মঙ্গলবার ২১ মার্চ ২০২৩
Online Edition

কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে-ডা. শফিকুর রহমান

 

* ইসলাম বিরোধী কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে গোটা জাতিকে গ্রাস করা হয়েছে

* লুটপাটকারীদের নোংরা থাবা পড়েছে ইসলামী ব্যাংকের উপর

স্টাফ রিপোর্টার : বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান দেশে বিদ্যমান রাজনৈতিক সংকট, অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা, দ্রব্যমূল্যের অব্যাহত ঊর্ধ্বগতি, শিক্ষাঙ্গণে অরাজকতা, পানি, গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংকটের কারণে জনগণের অসহনীয় অবস্থা তুলে ধরে বলেন, জাতিকে এই ভয়াবহ পরিস্থিতি থেকে উদ্ধারের জন্য কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে একটি সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। তিনি বলেন, জনগণের অধিকার ছিনিয়ে আনতে আগামী আন্দোলনে আমাদেরকে সম্মিলিতভাবে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। তিনি দেশবাসীকে ঐক্যবদ্ধভাবে এ আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ার জন্য উদাত্ত আহ্বান জানান।

গতকাল শুক্রবার জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার অধিবেশনে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। সভায় ২০২৩-২০২৫ কার্যকালের জন্য নায়েবে আমীর, সেক্রেটারি জেনারেল, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ ও কর্মপরিষদ গঠিত হয়। 

২০২৩-২০২৫ কার্যকালের জন্য নায়েবে আমীর নির্বাচিত হন যথাক্রমে অধ্যাপক মুজিবুর রহমান, ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোঃ তাহের ও মাওলানা আনম শামসুল ইসলাম। সেক্রেটারি জেনারেল নির্বাচিত হন অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার। সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হিসেবে নির্বাচিত হন যথাক্রমে মাওলানা এটিএম মা’ছুম, মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, হামিদুর রহমান আযাদ, মাওলানা আবদুল হালিম, এড. মোয়ায্যম হোসাইন হেলাল, মাওলানা মোঃ শাহজাহান ও এডভোকেট এহসানুল মাহবুব জোবায়ের। ২০২৩-২০২৫ কার্যকালের জন্য কেন্দ্রীয় প্রচার ও মিডিয়া সেক্রেটারির দায়িত্ব দেয়া হয় এডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দকে।

আমীরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমান কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার অধিবেশনে দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতি তুলে ধরে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য পেশ করেন। তিনি দেশে বিদ্যমান রাজনৈতিক সংকট, অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা, দ্রব্যমূল্যের অব্যাহত ঊর্ধ্বগতি, শিক্ষাঙ্গণে অরাজকতা, পানি, গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংকটের কারণে জনগণের অসহনীয় অবস্থা তুলে ধরে বলেন, জাতিকে এই ভয়াবহ পরিস্থিতি থেকে উদ্ধারের জন্য কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে একটি সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। 

আমীরে জামায়াত বলেন, বাংলাদেশ একটি মুসলিম দেশ। সরকারের পরিসংখ্যান অনুযায়ী এ দেশের মুসলিম জনসংখ্যা শতকরা ৯২ ভাগ। জাতীয় জীবনের সর্বক্ষেত্রে ইসলামের প্রভাব থাকবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু আজ ইসলাম বিরোধী কর্মকা-ের মাধ্যমে গোটা জাতিকে গ্রাস করা হয়েছে। 

তিনি বলেন, নবী ও রাসূলগণ আল্লাহর দ্বীনকে বিজয়ী করার জন্য আল্লাহ প্রদত্ত পদ্ধতি অনুযায়ী কাজ করেছেন। জামায়াতে ইসলামীও সেই পদ্ধতি অনুযায়ী কাজ করে যাচ্ছে। এই পদ্ধতিতে জামায়াতে ইসলামী আল্লাহর দ্বীনকে বিজয়ী করার লক্ষ্যে জনগণের মাঝে ইসলামের দাওয়াতি তৎপরতা অব্যাহত রাখায় এ সংগঠন আজ এক বিশাল সংগঠনে পরিণত হয়েছে। তিনি বিভিন্ন পর্যায়ের দায়িত্বশীলদের উদ্দেশে বলেন, আপনারা আল্লাহকে সাক্ষী রেখে নিজেদের দায়িত্ব পালনের জন্য ওয়াদা করেছেন। ইতোপূর্বে যারা এ দায়িত্ব পালন করেছেন তারা অত্যন্ত আন্তরিকতা, নিষ্ঠা ও যোগ্যতার সাথে তাদের দায়িত্ব আঞ্জাম দেয়ার কারণে জনগণের নিকট এ সংগঠনকে একটি আস্থাভাজন সংগঠনে পরিণত করতে সক্ষম হন। আজকে যারা দায়িত্ব প্রাপ্ত হলেন, তাদেরকে আল্লাহর ভয় অন্তরে রেখে দায়িত্ব পালন করতে হবে। দায়িত্ব পালনে নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার পরিচয় দিতে পারলে আল্লাহ তাআলা তার রহমতের চাদর দিয়ে আমাদেরকে আবৃত করে নিবেন। মহান আল্লাহ আমাদেরকে ঈমানের নিয়ামত দিয়ে ধন্য করেছেন। বাংলাদেশের ২০ কোটি মানুষের দায়িত্ব নিয়ে আমাদেরকে কাজ করতে হবে। এ জন্য দ্বীনকে জীবনের উদ্দেশ্য বানিয়ে নিতে হবে। 

আমীরে জামায়াত আরো বলেন, আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের হক আদায়ের পর ব্যক্তির নিজের, তার পরিবার ও সমাজের প্রতি দায়িত্ব পালন করতে হবে। বাংলাদেশে অপসংস্কৃতি, মাদক ও অনৈতিকতা যুবক-যুবতীদের ধ্বংস করে দিচ্ছে। আমাদের বর্তমান শিক্ষা ভবিষ্যত প্রজন্মকে উদ্দেশ্যহীন ঠিকানার দিকে নিয়ে যাচ্ছে। তাদেরকে অপসংস্কৃতির সয়লাব ও অনৈতিকতার পরিবেশ থেকে মুক্ত করার জন্য আমাদেরকে ভূমিকা পালন করতে হবে। সাথে সাথে আমাদের নিজেদের পরিবার গঠনে সচেতন ভূমিকা রাখতে হবে। 

আমীরে জামায়াত সমাজের ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরে বলেন, আজ বাংলাদেশের মানুষের কোনো অধিকার নেই। কর্তৃত্ববাদী শাসনের ১৪ বছরে মানুষের অধিকার যেমন শেষ করে দেওয়া হয়েছে, তেমনি অর্থনৈতিক ব্যবস্থাও ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। মেগা প্রকল্প হাতে নেয়ার মাধ্যমে কাজের মেয়াদ প্রলম্বিত করে চুরি, লুটপাট ও বিদেশে অর্থ পাচারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। বাংলাদেশের মানুষের অর্থ আত্মসাৎ করে কানাডায় বেগমপাড়া, মালয়েশিয়ায় সেকেন্ড হোম এবং সিংগাপুর ও দুবাইয়ে বিলাস বহুল বাড়ি নির্মাণ করা হয়েছে। লুটপাটকারীদের নোংরা থাবা পড়েছে ইসলামী ব্যাংকের উপর। উদ্যোক্তাদের নিষ্ঠা এবং কর্মচারী-কর্মকর্তাদের কঠোর ও আন্তরিক পরিশ্রম ও জনগণের ভালবাসায় ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ ব্যাংকে পরিণত হয়। এই ব্যাংক প্রতিষ্ঠার সূচনায় যারা কাজ করেছেন, তারা আরামকে হারাম করে দেশে বিদেশে গ্রাহক তৈরি করে এবং বিভিন্ন ব্যক্তি, সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানকে সম্পৃক্ত করে তহবিল গঠনে ভূমিকা পালন করেছেন। তাদের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিঃ বিশ্বের এক হাজার শ্রেষ্ঠ ব্যাংকের তালিকায় বাংলাদেশের একমাত্র অংশীদারের গৌরব অর্জন করে। 

তিনি আরো বলেন, এ ব্যাংক আমাদের সন্তানতূল্য। আমাদের চোখের সামনে ব্যাংক হত্যার ষড়যন্ত্র আমরা বরদাশ্ত করতে পারি না। এ দেশের মানুষ আমাদেরকে দেখে ইসলামী ব্যাংকে আমানত রেখেছে। কোনো ডাকাতদের কবলে এ ব্যাংক ছেড়ে দেওয়া যাবে না। ব্যাংক রক্ষার জন্য জনগণকে সাথে নিয়ে আমাদেরকে অতন্ত্র পাহারাদারের ভূমিকা পালন করতে হবে। আতঙ্কিত হয়ে শেয়ার হস্তান্তর কিংবা টাকা উত্তোলনের জন্য পেরেশান না হয়ে ধৈর্য সহকারে ও সম্মিলিতভাবে এ পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন। 

আমীরে জামায়াত বলেন, ইসলামী ব্যাংকের অর্থ লুটপাটের সময় নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংক, অর্থ মন্ত্রণালয় ও সরকারের রেগুলেটরি প্রতিষ্ঠানগুলো কী ভূমিকা পালন করেছে, জাতির সামনে তা স্পষ্ট করতে হবে। যদি কোনো কর্মকর্তা অবৈধ নির্দেশ বাস্তবায়নে সহযোগিতা করে থাকেন, তাহলে তাদেরকেও আইনের আওতায় আনতে হবে। 

আমীরে জামায়াত বলেন, দেশে আজ এক ভয়াবহ রাজনৈতিক অস্থিরতা বিরাজ করছে। রাজনৈতিক দলসমূহকে কথা বলতে দেয়া হচ্ছে না। অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের সাংবিধানিক অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছে। জাতিকে অর্থনৈতিকভাবে পঙ্গু করে দেয়া হয়েছে। এ অবস্থা থেকে দেশ ও জনগণকে মুক্ত করার জন্য জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এ লক্ষ্যে একটি অবাধ, সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের লক্ষ্যে কেয়ারটেকার সরকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে সকল রাজনৈতিক দল ও আপামর জনতাকে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। জনগণের অধিকার ছিনিয়ে আনার আগামী আন্দোলনে আমাদেরকে সম্মিলিতভাবে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। তিনি দেশবাসীকে ঐক্যবদ্ধভাবে এ আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ার জন্য উদাত্ত আহ্বান জানান।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ