিনয় করতে লাগলো টাকার জন্য। আমি বিরক্ত হলাম। বললাম টাকা দেয়া যাবে না। সে বললো, টাকা নেই? তিন বার উচ্চারণ করলো। আমি তিন বারই বললাম, না টাকা নেই। আমি জানি সে জ্বিন নিয়ে খেলা করে। আমার ব্রিফকেসটা আমার পাশেই ছিল। ব্রিফকেসের মধ্য থেকে কাগজ দলামোজা করলে যে শব্দ হয়, ঠিক তেমনি একটা শব্দ হলো। ব্রিফকেসে ডিজিটাল লক। আমার সন্দেহ হল। আমি ব্রিফকেস খুললাম। ব্রিফকেসে রাবার ব্যান্ড দিয়ে পেচানো সাড়ে তিন হাজার টাকা। একটি টাকাও নেই। ব্রিফকেসে কোনো ছিদ্র ছিল না। টাকাটা কীভাবে উধাও হয়ে গেল? জ্বীনের ক্ষমতা সম্পর্কে যাদের ধারণা আছে তারা বুঝতে পারবেন। জ্বীন ইচ্ছে করলে রুমের ভেন্টিলেটর বা  ছোট্ট ছিদ্র দিয়ে পূর্ণ বয়স্ক একজন মানুষকে বের করে নিয়ে যেতে পারে। এই ম্যাগনেটিক ফিল্ডগুলোর দৃশ্যমান কোনো সুড়ঙ্গ পথ না থাকলেও ওই নির্দিষ্ট স্থান থেকে পৃথিবীর অভ্যন্তরীণ আকর্ষণের কারণে সব কিছুকে টেনে ভিতরে নিয়ে যেতে পারে। আমরা মনে করি বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল থেকে যে সব সামুদ্রিক জাহাজ এবং উড়োজাহাজ অদৃশ্য হয়ে গেছে সেগুলোকে আর কোনো দিনও ফিরে পাওয়া যাবে না। পেটের মধ্যে গিয়ে লাভা হয়ে গেছে। আমাদের ধারণার সাথে বিমানের পাইলটদের হারিয়ে যাওয়ার মুহূর্তে কন্ট্রোল টাওয়ারের সাথে যে কথা বলেছেন, ‘আমরা ডুবে যাচ্ছি।’ একটা মিল রয়েছে। তারা কিন্তু বলেননি আমরা আকাশমুখী চলে যাচ্ছি। এটা হচ্ছে আমাদের ধারণা। এরপর বিজ্ঞানীরা মঙ্গল গ্রহের এলিয়েন ধরে এনে প্রমাণ করুক ওরা এসব বিমান নিয়ে গেছে।  

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ