শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
Online Edition

রাজনীতি ও আদর্শ

ডা. শওকত আলম

জনগণকে আন্তরিকভাবে ভালোবাসার নাম রাজনীতি। সততা সৎগুণাবলী একজন নেতার মাথার মুকুট। জনগণের আশা আকাক্সক্ষা স্বতঃস্ফূর্তভাবে শতভাগ পূর্ণতার নাম রাজনীতি। ‘রাজনীতি হল এক প্রকার আগুনকে বশ করে ব্যবহার করার মতো উপযোগী কৌশল আয়ত্ব করা।’

রাজনীতির কথা বলতে গেলে প্রথমে আসে আদর্শিক রূপরেখা। রাজনীতি বলতে আমরা যা বুঝি তা হলো মানবতার কল্যাণে জীবনকে পরিচালনা করা। রাজনৈতিক পথে চলতে গেলে অনেক রকম বাধা-বিপত্তির সম্মুখীন হতে হয়। কৌশলগতভাবে রাজনৈতিক বিজ্ঞান একটি কঠিনতম জটিল কৌশলগত বিজ্ঞান। যে দলের কৌশলগত আদর্শিক অবকাঠামোর স্রোতধারা যত গতিশীল সে দল রাজনৈতিকভাবে ততোখানি আদর্শবান। মজবুত চরিত্র, আদর্শিক একটি রাজনৈতিক দলের পরিচয় তখন রাজনীতি একটি অনন্য সোনালি  স্রোতধারা।

জনগণের দিকে ছড়ি ঘুরানো চোখ রাঙানো রক্তাক্তের নাম স্বৈরতন্ত্র। জনগণ ভালোবাসা চায়, ভালো ব্যবহার চায়, ভালো ভালো নতুন কর্মধারার উৎস চায়। তা পূর্ণ করা যায় একমাত্র পরিকল্পিত ভাবে কর্মপরিধি গ্রহণ আর ইস্তেহার বাস্তবায়নের মাধ্যমে। যেখানে আদর্শ নীতিনৈতিকতার অভাব সেখানে সুশাসনের অভাব। 

অতীতের ইতিহাস আমাদের দিকে চোখ রাঙায় না, সে অনেকভাবে অনেকরকম শিক্ষা দেয়। দূরদৃষ্টিসম্পন্ন প্রজ্ঞাবানগণ বরাবরই ইতিহাসের পাতায় চোখ রাখে, ইতিহাস থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে আর চিরকাল মান্য করে চলে। রাজনীতি ও সংস্কৃতি পরস্পর জমজ সহোদর, একে অপারের হাত ধরাধরি করে সমান্তরাল ভাবে চলে। তখন নীতিগত ভাবে রাজনৈতিকনীতি ও সংস্কৃতিক স্থিতিশীল অবস্থায় অবস্থান করে। সে সময় রাষ্ট্রের মধ্যে আদর্শগত পরিসীমার গুণগতমান বজায় থাকে। 

রাজনীতি ও সংস্কৃতি দুই মেরুতে অবস্থান নিলে দেশের মধ্যে অশান্তি বিরাজ করে আর সেই সুযোগে ভিনদেশী রাজনীতি ও সংস্কৃতির বহিঃপ্রকাশ ঘটে, তখন  দেশকাল  ভিন্নত্ব গতিতে প্রবাহিত হয়।

নৈতিক চরিত্রবানদের দিকে ক্ষমতার রশ্মি জানালায় আলো ছড়ায়, এটাই তো ইতিহাস আমাদের শিক্ষা দেয়। আদর্শের নৈতিক অধঃপতন হলে ক্ষমতার পালাবদল হয়। ক্ষমতার চাবি পালাবদলের ধারাবাহিকতার ক্ষেত্রে  চিরকাল ইতিহাস ঘুরে ফিরে বারবার আদর্শ  নৈতিকতার শিক্ষা দীক্ষার কথা বলে। তবে জোর করে অনেক কিছু করা সম্ভব কিন্তু সব কিছু কখনো সম্ভব হয় না। তাই সর্বক্ষেত্রে জাতিগত ভবে মনে রাখতে হবে যে, অনুকরণ অনুস্মরণ অনুরণন অনুশাসন নয়, হতে হবে সব থেকে অভিন্ন এক অবিনাশী জলস্রোত, যা সকলের জন্য হবে ব্যবহার যোগ্য।

আর দশজন মানব থেকে অভিন্নভাবে লালিত আদর্শের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে আপনাকে চুলচেরা বিচার বিশ্লেষণ করতে হবে যে, জনগণ কি বলে?  আমজনতা কি চায়?  তাদের ভাবধারা কি? সবকিছু মিলিয়ে আপনার সঠিক পথের দিশার দিশারী তৈরি করতে হবে এবং তা বাস্তবে রূপদান করতে পারাই আদর্শের বিজয়। লুটপাটের নীতি কোনো রাজনীতি নয়, চোর ডাকাত বাটপারের নীতি। রাজনীতি চিরকাল আদর্শের মৌলিক নীতি। 

নিজেকে একজন আদর্শবান মানব হিসাবে রাষ্ট্রে দাঁড় করাতে পারাই হলো একটি আদর্শিক রাজনীতির বিজয় মাল্য। নীতি নৈতিকতা বিসর্জন দিয়ে কোন রাজনীতির বিজয় লাভ করতে পারে না। বরঞ্চ তা অধপতনের বিদায় ঘণ্টা ধ্বনি। ‘একটি স্বচ্ছতা সর্বদা ফুলের মতো সৌরভ ছড়ায় এবং লাখোকোটি প্রাণে সেই স্বচ্ছতা সততার দোলা দেয়।’ (রসুলপুরের বাণী)

এই জহৎ সংসারে  সততার সাথে সৎপথে উপার্জন আর মানবতার কল্যাণসাধন একটি মহৎ চেতনার বিকাশ। যে দিকে দু’চোখ যায় নানান রূপান্তরের সিঁড়িতে সিঁড়িতে রাজনীতির শত রকম প্রাণের ছোঁয়া। সবকিছুতে লুকিয়ে আছে রাজনীতির হিরক মালার জ্যোতি। সকল প্রকার পদ-পদবী, ব্যবসা-বাণিজ্য, চাকরি-বাকরি আর নানান সুযোগ-সুবিধা হতে হবে ন্যায় নীতি ও ইনসাফের পথে। যে কোন ধরনের  লেনদেন দরবার হবে আদর্শের মাপকাঠির ভিত্তিতে আর এটা একটি আদর্শ, এটাও রাজনীতি। রাজনীতির বলয়ের বাইরে গ্রহ নক্ষত্র জগৎ। ভুল পথে কোটি টাকা আয়ের মধ্যে কোন প্রকার মহত্ব নেই। মহত্ব লুকিয়ে আছে সৎ উপার্জনের প্রতিটা ক্ষুদ্রতম দানার  একক অংশে।  

যেখানে আদর্শ নীতি নৈতিকতার বালাই নেই, তাতো বিষকলা ঘুণেেপাকার বাসা। পারলে আদর্শবান হও, নইলে সবকিছু ছেড়ে দাও। পৃথিবী আদর্শবানের জায়গা আর বাতিলের জন্য এই জগতটা একটি নরক। আদর্শের মডেল হিসেবে রাষ্ট্রে নিজেকে দাড় করাতে পারলে তখন বুঝতে হবে আদর্শের স্বাদটা কেমন । তাই বলা যায় মডেল হওয়াটা রাজনৈতিক মৌলিক পন্থার প্রাথমিক একটি ধাপ অর্জন করা।

 

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ